রাসুল ﷺ ও সাহাবিদের চোখে "আমলি জিন্দেগি - Amoli Jindegi" রিভিউ পড়ুন

রাসুল ﷺ ও সাহাবিদের চোখে "আমলি জিন্দেগি - Amoli Jindegi"
[ইলম ও আমলের সমন্বয়]
লেখক:
হিজরি পঞ্চম শতাব্দীর বিখ্যাত আলিম
ইমাম আবু বকর খতিব আল-বাগদাদি রহ.
মৃত্যু ৪৬৩হিজরি
-
কুরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি সামান্য অনু-পরিমাণ নেক আমল করবে কিয়ামত দিবসে সে তা দেখতে পাবে। আর যে ব্যক্তি সামান্য অনু-পরিমাণ বদ-আমল করবে কিয়ামত দিবসে তাও দেখতে পাবে।”
সহিহ হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তাআলা তোমাদের বাহিক্য আকৃতি ও শারীরিক গঠনের দিকে লক্ষ্য করেন না। তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে লক্ষ্য করেন।”

কুরআনে কারিম-হাদিস শরিফ যেমন ইলম অর্জনের তাগিদ প্রদান করা হয়েছে তেমনি বিশেষভাবে অমলেরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘ইলমের গ্রহণযোগ্যতা, সুরক্ষা, হাতিয়ার, ও সুন্দর্যতা হল আমল বা আমলে সালিহ’। হাশরের ময়দানে ইলম কি পরিমাণ অর্জন করা হয়েছে তা জিজ্ঞাসা করা হবে না, বরং ‘আমলে সালিহ’ কি পরিমাণ সম্পাদন করা হয়েছে তা অবশ্যই জিজ্ঞাসা করা হবে। আমাদের সমাজে বর্তমানে এমন মানুষ পাওয়া খুবই দুষ্কর যিনি কুরআন-হাদিস সম্পর্কে কিছুই জানেন না। 

সবাই অন্তত কিছু না কিছু হলেও মাসআলা-মাসাইল জানেন।আমাদের জ্ঞানের উন্নতি ঘটলেও আমলের অধঃপতন ঘটছে প্রতিনিয়ত। অথচ কুরআনুল কারিম-হাদিস শরিফ দু'টিকেই সমান গুরুত্ব দিয়েছে।ইলমহীন আমল যেমন গ্রহণযোগ্য নয়,ঠিক তেমনিভাবে আমলহীন ইলমও গ্রহণযোগ্য নয়। ‘আমলি জিন্দেগি’র এমন গুরুত্বের কারণে সালাফদের মাধ্যে সাহাবি, তাবেয়ি, ফকিহ ও মুহাদ্দিস সকলেই অর্জিত ইলম নিয়ে সংকিত ছিলেন। তারা সর্বদা চিন্তা করতেন এবং ভীতসন্ত্রস্ত থাকতেন-আল্লাহ তাআলার দরবারে কি জবাব দিবেন তাঁরা? 
Image


অর্জিত ইলমের হক কতটুকু আদায় করতে পেরেছেন? কিয়ামত দিবসে কীভাবে ইলমের হিসাব দিবেন, নাকি এই ইলমের কারণে হিসাব দিবসে আটকে যাবেন?
সালাফগণ ইলমের সাথে সাথে ‘আমলি জিন্দেগি’কে সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। হিজরি পঞ্চম শতাব্দীর বিখ্যাত আলিম ইমাম আবু বকর খতিব আল-বাগদাদি রহ. তালেবুল ইলম সহ সকল শ্রেণীর মুসলিমদেরকে আমলের প্রতি আগ্রহী ও ‘আমলি জিন্দেগি’ গড়ে তোলার নিমিত্তে ﺍﻗﺘﻀﺎﺀ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺍﻟﻌﻤﻞ / "ইকতেজাউল ইলমি আল আমালু" নামে একক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। 

বাগদাদি রহ.এর বইটিতে নিজ বর্ণনাসূত্রে কুরআনে কারিমের তাফসির, হাদিস, সাহাবা রাযি. এর আছার ও তাবেয়ি রহ. এর বাণী সংকলন করেছেন।
আরবি বইটি খুবই যত্নসহকারে অনুবাদ ও বিশ্লেষণ করেছেন মুফতি আবুল ওয়াফা শামসুদ্দিন আযহারী। বইটির অনুবাদক ‘গ্রন্থকার বাগদাদি রহ.’ পর্যন্ত ধারাবাহিক সনদ উল্লেখ করেছেন। তিনি আরবি গ্রন্থটির হাদিস ও আছারের তাখরিজ, টীকা সংযোজন ও সার্বিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে বাংলাভাষী পাঠকদের পাঠপোযুগী করে তুলেছেন। বইটির নাম দিয়েছেন,
রাসুল ﷺ ও সাহাবিদের চোখে "আমলি জিন্দেগি - Amoli Jindegi"
[ইলম ও আমলের সমন্বয়]
-
আশা করছি, বইটির মাধ্যমে আমাদের সমাজের ছাত্র-শিক্ষক ও সকল মহলের পাঠকবৃন্দ উপকৃত হবেন।ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের এ প্রচেষ্টাকে কবুল করুন।এবং সবাইকে আমলি যিন্দেগি দান করুন।আমিন।

প্রথম অধ্যায়


কিয়ামতের দিবসে ইলমের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা

চারটি প্রশ্নের জবাব সকলকে দিতে হবে

عن أبي برزة أحمد الحرشي بن بن الحسن أخبرنا القاضي أبو بكر أحمد الأسلمي رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : «لا تزول قدما عبد يوم القيامة حتى يسأل عن أربع : عن عمره فيما أفناه، وعن علمه ماذا عمل فيه، وعن ماله من أين اكتسبه وفيما أنفقه، وعن جسمه فيما أبلاه.)

০১. হযরত ক্বাযি আবু বকর আহমাদ ইবনে হাসান ইবনে আহমাদ আল হারাশি রহ. এর সূত্রে, হযরত আবু বারযা আল-আসলামি রাযি.

সনদের ক্ষেত্রে প্রথম রাবি (বর্ণনাকারী) ও শেষ রাবির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, সাধারণ পাঠকগণ সনদের মাধ্যমে উল্লেখ যোগ্য কোন উপকার পাবেন না। তাছাড়া আরবি ভাষার মূল গ্রন্থে সনদ উল্লেখ রয়েছে। বিজ্ঞ পাঠক বা যারা সনদ সম্পর্কে সাম্যক জ্ঞান রাখেন প্রয়োজন বোধে সেখান থেকে উপকৃত হবেন।

do হযরত আবু বারযা আল-আসলামি রাযি. : তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অন্যতম সাহাবি। তাঁর পূর্ণ নাম হল, আবু বারযা নাদলা ইবনে উবাইদ আল-আসলামি রাযি.। ইবনে হাজার রাহ. ইসাবা গ্রন্থে এই নামটিকে সঠিক বলেছেন। তবে হিশাম ইবনে মুহাম্মাদ আল-কালবি রহ. বলেন, তাঁর নাম হল, নাদলা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আল হারেছ ইবনে হিবাল ইবনে রবিয়া ইবনে দা'বাল ইবনে আনাস ইবনে খুযাইমা ইবনে মালেক ইবনে সালামান ইবনে আসলাম ইবনে আফসা। তিনি ৭৪ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।

বিস্তারিত দেখুন : মাআরিফাতুস সাহাবা, আবু নুয়াইম আল-ইসপাহানি রহ., ০৫ : ২৮৩৯ ও আল-ইসাবা ফি তাময়িযিস সাহাবা, ইবনে হাজার রহ., ০১: ৮৭.

থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কিয়ামত দিবসে ৪টি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কেউ এক কদম অগ্রসর হতে পারবে না। আর তাহল, ১। সে জীবন কীভাবে কাটিয়েছে, ২। অর্জিত ইলম দিয়ে কতটুকু আমল করেছে, ৩। অর্জিত সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যায় করেছে এবং ৪। শরীর কীভাবে অবসান ঘটিয়েছে। ৩২

بن جبل

معاذ

. بن محمد بن داود الرزاز ... عن أحمد أخبرني أبو الحسن علي بن رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم :

(لا تزول قدما عبد يوم القيامة حتى يسأل عن أربع خصال : عن عمره فيما أفناه، وعن ماله من أين اكتسبه وفيما أنفقه، وعن علمه ماذا عمل فيه. »

০২. হযরত আবুল হাসান আলি ইবনে আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে দাউদ আর-রায্যায রহ. এর সূত্রে হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রাযি.৪ থেকে

অর্থাৎ দৈহিক শক্তি কোথায় ও কি কাজে লাগিয়েছে তার জবাব দিতে হবে। কারণ, মানুষ স্বীয় জীবনের যেমন মালিক নয় তেমনি সে তার কোন অঙ্গ-প্রতঙ্গেরও অধিকারী নয়। বরং এসব শুধু তাকে সাময়িক সময়ের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ ও সঠিক ব্যবহারের জন্য প্রদান করা হয়েছে। আর এজন্য ইসলামি স্কলারগণ বলেন, মানুষ মারা যাওয়ার পর তার দেহকে দান করা বা কোন অঙ্গ অন্যকে দিয়ে যেতে পারবে না।

সুনানে দারেমি, 'যে ব্যক্তি পরিচিতি ও প্রসিদ্ধি অপছন্দ করে’ অধ্যায়, হাদিস নং ৫৫৪, শাইখ হুসাইন সালিম আসাদ আদ-দারানির মতে হাদিসটির বর্ণনাসূত্র 'হাসান', হাদিস নং ৫৫৬, শাইখ দারানির মতে এটির বর্ণনাসূত্র ‘দয়িফ' হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রাযি. এর সূত্রে হাদিসটি মাওকুফ, আল-মু'জামুল কাবির তাবারানি, হাদিস নং ১১১, মুয়ায ইবনে জাবাল রাযি. মারফু সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে, সুনানে তিরমিযি, ‘কিয়ামাহ অধ্যায়’, হাদিস নং ২৪১৭, ইমাম তিরমিযি রহ. বলেন, হাদিসটি 'হাসান ও সহিহ', মুসনাদে বায্যার, হাদিস নং ১৪৩৫ ও ২৬৪০, মুসনাদে রুয়ানি, হাদিস নং ১৩১৩, আল-মু'জামুল আওসাত তাবারানি, হাদিস নং ২১৯১, আল-মু'জামুল কাবির তাবারানি, হাদিস নং ৭৬০, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে ও আল-মু'জামুল কাবির, তাবারানি, হাদিস নং ১১১৭৭, হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেন।

শাইখ আলবানি রহ. বলেন, পূর্বের ন্যায় এই হাদিসটির বর্ণনাসূত্র বিশুদ্ধ। ইমাম মুনযিরি রহ তারগিব গ্রন্থে বলেন, হাদিসটি বায়্যার ও তাবারানি বিশুদ্ধ সুত্রে উল্লেখ করেছেন। হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রাযি. : তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর

অন্যতম সাহাবি। তাঁর উপনাম ছিল, আবু আব্দুর রহমান। তিনি মদিনার অধিবাসী,
বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কিয়ামত দিবসে কোন ব্যক্তি চারটি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হতে পারবে না। ১। জীবন কীভাবে কাঁটিয়েছে, ২। সম্পদ কীভাবে অর্জন করেছে, ৩। কোথায় খরচ করেছে” ও ৪ । অর্জিত ইলম অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে।”৩৬

عن معاذ أخبرنا أبو الحسين علي بن عبد الوهاب بن أحمد بن محمد السكري ... بن جبل رضي الله عنه قال : «لا تزول قدم عبد يوم القيامة حتى يسأل عن أربع : عن جسده فيما أبلاه، وعمره فيما أفناه، وماله من أين اكتسبه وفي أي شيء علمه كيف عمل فيه؟ أنفقه، وعن :

০৩. হযরত আবুল হুসাইন আলি ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব ইবনে আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ আল-সাকারি রহ. এর সূত্রে হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, “কোন ব্যক্তি ৪টি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কিয়ামত দিবসে সম্মুখে আগ্রসর হতে পারবে না। ১। শরীর কীভাবে অবসান করেছে, ২। জীবন কীভাবে কাটিয়েছে, ৩। সম্পদ কোথা থেকে

খাজরায গোত্রের অন্তর্ভূক্ত ও আনসারি সাহাবি ছিলেন। হযরত মুয়ায রাযি. আকাবার শপথ, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ সহ বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। সাহাবি রাযি. এর মাধ্যে তিনি অন্যতম ফকিহ সাহাবি ছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ইয়ামেনের গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত করেন। ১৮ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ৩২ বছর বয়সে হযরত ওমর রাযি. এর খিলাফত চলাকালীন অবস্থায় 'আমওয়াস' নামক মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে শামে (বর্তমান জর্ডানে) ইন্তেকাল করেন।

বিস্তারিত দেখুন : মাআরিফাতুস সাহাবা, আবু নুয়াইম, ০৪: ২০১৩, ০৫ : 2435. এই হাদিসে সম্পদ অর্জনকে একটি বিষয় এবং সম্পদ ব্যয় করাকে আরেকটি বিষয় ধরা হয়েছে। এখানে অন্য আরেকটি জিজ্ঞাসার কথা উল্লেখ করা হয়নি যা পূর্বেল হাদিসে উল্লেখ আছে। আর তাহল, 'শরীর কীভাবে অবসান করেছে। of

প্রথম হাদিস ও দ্বিতীয় হাদিসের শব্দ একই শুধু বর্ণনাসূত্র ও সাহাবি রাযি. এর ভিন্নতা রয়েছে। আল-মু'জামুল কাবির, তাবারানি, হাদিস নং ১১১, ফাওয়ায়েদু তামাম, হাদিস নং ১৪৮০ ও আল-মাদখাল ইলাস সুনানিল কুবরা, বাইহাকি, হাদিস নং ৪৯৩ হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রাযি. মারফু সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে।

আল্লামা মুনযিরি রহ. বলেন, হাদিসটি বায্যার ও তাবারানি সহিহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। মুহাক্কিক শাইখ আলবানি হাদিসটি 'সহিহ' বলেছেন।

আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন।
We Respect Every Author Hardwork - boipaw.com™



লেখক:
হিজরি পঞ্চম শতাব্দীর বিখ্যাত আলিম
ইমাম আবু বকর খতিব আল-বাগদাদি রহ.
মৃত্যু ৪৬৩হিজরি
-
ভাষান্তরঃ
মুফতি আবুল ওয়াফা শামসুদ্দিন আযহারী
দাওরায়ে হাদিস ও তাখাসসুস ফিল ফিকহ (ইফতা)
জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ,ঢাকা১২০৪।
অনার্স, ইসলামিক ল্য,আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো,মিশর।
-
সম্পাদক:
মুফতি খালিদ সাইফুল্লাহ কাসেমি
ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ,ভারত।
-
প্রকাশনায়ঃ
মাকতাবাতুস সুন্নাহ Maktabatus sunnah
ইসলামি টাওয়ার,১১/১বাংলাবাজার,দোকা
ন নং১১,১ম তলা (গ্রাউন্ডফ্লোর) ঢাকা১১০০।
-
পৃষ্ঠা ৩২০
হার্ডকভার
৮০মি কালার কগজ
-
মুদ্রিতমূল্য ৫৯৮ টাকা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ