আমেরিকা : ভৌগলিক অবস্থান ও অবস্থানগত সুবিধা - নুরুল্লাহ হোসাইন
আমেরিকা! এ যেন এক নতুন দুনিয়া! যেন এক কল্পজগত! বিশাল বিস্তৃত ভূমি নিয়ে বাকি দুনিয়ার থেকে পৃথক এর অবস্থান। পৃথিবীর বুকে আমেরিকা যতটা জায়গা নেয়, তার চেয়ে বেশি জায়গা দখল করে মনের রাজ্যে। কল্পনা ও স্বপ্নের সাথে বিভ্রম আর বিস্ময়ের কুহেলিকা চমকাতে থাকে। দুনিয়ার সকল দেশ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অন্তর এর প্রতি আকৃষ্ট।
আমেরিকার বিস্তৃত ভূমি ছড়িয়ে আছে আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের তীর পর্যন্ত। আমেরিকার ভূ-প্রাকৃতিক সম্পদ, শক্তি ও মানব সম্পদ যেন কখনো ফুরিয়ে যাওয়ার নয়! আমেরিকার নাম শুনলেই চোখে ভাসে এর বিশাল-বিশাল ফ্যাক্টরি আর কলকারখানার ছবি। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ওদের সমকক্ষ কেউ নেই। ওদের আছে নানাবিধ দক্ষ প্রতিষ্ঠান, গবেষণাগার, জাদুঘর। আমেরিকানদের যেকোনো কাজের ব্যবস্থাপনা ও সংগঠন দেখে আশ্চর্য হতে হয়। মনে ভক্তি জাগে। আমেরিকার প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধি দেখে সেই ‘প্ৰতিশ্ৰুত ভূমি’ বা ‘প্রমিসড ল্যান্ড' এর কথা মনে জেগে উঠে। আমেরিকার অনিন্দ্য সুন্দর সব প্রাকৃতিক দৃশ্য আর এর অধিবাসীদের সুগঠিত দেহ ও সুন্দর চেহারা দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হতে হয়।
আমেরিকা এমন সব উপায়-উপকরণ দিয়ে ভোগ-বিলাসের দিকে
হাতছানি দিয়ে ডাকে যার কোন সীমা-পরিসীমা নেই। নৈতিক বাধাও নেই। স্থান ও সময়ের মানদণ্ডে এই স্বপ্ন ধরা দেয় বাস্তবিক আকৃতি নিয়ে।
মানবিক মূল্যবোধের দৃষ্টিতে আমেরিকা
দ্য গ্রেট আমেরিকা: মানবিক মূল্যবোধের মানদণ্ডে এর অবস্থান কোথায়? মানুষের নীতি-নৈতিকতা ও বিবেকবোধে আমেরিকা কী সংযোজন করেছে? আর পরিশেষে, কতটা অবদান রাখতে পারবে?
যদি আমেরিকার বস্তুগত সম্পদ-প্রাচুর্যকে এক পাল্লায় রাখা হয়, আর অন্য পাল্লায় রাখা হয় ওদের মানবিক বৈশিষ্ট্যকে, তাহলে কী উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য পাওয়া যাবে?
সময়ের চাকা ঘুরতে ঘুরতে একসময় সবকিছু থেমে যাবে। ইতিহাসের পৃষ্ঠা উল্টে যাবে। নতুন ইতিহাস আসবে। কিন্তু আমি আশংকা করি, আমেরিকা কিছুই সংযোজন করতে পারবে না মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের খাতায়। অথচ এই মূল্যবোধের কারণেই মানুষ আর পশুপাখি আলাদা, মানুষ আর জড়বস্তু আলাদা।
সভ্যতা বিচারের মাপকাঠি
যুগে যুগে বহু সভ্যতা এসেছে। বহু সভ্যতা বিদায় নিয়েছে। কোন সভ্যতা কী যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করল, অথবা কার ক্ষমতা কত বেশি ছিল—এগুলো কোনো সভ্যতা বিচারের আসল মাপকাঠি নয়। কে কত ফল-ফসল উৎপন্ন করল সেটাও বিবেচ্য নয়। বরং একটি সভ্যতার লোকেরা দুনিয়ার প্রতিকী দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে, আর কী-কী ‘ইউনিভার্সাল ট্রুথ’ বা সার্বজনীন নীতি ও মূল্যবোধ মেনে চলে সেটাই আসল কথা।
কেননা এসব মূল্যবোধই মানুষের আধ্যাত্মিকতা, বিবেকবোধ ও অনুভূতিকে উন্নত করে। দুনিয়াতে বিচরণশীল প্রতিটি প্রাণের মূল্য বুঝতে সাহায্য করে। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে মানুষ হয়ে মানুষের মূল্য বুঝতে শিখে। এভাবেই বাড়তে থাকে মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য। এই পার্থক্য চিন্তাচেতনার, আবেগ-অনুভূতির এবং জীবন ও সম্পদের মূল্য যাচাইয়ের।
হরেক রকমের নিত্য-নতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করা, একচ্ছত্র শাসন পরিচালনা করা কিংবা দালানকোঠা নির্মাণ করা হলো বস্তুগত উন্নতি। এগুলো স্বতন্ত্রভাবে মানবিক মূল্যবোধকে বাড়াতেও পারে না, কমাতেও পারে না। তাই মানবিক মূল্যবোধ বিচারে এসবের কোন ওজন নেই। এগুলো তো কেবল নির্দেশক। তাই আমাদেরকে দেখতে হবে, মানুষ তার মানবিকতা নিয়ে কতটুকু অগ্রগতি অর্জন করল। এটাই মৌলিক মূল্যবোধ। বস্তুজগৎ আর প্রাণীজগৎ--এই দুই জগতের থেকে সে কতটা সামনে এগুতে পারল, আর নিজের মানবিক হিসাবের খাতায় কী-কী সম্পদ ও আত্মোপলব্ধি যোগ করল, সেটা মাপার জন্য নির্দেশক হিসেবে কাজ করতে পারে এসব প্রযুক্তিগত আবিষ্কার ও বস্তুগত সম্পদগুলো।
এক সভ্যতা বিদায় নিবে, আরেক সভ্যতা আসবে এটাই দুনিয়ার নিয়ম। এক জাতি যা অর্জন করে, সেগুলো আরেক জাতির প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমে বাতিল হয়ে যায়। শুধু টিকে থাকে মানুষের মূল্যবোধ ও জীবন দর্শন। এটাই সেই মৌলিক মানদন্ড যার মাধ্যমে আমরা একটি সভ্যতার সাথে আরেকটি সভ্যতার এবং একটি দর্শনের সাথে আরেকটি দর্শনের তুলনামূলক পর্যালোচনা করতে পারি।
লেখক : সাইয়েদ কুতুব (রহঃ)
প্রকাশনী : সন্দীপন প্রকাশন
বিষয় : ইসলামি বিবিধ বই, নানাদেশ ও ভ্রমণ
অনুবাদক : জাবির মুহাম্মদ
পৃষ্ঠা : 56, কভার : পেপার ব্যাক
ভাষা : বাংলা
Comments
Post a Comment
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....