খোঁপার বাঁধন - লেখক : আরিফুল ইসলাম | Khopar Badhon By Ariful Islam

খোঁপার বাঁধন (full pdf download no available)
লেখক : আরিফুল ইসলাম
প্রকাশনী : সত্যায়ন প্রকাশন
বিষয় : পরিবার ও সামাজিক জীবন
পৃষ্ঠা : 136, কভার : পেপার ব্যাক

Image
Read Before Buy Khopar Badhon

প্রদীপ্ত কুটির’ বইয়ের সেকেন্ড সিক্যুয়েল হলো ‘খোঁপার বাঁধন’। প্রদীপ্ত কুটির ছিলো মাহির-লাফিজার সংসার জীবনের সূচনা। তরুণ দম্পতি একজন আরেকজনকে সুন্নাহর আলোকে শুধরে দেয়, সুন্নাহর আলোয় তারা ঘর আলোকিত করতে চায়। প্রদীপ্ত কুটিরে প্রাধান্য পেয়েছে পরিবার। পরিবারের গণ্ডি পার হলে সমাজ। ‘খোঁপার বাঁধন’ পরিবারের গণ্ডি থেকে বের হয়ে সমাজটাকেও দেখতে চেয়েছে। 

মাহির-লাফিজার পাশাপাশি সমাজের চরিত্রগুলো কেমন, কিভাবে সেই চরিত্রগুলো সুন্নাহর আলোয় আলোকিত হতে পারে, তা দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। একজন মসজিদের ইমাম কিভাবে সমাজ গঠনে ভূমিকা পালন করতে পারেন, গ্রামের একজন মুরব্বি কিভাবে একটি কুপ্রথা বন্ধ করতে উদ্যোগ নিতে পারেন, সামাজিক উদ্যোগ কিভাবে বড়ো গুনাহ থেকে বিরত রাখতে পারে এরকম কিছু আইডিয়া শেয়ার করা হয়েছে ‘খোঁপার বাঁধন’ বইয়ে।বাংলাদেশে ইসলামের ব্যাপারে যেসব প্রশ্ন উঠে, সেগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ হলো সাংস্কৃতিক প্রশ্ন। 

‘ইসলাম বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে খাপ খায় না’ বা ‘বাংলাদেশের সংস্কৃতি ইসলামের কারণে কলুষিত হচ্ছে’ এরকম কথা অনেকেই বলে থাকেন। ভার্সিটিতে পড়াবস্থায় মাহির-লাফিজা এমন কথা শুনেছি। স্বামী-স্ত্রী গল্প করতে করতে সংস্কৃতি নিয়েও কথা বলেন। তারা দেখাতে চান উপমহাদেশের সংস্কৃতিতে মুসলিম প্রভাব কিভাবে সাদরে গ্রহণ করা হয়েছিলো। তারা কথা বলেন উপমহাদেশের সংস্কৃতিতে পোশাকের বিবর্তন নিয়ে।

সংস্কৃতির পাশাপাশি মাহির-লাফিজা সাহিত্য নিয়েও কথা বলেন। সাহিত্যকে কিভাবে বিচার করবো, সাহিত্য বিচারের মাপকাঠি কী হওয়া উচিত সেটা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন, সাহাবীদের সাহিত্যচর্চার আলোকে তারা তুলে ধরেন।বাংলাদেশের সমাজ-সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় তরুণ-তরুণীরা নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে কিভাবে ইসলামকে সামনে রেখে জীবনযাপন করতে পারে, তার একটি কল্পিত গাইডলাইন ‘খোঁপার বাঁধন’। -wafilife

                 মিথ্যা সাক্ষ্য ....

সূর্য উঠি উঠি করছে। চারদিক আস্তে আস্তে ফর্সা হওয়া শুরু হয়েছে। রাস্তা দিয়ে কয়েকজন জগিং করতে করতে যাচ্ছে। জগিংকারীদের বেশির ভাগই মধ্যবয়স্ক। কেউ নিজ থেকে উদ্যোগী হয়ে হাঁটতে বের হয়েছে, কেউবা ডাক্তারের পরামর্শে। ফজরের নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে মাহির ভাবল, অনেকদিন ধরে তো সকালের নির্মল বাতাসে হাঁটা হয় না। আজ একটু হেঁটে আসি।

পাঁচ-দশ মিনিটের জন্য হাঁটতে বের হয়ে কীভাবে যে আধা ঘণ্টা পার হয়ে গেছে সে বুঝতেই পারেনি! মাহিরের ভাবনায় ছিল, আমার তো আজ আটটায় কোনো ক্লাস নেই, তাই কিছুক্ষণ হাঁটতে তেমন অসুবিধা নেই। কিন্তু পরক্ষণে মনে পড়ল, আরে, আজ তো লাফিজার ক্লাস আটটায়। বাসায় তাড়াতাড়ি পৌঁছার জন্য মাহির হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলো। একে তো ভ্যাপসা গরম, তার ওপর দ্রুত হাঁটতে গিয়ে টি-শার্ট ভিজে একাকার।

বাসায় ঢুকে দেখল লাফিজা জায়নামাজে শুয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখল ঘুমিয়েও পড়েছে। মাহির ভেবে পায় না এত তাড়াতাড়ি তার কীভাবে ঘুম আসে! চোখ বোজার সাথে সাথে সে ঘুমিয়ে পড়তে পারে। মাহির আস্তে আস্তে ডাক দিলো। ‘নামাজ পড়ে জায়নামাজে একটু শুয়েছিলাম, ঘুমিয়ে পড়ব বুঝতেই পারিনি। কয়টা বাজে? আমার তো আবার সকালে ক্লাস।' ঘড়িতে সময় দেখার পর লাফিজার তাড়াহুড়ো বেড়ে গেল। ব্যাগ রাতেই গুছিয়ে রেখেছিল। এখন শুধু নিজের রেডি হওয়া বাকি। মাহির বলল, 'তুমি ঝটপট রেডি হয়ে নাও, আমি গোসল করে আসছি।' লাফিজা ঘড়ির দিকে তাকাল। সে জানে মাহির গোসল করতে খুব বেশি সময় নেয় না। অন্যথায়, এখন গোসল করতে যেতে বারণ করত। একটু দেরি হলে আবার ভার্সিটির বাস  মিস করবে। লোকাল বাসে উঠলে আরেক ঝামেলা।

বাসা থেকে কিছু খেয়ে না বের হলে আর দশটার আগে খেতে পারবে না। টঙের দোকানে নিকাব খুলে তো সে খেতে পারবে না। মাহির পারত। কিন্তু সে সাথে থাকায় মাহিরও খেতে চাইবে না। রেডি হবার কাজটা একটু দ্রুত সেরে নিয়ে লাফিজা রান্নাঘরে গেল। খালি মুখে বের না হয়ে দুটো ডিম ঝালফ্রাই করে তো খেতে পারবে। নিজের জন্য নরম কুসুম আর মাহিরের জন্য শক্ত কুসুম রেখে ডিম ঝালফ্রাই করল। খাবার পছন্দের বেলায় মাহিরের সাথে তার খাবার ম্যাচিং খুব কম। এমনকি চায়ের পছন্দেও দুজনের মিল নাই। মাহির পছন্দ করে কড়া লিকার দিয়ে দুধ চা আর লাফিজা পছন্দ করে পুদিনা পাতা দিয়ে রং চা।

বাসা থেকে বের হতে হতে বেজে গেল ৬.৫১। বাস স্টপেজে যেতে লাগবে পাঁচ মিনিট। বাসা থেকে বের হবার সময় লাফিজা রুটিন মাফিক একটা কাজ করে। সাথে কী কী নিচ্ছে জোরে জোরে কাউন্ট করে। মোবাইল, পার্স, বই, খাতা, কলম, ক্লাসের ফাঁকে পড়ার জন্য উপন্যাস যে পারো ভুলিয়ে দাও।' এগুলো কাউন্ট করার পর মাহিরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আর কী?’ মাহির মুখের ভঙ্গি দিয়ে বুঝিয়ে দিলো, তুমিই জানো আর কী। খানিকক্ষণ চিন্তা করার পর ‘পেয়ে গেছি' টাইপের আনন্দে লাফিজা বলল, “আর মাহির! মাহিরকে সাথে নিতে আমার কখনো ভুল হয় না!’

স্ত্রীর এমন পাগলামি দেখে মাহির হাসছে। হাঁটতে হাঁটতে সে জিজ্ঞেস করল, ‘কয়েকদিন ধরে তুমি এমন শব্দ করে সবকিছু চেক করো কেন?’ পার্সের চেইন লাগাতে লাগাতে লাফিজা উত্তর দিচ্ছে, 'কয়েকদিন আগে Atomic Habits বইটি পড়ে এই কৌশলটা জানলাম। কৌশলটা আমার মনে ধরেছে। এমনটা করলে কোনোকিছু ভুলে বাসায় ফেলে যাবার সম্ভাবনা থাকে খুব কম। ওই বইয়ের লেখক অবশ্য কৌশলটা রপ্ত করেছেন তার স্ত্রীর কাছ থেকে।' মাহির আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল, ‘কীভাবে?’

‘লেখকের স্ত্রী ঘর থেকে বের হবার সময় জোরে জোরে বলতেন, Thave got my keys, I have got my wallet, I have got my glasses and I have got my husband? ইন্টারেস্টিং না??

‘হুম, দারুণ।'

বাস স্টপেজে এসে তারা দেখল মাত্র ভার্সিটির বাস চলে গেছে। এখনো দেখা যাচ্ছে। মাহির একা থাকলে দৌড়ে বাসে উঠতে পারত।

সকালবেলা বাসটা মিস করে লাফিজার মনটা খারাপ হয়ে গেল। এখন আবার লোকাল বাসে যেতে হবে। দু মিনিট পরপর ব্রেক করে প্যাসেঞ্জার তুলবে। অসহ্যকর! মাহিরের চেহারার মধ্যে বিরক্তির কোনো ছাপ নেই। তাকে দেখে মনে হচ্ছে, বাস মিস হওয়ায় সে বরং খুশি। লাফিজা ধমকের সুরে বলল, 'অ্যাই, মিটিমিটি হাসছো কেন?’ মুখের হাসি প্রশস্ত করে মাহির উত্তর দিলো, ‘ভার্সিটির বাস মিস হওয়ায় একদিক দিয়ে লাভ হলো। অনেকদিন ধরে তোমার সাথে বসে বাসে চড়ি না। ভার্সিটির দু'তলা বাসে তুমি থাকো নিচের তলায়, আমি থাকি ওপরের তলায়। আজ অনেকদিন পর সুযোগ হলো একসাথে বাসে বসার। লাফিজার বিরক্তি এবার হাসিতে রূপান্তরিত হলো। মনে মনে বলছে, এই ছেলেটা কীভাবে খটখট করে রোমান্টিসিজমের কথাগুলো বলে! লাফিজা তার রোমান্টিকতাকে একটু চেপে রাখে। দশভাগের একভাগ প্রকাশ করলে নয়ভাগ লুকিয়ে রাখে।

‘ঠিকানা’ বাসে উঠল দুজন। বাসের অর্ধেক ফাঁকা। লাফিজাকে জানালার পাশে রেখে গ্লাসের অর্ধেক টেনে দিলো। গ্লাসের অর্ধেকটা টেনে দেবার মানে কী লাফিজা জানে না। কোনোদিন জানতেও চায়নি। তবে সে এটা নিশ্চিত, তার নিরাপত্তার কথা ভেবেই মাহির এটা করে। পাবলিক প্লেইসে মাহিরের দায়িত্ববোধ লাফিজাকে বুঝিয়ে দেয়, মাহির তাকে কতটা কেয়ার করে। মাঝে মাঝে মাহির যখন দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো আচরণ করে তখন লাফিজার ইচ্ছে হয় মাহিরের সাথে ঝগড়া করবে। কিন্তু এইসব কথা ভেবে সে আর ঝগড়ায় জড়ায় না। মনে মনে বলে, 'কোনো মানুষই তো ‘পার্ফেক্ট’ নয়।'

লাফিজার মোবাইল ভাইব্রেট করছে। কল পিক করে কথা বলা শুরু করল,

‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। হ্যাঁ, সিমা, বলো।'

‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। তুমি কেমন আছ?'

‘ওহ! ক্লাসে আসবা না??

‘উমম, আমি তোমাকে কথা দিতে পারছি না। তবে স্যারের মুড যদি ভালো মনে হয়, তাহলে চেষ্টা করে দেখব।

‘তোমার আইডি কত বলো??

‘এইটি সেভেন? আচ্ছা ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ।'

লাফিজার ফোনে কথা বলা শেষ হলে মাহির জিজ্ঞেস করল, 'কে ফোন দিয়েছে?'

লাফিজার ফোন এলে মাহির পারতপক্ষে জিজ্ঞেস করে না, ‘কে ফোন দিয়েছে? কী বলল?'। কিন্তু আজ জিজ্ঞেস করল। ‘সিমা ফোন দিয়েছে। আমাদের ক্লাসের। ও আজ ভার্সিটিতে আসতে পারবে না। আমাকে বলল তার প্রক্সিটা দিতে।'

‘তুমি রাজি হয়ে গেলে?

‘হ্যাঁ, রাজি হব না কেন? কয়েকদিন আগে আমি ক্লাসে যাইনি। তাকে ফোন দিয়ে বলেছিলাম ‘প্রক্সি’ দিতে। আজ সে আসবে না, আমি তার প্রক্সি দেবো। গিভ অ্যান্ড টেক!’

লাফিজার হাসির সাথে মাহির এবার তাল মেলালো না। বাস সিগন্যালে আটকা পড়েছে। মাহিরের মনে পড়ছে তার ফার্স্ট ইয়ারের একটা ঘটনা। ঘটনাটি লাফিজার সাথে শেয়ার করা দরকার।

‘শোনো লাফিজা, আমি তখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। সকাল আটটার ক্লাস বেশির ভাগ দিন মিস করতাম। রাতে দেরি করে ঘুমাতাম। এত সকাল ঘুমই ভাঙত না। ৭৫% অ্যাটেনডেন্স না থাকলে জরিমানা দিতে হবে। আর ৬০% অ্যাটেনডেন্স না থাকলে নন-কলিজিয়েট হতে হবে। তখন আমরা বন্ধুরা মিলে একটা গ্রুপ খুলি। পাঁচ জনের গ্রুপ। সবাই সবার আইডি নাম্বার জানত। ক্লাসে পাঁচ জনের কেউ না গেলে বাকিরা প্রক্সি দিত।

আমার প্রক্সিও অনেকবার দেওয়া হয়েছে। আমিও বাকিদের প্রক্সি দিয়েছি। একদিন প্রক্সি দিতে গিয়ে আমি ধরা খাই। রোলকল করার পর স্যারের সন্দেহ হলো কেউ প্রক্সি দিয়েছে। স্যার আবার কাউন্ট করেন, রোলকল করেন। পরে স্যার বের করলেন সীমান্তর প্রক্সি দেওয়া হয়েছে। স্যার জানতে চাইলেন, ‘কে প্রক্সি দিয়েছে বলো। ভালোয় ভালোয় বললে আমি কিছু বলব না। কিন্তু আমি যদি খুঁজে বের করি তাহলে খুব অসুবিধা হবে।' আমি তখন ভয় পেয়ে যাই। একবার মন বলছে স্বীকার করে নিই, আরেকবার বলছে আমি স্যারের কাছে ‘কালার’ হতে চাই না।

স্যার যখন দেখলেন কে প্রক্সি দিয়েছে কেউ স্বীকার করছে না, তখন যার প্রক্সি দেওয়া হয়েছে তার পুরো সেমিস্টারের অ্যাটেনডেন্সের দশ মার্ক কেটে দেন। সীমান্ত এটা জানার পর আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। এখনো সে আমার সাথে ঠিকমতো কথা বলে না। অথচ আমি চাইনি তার এমনটা হোক। আমরা একে অন্যের ভালোর জন্যই তো প্রক্সি দিতাম, তাই না?'

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেল মাহির। সিগন্যালের গ্রিন লাইট জ্বলে উঠল। লাফিজা জানতে চাইল, ‘পরে কী হলো?’ ‘এটা নিয়ে আমি বেশ কিছুদিন আপসেট ছিলাম। আমাদের বন্ধুত্বের ফাটল ধরল। তুমি তো জানো, মনীষীদের উক্তি কালেক্ট করা আমার শখের কাজ। (লাফিজা মাথা নাড়ল) তখন আমার মনে পড়ল ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা ৯-এর একটা উক্তির কথা।

'When people help one another in sin and transgression, they finish by hating each other'

মানুষ যখন একে অন্যকে পাপকাজে সাহায্য করে, তাদের সম্পর্কের শেষ হয় পরস্পরকে ঘৃণা করার মাধ্যমে।

আমি তখন খোঁজ নিতে লাগলাম, প্রক্সি দেওয়াটা কি আসলেই কোনো পাপ কাজ। খোঁজ নেবার পর যেটা পেলাম সেটা দেখে আমি খুবই অবাক হলাম। রাসূলুল্লাহ -এর হাদীসটা আমার আজও মনে আছে।

মাহিরের কথা শুনে লাফিজার চোখ কপালে ওঠার উপক্রম। “ইউ মিন, প্রক্সি দেওয়া নিয়ে হাদীস?”

‘হাদীসটা খুবই এক্সপ্লিসিট। রাসূলুল্লাহ * একবার হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, “আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড়ো কবীরা গুনাহগুলো সম্পর্কে বলব?” সাহাবায়ে কেরাম আগ্রহ নিয়ে সেগুলো কী জানতে চাইলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ বললেন, “আল্লাহর সাথে শিরক করা, পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া'। এই দুটো বলার পর তিনি হেলান ছেড়ে উঠলেন। সোজা হয়ে বসলেন। অর্থাৎ, তিনি এখন যা বলবেন, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বারবার বলে যেতে লাগলেন, ‘মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া... তিনি এতবার মিথ্যা সাক্ষ্য দেবার কথা উল্লেখ করলেন যে, সাহাবিরা মনে মনে বলতে লাগলেন, তিনি যদি আর না বলতেন। [১]

‘লাফিজা, আমার মনে হয় তোমার এই বিষয় নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, প্রক্সি দেওয়া হলো মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। প্রক্সি দেবার মাধ্যমে ক্লাসে আমরা সবার সামনে স্বীকারোক্তি দিই, এই ছেলেটা বা এই মেয়েটা আজকে ক্লাসে উপস্থিত। অথচ সে সেদিন ক্লাসেই ছিল না। এটা কি মিথ্যা সাক্ষ্য নয়?'

লাফিজা মাথা নাড়ল। মাহিরের কথার সাথে সে একমত। কিন্তু এই সামান্য প্রক্সি দেওয়া নিয়ে সে এত সিরিয়াসলি কখনো চিন্তা করেনি। যেই কাজকে রাসূলুল্লাহ * শির্ক করা, মা-বাবার অবাধ্য হবার মতো বড়ো বড়ো গুনাহগুলোর কাতারে রেখেছেন। সেই কাজটা তো এত ফেলনা না।

বাস থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে লাফিজা চিন্তা করছে, সিমাকে কীভাবে ‘না’ বলবে। সিমা তার খুব কাছের বান্ধবী। তার মুখের ওপর না বলাটা বেশ কঠিন। আবার সে নিজেও তার কাছে প্রক্সি চেয়েছিল। লাফিজার মাথায় ঘুরঘুর করছে মাহিরের কাছ থেকে শোনা ইবনু তাইমিয়্যার উক্তি—

'When people help one another in sin and transgression, they finish by hating each other'

সিমার সাথে এত বছরের সম্পর্কটা সে ঘৃণার মাধ্যমে নষ্ট করতে চায় না। ক্লাসে ঢুকে সিমাকে ম্যাসেজ দিয়ে রাখল, ‘সিমা, আজ তোমার প্রক্সিটা দিতে পারছি না। কেন পারছি না সেটা তোমার সাথে দেখা হলে বলব।'

[১] বুখারি, ২৬৫৪।

আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন। We Respect Every Author Hardwork - boipaw

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ