বইঃ দ্য লাভ লেখক: সুবর্ণ আইজ্যাক বারী

বইঃ দ্য লাভ
লেখক: সুবর্ণ আইজ্যাক বারী
বইটির ভূমিকা লিখছেন প্রসিডেন্ট থমাস এ সিকেনেগ্বি, ব্রনক্স সি. কলেজ, নিউইয়র্ক।
বইটি প্রকাশ করেছে নালন্দা প্রকাশনী, ঢাকা।
প্রকাশকঃ রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল।
অনুবাদঃ জুয়েল কবির।
মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০ টাকা।

ক্ষুদে বিজ্ঞানী ও লেখক সুবর্ণ আইজ্যাক বারীর প্রথম গ্রন্থ "দ্য লাভ" বিশ্ব মাতিয়ে এবার বাংলাদেশে অমর একুশে বইমেলায়।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কর্তৃক শিশু প্রতিভার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একজন আলোচিত শিশু বিশ্বের কাছে কী বার্তা পৌঁছাতে চায়, কী আছে এই বইটির সারমর্মে জানার আগ্রহ নিয়ে বইটি পড়লাম।
অনেকেই ভাবতে পারেন, এ বয়সে একজন সাধারণ শিশু ইলিমেন্টারি গণ্ডি পাড় হতে পারে না, ঠিকমতো কলম ধরতে শিখে না, সুবর্ণ কীভাবে এমন একটি বিশ্বমাতনো বই লিখতে পারে?

তাহলে আপনার জানার দরকার। সুবর্ণ কোনো সাধারণ শিশু নয়। বর্তমানে সাত বছর বয়সের মধ্যে সুবর্ণ জিতে নিয়েছে গ্লোবাল চাইল্ড প্রোডিজি এওয়্যার্ড। চার বছর বয়সেই পিএইচডি স্তরের গণিত, পদার্থ ও রসায়নের সমস্যা সমাধান করার সক্ষমতা দেখায়। তাঁর এই বয়সে মেধার পরিচয় জেনে প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১৬ সালে তাকে মেধার স্বীকৃতি দেন। ওবামা তাঁর বার্তায় লিখেন, "তোমার মতো প্রতিভাধর শিশু আমেরিকার জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন।" পৃথিবী বিখ্যাত অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর এই প্রতিভার স্বীকৃতি প্রদান করে। নিউইয়র্কের সিটি কলেজের প্রেসিডেন্ট ড. লিসা কাইকো তাকে "আমাদের সময়ের আইনস্টাইন " বলে উপাধি দেন।
আসুন, সুবর্ণের রচিত "দ্য লাভ" বিখ্যাত বইটি সম্বন্ধে একটু জানি। সুবর্ণের "দ্য লাভ" বইটি সম্পূর্ণ পড়ে কানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডু আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। অতঃপর তাকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি চিঠি লিখেন।
"দ্য লাভ" বইটি পড়ে ফরাসী রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রন তাকে এলিসি প্রসাদে আমন্ত্রণ জানান।
এমনকি বিশ্বের সেরা লেখক খালেদ হোসাইনি নিজ হাতে তাকে চিঠি লিখে অভিনন্দন জানান।

কারণ "দ্য লাভ" বইটি মানবতার মুক্তির কথা বলে, বইটি ধর্মীয় উগ্রবাদ বিরোধী কথা বলে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে, জাতিগত নিধনের বিপক্ষে কথা বলে, বইটি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে, বইটি ধর্ম বিরুদ্ধবাদের বিপক্ষে কথা বলে, বইটি বিশ্বশান্তির পক্ষে কথা বলে।

বই লিখার জন্য ২০১৮ সালে আমেরিকার জ্যাকসন হাইটসে মানবতাবিরোধী বাঙালি মুসলিম উগ্রপন্থীদের আক্রমণের তাকে শিকার হতে হয়।

সুবর্ণ জন্মের পরে তাঁর বাবা প্রফেসর রাশিদুল বারীর মুখে শোনেছে ভয়ংকর টুইনটাওয়ার হামলার কথা। এই সন্ত্রাসী হামলা যা ৯/১১ নামে ইতিহাসে পরিচিত। এই সন্ত্রাসী হামলায় তাঁর বাবা ও ছোট চাচা মরতে মরতে বেঁচে গিয়ে ছিলেন।
২০১৪ সালে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা, ২০১৫ সালে ওয়াশিংটনে সন্ত্রাসবাদ, ২০১৬ সালে ঢাকায় হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলা, এ হামলায় ফারাজ ও তারিশির মৃত্যু ছিলো হৃদয় বিদারক।
সুবর্ণ এই সাত বছর বয়সেই কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলা, শিশু হত্যার মতো জঘন্য হত্যাকাণ্ড দেখেছে কিন্তু মানবতার বিরুদ্ধে এই অপরাধগুলো তাকে ভিষণ চিন্তিত করে তুলে।

এ ছাড়া সুবর্ণ তাঁর চার বছর বয়সে পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম মানবতা বিরোধী অপরাধ দেখলো মায়ানমারে। রোহিঙ্গা মুসলিম জাতি নিধনে নামলো নারী হিটলার অং সান সু চির নেতৃত্বে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ৷ রোহিঙ্গা নিধনেরমতো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের ফলে চল্লিশ দিনের শিশু আব্দুল মাসুদেরমতো হাজারো শিশুর জীবন দিতে হলো। হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী পুরুষ সন্ত্রাসী বৌদ্ধদের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হলো। বৌদ্ধ ভিক্ষু ও সামরিক জান্তাদের হাতে সভ্রম হারালো মুসলিম যুবতী হাজার হাজার নারী। প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা মায়ানমার ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হলো বাংলাদেশ সীমানায়। অতঃপর তারা আশ্রয় গ্রহণ করলো বাংলাদেশে।
পৃথিবীর এই নিষ্ঠুরতা যেনো থামছে না। মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সুবর্ণের ধ্যান-জ্ঞান গণিত ও বিজ্ঞানের সাথে। কিন্তু নোবেল জয়ী অং সান সু চি মানবতার বিরুদ্ধে চলে গেলে গণিত ও বিজ্ঞানের গবেষণা কীভাবে করবে?

ইতোমধ্যে সুবর্ণের নানা কৃতিত্বের সম্মান জানাতে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে নিউইয়র্কের বাংলাদেশ প্রেসক্লাব এবং টাইম টেলিভিশনের যৌথ আয়োজনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হলো। সেদিন সুবর্ণ তাঁর ভাষণে বলে, "আমি এখানে সমস্ত রোহিঙ্গাদের মর্যাদার জন্য এই ভাষণ দিতে এসেছি। আমি এখানে সমস্ত মুসলমানের মর্যাদার জন্য এই ভাষণ দিতে এসেছি, আমি সকল মানুষের মর্যাদার জন্য এই ভাষণ দিতে এসেছি।"
সুবর্ণ রোহিঙ্গা ইস্যুতে পেস্টুন উচিয়ে "জাস্টিস ফর রোহিঙ্গা" শিরোনামে ক্যাম্পেইন করেছে। সুবর্ণ রোহিঙ্গা মুসলমান নির্যাতনকে মুসলিম সমস্যা বলতে চায় না। এটা একটি মানবিক সংকট হিসাবেই দেখতে চায়। কারণ চল্লিশ দিনের শিশু আব্দুল মাসুদকে নির্মম হত্যা করা হয়।

অং সান সু চি একজন মহিলা হয়ে যখন কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নারী ধর্ষণের জন্য দায়ী হন, এটাকে মুসলিম সমস্যা বলা যায় না। সুবর্ণ এটিকে মানবিক সমস্যা হিসাবেই দেখে। সুবর্ণ তাঁর বিখ্যাত "দ্য লাভ" বইয়ে উল্লেখ করে বলে, "আমার একটি স্বপ্ন আছে যে, অং সান সু চি শিগগিরই রোহিঙ্গা দর্শনের প্রচারে আমার সাথে যোগ দিবেন। আমার একটি স্বপ্ন আছে যে, অং সান সু চি শিগগিরই সমস্ত রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সফর করবেন। আমি স্বপ্ন দেখি যে, একদিন অং সান সু চি একটি রোহিঙ্গা বাচ্চাকে কোলে নেবে এবং তার গালে একটি চুমু দিবেন। সুবর্ণ বলে, তাদেরকে বুঝতে হবে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও রোহিঙ্গারা একই গাছের দুটি শাখা মাত্র। আর মিয়ানমার হচ্ছে সে গাছ।"

সুবর্ণ তাঁর বইয়ে বলতে চেয়ে যে, ভালোবাসা দিয়ে বিশ্বকে শান্তির দিকে ফিরিয়ে নিতে হবে। বিশ্বের সকল সমস্যা ভালোবাসার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে। মানবতার মুক্তি আসতে পারে পরস্পরকে ভালোবসার মাধ্যমে। পৃথিবীতে মানুষ মানুষের জন্য কিছু দায়িত্ব রয়েছে। বিশ্বকে অধিক শান্তিপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ করতে হলে সকল ক্ষেত্রে ভালোবাসাই সামনে আসে। সুবর্ণের "দ্য লাভ" বইটি সমকালীন বিশ্ব সংকট সমাধানের একটি যুগোপযোগী থিউরি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ