প্রেম ও দ্রোহ by শরিফুল ইসলাম | Prem O Droh by Shoriful Islam | বাংলা কবিতার বই

কাব্যগ্রন্থ: প্রেম ও দ্রোহ pdf available for hardcover
লেখক: শরিফুল ইসলাম
রিভিউ লেখায়: মুনতাসির নাহিয়ান

কাব্যগ্রন্থ: প্রেম ও দ্রোহ PDF লেখক: শরিফুল ইসলাম এর বই পিডিএফ রিভিউ লেখায়: মুনতাসির নাহিয়ান


রিভিউ লিখছি প্রায় এক যুগ পর। না লিখেও উপায় ছিল না। 
এক তো প্রিয় কবি দ্বিতীয়ত বইটির কবিতা। আমি প্রেম ও দ্রোহের কবিতাগুলো পড়িনি,আমি খেয়েছি বলা চলে।
কবিতা এমন একটি বিষয় যা সবার ভেতরে থেকে আসে না।
কবিতার অনেক গুলো ক্যাটাগরি। আর কবিদের সবগুলো সব গুলো ক্যাটাগরিতেই লেখা উচিত কিন্তু একটি ক্যাটাগরি তার অনন্য হবে। শরিফুল ভাইয়ের কবিতাগুলোও ঠিক তাই।
উনি সব বিষয়ে কমবেশ লিখলেও রাষ্ট্র,অনাচার বিষয়ের লেখাগুলো ভিতরে গিয়ে আঘাত করার মতন। একজন কবির স্বার্থকতা তখনি যখন সে কবিতার মাধ্যমে পাঠক সমাজের কাছে অর্থবহ বার্তা পাঠাতে পারে। শরিফ ভাই স্বার্থক,উনার প্রতিটি কবিতাই রোম দাঁড় করাবার যোগান দেয়। 
প্রথমে বই কিনি নাই,ভাবলাম একটু অপেক্ষা করা যাক। পরে সবার রিভিউ দেখে তার তর সইলো না। অর্ডার করার পর হাতে পেয়েছি সন্ধ্যায়। বাসার যাওয়ার পথেই অর্ধেক পড়ে শেষ করি।
এরপর বাসায় গিয়ে ভাইকে বলতেই অবাক হোন,আরেহ ভাই অর্ধেক শেষও করে ফেললেন! তিনি তখনি রিভিউ দিতে বললেও অসুস্থতার কারণে এত দেরি হলো। প্রায় অনেকদিন হলো। কবিতার চেয়েও আমার কাছে উৎসর্গটি বেশি ভালো লেগেছে।
                                               উৎসর্গ
                                   
                                              মৃত্তিকা! 
                   যেখানে জন্ম,যার কাছে আজন্ম ঋণী। 
        রাষ্ট্র! সেখানে অসংখ্য কবিতার ঈশ্বরের বসবাস।
    আমার প্রিয় জন্মভূমি,যার জন্য আজকের এই কালি।

শরিফুল ভাইয়ের এই উৎসর্গটিই আমার কাছে অনন্য মনে হয়েছে। এক একজন কবি এক একটি বিষয় বা কাউকে উৎসর্গ করে। সেখানে তিনি মাটি,দেশ ও কবিতার ঈশ্বর বলতে কবিদের উৎসর্গ করেছেন। আসলেই চমকপ্রদ বিষয়।

আমি সবগুলো কবিতা নিয়ে বলবো না। কারণ এতে করে রিভিউ বিশাল হয়ে যাবে। আমি দুটি বা তিনটি কবিতার ভাবার্থ আমার মত করে ব্যাখ্যার চেষ্টা করবো,দেখি শরিফ ভাইয়ের সাথে মিল কি-না।
প্রথম যে কবিতাটির কথা বলবো সে কবিতাটি অবশ্যই আমি আবৃত্তিও করবো। কবিতার নাম 'রাষ্ট্র কিংবা নেতা' ভাবার্থটি ছোট করেই বলবো।

ভাবার্থ: রাষ্ট্রের সকলকে সমান সুযোগ ও ব্যবস্থা দেওয়ার জন্যে আমরা ভোটের মাধ্যমে আমাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করি। যা রাষ্ট্রকে সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে পরিচালনা করবে। দেশের সকল মানুষকে সমান সুযোগ-সুবিধা দিবে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু প্রতিবার আমরা ভুল করি যার মাসুল দিতে হয় রাষ্ট্রকে। গালি,মন্দ বাক্য শুনতে হয় রাষ্ট্রকে। আমরা অসৎ,অনৈতিক নেতাদের আমাদের প্রতিনিধি বানাই। তারা আমাদেরকে আর দেখে না,তারা আমাদেরকে চিনে না। আমরা যেন জঞ্জাল। আমরা নেতাদের দোষারোপ না করে রাষ্ট্রকে করি। কিন্তু ভুলে গিয়ে থাকি এই দেশমাতা আমাদের থাকার জায়গা দিয়েছে,দিয়েছে জাতি হিসেবে একটি নাম 'বাঙালি।'
আমরা সে-সকল নেতাদের তুলোধুনো করতে পারি না উলটো তোষামোদ করি। বলা চলে ভুল আমাদের,নেতাদের না,না-ই রাষ্ট্রের। কবি-র কবিতায় সুন্দরভাবে রাষ্ট্র,আমাদের ও নেতার কথোপকথন তুলে ধরা হয়েছে। 

এরপরের কবিতাটির নাম 'শূন্য।' 

ভাবার্থ: আসলে এই কবিতাটি নিয়ে যত বলবো তত কম হবে।
কেননা কবিতাটির মর্ম এতটাই গভীর যা উপলব্ধি আমরা প্রতিনিয়তই করি। কবিদের জন্যে এটি একদম স্বাভাবিক। যে সকল কবি দ্রোহ-বিপ্লব লিখে লিখে যান উনাদের জন্যে এটি এখন অভ্যাস। আমরা শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়েছি আবার ফিরে যাবো সে শূন্যে। এ জন্মে লাভের খাতা অপূর্ণই থেকে যায়,পাপের খাতা ভরে যায়। ক্ষমতালোভী-রা ততক্ষণ চুপ থাকবে যতক্ষণ তাদের বিরোদ্ধে কেউ বলছে না,কেউ লিখছে না। পাপী,অনাচারকারী,নির্যাতনকারী-র অস্ত্র হিসেবে অর্থের লোভ দেখায়,জানের ভয় দেখায়;এই বিষয় গুলো অসাধারণ উপস্থাপন করেছেন কবি শরিফুল ইসলাম। আমি কবিতার দুই লাইন না লিখে পারছি না।

                               আমি কবি কিংবা আমি কবি নই,
                                           আমি এক উন্মাদ!
                              আমি গল্পের আদলে কবিতা লিখি,
                     কবিতার আদলে পাপীর পাপ খোলাসা করি।

               নেতা আমায় কাগজ ছুঁড়ে মারে,যেন কলম থামাই,
                        ধর্ষক মৃত্যু দেখায়,যেন সত্য না লিখি!
                                 কিন্তু সে জানে না,রাতদিন
           আমি যমদূতের সাথে বসে আড্ডা দিই,খোশগল্প করি
    কারণ আমি শূন্য থেকে এসে এখন শূন্যে যাওয়ার জন্য লড়ছি!

শরিফুল ইসলাম একজন উদীয়মান বিদ্রোহী কবি। উনার মাঝেকার বিদ্রোহী মনোভাব যেন আগ্নেয়গিরি মতন বের হয়ে আসতে চাইছে। 

কবিতাগুলি নিয়ে আমি বলার চেয়ে আমি সাজেস্ট করবো। আপনারা বইটি একবার খেয়ে দেখুন। হ্যাঁ খেতে বলেছি। কারণ কবিতার পাগল হলে আপনার কাছে তা পড়া নয় খাওয়া হবে,পেট পুরে যাবে। প্রথম কবিতা পড়ার পর থেকেই ক্ষুদা বৃদ্ধি পাবে বাকি কবিতা খাওয়ার জন্যে। প্রতিটি কবিতার স্বাদ অমৃত। শরীফ ভাইয়ের লেখার হাত যে কী পরিমাণ তীক্ষ্ণ তা বইটি পড়েই বুঝেছি। আপনার কাছে অনুরোধ ভাই,লেখা থামাবেন না কখনো। বিপ্লবের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে আপনার লেখা হতে,প্রশংসা নয় সত্যতা। 
প্রেম ও দ্রোহ কাব্যগ্রন্থের কিছু কবিতার কথা না বললেই নয়।

*কবি

* স্বাধীনতা ও বাঙালির গল্প

* দাদাভাই

* ক থেকে চন্দ্রবিন্দু 

* মৃত্যু

* কবি ও নেতা

* বেকার

তবে বলতেই হয় এক একটি কবিতা এক একটি ইতিহাস যেন। সবাইকে পড়ে দেখার আহ্বান রইলো। রিভিউ আর বড় করছি না।
শরিফুল ইসলাম ভাইয়ের জন্যে শুভকামনা ❤️

ব্যক্তিগত রেটিং: ৯/১০

ব্যক্তিগত মন্তব্য: রিভিউতে শুধুমাত্র প্রশংসা উচিত নয়। বহু খুঁজেও তেমন কোনো ক্রুটি বইয়ে পেলাম না। তবে কবিতা দুটি পড়ে কিছুটা ক্ষুন্ন হয়েছিলাম বটে!

ধন্যবাদ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ