রাগ কি? কেন হয় ? রাগ নিয়ন্ত্রণের সহজ উপায় !

রাগ কি?

রাগ বা ক্রোধ (rag) মানুষের চরিত্রের অন্যতম অনুষঙ্গ। রাগ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। স্থান বিশেষে রাগের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সামগ্রিক দৃষ্টিতে রাগ কোনো ভালো গুণ নয়। দীর্ঘ দিনের তিলে তিলে গড়ে তোলা অর্জন অপরিনামদর্শী রাগের কারণে নিমিষেই ধ্বসে পড়ে। রাগ মানুষকে হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য করে তোলেরাগ জ্ঞান, বিবেক ও দ্বীনের পথ থেকে বিচ্যুত করে মানুষকে বিপথে নিয়ে যায়।

মানব প্রকৃতির ভেতর জন্ম থেকেই রাগ বিদ্যমান। একে সমূলে উৎপাটন করা যায় না। হাত, দাঁত, নখ ইত্যাদি যেমন মানবের রক্ষার অস্ত্র, রাগও তেমন একটি অস্ত্র। আর সেটা যথাস্থানে প্রয়োগ করলে হয় পুণ্য, অসদ্ব্যবহারে হয় পাপ। এর অন্যায় প্রয়োগ একটি ঘৃণ্য অপরাধ। অত্যধিক রাগ মানুষকে উদ্ধৃত এবং অহঙ্কারী করে তোলে। যার আদৌ রাগ নেই, তাকে ভীরু বলা হয়। অত্যধিক রাগ ও রাগহীনতার মধ্যবর্তী পন্থার নাম বিনয় বা নম্রতা। এটি চরিত্রের ভূষণ এবং সর্বোত্তম পন্থা।

ভাষাগতভাবে রাগ হচ্ছে বিরক্তি, অসন্তুষ্টি বা বিরোধিতার একটি শক্তিশালী অনুভূতি। পরিভাষাগতভাবে রাগ হচ্ছে আবেগের একটি অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন, যা একজনকে আক্রমণ করতে এবং প্রতিশোধ নিতে প্ররোচিত করে। যাতে নিজের অন্তরাত্মা প্রশান্ত হয়। উন্মত্ততা রাগের চেয়ে বেশি তীব্র, তাই একে বন্য এবং হিংস্র ক্রোধ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

রাগ হচ্ছে উপলক্ষ্য, হৃদয়ের উদ্বেলিত অবস্থা এবং অঙ্গসঞ্চালনের প্রবণতা ও ইচ্ছা। এই জিনিসগুলো আভ্যন্তরীণভাবে যে অগ্নিপ্রবাহ সৃষ্টি করে, সে প্রবাহে প্লাবিত হয় হৃদয় ও মস্তিষ্কের সবগুলো অঞ্চল। তখন আমাদের স্মৃতি দুর্বল হয়, বিবেচনাবোধ ক্ষীণ হয়ে আসে এবং মায়া-মমতার অনুভবটি ক্রমশঃ অধঃগামী হতে থাকে। এভাবে রাগ আমাদের মধ্যে পশুত্বকে ডেকে আনে। মস্তিষ্কের ভারসাম্যহীন নির্দেশে অঙ্গগুলো নিজস্ব শৃঙ্খলা থেকে বেরিয়ে এসে অস্থির ও উত্তেজিত হয়ে পড়ে।

রাগ হল একটি মানসিক অবস্থা যা অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা এবং প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষার ফলে ঘটে। যখন এই অবস্থা হিংস্র হয়ে ওঠে, তখন তা ক্রোধের আগুনকে তীব্র করে তোলে। একটি হিংসাত্মক ক্রোধ একজনের মস্তিষ্ককে গ্রাস করে নেয়, যার কারণে মন ও বুদ্ধি নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং শক্তিহীন হয়ে পড়ে।

Image of অতিরিক্ত রাগ কমানোর উপায় কি খেলে রাগ কমে রাগ নিয়ে ইসলামিক উক্তি রাগ কি মানসিক রোগ অতিরিক্ত রাগের কারন কি রাগ মানুষকে ধ্বংস করে অতিরিক্ত রাগের কুফল রাগ শয়তানের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার দোয়া রাগ কমানোর উপায় হাদিস রাগ কি রাগ কমানোর ওষুধ রাগ করা রাগ হওয়ার কারণ


রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়

আবু যারীফ

রাগ একটি দুর্বলতা কিন্তু মানুষ এটাকে শক্তি বলে মনে করে। আসলে, এটি একটি স্ফুলিঙ্গ যা আপনাকে আগুন সরবরাহ করে, তারপর সেই আগুনে আপনি অন্যকে পুড়িয়ে দেন। তাই রাগ শুধু আপনাকে কষ্টই দেয় না, অন্যকেও আঘাত করে। সুতরাং এই রাগ হচ্ছে আদম সন্তানদের হৃদয়ে শয়তানের প্রজ্বলিত একটি স্ফুলিঙ্গ।

ব্যক্তি জীবনে রাগের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, রাগ বা ক্রোধ হলো দমকা হাওয়ার মতো যেটি আচমকা মনের প্রদীপকে নিভিয়ে দেয়। আমরা যখন ক্রুদ্ধ-রাগান্বিত হই, তখন আমাদের ভিতরে একটি অগ্নিপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। উপলক্ষ্যের আকার ও ধরণ অনুযায়ী সে আগুন প্রবল ও দুর্বল হয়। এই আগুনটিকে সৃষ্টি করে মূলতঃ কোনো কিছুর ব্যাপারে আমাদের ভিতরের অসমর্থন, বিনাশ কামনা ও প্রতিশোধ পরায়নতা। রাগ বা ক্রোধ জিনিসটি এ তিনটিরই মিথস্ক্রিয়া। কিংবা এর যে কোনো একটি হাজির থাকলে রাগ হলো তার পরিণতি ও ফলাফল।

রাগের বৈশিষ্ট্য

রাগের অনেক বৈশিষ্ট্য ও ধরণ রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, ব্যক্তিটির মাঝে রাগের সঞ্চার হয়েছে। এর মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য হচ্ছে:

১. মুখ ও চোখ লাল হওয়া ছাড়াও রক্তনালী এবং গলার শিরা ফুলে যাওয়া।

২. ভ্রূকুটি করা, ভ্রু একসাথে আনা এবং কপালের চামড়া কুঁচকে যাওয়া।

৩. মৌখিক বা শারীরিকভাবে অন্যদের উপর হামলা করা।

৪. পরিণাম বিবেচনা না করে অনুরূপ বা গুরুতর একটি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য চড়াও হওয়া।

৫. চরম বা আবেগপ্রবণ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা।

রাগের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

فمنهم من يكون سريع الغضب سريع الفيء فإحداهما بالأخرى إحداهما بالأخرى ومنهم من يكون بطيء الغضب بطيء الفيء ف وخياركم من يكون بطيء الغضب سريع الفيء وشراركم من يكون سريع الغضب بطيء الفيء» . قال: «اتقوا الغضب فإنه

جمرة على قلب ابن آدم ألا ترون إلى انتفاخ أوداجه؟ وحمرة عينيه؟ فمن أحس بشيء من ذلك فليضطجع وليتلبد بالأرض.

‘কেউ কেউ এমন আছে, যারা খুব তাড়াতাড়ি রাগে এবং তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হয়। একটি অপরটির ক্ষতিপূরণকারী। আবার কেউ কেউ এমন আছে, যারা খুব দেরিতে রাগে এবং তাদের রাগ নিবারিত হতেও দেরি হয়। এ দু’টো অবস্থাও একটি অপরটির ক্ষতিপূরক। তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যার রাগ দেরিতে আসে এবং তাড়াতাড়ি রাগ প্রশমিত হয়ে যায় এবং সে ব্যক্তি নিকৃষ্ট, যে তাড়াতাড়ি রাগে এবং দেরিতে ঠাণ্ডা হয়। তারপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা রাগ থেকে বাঁচো। কেননা সেটা আদম সন্তানের অন্তরে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত। তোমরা কি লক্ষ্য করনি যে, রাগান্বিত ব্যক্তির চক্ষুদ্বয় রক্তিম বর্ণ ধারণ করে এবং তার ঘাড়ের শিরাগুলো ফুলে উঠে? অতএব, তোমাদের কেউ এরূপ অনুভব করলে সে যেন মাটিতে লুটিয়ে যায় (তাহলে রাগ কমে যাবে)।'

রাগ হলে আমাদের শরীরে কী হয়?

ক্রোধকে বোঝার জন্য আমাদের ভাবতে হবে যে এটি আমাদের মধ্যে কী ধরণের শারীরিক পরিবর্তন ঘটায়, এর ফলে আমাদের আচরণে কী পরিবর্তন আসে, ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমরা কী চিন্তা করি এবং কী চিন্তা করতে পারি না।

যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর রায়ান মার্টিন, যিনি ক্রোধ বিষয়ে গবেষণা করেন, বলেন রাগ হলে মানুষের সহানুভূতিশীল স্নায়ুবিক কার্যক্রম শুরু হয়।

‘রাগ হলে আপনার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়ে যায়, আপনি ঘামতে শুরু করবেন এবং পরিপাক ক্রিয়া ধীরগতিতে চলতে শুরু করে।

মানুষ যখন মনে করে যে তার সাথে অবিচার করা হচ্ছে, তখন শরীরের স্বাভাবিক

প্রতিক্রিয়া হিসেবে এধরণের উপসর্গ প্রকাশ পায়।

[১] আবু সাঈদ আল খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, মিশকাতুল মাসাবিহ : ৫১৪৫, সুনানু তিরমিযি : ২১৯১, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক : ২০৭২০, মুসনাদে আহমাদ: ১১১৪৩৷



রাগ একই সাথে মস্তিষ্কও ভিন্ন আচরণ করা শুরু করে.....

‘মানুষ যখন তীব্রভাবে কিছু অনুভব করে, তখন চিন্তা ভাবনার অধিকাংশই ঐ একটি বিষয় কেন্দ্রিক হয়ে থাকে।'

তখন তারা ‘টিকে থাকা’ বা ‘প্রতিশোধ নেয়ার বিষয়টিকেই বেশী প্রাধান্য দেয়। কোনো বিশেষ একটি অবিচার বা অন্যায়ের বিষয়ে চিন্তা করা বা তার বিরুদ্ধে

প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করার সময় অন্য কোনো বিষয় নিয়ে মানুষের মস্তিষ্ক চিন্তা

করতে চায় না—এটিও অভিযোজনেরই অংশ।

আমরা রাগান্বিত কেন হই?

প্রকৃতির সাথে মানুষের অভিযোজনের শুরুর দিকে একজন ব্যক্তির আরেকজনের ওপর ক্রুদ্ধ হওয়ার ইচ্ছা আসতো কীসের থেকে? যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়োর হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান ও অপরাধ

বিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যারন সেল বলেন, 'রাগ খুবই জটিল একটি বিষয়।'

‘নাটকীয়ভাবে বর্ণনা করলে বলা যায়, এটি মানুষের মন নিয়ন্ত্রিত একটি যন্ত্র। আরেকজন ব্যক্তির মাথার ভেতরে ঢুকে নিজেকে ঐ ব্যক্তির কাছে আরো গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার একটি পদ্ধতি। তাদের মন পরিবর্তন করে তাদের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্বে জয়ী হওয়ার একটি প্রক্রিয়া।'

প্রফেসর সেল বলেন এই ‘মন নিয়ন্ত্রণের’ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রাখে

মানুষের ‘রাগান্বিত চেহারা.....

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন যে, ক্রুদ্ধ হলে মানুষের ভ্রু বিস্তৃত হয়ে যাওয়া, নাসারন্ধ্র প্রসারিত হওয়া এবং চোয়ালের পুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার মত পরিবর্তনগুলো মানুষ উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে—বলেন প্রফেসর সেল।

রাগ হলে মানুষের মুখের অভিব্যক্তিতে যেসব পরিবর্তন হয়, তার প্রত্যেকটির ফলেই মানুষকে শারীরিকভাবে শক্তিশালী দেখায়।

প্রফেসর সেল বলেন, এই বিষয়গুলো মানুষ শেখে না, বরং জন্মসূত্রে অর্জন করে, কারণ, অন্ধ শিশুরাও একই ধরণের ক্রুদ্ধ অভিব্যক্তি প্রকাশ করে।

রাগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের মানসিক অবস্থার একটি বহিঃপ্রকাশ। ফ্রয়েডের মতে, রাগ হচ্ছে অন্যের প্রতি আক্রমণ মানুষের নিজের প্রতি ধ্বংসাত্মক রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

প্রবৃত্তির এক রকম আত্মরক্ষামূলক আচরণ (ডিফেন্স) মাত্র। আলবার্ট বান্দুরার মতো মনোবিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, ব্যক্তির অনিয়ন্ত্রিত রাগ মূলতঃ সে পরিবেশ থেকেই শেখে। তার মতে, ব্যক্তি তার আগ্রাসীভাবের কারণে চারপাশের মানুষের কাছ থেকে কোনো না কোনোভাবে উপকৃত হয় (তার ইচ্ছা পূরণ হওয়া, অন্যদের ওপর নিয়ন্ত্রণ, অপরের ‘সমীহ’ আদায় ইত্যাদি)। অনেক সময় পরিবার ও সমাজ কর্তৃক যখন অন্যের আগ্রাসনকে নানাভাবে উৎসাহিত হতে দেখে, সেটাও তাকে উৎসাহিত করে রাগান্বিত হতে। তবে এ বিষয়ে অন্যতম শক্তিশালী তত্ত্ব হচ্ছে ১৯৩৯ সালে জন ডোরাল্ড ও সহকর্মীদের ফ্রাষ্ট্রেশন-অ্যাগ্রেশন তত্ত্বটি:

(ক) হতাশা সবসময় একটি আক্রমনাত্মক তাগিদ তৈরি করে এবং

(খ) আগ্রাসন সর্বদা পূর্বের হতাশার ফলাফল।

রাগ মূলতঃ মানুষের আশাভঙ্গ, নিষ্ফলতা, ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে সে আশাভঙ্গ বা বিফলতার মাত্রা যদি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের না হয় বা এর মাত্রা যদি গভীরতর হয়।

রাগ সৃষ্টির পিছনে প্রভাবক কারণগুলো...

রাগের পিছনে কিছু কারণ আছে। কারণগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল পরিবেশ। অর্থাৎ একজনের চারপাশ; ঘনিষ্ঠ কেউ, কারও পরিবার, বা দূরবর্তী কেউ, কারও সম্প্রদায়। কেউ এমন খারাপ লোক দ্বারা পরিবেষ্টিত (Surrounded) থাকতে পারে যারা রাগকে সাহস এবং বীরত্বের প্রতীক বলে মনে করে। অথচ এটি ব্যক্তিকে অন্যায়ের পথে পরিচালিত করে। এভাবে কেউ কেউ রাগ সম্পর্কে মিথ্যা ধারণা পায় এবং অনিয়ন্ত্রিত রাগ তার অভ্যাসে পরিণত হয়। 

অনেক সময় না রাগার জন্য হরেকরকম কসরত করেও আমরা রাগ সংবরণ করতে পারি না। এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যে আমরা রেগে যেতে বাধ্য হই এবং হতাশ হয়ে পড়ি। এ রকম পরিস্থিতিতে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন আত্মবিশ্লেষণ। রাগের কারণে হতাশা আসলে রাগ আরও বেড়ে যায়। অতএব হতাশা গ্রাস করার আগেই রাগের কারণ বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অনেকের রেগে যাওয়া একটি অভ্যাসে পরিণত হয়, বলা যায় রেগে যাওয়া একটি নেশা হয়ে যায়। ভয়ংকর হলেও সত্য যে সেসব মানুষ রাগলে তাদের মস্তিষ্কে স্বস্তিদায়ক এন্ডোফিন নিঃসরিত হয়। এজন্য তারা রেগে যাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে পারেন না। কিন্তু আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, রাগের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

মাথায় কিছু করলে তার ফল কখনই ভালো হয় না। চলুন রাগ সৃষ্টির পিছনে কিছু প্রভাবক কারণ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক:

উদ্বিগ্নতা বা বিষণ্নতা সৃষ্টির কারণ

ব্যক্তি যদি কোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে থাকে, সে ক্ষেত্রে তার অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা রেগে যাওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে।

রাগের কারনে সামাজিক দক্ষতার অভাব

সমস্যা সমাধান বা দৈনন্দিন জীবনের নানামুখী চাপ ভালোভাবে মোকাবিলা করতে না পারা, অন্যের কাছে সঠিকভাবে প্রকাশের অদক্ষতা ইত্যাদি ব্যর্থতার দায় ব্যক্তি অনেক সময় কাছের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়।

কাজ ও সময়ের চাপ

মাত্রাতিরিক্ত কাজ একসঙ্গে এসে গেলে অথবা অল্প সময়ের মধ্যে অনেক কাজ শেষ করতে গিয়ে সেসব যদি ঠিকঠাকমতো শেষ করা না যায়, তাহলে অনেকের মধ্যে টেনশন বা হতাশা জমতে জমতে রাগ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।

পারিবারিক পরিবেশ

ছোটবেলায় যদি কেউ এমন পরিবেশে বড় হয়, যেখানে মা-বাবা বা অভিভাবকরা

অল্পতেই রেগে যান, সেই পরিবারে শিশুরাও একই ধরনের আচরণ শেখে।

মানসিক সমস্যার কারণে রাগ 

বিভিন্ন মানসিক সমস্যা, যেমন ব্যক্তিত্বের ত্রুটি, বিষণ্নতা রোগ, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার, উদ্বিগ্নতা রোগ, শুচিবায়িতা, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, কনডাক্ট ডিসঅর্ডার, ডিমেনশিয়া ইত্যাদি রাগের অন্যতম উপসর্গ। এ ছাড়া খুঁতখুঁতে স্বভাব, হীনম্মন্যতাবোধ, অতিরিক্ত কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব, সবকিছুতে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ, ব্যর্থতা মেনে না নেওয়ার মনোভাব ইত্যাদি মানুষের মধ্যে অল্পতেই রেগে যাওয়ার প্রবণতা তৈরী করে।

মিথ্যা কৌতুক/রসিকতার কারনে রাগ

যদি রসিকতা মিথ্যাচার হয় কংবা সত্যের সীমা অতিক্রম করে, তাহলে তা ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি করে। ঝগড়া-বিবাদ একজনের মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে হৃদয়ের গভীরে ক্রোধ সঞ্চার করে। এবং তাকে অত্যাচার করতে ও প্রতিশোধ নিতে প্ররোচিত করে। হাসি-মশকরা মানুষের একটি স্বভাবজাত বিষয়। মৌলিকভাবে এটি নিষিদ্ধ নয়। বরং ঐ হাসি-মশকরা নিষেধ, যার মাঝে মিথ্যা,

অশ্লীলতা ও কাউকে কষ্ট দেওয়ার বিষয় থাকে। নবিজিও সাহাবিগণের সাথে হাসি মশকরা করতেন। কিন্তু তাতে মিথ্যা থাকতো না, কাউকে কষ্ট দেওয়া বা অপমান করার বিষয় থাকতো না। হাদিসে এসেছে

عن أبي هريرة، قال قالوا يا رسول الله إنك تداعبنا. قال إنّي لا

أقول إلا حقا.

‘সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আপনি তো আমাদের সাথে কৌতুকও করে থাকেন। তিনি বললেন, আমি শুধু সত্য কথাই বলে থাকি (এমনকি কৌতুকেও)।”

শত্রুতা বা আগ্রাসনের মুখোমুখি

একজন মানুষ রাগান্বিত হয় এবং প্রতিশোধ নিতে চায় তখনই, যখন সে কোনো ধরনের শত্রুতা বা আগ্রাসনের মুখোমুখি হয়। যেমন—উপহাস, গুপ্তচরবৃত্তি, গালমন্দ, কল্পনাপ্রসূততা, অসম্মান, কারাবাস, মারধর এবং নির্যাতন। এই আগ্রাসন সবচেয়ে বেশি দেখিয়েছে অনৈসলামিক এবং অবৈধ কর্তৃপক্ষ। এ কারণেই আল্লাহ এবং তাঁর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শারঈ প্রয়োজন ছাড়া অন্যদের প্রতি আগবাড়িয়ে বিনা প্ররোচনায় আক্রমণ করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

لا تحاسدوا ولا تناجشوا ولا تباغضوا ولا تدابروا ولا يبع بعضكم على بيع بعض وكونوا عباد الله إخوانا . المسلم أخو المسلم لا يظلمه ولا يخذله ولا يحقره . التقوى ها هنا " . ويشير إلى صدره ثلاث مرات " بحسب امرئ من الشر أن يحقر أخاه المسلم كل المسلم على المسلم حرام دمه وماله وعرضه " .

“তোমরা পরস্পরে হিংসা পোষণ করো না, পরস্পর ধোঁকাবাজী করো না, পরস্পর বিদ্বেষপোষন করো না। একে অপরের (ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে) পশ্চাতে শত্রুতা করো না এবং একের বেচাকেনার উপর অন্যে বেচাকেনার চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দারূপে ভাই

[২] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, জামে তিরমিযি : ১৯৯০, সিলসিলাহ সহিহাহ : ১৭২৬, মুখতাসার শামাইল : ২০২।


ভাই হয়ে থাক। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না, তাকে অপদস্থ করবে না এবং হেয় করবে না। তাকওয়া এইখানে (অন্তরে), এই কথা বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সীনার প্রতি ইশারা করলেন তিনবার। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় করে। কোনো মুসলিমের উপর (প্রত্যেক) মুসলিমের সবকিছু জান-মাল ও ইজ্জত আবরু হারাম।'

অযৌক্তিক অহংকার

অন্যায়ভাবে অহংকার প্রকাশকারী ব্যক্তির অহংকার তার উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। যদি কেউ তাকে তার ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে বলে, সে ক্ষুব্ধ হয়, রাগান্বিত হয়। তার পাপ করার বিষয়ে বিরোধিতা করা বা তাকে সতর্ক করাকে সে ভালো দৃষ্টিতে গ্রহণ করে না। সেই অহংকারী ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস এমন যে, সে এত নিখুঁত যে তাকে আদেশ দেয়ার, সতর্ক করার বা বাধা দেয়ার অধিকার কারো নেই। অথচ বাস্তবে তিনি সব দিক দিয়েই অসম্পূর্ণ, অযোগ্য। আর এজন্যই তিনি তার অযৌক্তিক অহংকারকে তার অপূর্ণতা এবং অসম্পূর্ণতাকে আড়াল করার জন্য ব্যবহার করেন।


নফসের দুষ্কৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে অবহেলা করা

আল্লাহ মানুষের নফসের মধ্যে নেকি ও গুনাহ উভয়টি স্পষ্ট করেছেন এবং চিনিয়ে দিয়েছেন। মানুষের নফসের যে উপাদানটি তার ক্রোধকে উস্কে দেয় তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে বা তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে অবহেলা করলে নফসের অনিষ্ট আরো বেড়ে যায়। অবশেষে তার নফসের ঐ খারাপ প্রভাবে রেগে যাওয়া তার স্বভাব হয়ে উঠতে পারে। মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দাদেরকে নিজের নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার আহ্বান জানিয়ে ফরমান,

ونفس وما سويها. فألهمها فجورها و تقويها. قد أفلح من زكها.

وقد خاب من دشتها.

‘কসম নফসের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন (তাঁর)। অতঃপর তিনি তাকে তার পাপসমূহ ও তাকওয়া সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন।

[৩] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। সহিহ মুসলিম: ২৫৬৪, মুসনাদে আহমাদ :

নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে। আর সে

ই ব্যর্থ হয়েছে, যে তাকে (অর্থাৎ নফসকে) কলুষিত করেছে।”

وأما من خاف مقام ربه ونهى النفس عن الهوى. فإن الجنة هي المأوى

“আর যে স্বীয় রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে নফসকে নিবৃত্ত রাখে, নিশ্চয় জান্নাত হবে তার আবাসস্থল।" রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‘স্বীয় নফস ও কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ হল মানুষের সর্বোত্তম জিহাদ।*

যারা রাগের ত্রুটিতে ভুগছে তাদের সাহায্য না করা কেউ যদি কারো রাগের ত্রুটি এবং কারণগুলি আবিষ্কার করতে পারে তবে তার উচিত, যে দুর্বলতার কারণে কিংবা দুষ্ট জিনের প্রভাবে বা শয়তানের ওয়াসওয়াসায় ঐ ব্যক্তি রাগান্বিত হচ্ছে তাকে সমর্থন না করা। তাকে রাগের ত্রুটি থেকে বিরত রাখার মাধ্যমে রাগ নিরাময়ে সাহায্য করার জন্য তার পাশে দাঁড়ানোই মানবতা। যদি তাকে প্রশ্রয় দেয়া হয় তবে রাগের ত্রুটি থেকে ঐ ব্যক্তি মুক্ত হতে পারবে না এবং আরও খারাপ পরিণতির দিকে সে ধাবিত হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

انصر أخاك ظالما أو مظلوما فقال رجل يا رسول الله أنضره إذا گان مظلوما أفرأيت إذا كان ظالما كيف أنضرة قال تحجزه أو تمنعه من الظلم فإن ذلك نصره

‘তোমার ভাইকে সাহায্য কর। সে জালিম হোক অথবা মজলুম হোক। এক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসুল! মজলুম হলে তাকে সাহায্য করব তা তো বুঝলাম। কিন্তু জালিম হলে তাকে কিভাবে সাহায্য করব? তিনি বললেন, তাকে অত্যাচার থেকে বিরত রাখবে। আর এটাই হল তার সাহায্য।

[৪] সুরা আশ-শামস ৯১:৭-১০। [৫] সুরা আন নাযিআত ৭৯:৪০-৪১।

[৬] সহিহুল জামে : ১০১৯।

[৭] সহিহ বুখারি : ৬৯৫২, ২৪৪৩।


রাগের বিভিন্ন প্রকার

এ পর্বে আমরা রাগ বা ক্রোধের প্রকার নিয়ে আলোচনা করব। আত্মনিয়ন্ত্রণ মানেই রাগ না করা, বা যার নিয়ন্ত্রণশক্তি প্রবল, তার বিলকুল রাগ হয় না, এই ভুল ধারণা কি আমাদের মধ্যে আছে? থাকা উচিত নয়। কারণ, রাগ একটা মানবীয় গুণ। এটা হবেই। তবে কেউ নিয়ন্ত্রণে রাখতে জানে, কেউ জানে না। বিভিন্ন হাদিসে রাগ না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটা হলো অন্যায্য উৎসগুলো থেকে রাগ গ্রহণ না করার নির্দেশ এবং রাগে অন্ধ হয়ে বিবেচনাবোধ হারিয়ে ফেলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা। এইসব জায়গায় রাগ ও অন্ধত্ব উভয়টাকেই সমূলে দমন করতে হবে, অন্তত সামলে রাখতে হবে।

রাগ সাধারণভাবে দুই প্রকার

১. প্রশংসনীয় রাগ 

২. নিন্দনীয় রাগ।

আল্লাহর দ্বীন বা নবিজির অবমাননা হচ্ছে, অন্যায়ভাবে কারো উপর জুলুম হচ্ছে—এসব থেকে রাগ উৎপন্ন হওয়া সঠিক ও কাঙ্খিত। তাই যখন কোনো মুসলিম আল্লাহদ্রোহী, ইসলামবিরোধী কোনো কাজ হতে দেখে, তখন সে ক্রুদ্ধ রাগান্বিত হয়। আর এই রাগ প্রশংসনীয়। এমন ব্যক্তি আল্লাহর নিকট পুরস্কৃত হবে।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

ذلك ومن يعظم حرمت الله فهو خير له عند ربه ..

‘এটাই বিধান। আর কেউ আল্লাহর সম্মানিত বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তার রব্বের কাছে তার জন্য এটাই উত্তম।

এজন্য দ্বীনের দাঈগণও যদি অন্যায় ও হারাম কাজের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রয়োজনবশতঃ যদি রাগান্বিত হন তাহলে এই রাগ নিন্দনীয় রাগের আওতায় পড়বে না। বর্তমান সময়ে এক শ্রেণীর দাঈকে দেখা যায় তারা ত্বাগুতের বিরুদ্ধে জোরালো কোনো প্রতিবাদ তো করেনই না বরং অন্যেরা আল্লাহর বিধানের বিপরীত শির্ক ও কুফরি কাজের জন্য ত্বাগুতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ সামান্য

[৮] সুরা হজ্জ ২২:৩০।


কঠিন কথা বললে তাও সমর্থন করেন না, যা নবি-রাসুলগণ এবং পূর্ব যুগের দ্বীনের দাঈগণের অনুসরণীয় নীতির সম্পূর্ণ খেলাফ।

আল্লাহর নবি মুসা আলাইহিস সালামের সাথে তাঁর কওমের ঘটনা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। যখন তিনি তূর পাহাড় থেকে ফিরে আসলেন, দেখলেন লোকেরা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে বাছুর পূজা শুরু করেছে। তখন তিনি তাদের উপর প্রচন্ড রাগান্বিত হলেন। এমনকি হাতের কাঠের ফলকগুলো, যার মধ্যে তাওরাত লিপিবদ্ধ ছিল তা মাটিতে ফেলে দিলেন। এরপর ভাই হারূনের মাথার চুল ধরে তাকে টানতে লাগলেন। মহান আল্লাহ তায়ালা উক্ত ঘটনা উল্লেখ করে বলেন,

ولما رجع موسى إلى قومه غضبان أسفا قال بنسما خلفتموني من بعدى أعجلثم أمر ربكم والقى الألواح وأخذ برأس أخيه يجرة الیہ قال ابن أم إن القوم استضعفوني وكادوا يقتلونني فلا تشمت بي الأعداء ولا تجعلني مع القوم الظالمين.

‘আর মুসা যখন নিজ কওমের কাছে ফিরে আসলো রাগান্বিত বিক্ষুদ্ধ অবস্থায়, তখন বলল, “আমার পরে তোমরা আমার কত খারাপ প্রতিনিধিত্ব করেছ! তোমাদের রবের নির্দেশের পূর্বে তোমরা তাড়াহুড়া করলে?’ আর সে ফলকগুলো ফেলে দিল এবং স্বীয় ভাইয়ের মাথা ধরে নিজের দিকে টেনে আনতে লাগল। সে (হারূন) বলল, হে আমার মায়ের পুত্র, এ জাতি আমাকে দুর্বল মনে করেছে এবং আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছে, সুতরাং তুমি আমার সাথে এমন করবে না যাতে শত্রুরা আনন্দিত হয় এবং আমাকে যালিম কওমের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করো না।”

এভাবেই প্রত্যেক ঈমানদারের উচিত স্বীয় রবের অধিকার বিনষ্ট হলেই সেখানে রাগান্বিত হওয়া এবং সাধ্যানুযায়ী তার প্রতিবাদ করা।

২. নিন্দনীয় রাগ

যেমন নিজের অন্যায় দাবী প্রতিষ্ঠা করার জন্য ক্রুদ্ধ হওয়া। এমন রাগ হতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। এ ধরনের ক্রোধান্ধ ব্যক্তি আল্লাহর নিকটও ঘৃণিত।

[৯] সুরা আরাফ ৭:১৫০।

আপনি যদি হোন লোভী মানুষ। লোভের পথ বিঘ্নিত হলে ক্ষিপ্ত হন। আপনি ভোগবাদী ও প্রবৃত্তির পুজারী। ভোগের জিনিসটি হাতছাড়া হলে ক্ষিপ্ত হন। আপনি কর্তৃত্বপরায়ণ ও অহংকারী মানুষ। এ থেকেও রাগ আসতে পারে। রাগ আসতে পারে ভুল বুঝাবুঝির কারণেও। এমনিভাবে, আত্মনিয়ন্ত্রণ শক্তি কম থাকলেও সামান্যতে ক্ষিপ্ত হতে পারেন। এসবই নিন্দনীয় রাগ।

কিছু নিন্দনীয় রাগের উদাহরণ

(ক) স্বভাবগত রাগ।

(খ) অহংকারের ফলে উদ্ভূত রাগ।

(গ) ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের লালসাজনিত রাগ।

(ঘ) অনর্থক কলহবশতঃ রাগ।

(ঙ) অত্যধিক হাসি-তামাশা ও ঠাট্টা বিদ্রুপজনিত রাগ।

শরিয়াগতভাবে রাগের প্রকারভেদ

১) ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) রাগ।

২) মানদুব (প্রশংসনীয়) রাগ।

৩) মাহযুর (নিষিদ্ধ) রাগ।

১. ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) রাগ

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাগ। এই সেই রাগ যা তখনই আসে যখন আল্লাহর শিক্ষা উপেক্ষা করা হয় বা তার সাথে অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ করা হয়। যদি একজন ব্যক্তির প্রকৃতই ঈমান থাকে তবে তাকে অবশ্যই এই রাগ প্রদর্শন করতে হবে। এটা অকল্পনীয় যে, একজন মুমিন ব্যক্তি প্রত্যক্ষ করছে আল্লাহর হুকুম-বিধান উপেক্ষা করা হচ্ছে, কখনও কখনও তা উপহাস করা হচ্ছে অথচ এজন্য সে ভিতরে কিছুই অনুভব করছে না। এটি সত্যিই একজন ঈমানদারের জন্য অসুস্থ হৃদয়ের আলামত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

من أحب لله وأبغض لله وأعطى لله ومنع لله فقد استكمل الإيمان.

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসে, আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কারও সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দান-খয়রাত করে, আবার সন্তুষ্টির জন্যই দান-খয়রাত থেকে বিরত থাকে। সে ঈমান পূর্ণ করেছে।”

অর্থাৎ প্রকৃত ঈমানদারের সবচেয়ে বড় আলামত হলো তার রাগ, ঘৃণা, বিচ্ছিন্নতা, ভালোবাসা সবই হবে একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে তাঁর সর্বশেষ নবিকে এই রাগের নির্দেশ দিয়ে বলেন

يأيها النبي جابر الكفار والمنفقين واغلظ عليهم ومأويهم جهنم

وبئس المصير.

‘হে নবি, কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। এবং তাদের আবাসস্থল হলো জাহান্নাম আর তা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল।”

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। তিনি কখনোই কোনোদিন ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য নিয়ে বিচলিত হননি, 

রাগ সম্পর্কে আরো জানতে : রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন বইটির Hardcopy ক্রয় করুন।

এই আর্টিকেলের সমস্ত ক্রেডিট - লেখক : আবু যারীফের

Related searches Tag

অতিরিক্ত রাগ কমানোর উপায়
কি খেলে রাগ কমে
রাগ নিয়ে ইসলামিক উক্তি
রাগ কি মানসিক রোগ
অতিরিক্ত রাগের কারন কি
রাগ মানুষকে ধ্বংস করে
অতিরিক্ত রাগের কুফল
রাগ শয়তানের
রাগ নিয়ন্ত্রণ করার দোয়া
রাগ কমানোর উপায় হাদিস
রাগ কি
রাগ কমানোর ওষুধ
রাগ করা
রাগ হওয়ার কারণ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ