এক অদেখা লেখকের গল্পঃ ©Raiful Hasan (all credit) (আরিফ আজাদ এর জীবন বৃত্তান্ত)
নামঃ আরিফ আজাদ
★ জন্ম ও পরিচয়ঃ হঠাৎ করেই বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে আলোড়ন তৈরী করা আরিফ আজাদ এর জন্ম ১৯৯০ সালের ৭ই জানুয়ারি চট্টগ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। ব্যক্তিগত জীবনের খুব সামান্য তথ্যই জনসম্মুখে প্রকাশ করেছেন প্রচণ্ড অন্তর্মুখী স্বভাবের প্রচার বিমুখ এই লেখক। এমনকি নিজের কোনো ছবিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেননি তিনি। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “চেহারা দেখালে যদি অন্তত একটা সওয়াব পাওয়া যেতো, বিশ্বাস করুন, প্রতিদিন কম করে হলেও একটা ছবি ফেবুতে আপলোড করতাম।” আরিফ আজাদের আহলিয়া (স্ত্রী) পর্যন্তও বিয়ের আগে তাঁর লেখক পরিচয় জানতে পারেননি।
নিজেকে লুকিয়ে রাখার পিছনে যদি কোনো গভীর রহস্য থেকেও থাকে, সাধারণ পাঠক হিসেবে সেই রহস্য উন্মোচনের সামর্থ্য আমাদের না থাকলেও তিনি যে অহংকার থেকে মুক্ত থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেকে পাঠকদের কাছে ধরা দিচ্ছেন না সেটা সহজেই বোধগম্য। লেখক ধরা না দিলেও তাঁর লেখনী আত্মগোপনে নেই, আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে অগণিত পাঠকের জীবনে। “আরিফ আজাদ একজন জীবন্ত আলোকবর্তিকা”, আরিফ আজাদকে বর্ণনা করতে গিয়ে একথাই বলেছেন সময়ের আরেক জনপ্রিয় তরুণ লেখক ডা. শামসুল আরেফিন শক্তি। গার্ডিয়ান প্রকাশনী আরিফ আজাদের পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছে, “তিনি বিশ্বাস নিয়ে লেখেন, অবিশ্বাসের আয়না চূর্ণবিচূর্ণ করেন”।
★ শিক্ষাজীবনঃ তরুণ প্রতিভাবান এই লেখক মাধ্যমিক পাশ করেন চট্টগ্রাম জিলা স্কুল থেকে। তারপর একটি সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সেখান থেকেই উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন। তুখোড় মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও নাড়ির টানে তিনি রাজধানীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি পরীক্ষা দেননি। এমনকি তিনি জীবনে প্রথমবার ঢাকা আসেন তাঁর তুমুল জনপ্রিয় বই “প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ” প্রকাশের ১৫ দিন পর।
★ কর্মজীবনঃ সত্যের পিছনে ছুটে চলার অদম্য ইচ্ছা থেকে হতে চেয়েছিলেন একজন সাংবাদিক। কিন্তু ভাগ্য তাকে টেনে আনে লেখালেখির জগতে। লেখকের প্রথম বই “প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ” ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পাওয়ার পর তিনি লেখালেখিতে নিজেকে পূর্ণরূপে নিয়োজিত করেন। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি গবেষণা করছেন তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে। সেইসাথে তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত আছেন বেশ কিছু দ্বীনি দাতব্য সংস্থার সাথে।
★ পারিবারিক জীবনঃ বর্তমানে আরিফ আজাদ সপরিবারে ঢাকাতেই বসবাস করেন। তাঁর বাসার ঠিকানা না জানায় প্রায়ই অনেক পাঠক প্রিয় লেখকের জন্য তাদের উপহার, চিঠি ইত্যাদি পৌঁছে দেন সমকালীন প্রকাশন এর অফিসে। পরিবারের দেখাশোনার মাধ্যমেই তাঁর বিয়ে ঠিক হয়েছিলো। তাদের একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান আছে যার ডাকনাম আয়েশা।
★ সাহিত্যকর্মঃ প্রিয় লেখক আরিফ আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করতেন। প্রথম দিকে তিনি তাঁর লেখালেখির মাধ্যমে নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষীদের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ইসলাম নিয়ে উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের যৌক্তিক ও অকাট্য উত্তর দিতেন এবং সেইসাথে নাস্তিকদের দিকে ছুড়ে দিতেন পাল্টা প্রশ্ন, যার যৌক্তিক প্রত্যুত্তর তথাকথিত মুক্তমনা দাবিদারদের পক্ষ থেকে কখনো আসতোনা। অনলাইনে বিচ্ছিন্নভাবে অনেক ব্লগ লিখলেও আরিফ আজাদের প্রথম বই প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের একুশে বইমেলায়। জীবনের প্রথম বইটিই দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দেয় সর্বস্তরের মানুষের মাঝে, আর মেরুদণ্ড ভেঙে দেয় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা তথাকথিত বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রগতিশীলের ছদ্মবেশ ধারণ করে থাকা নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষীদের। “প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ” বইটি মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখকের প্রকাশিত আর্টিকেলসমূহের মলাটবদ্ধ রূপ।
এটি যেমন লেখকের জীবনের প্রথম বই, তেমনি এর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দেশের ইসলামিক বইয়ের অন্যতম সেরা প্রকাশনী গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স এরও প্রথম বই। বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র “সাজিদ” বিভিন্ন কথোপকথনের মধ্যমে তার নাস্তিক বন্ধুর অবিশ্বাসকে বিজ্ঞানসম্মত নানা যুক্তিতর্কের মাধ্যমে খণ্ডন করে নাস্তিকদের নাস্তানাবুদ করে। বাংলা ছাড়াও বইটি পরবর্তীতে ইংরেজি ও অসমীয়া ভাষায় অনূদিত হয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার রহমত ও অসংখ্য মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত ও অনুপ্রাণিত হয়ে লেখক ইসলামী সাহিত্যে একের পর এক অমূল্য রত্ন সংযোজন করতে থাকেন। ২০১৮ সালে আরজ আলী মাতুব্বর এর বিভ্রান্তিমূলক ধ্যান ধারণাকে চপেটাঘাত করে প্রকাশ করেন “আরজ আলী সমীপে” এবং পরের বছর প্রকাশিত হয় সাজিদ সিরিজ এর দ্বিতীয় বই “প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২”।
২০১৯ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারি “প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২” প্রকাশের সপ্তাহ খানেকের মাথায় একুশে বইমেলায় বইটি বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাংলা একাডেমি। বইটি প্রকাশের প্রথম সপ্তাহেই ৮ হাজারেরও বেশি কপি বিক্রি হয়। গত বছর একুশে বই মেলায় প্রকাশিত হয় লেখকের আত্মোন্নয়নমূলক বই “বেলা ফুরাবার আগে”, যা অন্ধকারে নিমজ্জিত যুবসমাজকে ইসলামের আলোর সন্ধান দেয়। এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে লেখকের দুটি মৌলিক গ্রন্থ — “জীবন যেখানে যেমন” ও “নবি জীবনের গল্প”। “নবি জীবনের গল্প” বইটি মূলত তিনি গত বছর ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয়ভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে অবমাননা চেষ্টার প্রতিবাদস্বরূপ রচনা করেন। এছাড়াও তিনি “জবাব”, “সত্যকথন” ও “গল্পগুলো অন্যরকম” বইয়ের সহলেখক এবং জনপ্রিয় বই “প্রত্যাবর্তন” ও “মা,মা,মা এবং বাবা” সম্পাদনা করেন। অদূর ভবিষ্যতে “প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ৩” ও “বেলা ফুরাবার আগে ২” প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা প্রকাশিত হলে পাঠকদের জন্য লেখকের পক্ষ থেকে অনেক বড় পাওয়া হবে।
★ পুরস্কার ও সম্মাননাঃ ২০১৭ থেকে ২০২০ টানা চারবার একুশে বইমেলার বেস্ট সেলার লেখক ও রকমারি বেস্ট সেলার অ্যাওয়ার্ড সহ আরিফ আজাদ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় অর্জন হলো হাজারো পথভ্রষ্ট মানুষের হিদায়াতের ওয়াসিলা হতে পারা এবং ইসলামপ্রিয় মানুষের ভালোবাসা অর্জন। তিনি একুশে পদক পাননি, অর্জন করেননি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁকে ভূষিত করেনি ডি.লিট উপাধিতে। কিন্তু তিনি মাত্র চার বছরে তাঁর লেখনীর দ্বারা মানুষের হৃদয়ে যতোটা জায়গা করে নিয়েছেন, বিখ্যাত অনেক লেখক তা চল্লিশ বছরেও পারেননি। একজন আরিফ আজাদের প্রাপ্য পুরস্কার ও যোগ্য সম্মাননা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার নিকটই রয়েছে।
★ লেখকের প্রিয় কিছু উক্তিঃ
১. ❝ মানুষ বলে, “আল্লাহ ছাড়া আমাদের পাশে আর কেউ নেই।” অদ্ভুত! যার পাশে আল্লাহ আছেন, তার আর কাকে দরকার? ❞
২. ❝ বুকটা ভারি হয়ে এলে, সিজদায় লুটিয়ে পড়ে হালকা করে নিন। ❞
৩. ❝ যারা দুনিয়ায় ঘুমায়, তারা মৃত্যুর পর জেগে উঠে। আর যারা দুনিয়ায় জেগে উঠে, তারা মৃত্যুর পর ঘুমিয়ে পড়ে। ❞
৪. ❝ ভোরের পাখি আর ভোরের সূর্য– দুটোই যদি আপনার আগে জেগে যায়, তাহলে জীবন নিয়ে জরুরিভাবে ভাবতে বসুন। জীবনের সত্যিকার গতি থেকে আপনি ইতোমধ্যেই বিচ্যুত হয়ে পড়েছেন। ❞
৫. ❝ যদি জানতে পারেন আগামীকাল আপনার জীবনের শেষ দিন, এরপরের দিন-ই আপনি মারা যাবেন, বলুন তো– আগামীকালটা আপনি ঠিক কিভাবে কাটাবেন? সে দিনটাকে আপনি যেভাবে কাটাতে চান, আজকের দিনটাকেও ঠিক সেভাবে সাজিয়ে নিন, কারণ– আপনি সত্যিই জানেন না যে, আগামীকাল আপনি আদৌ বেঁচে থাকবেন কী-না। ❞
পরিশেষে মহান রবের নিকট দু'আ করি, তিনি যেনো প্রিয় লেখক আরিফ আজাদের জ্ঞানের গভীরতাকে বাড়িয়ে দেন এবং দ্বীনের জন্য তাকে কবুল করে নেন...।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....