বইঃ হিউম্যান ল্যাব
লেখকঃ মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়
Publisher আদর্শ
Quality হার্ডকভার
ISBN 9789848040591
Edition 1st Published, 2019
Number of Pages 344
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা
তার তরে তীর , উৎসর্গের নীড় ,
তাকে আমি চিনি , অথচ চিনি না । সে আমায় জানে , কিন্তু জানায় না । বাস্তবতায় থেকেও সে এক পরাবাস্তব সত্তা হয়ে শোধিত বানায় আমায় , আমি সাধিত হওয়ার বাহানায় কেবলই চুম্বকের উত্তর মেরু হয়ে তাকে দক্ষিণ মেরু গণ্য করে প্রবলভাবে আকৃষ্ট হই । ভৌত জগতের মানুষ তাকে পাপড়ি নামে চেনে । মানুষের চেনা এবং নাম - ধারণার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমিও তাকে পাপড়ি নামেই ডাকতে চাই , যদিও মানুষ নয় , কল্পিত ক্যারেক্টার হিসেবেই তার বিস্তৃতি
- সুস্থিতি নির্ধারণ করি । শুধু একজন মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়ার উদ্দেশ্যেই যদি কোনো দিন বিদেশগমন করি , নিশ্চিত জানি সেই মানুষের অবয়বে ক্যারেক্টারটি অন্য কেউ নয় পাপড়ি স্বয়ং । তার সঙ্গে কথা যা হয় , সে কী বলছে এর চেয়ে কী বলছে না অথচ বলতে পারত , এই সমীকরণ মেলাতেই সহাস্যে বলিদান নিজের বেয়াড়া ইগো । একই পাপড়ি তাই তিনটি পৃথক মাত্রা বা ডাইমেনশনে বিচরণ করে : মানবী , ক্যারেক্টার , ছায়াপথ ।
বিজনেস ফিলোসফি একটি গুরুগম্ভীর বিষয় । আমি বইটি লিখব কিঞ্চিৎ হিউমার আশ্রিত হয়ে । স্যুটের সঙ্গে ট্রাউজার পরিধান করলে যেমন বেখাপ্পা লাগে , বিজনেস ফিলোসফি আর হিউমারের সংমিশ্রণ তেমনটা হওয়ার শঙ্কা থাকলেও পাপড়ির প্রতি পূর্ণ সমর্পণের ভরসাতেই সফেদা ফলের সুবাস মেখে লেখায় মনোনিবেশ করলাম । উৎসর্গ পত্রের প্রার্থিত প্রাপক তাই পাপড়িই হোক ।
মনে পড়ে আজম খানকে— সারারাত জেগে জেগে , কত কথা আমি ভাবি পাপড়ি কেন বোঝে না তাই ঘুম আসে না।
বিজনেস ফিলোসফি , বাতায়নে চিন্তারশ্মি,
অনেক বছর ধরেই একটামাত্র চিন্তা ক্রমে ক্রমে ফিরে আসছে ; মানুষের জীবন ছেড়ে ঠাকুরগাঁওয়ে স্বেচ্ছানির্বাসন নিই । তবে এটা উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁও জেলা নয় , ঠাকুরগাঁও হলো এক কনসেপ্ট , যেখানে সভ্যতা বলতে আমরা যেসব নিয়ামক বুঝে থাকি , যেমন বিদ্যুৎ , ইন্টারনেট , মোবাইল ফোন , ভারী যানবাহন সবকিছু অনুপস্থিত , যেখানে মানুষ কাঠের বাড়িতে বসবাস করে । কিন্তু পিছুটান আর সাহসের অপর্যাপ্ততায় চিন্তাটা ফ্যান্টাসি স্তরেই রয়ে গেছে এখনো ।
ঠাকুরগাঁও ফ্যান্টাসির প্রতাপশালীতায় ব্যক্তিজীবনে অসফল মানুষের যত রকম সেট - উপসেট হওয়া সম্ভব , তার প্রতিটিতেই ফিট করি আমি । জীবন এক অর্থহীন অর্থপূর্ণ অন্তহীন পরিভ্রমণ — এই দার্শনিকতা বোধের উপদ্রবে ঠাকুরগাঁও আর নাগরিক জীবনের সীমান্তঘেঁষা এক আবছায়ায় বসত গেড়েছি । জীবিকার সংকট , সম্পর্কের অবনমন আর প্রত্যাশাহীনতার পরাবাস্তব জগতে উড়ন্ত দাঁড়কাক হওয়াই যেন নিয়তি , তবু পুরো দাঁড়কাক যার কারণে হওয়া হচ্ছে না তার সঙ্গে বোঝাপড়া হবে উদ্ভট এক মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের মাধ্যমে , যাকে আপনারা বলেন বিজনেস ফিলোসফি । " বিজনেস ফিলোসফার পেশার নাম প্রথম শুনি পাপড়ির সুবাদেই । ২০১১ সালে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে সে ফিনল্যান্ডে যায় , শুনেছি তার পিএইচডি থিসিসের বিষয় ছিল পলিটিক্যাল ইকোনমিকস ।
তার সঙ্গে আমার পরিচয়সূত্র বর্ণনা করতে গেলে স্বতন্ত্র উপন্যাস হয়ে যাবে , তাতে ক্রিটিকাল থিংকিংপিয়াসীদের প্রত্যাশাভঙ্গ হবে হয়তোবা । পরিচয় - পরবর্তী কার্যাবলি সম্বন্ধে বলি , বইয়ের কনটেক্সটে সেটা উপাদেয় হবে । সে ফিনল্যান্ডে যাওয়ার পর আমাদের ই - মেইলের সংখ্যা এবং দৈর্ঘ্য ভাইরাসের মতো করে ছড়িয়েছে ছাড়িয়েছে । পিএইচডি চলাকালেই বিয়ে সেরে নেয় , বর ফিনল্যান্ডে বড় হলেও পৈতৃক সূত্রে অস্ট্রেলিয়ান মাইগ্র্যান্ট । তার বিয়েতে উপহার হিসেবে ৮৩ পৃষ্ঠার ই - মেইল লিখে পাঠাই । ৭ মাস পরে যখন আমার নিজের বিয়ের আয়োজন চলতে থাকে , ২ পর্বে বিয়ের উপহার হিসেবে সে ৫৯ এবং ৪১ পৃষ্ঠার দুটো ই - মেইল পাঠায় ।
আমি সহজে আপ্লুত হই বললে ভুল হবে , তবু জীবনে যত উপহার পেয়েছি ১০০ পৃষ্ঠার ই - মেইলটাকে ১ বা ২ নম্বরে রাখব । পিএইচডি শেষে প্রথাগত চাকরিতে না ঢুকে সে ইনডিপেনডেন্ট ক্যারিয়ারিস্ট হিসেবে শুরু করে পথচলা । লিংকড ইন প্রোফাইলে নিজের পরিচয় লিখে ‘ বিজনেস ফিলোসফার ' । আমি তার কার্যক্রম সম্বন্ধে জানতাম , ধরন - ধারণে মনে হতো কনসালট্যান্সি , যেহেতু নিজেও টুকটাক কনসালট্যান্সির মাধ্যমেই সংসার খরচ জোগানোর অপচেষ্টা করছি বেশ কয়েক বছর ধরে । সরল চিন্তার মানুষ যাকে বলে ফ্রিল্যান্সিং , বুদ্ধিধর মানুষ কনসালট্যান্সি , সেটাকেই একটু ভিন্নভাবে গ্ল্যামারাইজ করে ‘ বিজনেস ফিলোসফার ' নাম দিয়েছে সে ; ধরাবাঁধা চাকরি না করে বিভিন্ন কোম্পানিতে খ্যাপ মারা ; একে গ্লোরিফাই করার মাঝে কৃতিত্ব কী !
- বিজনেস ফিলোসফি ধারণার সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের পর এটাই ছিল আমার প্রাথমিক ইমপ্রেশন । তবু কৌতূহলবশত গুগলে ‘ বিজনেস ফিলোসফার ' শব্দটা লিখে যা পাই সেই সূত্রে বুঝতে পারি কনসালট্যান্ট + স্ট্র্যাটেজিস্ট দুয়ের সমন্বয়ে একটি পেশা , যা খুবই মারজিনালি কনসালট্যান্সি থেকে আলাদা । এটুকু পার্থক্য চাইলেই উপেক্ষা করা যায় । তবু এ ব্যাপারে সরাসরি পাপড়ির কাছ থেকেই ব্যাখ্যা শুনতে চেয়ে ই - মেইল পাঠাই । সে এক দীর্ঘ রিপ্লাই দেয় । মূলত তখন থেকেই ‘ বিজনেস ফিলোসফি ’ কনসেপ্টটা আগ্রহের জায়গা হয়ে ওঠে 1 বিজনেস ফিলোসফার পেশাকে ব্যাখ্যা করতে সে বলে , ‘ ক্যাপিটালিস্ট বিশ্বব্যবস্থার প্রধান সেলিং পয়েন্ট ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বা ইনডিভিজ্যুয়ালিজম ।
-
এটা একটা ম্যাজিক ওয়ার্ড । এর প্রভাবে যৌথ পরিবার , পারস্পরিক সহায়তা সম্প্রীতি নীতি ভেঙে পড়ছে , যুক্ত হয়েছে প্রাইভেসি নামক আরেক ম্যাজিক ওয়ার্ড । প্রচুর আয় করো , ব্যয় করো তার চেয়েও বেশি , সম্পদ জমা করো সবচেয়ে বেশি — এই নিয়মের আইরনিটা দেখো ; একটা নির্দিষ্ট চ্যানেলেই সব টাকা ঘুরছে এবং পিরামিডের সবচেয়ে ওপরের স্তরে থাকা গুটিকয়েক মানুষ হচ্ছে সম্পদের মালিক । কিন্তু সোশ্যাল ইকোনমিকসে ভারসাম্য বজায় রাখে স্মল এবং মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজগুলো । তাদের সম্পদ সীমিত , কিন্তু প্রফিট করার টার্গেট অফুরন্ত । আজকের বিশ্বব্যবস্থায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য এবং প্রাইভেসিকে চাইলেও উপেক্ষা করতে পারবে না , তোমাকে করতে দেওয়া হবে না ।
পক্ষান্তরে , এই দুটো প্রবণতা মানুষকে বাহ্যিকভাবে জমকালো বানালেও তার অভ্যন্তরীণ সত্তাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে । যে কারণে তুমি দেখবে আত্মহত্যার হার বাড়ছে , ডিভোর্স , মাদকাসক্তি , সমকামিতা বাড়ছে । মানুষের নিজের বলতে কোনো জায়গা নেই । যে প্রফিট করছে সে - ও বিপর্যস্ত , যে প্রফিট করছে না সে - ও বিধৃস্ত । কারণ কী ? তারা বিজনেস বিষয়টিকে কেবলমাত্র বস্তুবাদিতার জায়গা থেকে দেখতে গিয়ে মেকি আচরণ , মেকি চিন্তাধারা এবং মেকি নীতির ফাঁদে আটকা পড়ছে । তাতে গত শতাব্দীতে পার পাওয়া গেলেও একুশ শতকের জ্ঞান এবং স্কিলভিত্তিক পৃথিবীতে এভাবে সাসটেইনেবল গ্রোথ নিশ্চিত করা অসম্ভব ।
তুমি যদি জায়ান্ট কোম্পানি না হও , মেকি চিন্তাধারা দিয়ে তোমার বিজনেসের মার্কেট আয়ুসীমা সর্বোচ্চ ৭ বছর । মেক থেকেই মেকি । ইংরেজিতে মেক মানে তৈরি করা , বাংলায় সেটা সামান্য ইম্প্রোভাইজড হয়ে মেকি বলতে যে শব্দের উদ্ভাবন ঘটেছে তার অর্থ আরোপিত বা নকল । প্রশ্ন হলো , ‘ তৈরি করা ’ আর ‘ আরোপিত ' দুটো কি অর্থগত দিক থেকে কাছাকাছি ? এটাই অনুভব , এক্সপ্লোর এবং উপলব্ধির বিষয় । এখান থেকেই বিজনেস ফিলোসফারের জন্ম । তুমি এসব গুগলে পাবে না , আমার কথাগুলোকে হাইপোথিসিস হিসেবেই ধরতে পারো ।
আমি বলতে চাই , বিজনেসেরও একটি আধ্যাত্মিক এবং নান্দনিক এসেন্স আছে , যার সঙ্গে মানুষকে কানেক্ট করতে হবে । হয় প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস , বিজনেসের মৌলিক প্রস্তাবনা তো এটাই । প্রোডাক্ট কোম্পানি নিজেদের প্রোডাক্টকে সার্ভিসে রূপান্তরিত করবে , আর সার্ভিস কোম্পানি সার্ভিসটাকেই প্রোডাক্ট বানিয়ে ফেলবে । যারা পারবে তারা বড় হবে অথবা টিকে যাবে , যারা বুঝবে না অথবা বোঝার প্রয়োজনও বোধ করবে না , তারা শাবানা আলমগীরের অভাবের সংসার সামলিয়ে কূল পাবে না । মানুষ কেমন অদ্ভুত প্রাণী দেখো ; তারা সেলফি তুলতে সদাব্যস্ত অথচ আয়নার সামনে দাঁড়াতে অস্বস্তি বোধ করে । বিজনেস ফিলোসফারের ভূমিকা হলো সেলফি এবং আয়নার মধ্যবর্তী একটা বাইপাস তৈরি করা ।
তুমি আমাকে সিনেমাটোগ্রাফারও বলতে পারো চাইলে । সিনেমায় যা দেখি সবই তো ক্যামেরার কারুকার্য । ক্যামেরার অবস্থানের এদিক - সেদিক করে একই দৃশ্য পুরোপুরি বিপরীত অ্যাঙ্গেল থেকে ধারণ করা যায় । আমি ক্যামেরা ফোকাস করি মানুষের মাথার অভ্যন্তরে , যাতে তার খুব সাধারণ একটা ভাবনাও ক্যামেরার গুণে অনবদ্য লাগে । টাকা তো এন্ড রেজাল্ট বা চূড়ান্ত পরিণতি । তুমি ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে যাবে , তখনই যখন বাস থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে নামবে । নামলেই তো নামা হয়ে গেল , কিন্তু নামার আগ পর্যন্ত একটা কর্মচক্র আছে । এই চক্রটাই হলো বিজনেস , এটা যে যত স্মার্টলি ডিজাইন করতে পারবে তার ঠাকুরগাঁওয়ে পৌঁছানোর অভিজ্ঞতা বাকিদের চেয়ে ভিন্নতর হবে ।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....