গদ্য লিখি নির্ভুল নিশ্চিন্তে (pdf download no available)
লেখক : এস এম হারুন-উর-রশীদ
প্রকাশনী : রাহনুমা প্রকাশনী
বিষয় : বাংলা ব্যাকরণ ও ভাষা শিক্ষা, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
পৃষ্ঠা : 152, কভার : হার্ড কভার
আইএসবিএন : 9789849385939, ভাষা : বাংলা
ফিরে তাকাই : বাংলা ভাষা ও বর্ণমালা
এক. [ভাষা].......
বর্ণ হল ধ্বনির লিখিত রূপ। চিহ্ন, প্রতীক। প্রত্যেক ভাষার বর্ণগুলো যেন এক-একটি সাজানো ফুল। বাংলায় এদের বলে লিপি, ইংরেজিতে letter, ফারসিতে হরফ, আরবিতে সরফ আর সংস্কৃতে বর্ণ। বর্ণ মানে রঙ, colour। হয়তো প্রাচীনকালে এক-একটি বর্ণকে এক-এক রঙ দিয়ে লিখে সাজিয়ে রাখা হত। লেখা চলত শিলায়, পশুর চামড়ায়-হাড়ে, গাছের ছালে-পাতায়। এখন তোমরা লেখা তৈরি কর ঝকঝকে কাগজে, কম্পিউটার-মোবাইলের রুপালি পর্দায়। তখন তো লেখার সেরকম উপকরণ ছিল না।
পৃথিবীতে রয়েছে কয়েক হাজার ভাষা। এসব ভাষা লেখার পদ্ধতিও ভিন্ন। ধ্বনির রূপ অনুসারে লেখা হয় বাংলা, ইংরেজি আরও অনেক সমৃদ্ধ ভাষা। এসব ভাষার পার্থক্য শুধু বর্ণের চেহারায় নয়, উচ্চারণেও; কলম আর ‘কমলে'র পার্থক্য কেবল উচ্চারণে নয়, অর্থেও। শব্দের ভেতরের বর্ণসজ্জার রদবদলে এমনটি হয়েছে। তবে ছবি দিয়েও বর্ণের অর্থ প্রকাশ করা যেতে পারে। বলা যায়, চিনা (মান্দারিন) ভাষার কথা। অনেক বর্ণছবিকে মনের পর্দায় ধরে রাখতে হয়। একটি চিনা শিশুকে তা আত্মস্থ করতে হয়। ভেবেছ, কী কঠিন কাজ!
আরবি লেখা হয় সেমেটিক লিপিতে, তেমনি ইংরেজি লেখা হয় রোমান লিপিতে। আর বাংলা লিপি?
ভারতের একটি প্রাচীন লিপির নাম ব্রাহ্মীলিপি। কয়েক হাজার বছর আগে ভারতবাসীরাই সৃষ্টি করে এ লিপি। এর বিবর্তনের ফলেই উদ্ভব হয়েছে বাংলা লিপি। মনে করা হয়, ষষ্ঠ শতকের দিকে বাংলা-বিহার ও উড়িষ্যা অঞ্চলে যে লিপি প্রচলিত ছিল, তা ওই লিপির বিবর্তিত রূপ। নাম গুপ্তলিপি (পূর্বদেশীয় রূপ)। এ থেকে এসেছে কৃষাণলিপি। আর কৃষাণলিপি এসেছে অভিজাত ব্রাহ্মীলিপি থেকে। বাংলালিপি যার উত্তরাধিকার পেয়েছে। এ লিপি বাঙালির কাছে প্রিয়। এতে আছে স্বর ও ব্যঞ্জনবর্ণের আলাদা ভাগ। স্বর সংক্ষেপের জন্য কার-চিহ্ন, স্বল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ, ঘোষ-অঘোষ বর্ণের আসনবিন্যাস দেখলে অবাক হতে হয়! তোমরা তো জানো, এই বর্ণমালাকে মাতৃমমতায় বাঁচিয়ে রাখতে সংগ্রাম করতে হয়েছে, রক্ত ঝরাতে হয়েছে। উৎসর্গ করতে হয়েছে তাজা জীবন। যার নজির ইতিহাসে নেই বললেই চলে।
দুই. [বর্ণ].......
মানুষের মুখের উচ্চারণের প্রতীকই বর্ণ। সব ভাষায় সব ধ্বনি নেই। যে ভাষার মানুষ, যে ধ্বনি ব্যবহার করে না, সে ভাষায় সে ধ্বনির জন্য বর্ণ নেই; যা জীবন্ত ভাষার স্বভাব। আরবিতে ‘ঢ’ এর উচ্চারণ নেই। তাই ‘ঢ’ বর্ণও নেই। আরবিতে ‘ঢাকা’ বলতে ‘ঢ’-কাছাকাছি ধ্বনি (দাল) প্রয়োগ করে বলতে হয় ‘দাকা'। ইংরেজিতেও ‘ঢ’ নেই'। d-এর সাথে h যোগ করে ‘dhaka' বলতে ও লিখতে হয়। আবার আরবির ‘এ’ ধ্বনি বাংলায় নেই। তাই কাছাকাছি ‘ব’-ধ্বনি দিয়েই কাজ সারতে হয়। এg নামাজ বলতে আমরা ‘বিতর নামাজ’ বলে থাকি। এছাড়া আর উপায় কী!
স্বর ও ব্যঞ্জন মিলে বাংলা বর্ণের সংখ্যা ৫০। ১১টি স্বরবর্ণ এবং ৩৯টি ব্যঞ্জনবর্ণ। তবে আদিতে এই সংখ্যা ছিল না। আসলে সংস্কৃত বর্ণমালার আদলে বাংলা বর্ণমালা তৈরি হয়। এতে সমস্যা বাড়ে। কেননা, সব সংস্কৃত বর্ণের উচ্চারণ বাংলায় নেই। থাকার কথাও নয়। বাংলার সাথে সংস্কৃতের সম্পর্ক অনেক দূরের। প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা (যার লিখিত ও পরিশুদ্ধ রূপ সংস্কৃত) মানুষের মুখে মুখে রূপান্তরিত হয়ে বঙ্গীয় অঞ্চলে জন্ম নেয় মধুর-কোমল-বিদ্রোহী প্রাকৃত। তাকে কেউ বলেন, মাগধী প্রাকৃত; আবার কেউ বলেন, গৌড়ীয় প্রাকৃত। এ থেকে হয়েছে বাংলা, সে এক দুষ্ট মেয়ে! কেননা, সে মাতামহী (সংস্কৃত) ও জননীর (প্রাকৃত) কথা শোনেনি। নিজের ইচ্ছেমতো রূপের বদল করেছে বারবার।
প্রায় হাজার বছর আগে প্রাকৃতের কোল থেকে জন্ম হয়েছে বাংলাভাষার। তাই প্রাচীন বাংলার সাথে আধুনিক বাংলার বানানে বেশ পার্থক্য ধরা পড়ে।
যেমন আজকের বাংলা ই, ঈ এবং উ, ঊ-এর মধ্যে উচ্চারণে পার্থক্য নেই। তখনও পার্থক্য ছিল না।
ন-ণ, জ-য, স-শ-ষ'র মধ্যে পার্থক্য ছিল না। বানানও হয়েছে ইচ্ছেমতো। যেমন : বাঁশি-বাঁশী, জোই-জোঈ, সবরী-শবরী, পানি-পাণী, সুন-শূণ, সহজে-ষহজে।
প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষায় (সংস্কৃতে) য-এর উচ্চারণ অনেকটা য় এর মতো। বাংলায় সেই পুরানো য-এর উচ্চারণ কোথাও জ, আবার কোথাও য় হয়েছে। তাই বাংলা বর্ণমালায় নুতন একটি বর্ণ ‘য়’ তৈরি করতে হয়েছে।
১৮০১-এ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা গদ্যচর্চা শুরু হলেও সংস্কৃত বর্ণের সাথে বাংলা বর্ণের উচ্চারণের তারতম্য চোখে পড়ে রাজা রামমোহন রায়ের। তিনি তাঁর গৌড়ীয় ব্যাকরণে (১৮৩৩) ১৬টি স্বরবর্ণ ও ৩৪টি ব্যঞ্জনবর্ণের তালিকা দেন। পরে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্বর ও ব্যঞ্জনবর্ণের নতুন তালিকা প্রকাশ করেন তাঁর বর্ণপরিচয়ে (১৮৫৫)। তিনি স্বরবর্ণের ভাগ থেকে দীর্ঘ ঋ ও দীর্ঘ ৯ বাদ দেন; অনুস্বর (ং) ও বিসর্গ (ঃ) স্থান পায় ব্যঞ্জনবর্ণের তালিকায়। নতুন বর্ণ হয়ে আসে ড়, ঢ়, য়। যুক্তবর্ণ বলে বাদ গেছে ক্ষ, (ক+ষ)। তবে ক্ষ কি কেবল যুক্তবর্ণ হয়ে বসে? অবশ্যই নয়। সে একক ধ্বনি হয়েও তো শব্দে বসে। ক্ষমা, ক্ষুধা, ক্ষীণ, ক্ষুদ্র, ক্ষীর, ক্ষয়, ক্ষমতা, ক্ষণিক, ক্ষরণ—এসব শব্দে একক ধ্বনি খ-ই উচ্চারিত হচ্ছে। তাই না?
তিন. [বাঙলা লিপি]........
বাংলালিপি কী করে ছাপার কারাগারে আটকে গেল, সে গল্পটা বেশ মজার। আচ্ছা, বলি।
সব সমৃদ্ধ ভাষায় লিপির রদবদল হয়েছে বারবার। শুধু লিপি কেন, লেখার কোনো কোনো বিষয় এক পুঁথি থেকে লিপিকারের হাত ঘুরে অন্য নতুন পুঁথিতে গেলেই তাতে পরিবর্তন-পরিবর্ধন, সংক্ষেপণের চিহ্ন ফুটে ওঠে। তবে এর ব্যতিক্রম যে একেবারে নেই, তা নয়। কুরআনের কথাই বলা যায়। অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত একটি বর্ণেরও পরিবর্তন হয়নি! হাতে হাতে কপি করেছেন লিপিকাররা—সারা মুসলিম জাহানে। শতাব্দীর পর শতাব্দী পঠন-পাঠন চলেছে; তবে একটি হরকত পাল্টায়নি! ব্রিটিশ মিউজিয়ামে, তাসখন্দে, ইস্তাম্বুলের তোপকাপি মিউজিয়াম ও মক্কা মিউজিয়ামে রক্ষিত পুরানো কপি আর নিজের ঘরের কপিটি পরখ করলে তা বোঝা যায়। কোথাও একটি বর্ণের পরিবর্তন হয়নি। মূলে যা ছিল তা ই । যা দুর্লভ, ব্যতিক্রম...
প্রাচীন ও মধ্যযুগে বাংলা বর্ণমালা বিবর্তিত হয়েছে বারবার। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির হাতের ছোঁয়ায় বাংলা লিপির আকৃতি বদলেছে। তবে মুদ্রাযন্ত্রের সোহাগমাখা শাসনে বর্ণের রূপ স্থির হয়ে যায়। শোভন ও সুশী হয় বাংলা লিপিমালা। পদ্যই প্রাচীন ও মধ্যযুগের একমাত্র সাহিত্য পদবাচ্য। বাংলা গদ্য আধুনিক কালের সৃষ্টি।
চর্যাপদ প্রাচীন যুগের সাহিত্যনিদর্শন। বৌদ্ধ সহজিয়া কবিদের এ লেখা কবিতা এদেশ থেকে এক সময় হারিয়ে যায়। পাওয়া যায় নেপালের
১. কুরআন এক ও অপরিবর্তনীয়। যারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পান, লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে, তাসখন্দ অথবা ইস্তাম্বলের তোপকাপি যাদুঘরে রক্ষিত প্রাচীন শিলাগুলির সঙ্গে নিজ ঘরে রক্ষিত যে-কোনো একটি কুরআনের কপি মিলিয়ে দেখুন, একই কপি! ১৪০০ বছর চলে গেছে, কেথাও একটি জের-জবরের পরিবর্তন নেই। বিজ্ঞানের এত উন্নতর অবকাশ সেদিন ছিল না। মানুষের স্মৃতিতে, হাতে লিখে এই কুরআন সংরক্ষিত হয়েছিল সেদিন। আর আজ তা পরিবর্তনের তো প্রশ্নই ওঠে না। এর সঙ্গে মিলিয়ে কুরআনের অমোঘ সম্ভাষণ পড়ুন— 'আল্লাহর বাণীর কোনো পরিবর্তন নাই। ইহা এক মহা সফল্য।' ১০/১৪, মোস্তফা জামান আব্বাসী, ক'ফোঁটা চোখের জল, পৃ. ৯৮। Loading.......
💕আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন। We Respect Every Author Hardwork - boipaw™
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....