ফ্রিল্যান্সিং কী?
লেখক : মোঃ নূরুল্লাহ হোসাইন
ফ্রিল্যান্সিং ( Freelancing ) এর অর্থ হচ্ছে মুক্ত পেশা। যেখানে আপনি আপনার ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারবেন আপনার পেশায়। সচরাচর চাকরি করার ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকাল আটটা-নয়টার মধ্যে অফিসে যেতে হয়, কাজে একটু এদিক-সেদিক হলে বসের ঝাড়ি তো আছেই। একটা নিয়মের আবর্তে নির্দিষ্ট একটি গণ্ডির মধ্যে চলে সেই পেশাজীবন। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং এর উল্টো। আপনি কোনো নির্দিষ্ট বসের অধীনে কাজ করছেন না।
কারো সাথে কাজ করতে ভালো লাগছে না, আপনি অন্য কারো সাথে কাজ করতে সুযোগ পাচ্ছেন। প্রতিদিন আপনাকে নিয়ম করে অফিসে যেতে হচ্ছে না, বাসায় বসেই নিজের মতো করে কাজ করছেন। যদি কাজ করতে ভালো না লাগে ইচ্ছেমতো ছুটি কাটাতে পারছেন। প্রয়োজনমাফিক পরিবারকে সময় দিতে পারছেন। ইবাদতের ক্ষেত্রেও সময় পাচ্ছেন এবং স্বাধীনভাবে ইবাদত করতে পারছেন, শোকর-গুজার বান্দা হতে পারছেন।
"অর্থাৎ আমরা বুঝতেই পারছি, নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীনে স্থায়ীভাবে কাজ না করে মুক্তভাবে বাধাহীনভাবে কাজ করার নামই হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং"
অনেকেই মনে করেন যে ফ্রিল্যান্সিং বোধ হয় শুধু কম্পিউটারেই সীমাবদ্ধ কোনো বিশেষ কাজ। সারা দিন কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করাকেই ফ্রিল্যান্সিং ভেবে বসেন অনেকে। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টি শুধু অনলাইনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্ত পেশা হতে পারে অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও। আপনার লেখার হাত অনেক ভালো, আপনি ভালো
প্রবন্ধ লিখতে পারেন, আপনার জন্য সুযোগ রয়েছে ফ্রিল্যান্স লেখক হওয়ার।
কাগজ-কলমে লিখে পত্রিকা অফিসে পাঠিয়ে দিলেই কিন্তু হয়ে যাচ্ছে আপনার
কাজটি। এটাও কিন্তু একটি মুক্ত পেশা। আপনি লিখলে পারিশ্রমিক পাবেন আর না লিখলে কোনো পারিশ্রমিক আসবে না। তবে এই বইটিতে অফলাইন নয় অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কেই ধারণা দিব। তবে অবশ্যই ইনশাআল্লাহ আমার সীমিত জ্ঞানে ও ইসলামিক দৃষ্টিকোণ
থেকে।
মনে করুন, আপনি খুব সুন্দর ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে পারেন। এখন আমার কোম্পানির জন্য একটি ওয়েবসাইট প্রয়োজন। আপনাকে আমি এই কাজটি দিলাম নির্দিষ্ট পরিমাণের একটি অর্থের বিনিময়ে। এখানে আপনি যে কাজটি করছেন, সেটি হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং।
এখন আমি চাইলে কিন্তু কাজটি আপনাকে না দিয়ে আমার অফিসে একজন ওয়েব ডিজাইনার মাসিক বেতনে নিয়োগ দিয়ে কাজটি করতে পারতাম। কিন্তু এক্ষেত্রে কাজ না থাকলেও আমাকে মাসিক বেতনে নিয়োগ দেওয়া ওয়েব ডিজাইনারকে প্রতি মাসেই বেতন দিতে হতো। তথাপি আমি যখন একজন ফ্রিল্যান্সারকে দিয়ে কাজটি দ্রুততার সাথে কোনো মার্কেটপ্লেস থেকে করিয়ে নিচ্ছি তখন আমাকে এর জন্য নতুন করে কোনো লোক নিয়োগ দিতে হচ্ছে না। একজন ফ্রিল্যান্সার তার বাড়িতে বসেই যেকোনো কোম্পানির কাজ করে দিচ্ছে।
ফ্রিল্যান্সিং কিন্তু অনেক বিষয় নিয়েই করা যায়। আর এখানে নিজের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে আয়ও করা যায় প্রচুর পরিমাণে। চাকরিতে সাধারণত বেতনের পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেই বেতনে চাকরি করতে হয়। দক্ষতা অনুসারে বেতন বৃদ্ধির অনুপাতটিও সব সময় মনের মতো হয় না। আপনি আপনার প্রয়োজন অনুসারে নিজের বেতন কাঠামোর পরিবর্তন করতে পারবেন না। কিন্তু একজন ফ্রিল্যান্সারের বেতন কাঠামো নির্দিষ্ট নয়। হতে পারে কোনো মাসে সে তার ধারণার চাইতে কয়েক গুণ বেশি ইনকাম করে বসে থাকতে পারে। এখানে বেতন বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করার কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ আপনার তো কোনো নির্দিষ্ট বেতনই নেই। তবে হ্যাঁ, ফ্রিল্যান্সাররাও বাইরের দেশের বিভিন্ন কোম্পানির সাথে চুক্তিভিত্তিক নির্দিষ্ট বেতনে রিমোটলি কাজ করতে পারে।
আমি মনে হয় ধারণা দিতে পেরেছি, ফ্রিল্যান্সিং জিনিটা আসলে কী?
অনেকেই আবার ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিংকে এক করে ফেলেন। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং মোটেই এক বিষয় নয়। একটু আগে বলছিলাম ওয়েব ডিজাইনারের কথা। আমি আমার প্রতিষ্ঠানের বাইরের কাউকে অর্থাৎ আপনাকে দিয়ে যে কাজটি করিয়ে নিলাম এটি হচ্ছে আউটসোর্সিং। আর আপনি যে কাজটি করলেন সেটি হলো ফ্রিল্যান্সিং। আউটসোর্সিং-এর বাংলা অর্থের দিকে তাকালেও সেটি পরিষ্কার বোঝা যায়।
কোম্পানিগুলো কেন আউটসোর্সিং করাবে?
প্রশ্নটিই খুবই যৌক্তিক; কারণ স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন আসে যে কোম্পানিগুলো কেন আউটসোর্সিং করাবে, তারা তো চাইলে যেকোনো সময় নিজস্ব ডিজাইনার / মার্কেটার / রাইটার / এসইও এক্সপার্ট নিয়োগ দিয়েই কাজ করাতে পারে। একটু চিন্তা করে দেখুন কোম্পানি যদি নিজস্ব কোনো কর্মচারী নিয়োগ দিতে চায়, তাহলে একটি নির্দিষ্ট প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অফিস সেটআপ, কর্মচারীদের জন্য নতুন কম্পিউটার কেনা, নির্দিষ্ট ডেস্ক স্থাপন ইত্যাদি নানান বিষয় জড়িত একজন কর্মচারী নিয়োগ দিতে চাইলে।
সে ক্ষেত্রে যদি পর্যাপ্ত কাজ না থাকে তাহলে সেই কর্মচারীটি বসে থাকবে কিন্তু তার মাসিক বেতন ঠিকই পরিশোধ করতে হবে। এখন কোম্পানি যদি আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে কাজগুলো বাইরের কোনো ফ্রিল্যান্সারকে দিয়ে করায় তাহলে সে ক্ষেত্রে অনেক খরচ বেঁচে যাচ্ছে। আবার কাজটিও হচ্ছে দ্রুততার সাথে। এজন্যই কোম্পানিগুলো আউটসোর্সিং করিয়ে থাকে। এভাবে আউটসোর্সিং করার ফলে স্বল্প সময়ে অধিক কাজ সম্পাদন করতে পারছে কোম্পানিগুলো। সেজন্য কোম্পানিগুলো আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে তাদের কাজ করিয়ে থাকে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে। যদিও মার্কেটপ্লেসে কোম্পানির বাইরে ব্যক্তিগতভাবেও ক্লায়েন্টরা আউটসোর্সিং করিয়ে থাকে নিজেদের কাজগুলো।
💕 ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে আরো জানতে ⤵️ এই বইটি ক্রয় করুন।
লেখক : মোঃ নূরুল্লাহ হোসাইন
প্রকাশনী : অধ্যয়ন
বিষয় : ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং, জেনারেল বুকস
পৃষ্ঠা : 128, কভার : হার্ড কভার, সংস্করণ : 1st Published, 2022
ভাষা : বাংলা
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....