বইয়ের নাম:- ভালো থেকো প্রিয়
কবির নাম:- হাসিনা আক্তার সুমি
প্রথম প্রকাশ:- মাঘ ১৪২৭, ফেব্রুয়ারি ২০২১
প্রকাশনী:- ভূমি প্রকাশ
প্রচ্ছদ:- আশিক মাজহার
আইএসবিএন:- ৯৭৮ ৯৮৪ ৯৪৯৯৭ ৬ ৩
মূল্য :- ১৮০৳
পৃষ্ঠা সংখ্যা :- ৯৬
★কবি পরিচিতি :-
---------------------------- কবি হাসিনা আক্তার সুমি তরুণ প্রজন্মের শিল্পশৈলী সমৃদ্ধ আলাদা বোধ ও ভাষা সাবলীলভাবে কবিতার ছন্দে প্রকাশ করেছেন তার কবিতায়।
তিনি ১৯৮১ সালের ২২ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার হাজী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন৷ পিতা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম (দুলাল) ও মাতা মরহুমা মমতাজ বেগম।
সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি মা-বাবার জ্যেষ্ঠ সন্তান। পারিবারিক জীবনে স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া এবং একমাত্র পূত্র সন্তান আরেফিন সুপ্তকে নিয়ে সুখের সংসার।
স্কুল-কলেজ জীবন থেকেই তিনি লিখালিখি করতেন। এই বইটি ছাড়াও তাঁর আরো দুটি যৌথ কাব্যগ্রন্থ "কাব্যালায়," "যুক্তাঞ্জলি-২" প্রকাশিত হয়। এছাড়া আরো একটি যৌথ কাব্যগ্রন্থ "সৃষ্টি কাব্য" নামের কবিতার বইটি প্রকাশের প্রক্রিয়াধীন।
★উৎসর্গ:-
----------------- "ভালো থেকো প্রিয়" বইটির উৎসর্গপত্র পড়ে সত্যি মাকে কল্পনায় অনুভূত করলাম একবার, চোখ ধাঁধানো লিখা গুলো যেন বুকে চাপা কষ্ট রাখা ও মাকে হারানোর তীব্র যন্ত্রণা কলমের আঁচড়ে উঠে এসেছে। উৎসর্গ পড়েই যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে। কেননা উৎসর্গে ভুবনজুড়ানো মাকে উপস্থাপন করা হয়েছে দুঃখের পরশে কবির কলমের কালিতে।
★প্রচ্ছদে স্বার্থকতা:-
------------------------------ হালকা হলুদ রঙের উপর এক রমণীর খোঁপায় ওঠে আসা একজন ছেলে ও মেয়ের হাতে হাত রেখে ঐ সূর্যের ন্যায় আলোকরশ্মিরই যেন ইঙ্গিত বহন করে তার চারিপাশে একঝাঁক পাখিকে কালো রংতুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রচ্ছদ শিল্পী আশিক মাজহার যা অনায়াসেই পাঠক হৃদয়ে জায়গা করে নিবে। প্রচ্ছদের মাঝেই উপলব্ধি করা যেতে পারে ভিতরে থাকা সৃষ্টিশীল লেখাগুলো।
★নামকরণে স্বার্থকতা:-
----------------------------------- "ভালো থেকো প্রিয়" বইটির নামকরণে আমাদের শুরুতেই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে হয়তোবা এখানে প্রিয় বলতে শুধু একান্তই ভালোবাসার মানুষটিকে বুঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না বইটি পড়া হবে ও তার গভীরে প্রবেশ করা না যাবে ততক্ষণ অব্ধি বইটিতেও থাকা সার্বিক দিকগুলোর রহস্য ও নামকরণের স্বার্থকতা টুকু অজানাই রয়ে যাবে। এককথায় বলতে চাই কবি অবশ্যই নামকরণে স্বার্থকতা অর্জন করেছেন কেননা দৈনন্দিন জীবনের দুঃখ-কষ্ট, সুখগুলো বা ঘাত-প্রতিঘাত নিয়েও দিনশেষে মন থেকে এটাই চাওয়া হোক যাতে ভালো থাকে সর্বশ্রেণীর ভালোবাসার মানুষগুলো। নামকরণে নিঃসন্দেহে কবি সফল।
★কাব্যগ্রন্থটির সংক্ষিপ্ত-সার :-
------------------------------------------- "ভালো থেকো প্রিয়" কবি হাসিনা আক্তার সুমি" রচিত প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ। প্রথম হিসেবে আমি বলবো বইটির শুরুতেই আমার চোখজোড়া আঁটকে পড়েছিল উৎসর্গ ও ভূমিকায় থাকা দারুণ সব লিখাগুলোতে। এতো নান্দনিকভাবে কবি শুরুতেই তার সৃষ্টিকর্মকে উপস্থাপন করেছেন যা নিঃসন্দেহে পাঠক হৃদয়কে আকৃষ্ট করতে বাধ্য হবে।
মূলত আমরা গল্প বা উপন্যাস একটানা পড়ে তার সারাংশ বা সারমর্ম পাঠকদের কাছে রিভিউ আকারে উপস্থাপন করি, কিন্তু আমার কাছে কবিতার বইয়ের রিভিউ লিখা অনেক দুঃসাধ্য কাজ। কেননা প্রতিটা কবিতার পেছনে ও তার একেকটি লাইনের ভাবার্থও মর্মার্থ ধরতে, বুঝতে হবে মনোযোগের সহিত গভীরে উপলব্ধি করে। তারপরই সাহস করে এগিয়ে যেতে হয় প্রকাশের দিকে পাঠ প্রতিক্রিয়ার।
"ভালো থেকো প্রিয়" কবিতার বইটিতে কবি হাসিনা আক্তার সুমি চেষ্টা করেছেন গভীর ধ্যান-ধারণা, সুখ-দুঃখ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা, আবেগ-অনুভূতি বা প্রশ্নদের জমিয়ে রাখা সকল কথোপকথন গুলোকে তার কবিতায় ফুটিয়ে তুলতে। কবির মতে, কবিতা বলা ও কিছু না বলা কথাই তিনি কবিতায় তুলে ধরতে চেয়েছেন দারুণ লেখনীর মাধ্যমে ও পাঠক হৃদয়কে যে কবিতাগুলো স্পর্শ করে যেতে পারে তারই আঙ্গিকে কবিতাদ্বয়ের এতো নিখুঁত সৃষ্টিশৈলী ও শব্দচয়নে স্বার্থকতা সত্যি কবির কলমের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতেই হয়।
বইটিতে সর্বমোট কবিতা আছে ৭৮টি। প্রতিটি কবিতাই আকৃষ্ট করবে পাঠককে বেশ চমৎকারভাবে ও গভীরভাবে অনুভব করতে শিখাবে। যদিও মন চাইছে প্রতিটি কবিতাই সারাংশে তুলে আনি কিন্তু না আমি চাই কবিতাগুলো বইয়ের পাতায় পড়ে আপনারা প্রশান্তি পান শুধু এটাই চাওয়া থাকবে। আমি মাত্র গুটিকয়েক কবিতার সারাংশ তুলে ধরছি তাই বলে এটা নয় যে, এগুলোই শুধু ভালো, আমার কাছে প্রতিটি কবিতাই একেকটি অমৃত বাণীর মতোই লেগেছে। তবে দেওয়া যাক কিছু কবিতার সারসংক্ষেপ :-
প্রথমেই বইয়ের "মা" কবিতাটি পড়ে এটাই অনুধাবন করতে পারলাম যে কবি এখানে ঐ দূর আকাশে তারা হয়ে যাওয়া মায়ের অভিমানী কত-শত অভিযোগ জমিয়ে রাখা আবেগাপ্লুত হওয়া স্মৃতিচারণ করেছেন মাকে নিয়ে একখানা শ্রেষ্ঠ উপাখ্যান কবির লেখনীতেই প্রকাশ পায়।
"সঙ্গতার সাথে আড়ি" কবিতায় কবি নিঃসন্দেহে মনের সবটুকু আবেগের মাধুরী মিশিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন নিঃসঙ্গতা ঢের ভালো সঙ্গতা থেকে, কবিতায় সঙ্গতার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে নিঃসঙ্গ জীবনের এক চমৎকার বর্ণনার ইঙ্গিত প্রদান করেছেন।
"ভালো থেকো প্রিয়" বইটির নামানুসারে কবিতার মাঝে প্রকাশ পেয়েছে সকল পিছুটান ছেড়ে অভিমান,ক্ষোভ ও অপ্রকাশিত মন খারাপেও প্রিয় মানুষটির সর্বদা ভালো থাকার কামনা।
"ক্ষমা করো প্রভু" কবিতায় মহামারি কোভিডের অস্থিরতা থেকে পরিত্রাণ দিতেও সকল পাপ ধুয়েমুছে ক্ষমা করার আকুল আবেদন প্রভুর নিকট কবির কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে।
"চিঠি" কবিতাটিতে মনের যে আকুতি ছিলো কলমের স্পর্শে যেন সেই কবিতাটির পুরো ভাবগাম্ভীর্য লিখনীতে ফুটে উঠলো। হৃদয়ের যে পোড়া দহন বা আর্তনাদ তাই চিঠি কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে নিদারুণভাবেই।
"যদি যাই থেমে" কবিতার পঙক্তিমালায় মিশে আছে থেমে যাওয়া মানে স্পর্শগুলোকে কেড়ে নেওয়া যায় কিন্তু অনুভবগুলো ভুলে থাকাটা দায়, কবির তীব্র বিষাদে অঙ্কন করা লিখাটিতে থেমে যাওয়ার পরবর্তী স্মৃতিচারণ সুস্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
"আর নয়" কবিতায় চমৎকারভাবে অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যত সময়ের ভাবনাগুলোকে কতটা সাবলীল ও ছন্দবদ্ধভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা কবিতাটির মধ্যেই সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান।
"সাবধানে পা ফেলো প্রিয়" কবিতায় অন্যমনষ্কতা কাটিয়ে যেন সতর্কতার সহিত সামনের দিকে পা রাখা হয়। অভিমান, বিষাদ, অভিযোগ দূরে সরিয়ে নব প্রেমের শিহরণে মনকে রাঙিয়ে নেওয়ার আহ্বান প্রকাশ পায় কবিতায়।
"কটাক্ষ মধুচন্দ্রিমা" কবিতায় ঊর্ধ গতিতে ছুটে চলা এক নিয়ন্ত্রণহীন সময়কে ইঙ্গিত করে পথ হারানোর এক দারুণ শব্দশৈলীর বুননে কবি কবিতাদ্বয়কে সৃষ্টি করেছেন।
শেষ পৃষ্ঠায় থাকা "প্রেম/ভালোবাসা" কবিতাটিতে অল্পকথায় বিরহের উপর উন্মাদ হয়ে আসার এক মুখোমুখি সত্যের উপর রেখে কবি বুঝাতে স্বার্থক হয়েছেন যা গভীর অর্থে লুকিয়ে আছে।
সর্বমোট ৭৮টি কবিতা থেকে আমি ১০ টি কবিতার আংশিক সারাংশ তুলে ধরলাম মাত্র। কিন্তু বাকী ৬৮টি কবিতার রূপ,রস,আবেগ, অনুভূতি, প্রেম,ভালোবাসা ইত্যাদির সংমিশ্রণে কবির মনের সকল রং-তুলি দিয়েই ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রতিটি কবিতায় মিশে আছে যেন গোটা গল্পের একটা কাহিনী। কবিতাগুলোকে বুঝতে হলে অবশ্যই এর গভীরে প্রবেশ করে অনুধাবন করতে হবে। আশা করি সকলে বইটি পাঠ করলেই বুঝতে পারবেন বইটির ভিতরে থাকা ভালো-লাগাটা সত্যি কতটা স্বার্থক। সবাইকে বইটি পড়ার আহ্বান জানানো গেলো।
★ভালো-লাগার চরণসমূহ:-
----------------------------------------
~তোর ইচ্ছে কেনার দরে,
আমাকে প্রতিটা মুহূর্তে পুড়িয়েছিস।
~তুমি চাও আমি দহনে দগ্ধ হই,
কিন্তু না আমি তো দহনে একটুও দগ্ধ নই!
~হ্যাঁ আমি কবিতার প্রেমে পড়েই
প্রতিটা শব্দসঙ্গমে লিপ্ত হতো আমার মন।
~আমি অভিমানকে নিয়েই নতুন পথের তপ্ত বালুর ওপর দিয়ে হেঁটে চলি।
~খুঁজতে যেও না আর আমায়...
এই পৃথিবীর কোনো সীমানায়।
~তুমি এসেছিলে ----
আমারো মনো-মন্দিরে চৈত্রের প্রখর তাপের মধ্যেও নব-বসন্তের মৃদু মিষ্টি বৃষ্টির ছোঁয়া ৷ নিয়ে।
~ তোমাদের জন্য রইল আমার
আকাশ-সমান ঘৃণা।
~ অন্তর্জালের স্রোত ----
বিভ্রান্ত এই মন,
মনে তবুও রিক্ত প্রহর কাটে।
কোন সমীকরণ -----
~ কেউ আছো এমন....
যার কোনো অসহায়ত্ব নেই?
~ ধর্ষিত মনে,
শ্বাসরুদ্ধ ক্ষণে।
সীসাযুক্ত....
অক্সিজেনের টানে,
জীবন আজ বাকরুদ্ধ।
একটু কাছ থেকে এই কয়েকটি চরণই পাঠ করলে বুঝা যাবে একেকটা শব্দে কবি কতটা শ্রম ও ভালোবাসা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন একখানা কবিতা। ঠিক এমনি করে ৭৮টি কবিতায় ই প্রাণ পাওয়া যায়, আমি সবচেয়ে বেশি ভালোলাগার কতিপয় চরণ তুলে ধরলাম তবে ভালো লেগেছে সবগুলো কবিতাই নিঃসন্দেহে।
★পাঠ - প্রতিক্রিয়া:-
---------------------------- কবিতার সুস্পষ্ট সংজ্ঞা আমি দিচ্ছি না। শুধু এতটুকু বলতে চাই, আমার কাছে কবিতা মানে হৃদয়ে জমে থাকা বিষাদ, অভিমান,ভালো-লাগা, প্রেম-বিরহ, সুখ-দুঃখ ইত্যাদি মুহূর্তগুলোকে খন্ড খন্ডভাবে কবির মনের ভাবে প্রকাশ ঘটানো। "ভালো থেকো প্রিয়" বইটিতেও আমি দেখতে পাই নিঃসন্দেহে কবি সবচেয়ে বেশি স্বার্থক কবিতাগুলোর নামকরণে। কবিতার নামগুলোই হৃদয়ে দাগ কেটে যাবে আর কবিতার ভিতরে থাকা প্রতিটি লাইনের পিছনে যে কবি কতটা অনুভব-অনুভূতির সম্মিলন ঘটিয়ে একেকটা কবিতা রচনা করেছেন তা পাঠ না করলে সকলের নিকট অজ্ঞাত ই রয়ে যাবে। আমি প্রতিটা কবিতাই পড়তে গিয়ে ভাবনার রাজ্যে বিচরণ করেছি ও কল্পনায় অনুভূত করেছি কবিতার সৃষ্টি হতে পারে কতোটা মধুর? একরাশ মুগ্ধতা ও জানার আগ্রহ নিয়ে বইটি শেষ করলেও ৯৬ পৃষ্ঠার মলাটবদ্ধ ৭৮টি কবিতার ঘোর আমার এখনো লেগে আছে। নিঃসন্দেহে বইটি পাঠ করলে বুঝা যাবে এর গভীরতা কতটুক ও প্রিয় অনুভব করতে পারাটা কতোটা সুস্পষ্ট।
রিভিউ লেখায়:- সাইফা শান্তা
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....