৩০ মজলিসে কুরআনের সারনির্যাস
লেখকঃ মুফতি জিয়াউর রহমান
সম্পাদকঃ হামমাদ রাগিব
পৃষ্ঠা 360
প্রকাশনী, মাকতাবাতুল আসলাফ
ভাষা - বাংলা
‘ ফুরকান ’ কুরআনেরই আরেক নাম । শাব্দিক অর্থ ‘ আলাদা করা ’ ‘ পৃথক করা ’ । যেহেতু এ সূরা হক - বাঁতিলের মধ্যে পার্থক্যনির্ণয়কারী , তাই এর নাম ‘ ফুরকান ’ রাখা হয়েছে । [ ১ ] সূরার প্রথম দুই রুকু ১৮ নম্বর পারার শেষের দিকে চলে গেছে । কুরআনুল কারীমের আলোচনার মাধ্যমে সূরাটি শুরু হয়েছে । কুরআনের উপর মুশরিকরা নানা রকমের সংশয় ও আপত্তি উত্থাপন করেছিল । আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল । একদল লোক তো কুরআনকে পূর্বেকার উম্মতের কেচ্ছা - কাহিনী সম্বলিত রচনা আখ্যা দেওয়ার কোশেশ করে । দ্বিতীয় আরেকদল বলে , এটি মুহাম্মদের বানানো । আহলে কিতাব নাকি এই কুরআন বানাতে সহযোগিতা করেছে ( নাউযুবিল্লাহ ) । আরেকদলের ধারণা হলো , এটি মুহাম্মাদের যাদু ( নাউযুবিল্লাহ ) ।
[ আয়াত - ক্ৰম : ১-৬ ]
এরপর রাসূল -এর আলোচনা এসেছে । বিদ্বেষপূর্ণ লোকেরা তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করত , সে - কথাও এসেছে । তাদের ধারণা ছিল , কোনো মানুষ নবী হতে পারে না , নবী হবেন ফিরিশতা । আর যদি কোনো মানুষ নবী হনও , তাহলে সচ্ছল ও সমৃদ্ধশালী লোক নবী হবেন । কোনো গরীব , ইয়াতীম এই পদে ভূষিত হবে না । আল্লাহ তাআলা এসব খামখেয়ালিপূর্ণ কথা ও অযথা দাবির খণ্ডন করলেন । [ আয়াত - ক্ৰম : ৭-৯ ]
১৯ নম্বর পারাও শুরু হয়েছে তাদের এই অবাস্তব ও অনর্থক দাবির কথা উল্লেখ করে যে , ‘ আমাদের কাছে ফিরিশতা আসেন না কেন ? ’ অথবা ‘ আমরা আল্লাহকে দেখব ৷ ’ এর জবাবে বলা হলো , ফিরিশতাকে তখনই দেখা যাবে , যখন তারা মৃত্যুর সময় প্রাণ সংহার করতে আসবেন । জানা কথা , সেই সময়টা তাদের জন্যে কোনো সুখকর সময় হবে না ।
আর কিয়ামাতের দিন ঈমান না থাকার কারণে তাদের কোনো আমলও গ্রহণযোগ্য হবে না । সব ছাই হয়ে উড়ে যাবে । তারা কেবল আফসোস আর পরিতাপ করতে থাকবে ।
[ আয়াত - ক্রম : 21-23 ]
আল্লাহর দরবারে রাসূল - এর অভিযোগ
কিয়ামাতের দিন আল্লাহর রাসূল অভিযোগের সুরে বলবেন , ' হে আমার পালনকর্তা ! তারা এই কুরআনকে ত্যাগ করে দিয়েছিল । '
[ আয়াত - ক্রম : ৩০ ]
ইবনুল কাইয়্যিম বলেন , কুরআন ত্যাগ কয়েকভাবে হতে পারে ।
১. তারা কুরআন শ্রবণ করবে না , তার উপর ঈমান আনবে না । ২, কুরআন তিলাওয়াত করবে , এর উপর ঈমানও আনবে । কিন্তু কুরআনের উপর আমল করবে না ।
৩ . জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র ও উদ্ভূত সমস্যায় কুরআনের হুকুম বাস্তবায়ন করবে না । কুরআনকে ফায়সালাকারী বানাবে না ।
৪. কুরআনের অর্থের প্রতি গভীর চিন্তা ও তাদাব্বুর করবে না । ৫. কুরআন থেকে আত্মিক রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করবে না । ]
প্রিয় পাঠক ! সামনে অগ্রসর হবার আগে আমরা একটু থামি , তারপর পুরো উন্মতের ব্যাপারে একটু চিন্তা করি যে , আজ আমরা কুরআনকে কী পরিমাণ ত্যাগ করেছি । রূহানী ও আখলাকী রোগে প্রচণ্ডভাবে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কুরআনী চিকিৎসা আমরা গ্রহণ করছি না । অথচ সন্দেহাতীতভাবে কুরআনে রয়েছে সব রোগের চিকিৎসা । কুরআন পরিত্যাগ করায় আমাদের রোগ শুধু বাড়ছে , আর ধ্বংসের দিকে আমরা ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছি । কুরআন কেন একসঙ্গে নাযিল হলো না মুশরিকরা প্রশ্ন উত্থাপন করল — তাওরাত ও ইনজিলের মতো কুরআন কেন একসঙ্গে নাযিল হলো না ? বস্তুত ধীরে ধীরে কুরআন নাযিলের মধ্যে অনেক উপকার নিহিত ।
যেমন হিফয করা , অর্থ বোঝা , বিধানাবলি আহরণ করা এবং তা আমলে বাস্তবায়িত করা সহজ হয়ে আসে । তবে মুশরিকদের প্রশ্নের জবাবে এখানে আল্লাহ তাআলা একটি কারণ উল্লেখ করেছেন যে , এতে করে আপনার অন্তর কুরআনের নূরে নূরান্বিত হবে । কুরআনের অন্তর্নিহিত বিষয়াবলি এবং ইলম আপনার অন্তরের খোরাক হবে , শক্তি হাসিল হবে । একসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী বৃষ্টি ক্ষেতের জন্যে ক্ষতিকর , অথচ সময়ে সময়ে বৃষ্টিবর্ষণ ফসলের জন্যে খুবই উপকারী হয়ে থাকে । [ আয়াত - ক্রম : ৩২ ]
আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দাদের ১৩ টি বৈশিষ্ট্য সূরার শেষের দিকে আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের ১৩ টি বৈশিষ্ট্যের আলোচনা এসেছে—
১. তারা জমিনে বিনয়াবনত হয়ে চলে ।
২. মূর্খদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে ।
৩ . রাতে নামায ও ইবাদাতে লিপ্ত থাকে ৷
৪. জাহান্নামের আযাবের ভয় অন্তরে বিরাজ করে ।
৫ . খরচ করার ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করে ; অপব্যয়ও করে না , কৃপণতাও করে না ।
৬. শিরক থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকে ।
৭ . অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকে ।
৮ . ব্যভিচার এবং চরিত্রহীন কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে ।
৯. আল্লাহ তাআলার দরবারে তাওবা করে ।
১০. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া থেকে বিরত থাকে ।
১১. গান - বাজনা ও খারাপ বৈঠক থেকে দূরত্ব বজায় রাখে।আল্লাহর কালাম শুনে প্রভাবিত ও উপকৃত হয় ।
১২. আল্লাহ তাআলার কাছে নেককার স্ত্রী - সন্তান লাভ এবং পথপ্রদর্শক বানানোর দুআ করে ।
[ আয়াত - ক্রম : ৬৩-74 ]
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....