খুলুকিন আযীম - লেখক : মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ | Khulukin Azeem By Muhammad Atiq Ullah

খুলুকিন আযীম (pdf download free no available)
লেখক : মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল আযহার
বিষয় : সীরাতে রাসূল (সা.)
পৃষ্ঠা : 640
ভাষা : বাংলা
Image


সাপ্লায়ার জানিয়েছেন এই পণ্যটি 5 March প্রকাশিত হতে পারে। প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে পণ্যটি পেতে আগেই অর্ডার করে রাখুন | 

         যিকরুল্লাহ আল্লাহর যিকির

১. যিকরুল্লাহ মানে আল্লাহর যিকির। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ খালিক—স্রষ্টা। আমরা মাখলুক সৃষ্টি। আল্লাহ আমাদের রব – প্রতিপালক। আমরা আল্লাহর পোষ্য। আমাদের নিজের কোনো শক্তি নেই। আল্লাহর দেওয়া শক্তিতেই আমরা চলি। এ কথাগুলো মনে মনে বা মুখে মুখে স্বীকার করে নেওয়াই যিকিরের মূল কথা। নবীজি আমাদের অসংখ্য ইবাদত শিখিয়ে গেছেন। তার মধ্যে সম্ভবত আল্লাহর যিকিরের কথাই বেশি বলে গেছেন। নবীজির প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর ইবাদতে কেটেছে। নবীজি জীবনে সবচেয়ে বেশি বোধহয় যিকিরের ইবাদত করেছেন। আল্লাহর যিকিরের মতো আর কোনো ইবাদত এত বেশি পরিমাণে করেননি। আম্মাজান আয়েশা রা. বর্ণনা করেছেন,

كان النبي صلى الله عليه وسلم يذكر الله على كل أخيانه ‘নবীজি সা. সর্বদা আল্লাহর যিকির করতেন। প্রতিটি পল-অণুপল আল্লাহর যিকিরে-ফিকিরে কাটাতেন। ১

২. সারাদিনের প্রতিটি ক্ষণ, জীবনের প্রতিটি পর্বকেই নবীজি আল্লাহর যিকির দ্বারা সমৃদ্ধ আর পূর্ণতর করে তুলেছিলেন। নবুওয়াতি যিন্দেগির সামান্য সময়ও আল্লাহর যিকিরশূন্য রাখেননি। নবীগণের বৈশিষ্ট্যই এমন। তাদের কলব কখনোই আল্লাহর যিকিরমুক্ত থাকে না। ঘুমের ঘোরেও তাদের কলব আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকে। সবসময় আল্লাহর যিকিরে-ফিকিরে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। নবীজি যিকরুল্লাহকে কত বেশি গুরুত্ব দিতেন, একটি ঘটনা থেকে তা বোঝা যায়। এক সাহাবী এসে নবীজির কাছে সংক্ষেপে একটি নসিহত প্রার্থনা করেছিলেন। আবদুল্লাহ বিন বুসর রা.-এর বর্ণনায় হৃদয়গ্রাহী সেই দৃশ্যটি চিত্রিত হয়ে আছে:

أن رجلا قال: يا رسول الله، إن شرائع الإسلام قد كثرت علي، فأخبرني بشيء أتشبث به. قال : لا يزال لسانك رطبا من ذكر الله .

‘এক লোক এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইসলামি শরিয়তের বিধিবিধান অনেক বেড়ে গেছে। এত দিকে খেয়াল রাখা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আমাকে শুধু একটি নসিহত করুন। নসিহতখানা আঁকড়ে ধরে বাকি জীবন কাটিয়ে দেব। নবীজি বললেন, তোমার যবান যেন সবসময় আল্লাহর যিকির দ্বারা সজীব থাকে ।

৩. যিকরুল্লাহ অত্যন্ত দামি কাজ। যিকরুল্লাহর ফযিলতও আশাতীত। আল্লাহর যিকিরকারীগণ জান্নাতে প্রবেশে সবার চেয়ে অগ্রগামী থাকবেন। আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন,

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسير في طريق مكة فمر على جبل يقال له جمدان. فقال : سيروا هذا جمدان، سبق المفردون. قالوا: وما المفردون يا رسول الله؟ قال : الذاكرون الله كثيرا والذاكرات .

‘আল্লাহর রাসূল মক্কার এক পথ দিয়ে হাঁটছিলেন। জুমদান নামক এক পাহাড়ের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেন, এটা জুমদান পাহাড়। তোমরা এই পর্বতে পরিভ্রমণ করতে থাকো। মুফাররিদুনরা আজ জুমদান পর্বতের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে। সঙ্গীরা জিজ্ঞাসা করলেন, মুফাররিদুন কারা ইয়া রাসূলাল্লাহ? নবীজি বললেন, বেশি বেশি আল্লাহর যিকিরকারী নারী ও পুরুষ।

৪. অন্যদের চেয়ে অগ্রগামী হওয়ার মানদণ্ডই হলো বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা। দুনিয়াবি পদমর্যাদা নয়, আল্লাহর যিকিরই শ্রেষ্ঠত্বের চাবিকাঠি। টাকাপয়সা, বাড়িগাড়ি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উপায় নয়, আল্লাহর বেশি বেশি যিকিরই পারে আমাকে আল্লাহর কাছাকাছি পৌঁছে দিতে। নবীজি সা. বলেছেন,

ألا أنبئكم بخير أعمالكم وأزكاها عند مليككم، وأرفعها في درجاتكم وخير لكم من إنفاق الذهب والورق، وخير لكم من أن تلقوا عدوكم فتضربوا أعناقهم ويضربوا أعناقكم؟ قالوا : بلى. قال : ذكر الله تعالى.

‘আমি কি সর্বোত্তম আমল সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করব, যে আমল হবে তোমাদের মালিকের নিকট সবচেয়ে পরিশুদ্ধ, তোমাদের দরজা বুলন্দকারী, আল্লাহর রাস্তায় সোনা-রুপা ব্যয় করার চেয়েও তোমাদের জন্য অধিক কল্যাণকর, আর এরচেয়েও মঙ্গলকর হবে যে তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হয়ে তাদের গর্দানে আঘাত করবে আর তারা তোমাদের গর্দানে আঘাত করবে? সাহাবীরা বললেন, জি অবশ্যই বলুন। আল্লাহর রাসূল বললেন, তা হলো আল্লাহর যিকির।'

قال معاذ بن جبل رضي الله عنه ما شيء أنجي من عذاب الله من ذكر الله.

‘মুআয ইবনে জাবাল রা. বলেছেন, আল্লাহর যিকিরের চেয়ে আল্লাহর আযাব থেকে অধিক মুক্তিদানকারী আর কোনো বিষয় নেই।”

৫. আমি চাইলে প্রতিটি মুহূর্তকে আল্লাহর যিকির দ্বারা সমৃদ্ধ করে তুলতে পারি। প্রকৃত মুমিন কখনো আল্লাহর যিকির থেকে গাফেল থাকতে পারে না। এমনি এমনি কত সময় নষ্ট করে ফেলি। চুপচাপ বসে থাকি। অহেতুক চিন্তাভাবনায় ডুবে থাকি। হাঁটার সময় অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি। এসব না করে মনকে আল্লাহর যিকিরে অভ্যস্ত করে তুলতে পারলে, সময়গুলো আখেরাতপূর্ণ হয়ে উঠবে। আল্লাহর যিকিরের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নবীজি সা. বলে গেছেন,

مثل الذي يذكر ربه والذي لا يذكر ربه، مثل الحي والميت.

“যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকির করে আর যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকির করে না, দুজনের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃত মানুষের মতো।

৬. আমি যাচাই করে দেখতে পারি, আমি জীবিত নাকি মৃত? আমার কলবকে আল্লাহর যিকিরে এমনভাবে অভ্যস্ত করে তোলা দরকার, আল্লাহর যিকির ছাড়া যেন স্বস্তিই না পায়। আল্লাহর যিকির না করলে আমার কলব যেন ডাঙায় তোলা মাছের মতো খাবি খেতে থাকে। তীব্র পিপাসায় ছটফট করতে থাকা মানুষের মতো তড়পাতে থাকে। কলবের এমন হালত একদিনে হবে না। আল্লাহর যিকির করতে করতে কলবকে সজীব করে তুলতে হবে। রব্বে কারীম তাওফিক দান করুন। আমিন। যিকির সম্পর্কিত কিছু আয়াত দেখি

১. আল্লাহ মহান। আল্লাহর সবকিছুই মহান। আল্লাহর নামসমূহ মহান। আল্লাহর সিফাত বা বৈশিষ্ট্যসমূহ মহান। আল্লাহর যিকিরও মহান—

ولذكر الله أكبر

‘আর আল্লাহর যিকিরই তো সর্বাপেক্ষা বড় জিনিস।

২. কাজ করলে প্রতিদান পাব। সহজ হিসাব। প্রতিদান যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়? কেমন হবে সেই প্রতিদান? আমরা কল্পনাও করতে পারব না। শুধু শব্দের অর্থটাই বুঝতে পারব। প্রকৃত স্বরূপ আখেরাতে বোঝা যাবে :

فاذکرونی اذکرکم واشكروالي ولا تكفرون (۱۵۲

‘সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব আর আমার শোকর আদায় করো, আমার অকৃতজ্ঞতা করো না।

৩. সকাল-সন্ধ্যা আমি আল্লাহর যিকির করে যাব। ক্লান্তিহীন যিকির করে যাওয়াই মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যিকির শুধু মুখেই হয় না, মনে মনেও যিকির হয় :

يأيها الذين امنوا اذكروا الله ذكرا كثيرا وا وسبحوه بكرة وأصيلا (۲۲

‘হে মুমিনগণ, আল্লাহকে স্মরণ করো অধিক পরিমাণে এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তার তাসবীহ পাঠ করো। ৩

৪. বেশি বেশি যিকিরে দুনিয়া-আখেরাতে বহুবিধ উপকারিতা। যিকিরকারী বান্দা-বান্দী আখেরাতে প্রতিদান দেখে অবাক হয়ে যাবে। প্রতিদানের পাশাপাশি ক্ষমা তো আছেই—

و الذكرين الله كثيرا و الذكرت أعد الله لهم مغفرة وأجرا عظيما ۳۵

*এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও স্মরণকারী নারী—আল্লাহ এদের সকলের জন্য মাগফেরাত ও মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন।

৫. শুয়ে বসে ও দাঁড়িয়ে যিকির চলতে থাকবে। আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা ফিকির চলবে। আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য খুঁজে বেড়ানোও আল্লাহর যিকিরের শামিল—

الذين يذكرون الله فيما وقعودا وعلى جنوبهم ويتفكرون في خلق السموات والأرض ربنا ما خلقت هذا باطلا سبحنك فقنا عذاب النار (۱۹۱ *

‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে ( সর্বাবস্থায়) আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে (এবং তা লক্ষ করে বলে ওঠে)– হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি এসব উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করেননি। আপনি এমন (অনর্থক) কাজ থেকে পবিত্র। সুতরাং আপনি আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। "

৬. মুমিন মনেপ্রাণে আল্লাহর হয়ে থাকবে। ধনসম্পদ, সন্তানসন্ততি মুমিনকে আল্লাহ থেকে গাফেল করতে পারে না। মুমিন এসবে মজে গেলে, তার সমূহ ক্ষতি

يا ايها الذين امنوا لا تلهكم أموالكم و لا أولادكم عن ذكر الله و من يفعل ذلك فأولئك هم الخسرون 9

“হে মুমিনগণ, তোমাদের অর্থসম্পদ ও তোমাদের সন্তানসন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে গাফেল করতে না পারে। যারা এ রকম করবে (অর্থাৎ গাফেল হবে) তারাই (ব্যবসায়) ক্ষতিগ্রস্ত।

৭. মুমিন হওয়া মানে ঘর-সংসারত্যাগী বৈরাগী হয়ে যাওয়া নয়। মুমিন আর দশজনের মতো সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে। তবে সবকিছুর ওপর আল্লাহর প্রাধান্য থাকবে। আল্লাহর যিকির থাকবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে :

رجال لا تلهيهم تجارة و لا بيع عن ذكر الله وإقام الصلوة وإيتاء الزكوة يخافون يوما تتقلب فيه القلوب و الابصار (۳۷

“এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বেচাকেনা আল্লাহর স্মরণ, নামায কায়েম ও যাকাত আদায় থেকে গাফেল করতে পারে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যে দিন অন্তর ও দৃষ্টি ওলটপালট হয়ে যাবে।”

৮. আল্লাহর যিকির হবে বিনয়ম্র চিত্তে। মৃদুস্বরে। যিকিরের প্রতিটি উচ্চারণ হবে ভালোবাসামাখা। আদরজড়ানো। ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ। আল্লাহর যিকিরে হালকা কোনো আচরণ হবে না—

واذكر ربك في نفسك تضرعا وخيفة ودون الجهر من القول بالغدو والأصال ولا تكن

من الغفلين ۲۰۵۰

‘এবং সকালে ও সন্ধ্যায় নিজ প্রতিপালকের স্মরণ করো বিনয় ও ভীতির সাথে, মনে মনে এবং অনুচ্চস্বরে মুখে। যারা গাফলতিতে নিমজ্জিত, তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।২

৯. শত্রুর মুখোমুখি হয়ে সঙ্গিন মুহূর্তেও আল্লাহর যিকির বন্ধ হবে না। শত্রুর মোকাবেলার সময়ও যিকির থেকে বিমুখ হওয়া চলবে না। এ সময় শুধু যিকির নয়, বেশি বেশি যিকির করতে হবে; তবেই সাফল্য এসে পদচুম্বন করবে—

يأيها الذين امنوا إذا لقيتم فئة فاثبتوا واذكروا الله كثيرا لعلكم تفلحون ۴۵۰

“হে মুমিনগণ, যখন তোমরা কোনো দলের সম্মুখীন হবে, তখন অবিচলিত থাকবে এবং আল্লাহকে বেশি পরিমাণে স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করো। ৩

১০. হজের প্রতিটি রোকনই বলতে গেলে আল্লাহর যিকির। সেখানেও বেশি বেশি যিকির করতে বলা হয়েছে। মুমিনের কাজই হচ্ছে ক্লান্তিহীন যিকির করে যাওয়া—

فإذا قضيتم مناسككم فاذكروا الله گذكركم اباءكم أو أشد ذكرا فمن الناس من يقول ربنا اتنا في الدنيا وماله في الأخرة من خلاق «۲۰۰

‘তোমরা যখন হজের কার্যাবলি শেষ করবে, তখন আল্লাহকে সেইভাবে স্মরণ করবে, যেভাবে নিজেদের বাপ-দাদাকে স্মরণ করে থাকো; বরং তার চেয়েও বেশি স্মরণ করবে। কিছু লোক তো এমন আছে যারা (দুআয় কেবল) বলে, হে আমার প্রতিপালক, আমাদেরকে দুনিয়ার কল্যাণ দান করো আর আখেরাতে তাদের কোনো অংশ নেই। ১

১১. সালাত একটি যিকির। সালাত শেষ করে রিযিকের সন্ধানে বের হয়েও যিকির করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর যিকির ছাড়া মুমিন সফল হতে পারে না। মুমিনের যাবতীয় সাফল্য আল্লাহর যিকিরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত :

فإذا قضيت الصلوة فانتشروا في الأرض و ابتغوا من فضل الله واذكروا الله كثيرا لعلكم

تفلحون 100

‘অতঃপর নামায শেষ হয়ে গেলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।

১২. যিকিরেই মুমিনের সার্বিক মুক্তি। যিকিরেই মুমিনের শান্তি। হযরত ইউনুস

আ. মাছের পেটে গিয়েও আল্লাহর যিকির আর তাসবীহে মশগুল ছিলেন।

তাসবীহ তার মুক্তির পথ তরান্বিত করেছে :

فلولا أنه كان من المسبحين ١٣٣٥» للبث في بطنه إلى يوم يبعثون ۱۳۴۶ »

‘সুতরাং সে যদি তাসবীহ পাঠকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হতো, তবে মৃতদেরকে পুনর্জীবিত করার দিন পর্যন্ত সে সেই মাছেরই পেটে থাকত।

১৩. দিনের দীর্ঘ কর্মব্যস্ততার প্রস্তুতিস্বরূপও রাতে যিকির করতে বলা হয়েছে। সবার থেকে পৃথক হয়ে আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পিত হতে বলা হয়েছে :

إن لك في النهار سبعا طويلا ، واذكر اسم ربك وتبتل اليه تبتیلا

‘দিনের বেলা তো আপনি দীর্ঘ কর্মব্যস্ততায় জড়িত থাকেন। এবং প্রতিপালকের নামের যিকির করুন এবং সকলের থেকে পৃথক হয়ে সম্পূর্ণরূপে তাঁরই হয়ে থাকুন।'

১৪. দিনে-রাতে, সকাল-সন্ধ্যায় শুধু যিকির আর তাসবীহ পাঠ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ ছাড়া মুমিনের আর কোনো ব্যস্ততা নেই। কাজ নেই। মুমিনের হৃদয়ে শুধু আল্লাহ আর আল্লাহ।

و اذكر اسم ربك بكرة وأصيلا ود و من اليل فاسجد له وسبحه ليلا طويلا (۲۲

‘এবং নিজ প্রতিপালকের যিকির করুন সকাল ও সন্ধ্যায়। এবং রাতের কিছু অংশেও তাঁর সামনে সেজদা করুন এবং রাতের দীর্ঘক্ষণ তার তাসবীহতে রত থাকুন। ১

১৫. আল্লাহর যিকিরহীন কলবে কোনো কল্যাণ নেই। আল্লাহর যিকিরবিমুখ অন্তর যাবতীয় অকল্যাণের আখড়া। আল্লাহবিহীন কলব শয়তানের অভয়ারণ্য :

فويل تنفسية قلوبهم من ذكر الله ‘যাদের অন্তর কঠোর হওয়ায় আল্লাহর যিকির থেকে বিমুখ, তাদের জন্য ধ্বংস।"

          নবীজির দৃষ্টিতে যিকির

১. কোনো জাতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার যিকির করতে বসলে একদল ফেরেশতা তাদেরকে ঘিরে রাখে, রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয়। তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর কাছে থাকা ফেরেশতাদের সাথে যিকিরকারীদের আলোচনা করেন।

لا يقعد قوم يذكرون الله عز وجل إلا حقتهم الملائكة، وغشيتهم الرحمة، ونزلت عليهم السكينة، وذكرهم الله فيمن عنده.

২. আল্লাহর একদল ফেরেশতা আছেন, যারা আল্লাহর যিকিরে মশগুল লোকদের খোঁজে পথে পথে ঘুরে বেড়ান। আল্লাহর যিকিরে মশগুল লোক পেয়ে গেলে ফেরেশতারা একে অপরকে ডেকে বলেন, তোমরা আপন কাজের দিকে এগিয়ে এসো। তখন ফেরেশতারা নিজেদের ডানা দিয়ে যিকিরকারীগণকে

নিকটতম আকাশ পর্যন্ত মুড়িয়ে ফেলেন। আল্লাহ সবকিছু ফেরেশতাদের চেয়ে ভালো জানেন, তবুও তিনি মায়া করে জানতে চান, আমার বান্দারা কী বলছে? ফেরেশতাগণ বলেন, তারা তাসবীহ পাঠ করে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, তারা তাকবীরের মাধ্যমে আপনার শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিচ্ছে, তারা হামদের মাধ্যমে আপনার গুণগান করছে এবং তারা আপনার মাহাত্ম্য প্রকাশ করছে। আল্লাহ জানতে চান, তারা কি আমাকে দেখেছে? ফেরেশতাগণ বলেন, আল্লাহর শপথ! তারা আপনাকে দেখেনি। আল্লাহ বলেন, যদি তারা আমাকে দেখত, তাহলে কী করত? ফেরেশতাগণ বলেন, যদি তারা আপনাকে দেখত, তাহলে আরো অনেক বেশি করে আপনার ইবাদত করত, আরো অধিক পরিমাণে আপনার মাহাত্ম্য বর্ণনা করত, আরো বেশি করে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করত।

আল্লাহ বলেন, তারা আমার কাছে কী চায়? ফেরেশতাগণ বলেন, তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়। আল্লাহ বলেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতারা বলেন, না। আপনার কসম! তারা জান্নাত দেখেনি। আল্লাহ বলেন, যদি তারা জান্নাত দেখত তাহলে কী করত? ফেরেশতাগণ বলেন, যদি তারা জান্নাত দেখত তাহলে তারা জান্নাতের প্রতি আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠত। আরও বেশি করে জান্নাতপ্রত্যাশী হতো, জান্নাতের জন্য আরো বেশি লালায়িত হতো। আল্লাহ বলেন, তারা কী থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায়? ফেরেশতাগণ বলেন, জাহান্নাম থেকে। আল্লাহ বলেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? ফেরেশতাগণ বলেন, আল্লাহর কসম! তারা জাহান্নাম দেখেনি।

আল্লাহ বলেন, যদি তারা জাহান্নাম দেখত, তাহলে কী করত? ফেরেশতাগণ বলেন, যদি তারা জাহান্নাম দেখত, তাহলে তারা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে, আরো তীব্র বেগে জাহান্নাম থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করত।

তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তোমাদের এ মর্মে সাক্ষী রাখছি যে, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। তখন ফেরেশতাদের একজন বলবে, তাদের মধ্যে একজন আছে, যে তাদের দলভুক্ত নয়; সে নিছক কোনো প্রয়োজনে এসেছে। আল্লাহ বলেন, যিকিরকারীগণের সঙ্গীরাও সৌভাগ্যবঞ্চিত থাকবে না।

إن لله ملائكة يطوفون في الطرق يلتمسون أهل الذكر، فإذا وجدوا قوما يذكرون الله تنادوا: هلموا إلى حاجتكم قال : فيحفونهم بأجنحتهم إلى السماء

الدنيا، قال : فيسألهم رهم -وهو أعلم منهم - ما يقول عبادي؟ قالوا : يقولون : يسبحونك ويكبرونك، ويحمدونك ويمجدونك، قال: فيقول: هل رأوني؟ قال: فيقولون : لا والله ما رأوك، قال : فيقول : وكيف لو رأوني؟ قال: يقولون : لو رأوك كانوا أشد لك عبادة، وأشد لك تمجيدا وتحميدا، وأكثر لك تسبيحا، قال : يقول : فما يسألوني؟ قال: يسألونك الجنة، قال: يقول : وهل رأوها؟ قال: يقولون: لا والله يا رب ما رأوها، قال : يقول : فكيف لو أنهم رأوها؟ قال: يقولون : لو أنهم رأوها كانوا أشد عليها حرصا، وأشد لها طلبا، وأعظم فيها رغبة، قال: فمم يتعوذون؟ قال : يقولون : من النّار قال : يقول : وهل رأوها؟ قال : يقولون : لا والله يا رب ما رأوها، قال : يقول: فكيف لو رأوها؟ قال : يقولون : لو رأوها كانوا أشدّ منها فرارا، وأشد لها مخافة، قال: فيقول : فأشهدكم أني قد غفرت لهم، قال : يقول ملك الملائكة: فيهم فلان ليس منهم، إنما جاء لحاجة، قال: هم من

الجلساء لا يشقى بهم جليسهم ৩. যে ব্যক্তি তার রবের যিকির করে আর যে যিকর করে না—তাদের উদাহরণ হলো জীবিত ও মৃত মানুষের মতো।

مثل الذي يذكر ربه والذي لا يذكر ربه، مثل الحي والميت.

৪. আমি কি তোমাদের বলব না, তোমাদের কাজগুলোর মধ্যে কোনটি সর্বোৎকৃষ্ট? কোনটি তোমাদের মনিবের কাছে সবচেয়ে পরিশুদ্ধ, কোন কাজটি তোমাদের মর্যাদাকে সবচেয়ে বেশি বুলন্দ করে, কোন কাজটি সোনা-রুপা দান করার চেয়েও বেশি উত্তম, কোন কাজটি শত্রুর মুখোমুখি হয়ে, তোমরা তাদের গর্দানে আঘাত করা এবং তারাও তোমাদের গর্দানে আঘাত করার চেয়ে বেশি ভালো? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, জি ইয়া রাসূলাল্লাহ বলুন। নবীজি বললেন, আল্লাহ তাআলার যিকির। ২

ألا أنبئكم بخير أعمالكم، وأزكاها عند مليككم، وأرفعها في درجاتكم، وخير لكم من إنفاق الذهب والورق، وخير لكم من أن تلقوا عدوكم، فتضربوا أعناقهم، ويضربوا أعناقكم؟، قالوا : بلى، قال : ذكر الله.

৫. আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার সম্পর্কে যেমন ধারণা রাখে, আমি তার সাথে তেমন আচরণ করি। বান্দা যখন আমাকে স্মরণ করে, আমি তার সাথে থাকি। বান্দা যদি মনে মনে আমাকে স্মরণ করে; আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করি। বান্দা যদি আমাকে জমায়েত-সমাবেশে স্মরণ করে, আমিও বান্দাকে তাদের চেয়ে উত্তম সমাবেশে স্মরণ করি। বান্দা যদি আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই; বান্দা যদি আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়; আমি তার দিকে এক বাহু পরিমাণ এগিয়ে যাই। বান্দা যদি আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই ।

يقول الله تعالى : أنا عند ظن عبدي بي، وأنا معه إذا ذكرني، فإن ذكرني في نفسه ذكرته في نفسي، وإن ذكرني في ملا ذكرته في ملا خير منهم، وإن تقرب إلي بشير تقربت إليه ذراعا، وإن تقرب إلي ذراعا تقربت إليه باعا، وإن أتاني يمشي أتيته هرولة.

৬. আবু হুরায়রা রা. বলেছেন, একবার আল্লাহর রাসূল মক্কার পথে হাঁটছিলেন। ‘জুমদান’ পাহাড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, এ হলো জুমদান পাহাড়। তোমরা চলা অব্যাহত রাখো। মুফাররিদগণ অগ্রগামী হয়েছে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, মুফাররিদ (একাকিত্ব অবলম্বনকারী) কারা হে আল্লাহর রাসূল? নবীজি বললেন, বেশি বেশি আল্লাহর যিকিরে নিয়োজিত পুরুষ ও নারী। ২

كان رسول اللہ ﷺ، يسير في طريق مكة فمر على جبل يقال له جمدان، فقال : سيروا هذا جمدان سبق المفردون قالوا: وما المفردون؟ يا رسول الله، قال: الذاكرون الله كثيرا والذاكرات.

৭. আবদুল্লাহ বিন বুসর রা. বর্ণনা করেছেন। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার জন্য ইসলামের বিধিবিধান বেশি হয়ে গেছে। আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন—যা আমি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারি। নবীজি বললেন, তোমার জিহ্বা যেন সবসময় আল্লাহর যিকির দ্বারা সজীব থাকে

আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন| we Respect Every Author Hardwork-boipaw team| 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ