হিফজ-যাত্রা (একজন সাধারণ মানুষ যেভাবে ৬ মাসে হাফিজ হবেন) Hifj Jatra


হিফজ-যাত্রা (একজন সাধারণ মানুষ যেভাবে ৬ মাসে হাফিজ হবেন)
লেখক : কারি মুবাশ্‌শির আনওয়ার
প্রকাশনী : ইলহাম ILHAM
বিষয় : ইসলামী জ্ঞান চর্চা, ইসলামী সাহিত্য, কুরআন বিষয়ক আলোচনা, হিফয বিষয়ক বই
অনুবাদ: মাসুদ শরীফ
পৃষ্ঠা: ১৬০

ম্যানচেস্টারে বেড়ে ওঠা এক কিশোর। কোনো মাদরাসায় পড়েননি৷ কোনো হিফ্‌জ-কোর্সেও ঢোকেননি৷ কিন্তু প্রায় সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় হাফিজ হয়েছেন। বইটিতে থাকছে তার সেই দুর্গম মরু পারি দেবার অনবদ্য গল্প।

যারা কখনো মাদরাসা বা হিফ্‌জ-কোর্সে অংশ নেননি, কিন্তু হাফিজ হবার স্বপ্ন লালন করেন তারা বইটি থেকে জানতে পারবেন নিজ উদ্যোগে হাফিজ হবার পথ ও পদ্ধতি।

কিংবা স্রেফ একজন হাফিজের আত্মস্মৃতি হিসেবেও পড়া যাবে বইটি

                      পূর্বকথা


ঠিক কবে যে কুরআন মুখস্থ করা শুরু করেছিলাম মনে নেই।

১১ কি ১৩ বছর—সম্ভবত ওই সময়ে প্রথম কুরআনের সাথে একটা সম্বন্ধ তৈরি হচ্ছিল। স্থানীয় মাসজিদে যেতাম ক্লাস করতে। এর আগে যাতায়াত ছিল এক বয়স্ক মহিলার বাড়িতে। তাঁর কাছে এরই মাঝে দুবার পুরো কুরআন খতম দিয়েছি। কিছু সুরা মুখস্থ করেছি। কিছু দুআও শিখেছি। উর্দু ভাষাটাও রপ্ত হয়েছে বেশ। তার বাসায় প্রতিদিন যেতাম। প্রথমে কয়েক পাতা কুরআন পড়তাম, তারপর মুখস্থ আর মুখস্থ—ভাষাটাও শিখতাম কিছুটা। সব মিলিয়ে ভালোই হ্যাঁপা যেত—তবে কাজের ছিল তাঁর পদ্ধতিটা।

আব্বু একদিন শুনলেন কাছের মাসজিদে নাকি ক্লাস নেয়া হবে এখন থেকে। আমাকে আর ছোট ভাইকে ভর্তি করে দিলেন সেখানে। বাসা থেকে কিছুটা দূরে ছিল মাসজিদটা। আমরা কুরআন পড়তে পড়তে যেতাম, কুরআন পড়তে পড়তে আসতাম। বাড়িতে ফিরতাম প্রায় ২ ঘণ্টা পর।

এরপর সবকিছু কেমন যেন দ্রুত বদলে গেল। মাথার সামনে একটা প্রশ্ন ঝুলছিল—আমি কি সত্যিই কুরআন মুখস্থ করতে চাই? শুরু করতে চাই হিজ-যাত্রা?

সেদিন একটা সিদ্ধান্ত আমায় নিতেই হতো। সেই সিদ্ধান্তের সবচেয়ে সুন্দর ফল আমার আজকের আমি। ভিন্ন প্রতিবেশ-সংস্কৃতি আর ভিন্ন মহাদেশ মিলে এক নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি এরপর ধীরে ধীরে।

কুরআন মুখস্থ করার ‘চেষ্টায়’ ডুব দিলাম। জানলাম-বুঝলাম কুরআন-শাস্ত্র সম্বন্ধে। ইসলাম সম্বন্ধেও পড়াশোনা হতে লাগল অল্পবিস্তর। ওদিকে পড়াশোনা আর সামাজিক কর্মকাণ্ডেও ব্যস্ততা বেড়েছে আগের চেয়ে।

আমি একটা কথা খুব বিশ্বাস করি: জীবনের শুরুটা ভালো-খারাপ যা-ই হোক, ওটা আপনার গন্তব্য ঠিক করে দেয় না। উপযুক্ত শিক্ষা প্রশিক্ষণ পেলে, যে-কেউ তার দক্ষতা প্রতিভায় শান দিতে পারেন। আর আজ এই সময়ে এটা কিন্তু অসম্ভবও না।

শিক্ষার ক্ষেত্রটিতে অনেক কিছু করার আছে বলে আমার বিশ্বাস। আমাদের সন্তানেরা শুধু ভবিষ্যৎ না; এরা তো বর্তমানও। আজ আমরা যা করি, তাই তো গড়ে দেবে আগামীকে। আমাদের মুসলিম সমাজ যেসব সমস্যায় ভুগছে, তার বেশ কিছু দেখে আসছি অনেক দিন ধরে। গুণগত শিক্ষার অভাব তাদের অন্যতম সমস্যা। এ সমস্যাগুলো একা সমাধান করা অসম্ভব; সবার সামগ্রিক অবদান লাগবে। ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘদিন ধরে আমি শিশু আর বয়স্কদের শিখিয়ে যাচ্ছি বিনামূল্যে। যতদিন বাঁচব এই চেষ্টা জারি থাকবে ইন শা আল্লাহ।

আমার কুরআন মুখস্থ করার অভিযান কীভাবে শুরু হলো তার একটা খণ্ডচিত্র পাওয়া যাবে এখানে: আমার অভিযানে কী কী হয়েছে, আমি কী কী করেছি, কোন কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি—এসব। আমার সেই যাত্রা অতি সাধারণ—তবে হয়তো কেউ কেউ নিজের জীবনের ছায়া এখানে পেয়েও যেতে পারেন। একজন সাধারণ মানুষ কীভাবে হাফিজ হবেন, আশা করি সেটা পষ্ট ফুটে উঠবে বইটিতে। কাজটা করতে কী পরিমাণ উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যে যেতে হয়, আশা করি মানুষজন বুঝবেন সেটা।  

আমার এই স্মৃতিকথা আপনাকে এই বিশ্বাস দেবে: মানুষের সম্ভাবনা অসীম। জগতে কাজের মতো কাজ করতে আপনার ধরাবাঁধা কিছু গুণ থাকা জরুরি না। আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল সন্দেহ থেকে। কিন্তু শেষ হয়েছে মজবুত প্রত্যয়ে। সফরটা আমার—কিন্তু তা হতে পারে আপনারও।

প্রতিটা অধ্যায়ের শিরোনামে চেষ্টা করেছি একটা মূলনীতি দিতে। আমার অভিযানে যা যা শিখেছি সেগুলো ধরা আছে প্রতিটা মূলনীতিতে। এগুলো দিশারী হিসেবে কাজ করবে। আমার জীবন থেকে পাওয়া বাস্তব শিক্ষা এগুলো। জীবনের বড়-ছোট বেশ কিছু সিদ্ধান্তে আমি এসব কাজে লাগিয়েছি। আশা করি এগুলো আপনাদের হিজ-যাত্রায় তো বটেই, জীবনের নানা পরতেও কাজে লাগবে।

স্বপ্ন কখন দিনের আলো দেখে জানেন? অনুপ্রেরণার ঝলকটাকে নিয়ে সাথে সাথে আমরা যখন কাজে নেমে পড়ি তখন। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোতে হয় আমাদের। যে-পদচিহ্ন রেখে যেতে চাই, তাড়া করে ফিরতে হয় সেটা। আশা করি তা খুঁজে পেতে সাহায্য করবে বইটি; কারণ, “আপনি যা খুঁজছেন, তা আপনাকেই খুঁজছে।”

             নজর যখন বড় কিছুতে


66 একজন বিশ্বাসী মানুষের ফসলের ক্ষেত তার আন্তরিকতা। সেই জমিনের সীমানা প্রাচীর ভালো ভালো যত কাজ। প্রাচীর বদলাতে পারে; কিন্তু জমিনের বদল হলে চলবে না। ধার্মিকতার ভিত্তি ছাড়া কোনো বাড়ি মজবুতভাবে দাঁড়াতে পারে না।

~ শাইখ আবদুল কাদির জিলানি

তখন যে আমি খুব সচেতনভাবে কুরআন মুখস্থ করতে চেয়েছিলাম তা না; তবে কাজটা যে খুব মহৎ তা বুঝতাম। মূলত আব্বুর চাওয়া ছিল অনেক। তিনি চাইতেন আমি যেন হাফিজ হই। আত্মীয়রাও আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। কিন্তু তখন উদ্দেশ্য ঠিক করে নামিনি—স্কুলে যাই, কুরআন মুখস্থ করি, বাড়ির কাজ করি—এভাবেই চলছিল দিনকাল। সাথে এখন যুক্ত হলো আবদুল বাসিতের মুজাওয়াদ ধরনের তিলাওয়াত।

নিজেকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করতাম, কেন আমি কুরআন মুখস্থ করছি? আব্বু চেয়েছেন, এটা একটা কারণ। তিনি ওরকম জোর না দিলে হয়তো শুরুই হতো না। কিন্তু নিজের সম্বন্ধে যত সচেতন হলাম, কিছুটা বড় হলাম, বুঝলাম, এখন আর আব্বুর কারণে না; আমি কুরআন মুখস্থ করি আমার নিজের জন্য।

সবাই বলত হাফিজ হতে ৩ বছরের মতো লাগবে। আমার বয়সের ছেলেমেয়েরা গড়ে ওই সময়ে হাফিজ হয়। তখন মূল বিষয় ছিল সময়—খুব মূল্যবান; কিন্তু পরিমাণে কম। উপরের শ্রেণিতে উঠতে

উঠতে নানা ব্যস্ততা, নানা কাজ চেপে ধরে। এজন্য নির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে শেষ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে পরে বুঝেছিলাম, সময়ের চেয়ে বড় লক্ষ্যের দিকে নজর রাখা বেশি বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়।

আমার কাছে কুরআন মুখস্থ করার ব্যাপারটা তখন দৌড় প্রতিযোগিতার মতো। নিজের সতীর্থ আর সময়ের সাথে পাল্লা দিচ্ছি যেন। সবার আগে সবচে বেশি পৃষ্ঠা মুখস্থ করতে হবে। নিজেকে কখনো সেরা তিলাওয়াতকারী দাবি করিনি বটে; কিন্তু ভেতরে ভেতরে ওজন্যই যত দৌড়ঝাঁপ।

আমার স্বভাব ছিল খুঁতখুঁতে। সবকিছু যেন নিখাদ হয় সেই চেষ্টা থাকত। মুখস্থ করা নিয়ে কেউ যেন কোনো কথা না শোনাতে পারে, উস্তাজের মার যেন খেতে না হয়, সেজন্য একদিম ঠিকঠাকমতো করতাম কাজটা। কিন্তু এভাবে করে পুরোনো পড়া ঝালাইয়ের প্রতি এক বিন্দু নজর ছিল না। শুধু মুখস্থ আর তিলাওয়াত।

সাধারণত ৩টি কারণে মানুষ হি করেন বলে দেখেছি:

বাবা বা মা বলেছে।

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

হিফ্রজের পুরস্কার পেতে: মাথায় তাজ, ১০ জনের

সুপারিশ করার সুযোগ।

আমিও শুরুতে অমনই ছিলাম বলা চলে। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল না। যেন বাবার জন্য করছি। কোনো সত্যিকার কারণ নেই। আপনাদের কি কখনো এমন হয়েছে, স্কুলে যেতে ইচ্ছে নেই—তবু যেতে হচ্ছে দিনের পর দিন? সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হতো, ওহ না, আবার স্কুল! কেন যেতে হবে! কবে শুক্রবার আসবে! শুরুর দিকে আমার জন্য বিষয়টা ছিল অনেকটা ওরকম—ভুল বুঝবেন না। প্রথম কয়েক

বছর মাসজিদে যেতে কিন্তু বেশ ভালো লাগত আমার। স্কুল থেকে ফিরে সাথে সাথে পোশাক পাল্টে চলে যেতাম।

তবে অল্প কদিনের মধ্যেই আব্বু আমাকে নিয়তের বিষয়টা পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমি যেন এটা করি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য।

এখানে একটা বিশেষ সত্য বলার আছে। আমরা আসলে হাফিজ হবার চিন্তায় এত বিভোর থাকি, কবে শেষ হবে তা নিয়ে অস্থির হয়ে যাই একটা সময়ে গিয়ে। বাবা-মায়েরা’ও অস্থির হয়ে যান। পরজীবনের পুরস্কারের স্বপ্নে তারা ব্যাকুল। বিচার দিনে মাথায় তাজ পরতে কার না ভালো লাগবে। তবে এরচেও অনেক বড় কিছু আছে ভাবার মতো—আমাদের জন্য নয়, মুখস্থকারীর জন্য।

হিরে বেলায় আপনি দুধরনের মনোভাব নিয়ে এগোতে পারেন:

হিজ করার মনোভাব

৭ হিজ-যাত্রা মনোভাব

হিফজ করার মনোভাব

কুরআন আগাগোড়া মুখস্থ করা মূল চিন্তা এখানে। মুখস্থ করার পদ্ধতি, কৌশল আর শেষ করা নিয়ে যত মাথাব্যথা। হিজ করা এখানে এক প্রতিযোগিতা। বহুদিন যাবত আমার মাঝে এমন মনোভাব ছিল। এ থেকে বের হওয়া ভীষণ কষ্টের। হয়তো আপনার মনোভাব বদলেছে, কিন্তু আশেপাশের সবার মনোভাব তো বদলায়নি। আপনার বাবা-মা, শিক্ষক তারা ঠিক আগের মতো রয়ে গেছেন। বারে বারে আপনার কানে তাই প্রশ্ন আসে:

কতটুকু মুখস্থ করলে?

এতদিন লাগছে কেন মুখস্থ করতে?

             কী কারণে পথে নেমেছি


66 প্রত্যেক কাজের মূল্যায়ন নিয়তের ভিত্তিতে। প্রত্যেকে যা নিয়ত করবে সে অনুযায়ী ফল পাবে। কেউ যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্য অভিবাসী হন, তা হলে তার অভিবাসন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্য। কেউ যদি দুনিয়াবি কোনো ফায়দা কিংবা কোনো নারীকে বিয়ের জন্য অভিবাসী হন, তার অভিবাসন তা হলে তিনি যেজন্য অভিবাসী হয়েছে সেজন্য।

প্রিয় নবি মুহাম্মাদ

একদিন আমার উস্তাজ আমাকে বললেন আমি নাকি “জিন হাফিজ”! কী উদ্ভট কথা।

তিনি বললেন, আমি বড় হলে লোকে আমার তিলাওয়াত শুনতে আসবে। আমার কণ্ঠ শুনে আমাকে জিন হাফিজ বলবে।

সে আজ প্রায় ১৭-১৮ বছর আগের কথা। আমি কিন্তু বেশ মুখচোরা মানুষ। নিজের আবেগ-অনুভূতি নিজের মাঝেই রাখি। কারও সাথে অত কথা বলি না। খুব বেশি মানুষকে বিশ্বাসও করি না। আমার লিখতে ভালো লাগা আমার মুখচোরা স্বভাবের কারণে। জনসমুখে তিলাওয়াত বা কথা বলার পরও আমি খুব একটা বদলাইনি।

মুখস্থ করার সময় বুঝেছিলাম, আল্লাহ আমাকে তিলাওয়াতের একটা প্রতিভা উপহার দিয়েছেন। আব্বু বলতেন, আমাকে এই উপহার দেবার পেছনে অবশ্যই কোনো কারণ আছে। আমি যেন এর ব্যবহার করে মানুষকে ইসলামের দিকে ডাকি। কিন্তু সত্যি বলতে তা কখনো


ওভাবে তখন করা হয়নি। মাঝে মাঝে টিভিতে অনুষ্ঠানে রেকর্ডিঙের জন্য ডাকা হতো আমাকে। কিন্তু আমি যেতাম না। মুখস্থ করতে করতে তা কীভাবে করি!

আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে বেশ কিছু বই পড়ি সব সময়। ওগুলো পড়ে আমার মনে হয়েছিল, এসব কাজে গেলে আমার নিয়তে গড়বড় হতে পারে। মুখস্থ করায় আমার মনোযোগ নষ্ট হতে পারে। আমি কারও নজর কাড়তে চাইনি। অগোচরে থাকাতেই আমার পছন্দ। ওসব নিয়ে তাই আর ভাবিনি। মুখস্থ করার কাজে মন দিয়ে রেখেছিলাম।

তবে তখনও অত দূরদর্শী হতে পারিনি এত কিছুর পরও। তখন আমার নিতিদিনের ছক ছিল অনেকটা এরকম:

৫ ৮টার দিকে উঠে স্কুলে যাওয়া

বাসায় ফেরা সাড়ে ৩টার মধ্যে

টিভি দেখতে দেখতে কিছু খাওয়া

সাড়ে ৪টার দিকে মাসজিদে ছোটা

সেখানে ২ ঘণ্টা মুখস্থ

বাসায় ফিরে ঘরে বা বাইরে খেলা

রাতের খাবার

বাড়ির কাজ কিংবা ঘরে খেলা

ঘুমানো

তো, দেখতেই পাচ্ছেন, শুধু মাসজিদে গিয়েই কুরআন নিয়ে বসা হতো। বেশিরভাগ লোকের বেলাতে এমনই হয়—এখনও।

এটা ছিল আমার কুরআন মুখস্থ করার যাত্রার শুরু দিককার কথা। এই পথে পাড়ি দিতে আমি ৫টি পর্যায় পার করেছি। মাসজিদে তখন মুখস্থ করা ছিল আমার প্রথম পর্যায়।

৩০তম জুজ থেকে আমি মুখস্থ শুরু করেছিলাম। কয়েক মাস লেগে গিয়েছিল ওটা শেষ করতে। এরপর শুরু করেছি ১ম জুজ। কখনো মাসজিদের উস্তাজ ঠিক করে দিতেন কতখানি মুখস্থ করতে হবে। কখনো ২ ঘণ্টায় যতখানি পারতাম মুখস্থ করতাম। প্রথমে কয়েক লাইন মুখস্থ করতাম, বারবার পড়তাম। খুব বেশি এগোতে পারতাম না তখন।

সুরা বাকারা শেষ করতে ভালোই হ্যাঁপা পোহাতে হয়েছিল। শুনতাম কেউ কেউ নাকি মাত্র এক-দু মাসে মুখস্থ করে ফেলে এটা। কিন্তু আমার জন্য এটা ছিল হিমালয় চড়ার মতো। মনে হচ্ছিল যেন কয়েক বছরেও শেষ হবে না—হি-যাত্রায় সবাইকেই কমবেশি এরকম এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় বৈ কি।

আমি তখন একদিকে মাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়াশোনা করছি। স্কুলের চাপ, কুরআন মুখস্থ করার চাপ–সহজ ছিল না মোটেও। অল্প কিছু লাইন মুখস্থ করতাম—ঝালাই করা হতো না বললেই চলে।

আরেকটা বড় সমস্যা ছিল বারবার উস্তাজ বদল হতো। নতুন উস্তাজ এলে ধারাবাহিতায় ছেদ পড়ত, গতি হারিয়ে যেত। সমস্যা শুধু এখানেই শেষ না—দেখা যেত প্রতি মাসে একবার করে অসুস্থ হচ্ছি। যে-কারণে এক সপ্তা মাসজিদে যাওয়া হতো না। হিজও হতো না। বাইরে তিলাওয়াত করি বলে বদনজরের কারণে এটা হতো বলে শুনতাম। আবার ওদিকে স্কুলে পরীক্ষার সময় হলেও হিফজে ছেদ পড়ত। তো শুরু থেকেই আসলে আমার কুরআন মুখস্থের অভিযাত্রা ছিল বেশ সঙ্কুল। তবে মাঝখানে এমন একটা ঘটনা ঘটল, আমার বাকি জীবনের তরে তার ছাপ রেখে গেল।

আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক বন্ধু যোগ দিয়েছিল আমার সাথে কুরআন মুখস্থ করতে। অনেকটা আমার কারণেই। আমরা একে অন্যের

আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন। 
We Respect Every Author Hardwork -boipaw team

Image

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ