বই পড়ি জীবন গড়ি - লেখক : আলি ইবনু মুহাম্মাদ আল ইমরান | Boi Pori Jibon Gori By Ali Ibn Muhammad Al Imran

বই পড়ি জীবন গড়ি pdf free download (unavailable)
লেখক : আলি ইবনু মুহাম্মাদ আল ইমরান
প্রকাশনী : অর্পণ প্রকাশন
বিষয় : ইসলামী জ্ঞান চর্চা
অনুবাদক : নাজিবুল্লাহ সিদ্দিকী
পৃষ্ঠা : 122, কভার : পেপার ব্যাক
ভাষা : English, বাংলা

শিক্ষা-সংস্কৃতির গতিবিধি যারা পর্যবেক্ষণ করেন, তারা প্রত্যেকেই অবগত, বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান আলোচিত বিষয় বই পুস্তক——চাই তা মুদ্রিত বই-পুস্তক হোক অথবা শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নতি বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণাপ্রবন্ধ, সেমিনার, সাক্ষাৎকার, সামাজিক-সাংস্কৃ তিক অনুষ্ঠান, প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতা, আধুনিক প্রকাশনা-ওয়েবসাইট কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত হোক।

এ গতিময়তা উন্নত শিক্ষা-সংস্কৃতির সুসংবাদ দেয়। উম্মাহর গৌরব পুনরায় ফিরে আসার বার্তা বহন করে । শিক্ষা-সংস্কৃতি, রেনেসাঁ, সভ্যতা ও চরিত্রে সমগ্র উম্মাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুসংবাদ প্রদান করে।
Image
বই পড়ি জীবন গড়ি


উঠতি তরুণ জ্ঞানপ্রেমী ও আত্মোন্নয়ন প্রত্যাশীদের এ উদ্দীপনার কারণে পাঠ বিষয়ে আলেম-ওলামা, শিক্ষাবিদ এবং সমাজ সংস্কারকদেও অনেকে পড়ার পদ্ধতি, বই ও বইয়ের গুণাবলি, তার প্রকারভেদ, বই-পুস্তকের পারস্পরিক তুলনা, বইয়ের সংস্করণ, লেখক ও তাদের স্তরভেদ, কোন পদ্ধতিতে পাঠ করলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছিলেন।


পাঠে যারা বিদগ্ধ তাদের অভিজ্ঞতা জানতে ও তাদের পরামর্শ এবং উপদেশ নেওয়ার জন্য আবদার আসছিলো। যার ফলে এ ধরনের প্রশ্নোত্তর নিয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অনেক শিক্ষাবিদ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে হাজির হয়েছেন। সে ধারাবাহিকতায় আমিও আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে ‘আল মুশাওয়িক ইলাল কিরাআতি ওয়া তলাবিল ইলমি' নাম একটি গ্রন্থ রচনা করি আলহামদুলিল্লাহ —–রচনাকর্ম আল্লাহর রিজিক—–গ্রন্থটি এত প্রসা রলাভ করে এবং এত পাঠক সমাদৃত হয় যে, আমি এতটা কল্পনাও করিনি। গ্রন্থটি দেশের (সৌদি আরব) ভেতরে ১০ বারেরও অধিক মুদ্রিত হয়েছে আর দেশের বাইরে হয়েছে একাধিকবার। কিতাবটির উপকারিতা বিভিন্ন শ্রেণির পাঠকের ভূয়সী প্রশংসার মধ্য দিয়ে অনুভব করেছি। —কেউ গ্রন্থটি নিয়ে অভিব্যক্তি লেখেন, কেউ তার প্রশংসা করেন, কেউ করেন মন্তব্য, কেউ সারাংশ লেখেন আবার কেউ লেখেন ব্যাখ্যা। আবার কেউ প্রস্তাবনা দিয়ে অথবা কেউ সংশোধনীর মাধ্যমে জানিয়েছেন নিজেদের ভালো লাগা।

এর আগে ও পরে বিভিন্ন উপলক্ষে ও বিভিন্ন স্থানে তালিবে ইলম এবং বইপ্রেমীদের মধ্যে 'পাঠ' বিষয়ে অনেক লেকচার ও বক্তব্য পেশ করেছি। বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমেও আমি প্রাথমিক আলোচনাস্বরূপ অনেক কথা লিখেছি। এর মধ্যে কিছু কিছু বিশদ আলোচনাও স্থান পেয়েছে। বিবিধ বিষয়ে বহু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।

‘আল মুশাওয়িক ইলাল কিরাআতি ওয়া তলাবিল ইলমি' কিতাবের প্রশংসা করার পাশাপাশি আমার কাছে বহুবার প্রস্তাব এসেছে, আমি যেন পাঠকদের নীতিগত পরামর্শ দিই, পড়ার প্রকারভেদ উল্লেখ করি এবং ইলম ও পাঠান্বেষী পথনির্দেশক কথাবার্তা বলি। তখন আমি শুধু এটা-ওটা বলে কালক্ষেপণ করছিলাম। কখনো সময়ের স্বল্পতা আবার কখনো বলছিলাম—'আমার আগে এ বিষয়ে অনেকেই লিখে গিয়েছেন।'

এটিও বাস্তবতা যে মন-মানস লেখার জন্য সর্বদা তৈরি থাকে না। লেখার উপযুক্ত মুহূর্ত রয়েছে। এ বিষয়টিই কবি গাজি আল কুসা এত সুন্দর করে বলেছেন—

تبغي الكتابة في ميعادها عجلاً " إن الكتابة أنـــــى ذات تبريح ها " فهل رأيت مزاج النار والريح تقلب ها مزاج غريب في

‘তুমি অসময়ে তাড়াহুড়ো করে লিখতে চাচ্ছো,

অথচ লেখা হলো অভিমানী নারীর মতো। (নারীর যেমন মুহূর্তেই পালটে যাওয়ার আশ্চর্য স্বভাব আছে, তদ্রূপ লেখারও আছে ব্যতিক্রমী অভ্যাস।) তুমি কি আগুন ও বাতাসের স্বভাব দেখেছো?'

এরপর পাঠ-সংক্রান্ত কিছু তথ্য জোগাড় হলে কিছুটা উদ্যম অনুভব করলাম। আমার বিক্ষিপ্ত কাগজ ও চিন্তাগুলো একত্র করলাম, এবং আগে লিখিত কিছু কিছু লেখায় পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করলাম, প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা-বিশেষণ যুক্ত করলাম। পূর্ণ বিন্যস্ত করার পর দেখলাম তা অনেকগুলো পরিশিষ্টে পরিণত হয়েছে এবং তাতে প্রত্যেকটি সুনির্দিষ্ট বিষয় স্থান পেয়েছে।

এ গ্রন্থে আমি নিজের ও অন্যদের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করেছি। আমাদের আলোচ্য বিষয়ে এমন কিছু আলোর দিশারি সারনির্যাস চয়ন করেছি, যার মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিশাল দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে উলিখিত নির্দেশনাগুলো নিখুঁতভাবে বিন্যস্ত, যার একটি অপরটির ওপর নির্ভর কওে আছে। কিছু কিছু চিন্তা ও বাক্যে পুনরুক্তি হয়েছে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড়ো বড়ো বাক্য ও বিশদ ব্যাখ্যা পরিহার করেছি।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সেসব ভাই-বোনদের, যাদের প্রশ্নের কল্যাণেই এ বিষয়ে কিছু লেখার সুযোগ হয়েছে। গ্রন্থটি বহু তথ্য সুপ্তজ্ঞান, সংস্কৃ তিভান্ডার এবং অভিজ্ঞতার সারনির্যাস তুলে ধরবে।

আমি দাবি করি না যে, যা লেখেছি তার মাধ্যমে তরুণ পাঠকদের মনে ঘুরপাক খাওয়া সব প্রশ্নের সমাধান হবে। তবে আমার আত্মবিশ্বাস যে, সাধারণত পাঠপ্রেমী ও জ্ঞানপিপাসুদের মনে যেসব প্রশ্ন তৈরি হয়, তারা যদি নির্দেশনাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করেন, তাহলে এতে তারা সমাধান পেয়ে যাবেন।

—আলি ইবনু মুহাম্মাদ আল ইমরান।


তিনটি প্রশ্ন

কী পড়বো? কেন পড়বো? কীভাবে পড়বো?

বহু বইপ্রেমী পাঠক ও তালিবে ইলমকে প্রায় এ ধরনের প্রশ্ন করতে দেখা যায়। প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এর উত্তর জানাও প্রয়োজন। তবে এগুলো শুধু বিভিন্ন উপলক্ষ্য এলে মুখে আওড়ানো, একে তাকে প্রশ্ন করা কিংবা বিভিন্ন ধরনের উত্তর গ্রহণ করা সমাধান নয়। প্রশ্ন করা হয় সমাধানের জন্য কিন্তু কোনো বিষয়ের প্রশ্নের অধিক চর্চা সংশ্লিষ্ট বিষয়টিকে কখনো আরও জটিল করে তোলে। তাই শিক্ষার্থীকে বলবো না যে, তুমি যে-কোনো উত্তর গ্রহণ করে নাও; বরং আমি চাইবো যে, নানান জিজ্ঞাসা ও কৌতুহলের পেছনে সময় নষ্ট না করে পাঠের বিষয়বস্তু ও উপকারিতা সম্পর্কে ইতোমধ্যে তুমি যা জেনেছো তার প্রায়োগিক চর্চায় এখনই আত্মনিয়োগ করো।

কী পড়বো? কেন পড়বো? কীভাবে পড়বো? – প্রশ্নগুলো নিয়ে পৃথক পৃথক গ্রন্থ রচিত হলেও বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে সেসব প্রশ্নের উত্তর একটু ভিন্নভাবে দেওয়া হয়েছে।।

প্রথম প্রশ্ন—কেন পড়বো? এর উত্তরের প্রয়োজনীয়তা এখন গৌণ। কারণ, বর্তমান পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রের নিরক্ষরতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। এখন আর এমন কাউকে পাওয়া যাবে না, পাঠের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে যার অজ্ঞতা রয়েছে।


আমার কাছে প্রশ্নটি পীড়াদায়ক। কারও পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন পছন্দ করি না। কেউ আমার এ লেখাটি পড়ে কষ্ট পেলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে অকৃত্রিমভাবে যে কথাটি বলতে চাই তা হলো— আজকের পর কাউকে আমি পড়তে বলবো না, পড়ার জন্য অনুরোধও করবো না। এমনকি দৈনিক ৫/১০ মিনিট পড়তেও কাউকে উপদেশ দেবো না।

আজ থেকে ২০ বছর আগে যদি প্রশ্নটি করা হতো, তাহলে উত্তরে হয়তো সরাসরি পড়ার প্রতি উৎসাহ দিতাম, পাঠের উপকারিতা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করতাম। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট তো সম্পূর্ণ ভিন্ন! এ সময়ে এমন প্রশ্ন-উত্তর পর্ব অগ্রহণযোগ্য।

এ ধরনের কথা বিশ্বাস পাঠ সম্পর্কিত জিজ্ঞাসায় কী ফল বয়ে আনবে? আশা করি, এর মাধ্যমে উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়ে গেছে। পরোক্ষ ও উৎসাহব্যঞ্জক পদ্ধতিতে আমি জবাব দিতে পেরেছি। যা পাঠকের মধ্যে জ্ঞান ও সংস্কৃতির কৌতূহল জাগ্রত করবে। আবার সরাসরি প্রশ্নোত্তর এড়িয়ে গিয়ে এমনভাবে উত্তর দিয়েছি, যাতে পাঠক একজন সত্যিকার পাঠক হয়ে উঠতে পারেন।

এবার পরবর্তী প্রশ্নে আসি—তাহলে আমি কী পড়বো?’ হ্যাঁ, প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া জরুরি । কিন্তু তার আগে একটি প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে। : আপনি কে? এর উত্তর জানার আগে যত কথা বলা হবে, সবই হবে অনুমান-নির্ভর। আর এ থেকে প্রশ্নকারী কোনো উপকার লাভ করবে না, সদুত্তরও পাবে না।

'আপনি কোন স্তরের?’ এর পাশাপাশি ‘আপনি কী হতে চান, আপনার কী চাওয়া-পাওয়া, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী? আপনার পড়ার নির্দিষ্ট সময় কোনটি?—–—–—এ বিষয়গুলো জানাও প্রয়োজন। আপনার প্রশ্নের উত্তরদাতার জন্য প্রথমে আপনি কোন স্তরের এবং আপনি কী হতে চান—এ সম্পর্কে জানা জরুরি।

আপনি কী হতে চান? আপনার আকাঙ্ক্ষা কী? আপনার হিম্মত কী পরিমাণ? পড়ার জন্য কতটুকু সময় নির্ধারণ করেছেন? এর ওপর ভিত্তি করেই জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি উত্তর দিতে পারবেন। তাই প্রশ্নটির এমন উত্তর দিতে পারবো না, যা সবার জন্য উপযোগী। কারণ, ইলম, জ্ঞান, অবগতি, সংস্কৃতি, সময়, মেধা এবং পরিস্থিতি সবার একরকম নয়। সামগ্রিকভাবে উত্তর দেওয়া হলে কখনো তা বিভ্রান্তিকর হবে কিংবা কখনো তা হবে একপেশে।

প্রাথমিক পাঠকের প্রতি

প্রথমে এমন বই-পুস্তক পড়ুন যা আপনাকে পাঠে উৎসাহিত করবে। পাঠের জন্য নির্বাচিত প্রাথমিক গ্রন্থগুলো বিষয় ও আকারে ছোটো হওয়া উচিত। যেমন—গল্প, স্মৃতিচারণ, জীবনী, সাহিত্য, ইতিহাস ইত্যাদি। এতে পাঠক পড়ায় অভ্যস্থ হবে এবং চর্চা করতে পারে।

আপনার প্রতি

পড়ার জন্য সময় নির্ধারণ করুন, যেন এর সঙ্গে আপনার সখ্য ও ভালোবাসা গড়ে ওঠে। এরপর যা ইচ্ছে তা নিয়ে অধ্যাবসা করুন।

তালিবে ইলমের প্রতি

পড়ার জন্য নির্ধারিত সময়ে সেসব মৌলিক ইলমি কিতাব রাখুন, যা পাঠে আপনার মেধা ও গবেষণার যোগ্যতা বাড়বে। তবে অনির্ধারিত সময়ে আপনার যা ইচ্ছে পড়ুন।

ইলমে পরিপক্বতা প্রত্যাশীদের প্রতি

পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মুহাক্কিক ইমামগণের কিতাবাদি পড়ুন। 'কালজয়ী গ্রন্থসমূহ' শিরোনামে তাদের কিছু গ্রন্থের তালিকা এই গ্রন্থে উল্লেখ করেছি, দেখে নিতে পারে।

আলোচিত সকলের প্রতি

আপনার ভাষা সংহত করুন, জবান পরিশুদ্ধ করুন। ভাষা ও সাহিত্যের কিতাবাদি থেকে পাথেয় আহরণ করুন, সাহিত্যিক ও অলংকারবিদদের রচনাবলি পাঠ করুন। তাদের শক্তিমান ভাষা, সুন্দর অভিব্যক্তি, প্রাঞ্জল উপস্থাপনা, চমৎকার অবতরণিকা, শব্দচয়ন, বাক্যের গাঁথুনি ইত্যাদি রপ্ত করার চেষ্টা করুন। অনুকরণ করে সামনে অগ্রসর হোন।

ফের বলছি

সবার জন্য এক ব্যবস্থাপত্র নয়। পাঠসংক্রান্ত সকল কর্মসূচি সকলের মাঝে বিনিময়যোগ্য ও উপযোগী নয়। সকলের জন্য তা রচিতও নয়। তবে প্রয়োগ সবাই করতে পারবে। প্রত্যেকেই তার সময়, মেধা, জ্ঞান, আকাঙ্ক্ষা ও স্তর অনুযায়ী কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করবে।

দ্বিতীয় প্রশ্ন——কী পড়বো?’-এর উত্তরের মাঝেই তৃতীয় প্রশ্ন 'কীভাবে পড়বো'-এর উত্তর নিহিত আছে।

কীভাবে’ প্রশ্নটি পরিকল্পনা, কর্মপদ্ধতি এবং কর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বর্তমানে অনেক মানুষকেই যে দুশ্চিন্তা আচ্ছন্ন করে রাখে এবং তারা যে পর্যায়ে পৌঁছার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে থাকে তা হলো দ্রুত পঠন এবং তৎসংশ্লিষ্ট যোগ্যতা অর্জন করা, যেন তারা অল্প সময়ে বহু কিতাব শেষ করতে পারে! এ জন্য দ্রুত পঠনের ব্যাপারে বহু বক্তা এবং প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হতেও দেখা যায়। সেখানে মিনিটে কয়টি শব্দ পড়বেন, তা শেখানো হয়। এগুলোর অধিকাংশই বিদেশি সংস্কৃতি থেকে ধার করা অভিজ্ঞতা, এর প্রবক্তারা আমাদের ইলমি ও কিতাবাদির ক্ষেত্রেও তা প্রয়োগ করতে চান।

এটি অনস্বীকার্য যে, বিদেশি সংস্কৃতির নানান বই-পুস্তক আমাদের অঙ্গনে অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে। গল্প, উপন্যাস, আত্ম-উন্নয়ন, পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়ক নতুন নতুন প্রযুক্তি আমদানি হয়েছে। এগুলো প্রয়োজনমতো গ্রহণ করাতে কোনো সমস্যা নেই; কিন্তু চোখ বন্ধ করে তার অনুলিপি করা একদম অনুচিত । মনে হয় যেন তালিবে ইলম দৌড় প্রতিযোগিতার ময়দানে আছে, তাকে যে-কোনো মূল্যে চূড়ান্ত রশির কাছে পৌঁছাতে হবে, যে আগে পৌঁছবে সে-ই প্রথম বিজয়ী! পড়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি কোনোভাবেই এমন নয়!

এটি ঠিক যে, কিছু লোক ‘পড়ার মন্থরগতি এবং এক পৃষ্ঠায় অনেক সময় ব্যয় হওয়ার অনুযোগ করে থাকে। এ ব্যক্তির অবস্থা অনুপাতে কৌশল প্রয়োগ করে তার উক্ত সমস্যা নিরসন করা। কিন্তু দ্রুত পঠন

একটি অন্যতম উদ্দেশ্য, এটি মন-মস্তিষ্কে কখনোই বপন করবো না। এখানে একটি বিষয়ে সতর্ক করছি যে, আমাদের সকলেরই জানা, সব বই-পুস্তক একধরনের নয়, তদ্রূপ সব বই-পুস্তক পড়ার পদ্ধতিও একরকম নয়। তাই সব কিতাবকে এক ঝুড়িতে রেখে আপনি ঢালাওভাবে ‘দ্রুত পঠন' দর্শন প্রয়োগ করতে পারেন না। কোনো জিনিস অপাত্রে রাখার ফলেই বহু অনিষ্ট দেখা দেয়।

‘পড়ার প্রকার ও ধরন' শিরোনামে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সেখাবে 'কীভাবে পড়বো' এর উত্তরও পেয়ে যাবো। এখানে শুধু এটুকুই ইঙ্গিত দিচ্ছি, বাকিটা নির্দিষ্ট স্থান থেকে পড়ে নেবেন।

একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি, যারা পড়তে পছন্দ করেন, উপকৃত হতে চান, তাদের সবাইকে উদ্দেশ করে বলছি –প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে আপনার পাঠযাত্রা শুরু করুন, আপনার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন। আপনার তৈরিকৃত কর্মসূচি আবশ্যকভাবে পালন করুন। এরপর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। তবে ফলাফলের জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না। প্রথম লাফেই সিঁড়ির দশ ধাপ অতিক্রমের স্বপ্ন দেখবেন না। পায়ের দিকেও লক্ষ রাখুন, কারণ ইলমের সিঁড়ি অনন্ত অসীম! নিজে বলার প্রয়োজন নেই।

যখন অন্যরা সাক্ষ্য দিতে থাকবে যে (গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে), আপনি উন্নত হয়েছেন, উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে গিয়েছেন, তখন আপনি শান্ত থাকুন, , বিনয়াবনত হোন। আপনি প্রথম স্তরে উপনীত হয়ে আত্মগরিমার শিকার হবেন না, অহংকারে ভাসবেন না; এমনটি হলে ইলমের সিঁড়ি থেকে ছিটকে পড়বেন।

কীভাবে পড়বো’ এর উত্তরে এটিই আমার সর্বশেষ ও অতীব গুরুত্বপূর্ণ তর্কবার্তা। জেনে তো গিয়েছেন—কেন? কী এবং কীভাবে পড়বেন? অতএব, আর দেরি কীসের? আল্লাহর ওপর ভরসা করে আপনার যাত্রা শুরু করুন।

পড়ার প্রকার ও ধরন

পড়ার প্রকার, ধরন, অবস্থা, সঙ্গে সঙ্গে তার সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞার বিষয়ে আমি আমার অধ্যয়ন, অভিজ্ঞতা থেকে যা অর্জন করেছি, ওস্তাদ ও শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিদের মুখ থেকে যা শুনেছি, তাই সহজ ও সাবলীল ভাষায় তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছি। এত উচ্চাঙ্গের ভাষা ব্যবহার করিনি, যার ফলে উচ্চশ্রেণির পাঠকরাই কেবল সম্বোধিত হবেন, আবার এত নিম্নমানের ভাষাও ব্যবহার করিনি, যার ফলে জনসাধারণ সম্বোধিত হবেন। এ দুয়ের মাঝামাঝি ভাষার প্রয়োগ করেছি। এর পাঠক হবে উপকৃত হতে চায় এমন তরুণ।

শিক্ষামূলক পাঠ

এমন কিতাব পাঠ করুন, যার দ্বারা আপনার ইলমি উন্নতি হবে, আপনার সামনে ইলমের দ্বার উন্মুক্ত হবে, দুর্বোধ্যতা কাটবে। হোক না তা বেরস। শিক্ষামূলক কিতাবাদি উপভোগের যে অর্থ আমরা নিয়ে থাকি, সাধারণত তেমন হয় না। হ্যাঁ, আপনি যদি ইলমের রকম আশেক হন যে, কোনো জটিল মাসআলার মর্মোদ্ধার করতে পারলে আনন্দে উদ্বেলিত হন; তাহলে এ ধরনের কিতাব পড়েও আপনি মজা পাবেন।

মজলিস পাঠ

এটি হলো, ওস্তাদের কাছে এক বা একাধিক মজলিসে কিতাব পাঠ করা। তা হয়তো আপনার কপি থেকে কিংবা ওস্তাদের কপি থেকে, ওস্তাদের কাছেও একটি কপি থাকে অথবা তিনি তা মুখস্থ করে ফেলেছেন।

শুদ্ধকরণ পাঠ

কোনো একটি মতন (মূলপাঠ) কিংবা মৌলিক কোনো কিতাব মুখস্থ করতে চান, তা নিয়ে এমন আলেমের কাছে, যিনি তা সঠিকভাবে আয়ত্ত করেছেন। তিনি আপনাকে মুখস্থ করার আগে সে কিতাবের শব্দগুলো ঠিক করে দেবেন। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ, কিন্তু খুব কম লোকই তা করে থাকে।

দরস ও গবেষণা পাঠ

লেখক কিংবা এমন ব্যক্তির কাছে পড়ুন, যিনি সংশ্লিষ্ট কিতাব ভালোভাবে রপ্ত করেছেন, এর তাহকিকে নিমগ্ন আছেন। এতে অনেক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয় এবং আপত্তি নিয়ে পর্যালোচনা হবে। কিতাবটির জটিলতা দূর হবে, সংশয় কাটবে।

উন্মুক্ত পাঠ

আপনার যা ইচ্ছে পড়ুন। লক্ষ্য ঠিক করুন; এটি আপনাকে একই সঙ্গে উপকার ও তৃপ্তি দেবে। তবে মুক্ত ও শর্তহীন পড়া সব শ্রেণির পাঠকের জন্য উপযোগী নয়। প্রত্যেককেই কিছু নিয়মনীতি অনুসরণ করে পড়াশোনা করা আবশ্যক। অন্যথায় স্বাধীন পড়ার ফাঁকে দুর্বল ও নষ্ট চিন্তাধার আপনাকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে।

কোনো বিষয় বা মাসআলা নিয়ে ঐতিহাসিক পাঠ

যেমন : আপনি সাতটি সূত্রগ্রন্থ নিন এবং এগুলোকে লেখকের মৃত্যুসন হিসেবে সাজিয়ে রাখুন। এরপর মৃত্যুসন হিসেবে ওপর থেকে নিচের দিকে পড়তে পড়তে আসুন। আপনার মন্তব্য, তুলনাগুলো নোট করুন। এতে অনেক নতুন ও মূল্যবান তথ্য জোগাড় হবে।

গভীর পাঠ

লেখকের যুগ সম্পর্কে পরিচিত হোন, তার জীবনী পাঠ করুন। তার রচনার বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে অবগত হোন। এবার কিতাবের ভেতরে প্রবেশ করুন, আলোচনা-পর্যালোচনা করুন, সমপর্যায়ের অন্যান্য কিতাবের সঙ্গে তার তুলনা করুন, কিতাবের চিন্তাধারা আয়ত্ত করুন। উপরোক্ত সবগুলো বিষয় কিংবা অধিকাংশ কাজ যদি যথাযথ ভাবে পালন করতে সক্ষম হন, তাহলে ধরে নিন আপনি গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে পেরেছেন কিংবা এর কাছে পৌঁছে গিয়েছেন।

সচেতন পাঠ

এটি হলো চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক পাঠ। এ ধরনের পাঠ বিভিন্ন ইলমি প্রশ্ন ও আপত্তির জন্ম দেয়। আর এগুলোর উত্তর পাওয়ার দ্বারাই মাসআলা সুস্পষ্ট প্রতিভাত হয়, জ্ঞানের বিভিন্ন দুর্বোধ্যতা দূর হয়

নির্বাচিত পাঠ

পড়ার জন্য কোনো কিতাব থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো একটি পরিচ্ছেদ কিংবা অধ্যায় বাছাই করুন। বোঝা গেলো, প্রত্যেকটা কিতাবই আপনাকে আদ্যোপান্ত পড়তে হবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ