রিসালাতুল হিজাব
লেখক : শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীন (রহঃ)
প্রকাশনী : প্রত্যয়
বিষয় : পর্দা ও বিধি-বিধান
অনুবাদক : শাহরিন রিশা
পৃষ্ঠা : 136, কভার : পেপার ব্যাক
ভাষা : বাংলা।
সাপ্লায়ার জানিয়েছেন এই বইটি 10 January প্রকাশিত হতে পারে। প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে পণ্যটি পেতে আগেই অর্ডার করে রাখুন ।
"পর্দা-হিজাব-নিকাব নিয়ে কতকথা!
ক্ষয়ে যায় নারীজীবন রয়ে যায় ব্যথা।
-আপু নিকাবটাও পরে নিস, এতে চেহারা ঢাকা পড়বে।
-নারে, নিকাব পরলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।
জনৈক হাফদ্বীনদার ফ্যামিলীর কথোপকথন।"
আমরা সেদিকে যাবোনা, এই তো ক’দিন আগেও ছিল হিজাব-নিকাবের ব্যবহার নিয়ে তুমুল বাক-লড়াই। যুক্তি-তথ্যের সন্নিবেশে ছিল সেসব লড়াই বেশ উপভোগ্য। নিকাবের পক্ষের লোকের যুক্তির ঢালি ছিল যেভাবে উপচেপড়া রসে টইটুম্বুর তেমনি এর ব্যবহারের শিথিলতা নিয়ে যারা বিপক্ষে ছিলেন তাদের স্টক লজিকও ছিল দারুণ খেই হারানো মাঝির মতোন। তবে কেউ কেউ তো হিজাব খুলে রেখে দেওয়ার কথাও বলেছেন। তারা যথেষ্ট নারীচিন্তক বলা যায়।
মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন রাহি. -কে একটা কনফারেন্সে একদল অভিজ্ঞলোক হিজাব নিয়ে নানা প্রশ্ন করেছেন। চেহারা খোলা রাখা না রাখা নিয়েও তারা উপস্থাপন করেছিলেন অভিনব সব যুক্তিতর্ক। সেগুলোর বাস্তব অভিজ্ঞতালব্ধ ও শরয়ি প্রমাণসমৃদ্ধ উত্তর দিয়ে সমজে দিয়েছেন এই হালযামানার প্রসিদ্ধ আলেম।
হিজাব-নিকাব-পর্দার ব্যাপারে নানামুখী আলোচনা ও বয়ান জানতে ‘রিসালাতুল হিজাব’ অধ্যয়নের নিমন্ত্রণ রইলো।
পর্দা কুরআনের আলােকে পর্দার অপরিহার্যতা
আল্লাহ তাআলা বলেন, قل نؤمتات يغ ضن من أبضامه يفظن فروجه لا ندين زيتهن إلا ما زَ منها وليفريئ يره على وبه ولا يندرين زينته إلأ بعوليهن أ آباپهن أدآباء بعوليه أو أنتاپهن أو أناء بعوتهن أو إخوابهن أ بي إخوانهن أ بي أعواتهن أق ينايوئ أوما ملك أينائها و الثايعين عير وي الزي من الرحأ أوالفل ألذين لذ يظهؤوا على عواَت اليشاء ولا يفرن بأ جله ليغل ما ييفين من زينتهن وتوبوا إلىی ال لهجميعاًألّا المؤمون تعكذتفاون এবং (হে রাসুল ,) আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। সাধারণত যা প্রকাশমান, তারা যেন তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তাদের মাথার ওড়না দ্বারা গ্রীবা ও বক্ষদেশ ঢেকে রাখে।
তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন স্ত্রীলােক, অধিকারভুক্ত বাঁদি, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালকযারা নারীদের গোেপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ তারা ব্যতীত কারও কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গােপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তােমরা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন (তাওবা) করাে, যাতে তােমরা সফল হও।
[সুরা নুর : ৩১]
পরপুরুষের সামনে নারীদের হিজাব (পর্দা) অবলম্বন ফরজ-এ মর্মে উপর্যুক্ত আয়াতের প্রমাণপদ্ধতি বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। যেমন :
১. আল্লাহ আদেশ করেছেন, বিশ্বাসী মহিলাগণ নিজেদের গােপন অঙ্গসমূহ হিফাজত করবে। এই আদেশ বাস্তবায়নে প্রয়ােজনীয় উপায় অবলম্বন এবং এগুলার প্রয়ােগও এই আদেশের অন্তর্ভুক্ত। কোনো বােধজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ এটা অস্বীকার করতে পারবে না যে, মুখ ঢেকে রাখা হচ্ছে হিফাজতের অন্যতম উপায়। কারণ, মহিলাদের অনাবৃত মুখের সৌন্দর্য পুরুষকে আকৃষ্ট করতে পারে। তার মনে কুপ্রবৃত্তি জাগিয়ে তুলতে পারে। এ ছাড়া শয়তানও প্ররােচনা দিতে পারে। সব মিলিয়ে হিজাববিহীন নারীর প্রতি পুরুষের মনে কামনা জন্ম নেওয়া স্বাভাবিক। ফলে তাদের মধ্যে যােগাযােগ স্থাপন হয়ে যেতে পারে। এমনকি অবৈধ সম্পর্কও তৈরি হতে পারে।
এ সম্পর্কে রাসুল বলেন, العينان تزنيان وزناهما النظر« | (মানুষের) চোখযুগল জিনা করে; আর এ দুটির জিনা হলো কামুক দৃষ্টিপাত।
[১] রাসুল আরও বলেন, والفرج يصدق ذلك أو يكذبه« | আর যৌনাঙ্গ তা বাস্তবায়ন কিংবা প্রত্যাখ্যান করে। এতে সুস্পষ্ট হয় যে, মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা গােপনাঙ্গ হিফাজতের অন্যতম উপায়। অতএব, তা কুরআনের উপর্যুক্ত আদেশের অন্তর্ভুক্ত। কেননা, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে বিধান আরােপ করা হয়, সেই একই বিধান প্রযােজ্য হয় লক্ষ্য অর্জনে জরুরি উপায়সমূহের ক্ষেত্রেও।
[২]আল্লাহ তাআলা বলেন, وليفر بن يرهن على جيویو | এবং তারা (নারীরা) যেন তাদের ওড়না গ্রীবা ও বক্ষদেশে জড়িয়ে রাখে।
[সুরা নুর : ৩১]
___________________________________________
মুসনাদু আহমাদ: ৩৯১২ সহিহ বুখারি : ৬২ ৪৩, ৬৬১২; সহিহ মুসলিম: ৬৯২৪)
আয়াতে উল্লেখিত খিমার হচ্ছে নারীর এমন পােশাক, যা দ্বারা সে কেবল মাথা আবৃত করে। স্কার্ফ দ্বারা যেভাবে করে থাকে। তাই নারীকে যদি তার বক্ষদেশের ওপর খিমার টেনে নিতে আদেশ করা হয়, তাহলে অবশ্যই তাকে মুখমণ্ডল ঢেকে রাখারও আদেশ করা হয়েছে। হােক সেটা প্রয়ােজনীয়তার তাগিদে কিংবা সাদৃশ্যের কারণে। কারণ, ঘাড় ও বুক আবৃত রাখা যদি আবশ্যক হয়, তাহলে এটা স্পষ্ট যে, মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা অত্যাবশ্যক হবে। কেননা, তা হলাে রূপ-লাবণ্য ও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এটা এ কারণে যে, মানুষ যখন কারও সৌন্দর্য নিয়ে আলােচনা করে, তখন তার মুখাবয়ব হয় আলােচনার মুখ্যবিষয়। যদি নারী চেহারার দিক দিয়ে রূপবতী হয়, তাহলে মানুষ অন্য কিছু নিয়ে মাথা ঘামায় না। যখন কেউ বলাবলি করে যে, অমুক নারী দেখতে অপরূপা তখন সেই নারীর চেহারার সৌন্দর্য ব্যতীত অন্য কিছু বােঝায় না।
সুতরাং প্রমাণিত হলাে যে, চেহারাই হলাে রূপের আসল ঠিকানা। অতএব, কীভাবে ধারণা করা যায় যে, কুরআনের প্রজ্ঞাময় আইনে বুক ও ঘাড় ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়ে মুখমণ্ডল খােলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে? ৩. যা সাধারণত প্রকাশমান তথা যা গােপন করা সম্ভব নয়যেমন, কাপড়ের বাহ্যিক অংশতা ব্যতীত তাদের সাজসজ্জা প্রদর্শনের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা নিঃশর্ত নিষেধ জারি করেছেন। এজন্য আয়াতাংশে আল্লাহ এভাবে বলেননি যে, তারা যা প্রদর্শন করে; বরং বলেছেন, যা সাধারণত প্রকাশ হয়ে যায়। এরপর আল্লাহ তাআলা অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত অন্যদের সামনে সাজসজ্জা প্রদর্শন করতে নিষেধ করেছেন। এর মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয় যে, দ্বিতীয় সাজসজ্জা প্রথম সাজসজ্জা থেকে আলাদা। নারীদের সাজসজ্জার প্রথম ধাপ হচ্ছে তা- ই, যা সাধারণত দেখা যায় এবং কোনা অবস্থায়ই যা গােপন করা সম্ভব নয়; রবং তা যে কারও সামনে প্রকাশিত হয়ে যায়।
আর দ্বিতীয় ধাপযাকে নারীর গােপন অলংকরণও বলা যায়যে সাজসজ্জার মাধ্যমে একজন নারী নিজেকে রাঙিয়ে তােলে। অতএব, যদি এই (দ্বিতীয় প্রকার) সাজসজ্জা প্রতিটি ব্যক্তির জন্য অনুমােদিত হয়, তাহলে প্রথম ধাপের ক্ষেত্রে ব্যাপকতা আর দ্বিতীয় ধাপের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমতা অবলম্বনের কোনাে অর্থ থাকে না। উভয় প্রকার সাজসজ্জার মধ্যে পার্থক্য করার কোনাে উপায় থাকবে না। ৪. আল্লাহ তাআলা নারীদের এই অনুমতি দিয়েছেন যে, তারা ঘরের সে-সকল পুরুষের সামনে দ্বিতীয় ধাপের সাজসজ্জা প্রকাশ করতে পারবে, যারা পুরুষত্বহীন এবং নারীর প্রতি কোনােরূপ আকর্ষণ অনুভব করে না। তারা হচ্ছে ঘরের কর্মচারী যাদের কোনাে যৌনচাহিদা নেই।
এভাবে সে-সকল শিশু, যারা এখনাে বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হয়নি এবং নারীদের আওরাত বা গােপনাঙ্গ সম্পর্কেও অবগত নয় (তাদের সামনেও দ্বিতীয় ধাপের সাজসজ্জা প্রকাশের অনুমতি রয়েছে)। উপর্যুক্ত আলােচনার মাধ্যমে দুটি বিষয় আমাদের সামনে স্পষ্ট হয় আল্লাহ নারীদের উপ্যুক্ত দুটি শ্রেণি ব্যতীত অন্য কারও সামনে দ্বিতীয় প্রকারের সাজসজ্জা প্রকাশের অনুমতি দেননি। আল্লাহ কর্তৃক আদেশ দেওয়ার উদ্দশ্য হচ্ছে, নারীর সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ যাতে ফিতনায় পতিত না হয়। সন্দেহ নেই, চেহারাই হচ্ছে রূপের আসল ঠিকানা এবং ফিতনার কেন্দ্রবিন্দু। তাই মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক, যাতে এটি পুরুষদের প্রলুন্ধ হওয়ার কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
৫. আল্লাহ আরও বলেন, ولا يفيرن با جله غد ما يقفين من زينتهن তারা যেন তাদের গােপন সাজসজ্জা প্রকাশ করতে সজোরে পদচারণা না করে।
[সুরা নুর : ৩১]
এর অর্থ হলাে, মহিলাদের জোরে জোরে এমনভাবে পদচারণা করা উচিত নয়, যাতে তাদের পায়ের নূপুর বা এ জাতীয় শােভাবর্ধনকারী সাজসজ্জা প্রকাশ হয়ে যায়। সুতরাং নূপুরের ঝংকার শুনে কোনাে পুরুষ আকৃষ্ট হতে পারেএই ভয়ে যখন নারীর সশব্দ পদচারণা নিষিদ্ধ,
তখন চেহারা খােলা রাখা কীভাবে সিদ্ধ হতে পারে? এ দুটির কোনটি পুরুষকে অধিক প্রলুন্ধকারী? নারীর পায়ের নূপুরের ঝংকার? যখন পুরুষ জানেই না নারীটি কে, সে কী রূপবতী নাকি রূপবতী নয়, সে বৃদ্ধা নাকি অল্পবয়স্কা, সে দেখতে কুৎসিত নাকি আকর্ষণীয়? এর মধ্যে কোনটিকে বড় ফিতনা বলা হবেপায়ের এই নৃপুরের ঝংকার, নাকি যৌবনের আভায় উদ্ভাসিত, উন্মুক্ত, অপরূপ মুখশ্রীমেকআপের সজ্জায় যা হয়ে উঠেছে আরও সুন্দর?
যে সুন্দর ফিতনা ডেকে আনে, যে সুন্দর পুরুষদের দৃষ্টি তার দিকে টেনে আনে, সে সৌন্দর্যের ফিতনা বড়, নাকি নূপুরের ঝংকারের ফিতনা বড়? নারীর সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষণবােধ করে, এমন প্রত্যেক পুরুষ জানে, কোনটি বড় ফিতনা; আর কোনটি বেশি ঢেকে রাখা উচিত অথবা প্রদর্শন করা উচিত।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....