বইঃ ইতি স্মৃতিগন্ধা
লেখকঃ সাদাত হোসাইন___________
পারু হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছতে মুছতে হেসে ফেললো। তারপর বলল, এই কটা টাকাইত অর্ধেকটা মেলা কেনা যাবে না। তাহলে, ম্লান গলায় বলল ফরিদ।পারু এই ভিরের মধ্যে আরো গা ঘেঁষে ধারালো। তারপর বলল এই টাকায় পুরো পৃথিবী টা কেনা যাবে। আস্ত পৃথিবীটা। কথাটা কি ছিল কে জানে! ফরিদ এক হাত দিয়ে পারুকে তার আরো কাছে টেনে নিতে চাইল। কিন্তু পারল না। তার আগেই পেছন থেকে আসা তীব্র গতির ভিড়ের স্রোতে হঠাৎ ছিটকে গেল পারু। তখন বিকেল প্রায় মরে এসেছে।
ℹ️ বইটি রকমারি সহ বিভিন্ন বই সম্পর্কিত ওয়েবসাইটে প্রি অর্ডার চলছে, তাই দেরি না করে এখনি হার্ডকপি ক্রয় করুন।
সন্ধ্যা নামাবে বলে অপেক্ষা করছে অন্ধকার। তবে সে অন্ধকারের অপেক্ষা কে আরো প্রলম্বিত করে দিয়ে মেলার মাঠে একে একে জ্বলে উঠতে লাগলো রংবেরঙের আলো। সেই আলোয় আরো রঙিন, আরো ঝলমলে হয়ে উঠতে লাগলো চারপাশ। বিচলিত ফরিদ পিছন ফিরে তাকাল। আর ঠিক তখনই লম্বা গৌড় বর্ণের একজন লোককে কেন্দ্র করে একটা বিড়ির এগিয়ে আসতে দেখল সে। লোকটার নাকের নিচে পাকানো গোফ।
বইপাও ডট কম এ সাদাত হোসাইন এর সকল বই PDF
মাথাভর্তি ঘন কালো চুল। পরনে ধবধবে সাদা সিল্কের পাঞ্জাবি। তিনি চারপাশটা দেখতে দেখতে ধীরপায়ে এগিয়ে আসছেন। তার চোখে মুখে স্পষ্ট পরিতৃপ্তির আভা। কয়েকজন দশাসই শরীরের লোক তার আগে আগে লাঠি হাতে লোকজন সরিয়ে জায়গা করে দিচ্ছে। এ কারণেই এদিকটাতে হঠাৎ ছোটাছুটি বেড়ে যাচ্ছে। ভিড় বেড়েছে। পারুসেই ভিড়ে ছিটকে গেছে। ফরিদ খানিক পেছনে ছুটে গিয়ে তাকে খুঁজে বের করল।
তারপর তার হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো মেলা থেকে দূরে ।এখানে তেমন কোলাহল নেই ।সবকিছু শান্ত চুপচাপ কিন্তু তারপরও পাথর চোখে মুখ থেকে ভয়ের ছাপ টা যেন আর গেল না। সেই শক্ত করে ফরিদের হাত ধরে বসে রইল। ফরিদ বলল ভয় পেয়েছিলে? পারু ঠোঁট কাঁপছে। সে সম্ভবত ভিড়ের ধাক্কা হুড়োহুড়িতে মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। তার লাল শাড়িতে ধুলোবালি লেগে আছে। ফরিদ তাকে আরো খানিকটা দূরে সরিয়ে নিয়ে এলো।
এইখানটাতে একদমই মানুষ নেই। পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে বংশী নদী। এই সময়ের নদী খুব একটা ভরভরন্ত না হলেও জলের অভাব ও তেমন নেই। বরং মেলা থেকে ঠিক করে আসা রংবেরঙের আলো নদীর ঘাট জুড়ে বাধা অসংখ্য নৌকা আর মাঝিদের হৈ-হুল্লোড়ে বেশ একটা জমজমাট ভাব। যদিও সন্ধ্যার ম্লান আলোয় বিশাল বংশী নদীর ওপার টা ঠিক ঠাওর করা যাচ্ছে না। ফরিদ পারুকে একটা গাছের তলায় বসালো।
তারপর বলল কি হল তোমাকে এত ফ্যাকাসে লাগছে কেন। পারো চেষ্টা করছে নিজেকে সামলে নেওয়ার। কিন্তু পারছেনা। সে প্রায় ভাঙ্গা গলায় বলল আমার খুব ভয় করছে। খুব ভয় করছে। কেন? এখানে ভয় পাওয়ার কি আছে? আমি ঠিক জানিনা। কিন্তু আমার খুব ভয় হচ্ছে। কিসের ভয়? এইটুকুতেই কেউ এত ভয় পায় নাকি বোকা মেয়ে। আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে ফরিদ বলল।
আপনি যদি আমাকে আর খুঁজে না পেতেন। কেন খুঁজে পাবো না? একটু যেন অবাকই হল ফরিদ। এই যে এত ভিড় ওখানে। মানুষ যেভাবে পাগলের মত এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছিল, আমি যদি হারিয়ে যেতাম? যদি আপনাকে আর খুঁজে না পেতাম? ফরিদ পারুর পাশে বসলো। তারপর আলতো হাতে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল বোকা মেয়ে তুমি হারিয়ে যাবে কেন? আমি শুনেছি অনেকেই মেলায় হারিয়ে যায়। তারপর আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায় না তাদের।
আজ যদি আমিও আর আপনাকে খুঁজে না পেতাম। তাহলে কি হতো আমার ?কই যেতাম আমি? কি করতাম? ফরিদ এবার হাসলো। তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য খানিক রসিকতার স্বরে বলল, কি আর করতে? আমাকে এখানে একা ফেলে রেখে ঢাকায় চলে যেতে। আমিও তোমাকে রাতভর খুঁজে না পেয়ে ভোর বেলা বাসায় ফিরে যেতাম। গিয়ে দেখতাম তুমি বাসায় আমার জন্য রান্নাবান্না করে অপেক্ষা করছে। আমিতো বাসা চিনিনা।
ঠিকানা ও জানিনা। যদি আমি সত্যি সত্যি হারিয়ে যেতাম...! পারুল ঠোঁট কাঁপছে। তার চোখে ভীত-সন্ত্রস্ত দৃষ্টি। এই সামান্য ঘটনায় যে কেউ এমন ভয় পেতে পারে তা ফরিদের ভাবনাতেও ছিল না। তবে একটা বিষয় সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে, গত কিছুদিনের ঘটনায় পারুল ভেতর একটা ভয় ঢুকে গেছে। সে সারাক্ষণ ভাবতে থাকে এই বুঝি ভয়ঙ্কর কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে।
💕 ইতি স্মৃতিগন্ধা বইটির সর্ট পিডিএফ পড়ুন অথবা প্রি অর্ডার করুন।
কিংবা ফরিদ এর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এটা অনেকটা দুঃস্বপ্নের মত। এই দুঃস্বপ্ন তাকে সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়াচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে ,এর থেকে তাকে কি করে মুক্তি দেবে ফরিদ। মেলার ঝলমলে ভাবটাও এখানে তেমন নেই। সন্ধ্যার ম্লান আলো ক্রমশই জেঁকে বসেছে। সেই আলোয় দুই হাতে শক্ত করে পারুকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে রাখলো ফরিদ। তারপর তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, এত কষ্টে যাকে পেয়েছি তাকে হারিয়ে ফেলা যায়? পাহাড় ও কথা বলল-না। ফরিদ বলল হারিয়ে ফেলার জন্য তো তোমাকে আমি
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....