বইয়ের নামঃ বরফ গলা নদী
লেখকের নামঃ জহির রায়হান
প্রকাশনা সংস্থাঃ অনুপম প্রকাশনী
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৬০ টাকা
Review Credit :- Rakib Hasan
আমি মরলাম না কেন, বলতে পারো লিলি?
এই বইটা শেষ করে আমার বুকের ভিতর হাসমত আলীর পরিবারের জন্য,মাহমুদের জন্য হাহাকার সৃষ্টি হয়েছিল। চোখের ভিতর বরফ গলা নদীর পানির স্রোত অনুভব করতে পেরেছিলাম...
বইটির লেখক জহির রায়হানকে চিনেনা এমন বাঙালি খুব কমই পাওয়া যাবে মনে হয়। ওনি অল্প জীবনে এমন কিছু কাজ করে গেছে যা তাকে মানুষের হৃদয়ে সারাজীবন রাখবে। আমার অনেক আফসোস হয় তার এতো অল্পতেই হারিয়ে যাওয়া নিয়ে আর কত মাস্টারপিস তার কাছ থেকে আমরা পেতে পারতাম। তার অল্প কয়েকটি লিখা উপন্যাসের মধ্যে হাজার বছর ধরে এর পরেই আমার প্রিয় একটি উপন্যাস বরফ গলা নদী।
উপন্যাসটি মাত্র ৯৬ পৃষ্ঠার অথচ এত অল্প কয়েকটি পৃষ্ঠায় কয়েকটি মানুষের জীবন কত সুন্দর ভাবে লিখে গেছেন লেখক। তাদের সুখ,দুঃখ,হাসি,কান্না,পারিবারিক খুঁনসুটি,ভালোবাসা,অভাব অনটন,আশা-আকাঙ্ক্ষা সব কিছু নিঁখুতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ট্রাজেডি উপন্যাস মানেই তা আপনার মন খারাপ করতে পারবে এমন না আপনার যদি উপন্যাসের চরিত্রদের প্রতি মায়া না জন্মায় তাহলে তাদের দুঃখ বেদনা আপনাকে ছুঁবেনা সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু লেখক সেটা এই উপন্যাসে পেরেছেন তিনি প্রতিটি চরিত্রের প্রতি পাঠক হিসেবে আমার মনে মায়া জন্মিয়েছেন তাই তাদের কষ্টে আমারও মন ভারী হয়েছে। লেখক শেষের ট্রাজেডি হুট করেই তুলে ধরেননি পুরো উপন্যাসেই তার আবহ আগে থেকেই জানান দিয়েছে....
উপন্যাসটি আমার মন খারাপ করে তুলেছিল। বইটা এক বসায় শেষ করেছিলাম আমার কাছে কোন বিরক্তবোধ কাজ করেনি। উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে যেমন রাগ উঠতো মাহমুদের উপর তেমনি তার প্রতিই সবচেয়ে মায়াও জন্মেছে। ছেলেটা নিজের আত্মসম্মানবোধে সবসময় অটল থেকেছে। নিজের মনের ভিতর পরিবারের প্রতি ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছে কিন্তু বাহিরে প্রকাশ করেছে কঠোরতা। তারপর মরিয়ম চরিত্র আহা মেয়েটির কতইনা দুঃখ সে দুঃখ আমাকেও ছুঁয়ে গিয়েছে। হাসমত আলী,সালেহা বিবি,বাবা মা চরিত্রে এই দুজনেও ছিল অনেক ভালো লাগার। হাসিনার দুষ্টুমি মনে গেঁথে রাখার মত,খোকন,দুলু চরিত্র গুলো তেমন প্রাধান্য না পেলেও যতটুকু দেওয়ার ততটুকুই দিয়েছে বলে মনে হয়েছে আমার। লিলি আর মনসুর চরিত্রটাও উল্লেখযোগ্য ছিল এরমধ্যে লিলি চরিত্রটাও ভালোলাগার...
কাহিনি সংক্ষেপঃ হাসমত আলীর পরিবার একটি মধ্যবিত্ত পরিবার। যাদের শখ আছে কিন্তু শখ পূরন করার মত সাধ্য নেই। পরিবারের বড় ছেলে মাহমুদ একটি পত্রিকায় চাকরি করে সাব এডিটর হিসেবে। সৎ এবং আদর্শ একজন সাংবাদিক হতে চেয়েছিল কিন্তু চাকরি নেওয়ার পর বুঝতে পারে তা আর হওয়া সম্ভব না। সে যা বেতন পায় তা দিয়ে তাদের সংসার মোটামুটি চলতো। তার ছোটবোন মরিয়ম যে টিউশনি করে একটি স্কুলের চাকরির জন্যও দৌড়াদৌড়ি করছে তার স্কুলের চাকরি হলে পরিবার আরো ভালো চলবে এটাই তাদের আশা।
পরিবারের সদস্য সংখ্যা সর্বমোট সাতজন বাবা হাসমত আলী,মা সালেহা বেগম,মাহমুদ,তার বোন মরিয়ম,হাসিনা,ছোট ভাই খোকন,দুলু। তারা থাকে একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে যার ছাদ চুয়ে পানি পরে প্লাস্টার খসে পরে। বাড়িওয়ালাকে বারবার বলার পরও ঠিক করার পাত্তা নেই। এদের জীবন এইভাবেই চলছিল এরইমাঝে মরিয়মের একজন বড়লোকের সাথে বিয়ে হলো মাহমুদ এর আরো ভালো বেতনে চাকরি হলো কিন্তু তাদের সে বাড়ি পরিবর্তন করার মত সামর্থ্য হয়ে উঠেনা। আর একদিন যেন এই মধ্যবিত্ত হওয়, এই বাড়ি পাল্টানোর সামর্থ্য না হওয়াই তাদের কাল হয়ে দাঁড়ালো...
বইটি নিঃসন্দেহে সেরা আপনি অনায়াসে পড়তে পারেন এই সুন্দর উপন্যাসটি...
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....