শুক্রবারে অবশ্যই সূরা কাহাফ পড়ুন
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়বে তার জন্য এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত আলো বিচ্ছুরিত হবে।
( মুসতাদারেক হাকিম: ২/৩৯৯, বায়হাকী: ৩/২৪৯, ফয়জুল ক্বাদীর: ৬/১৯৮)
ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি শুক্রবার দিন সূরা কাহাফ পাঠ করবে তার পা থেকে আকাশের উচ্চতা পর্যন্ত নূর হয়ে যাবে, যা কেয়ামতের দিন আলো দিবে এবং বিগত জুমা থেকে এ জুমা পর্যন্ত তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (আত তারগীব ওয়া তারহীব: ১/২৯৮)
দশ আয়াত পড়ার বা মুখস্ত করার আলাদা ফযীলত রয়েছে। যেমন,
আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্ত করবে,সে দাজ্জালের(ফিৎনা) থেকে পরিত্রান পাবে।’’
এই সূরাটিতে মোট চারটি শিক্ষণীয় ঘটনা আছে, প্রতিটি ঘটনাতেই আছে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য উপদেশ। আসুন সেই ঘটনাগুলো ও তার শিক্ষাগুলো কি জানার চেষ্টা করিঃ
১) গুহাবাসী যুবকদের ঘটনাঃ সূরার শুরুতেই সেই গুহাবাসীযুবকদের ঘটনার বর্ণণা দেয়া হয়েছে যারা এমন একটি জনপদে বসবাস করত যার অধিবাসীরা ছিল অবিশ্বাসী ও সীমালংঘনকারী। কাজেই যুবকেরা সেই নষ্ট সমাজের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘এদের সাথে আর নয়’। তারা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও আল্লাহর দীনের প্রতি ভালোবাসা থেকে উজ্জিবীত হয়ে সেখান থেকে হিজরত করলেন। আল্লাহ তাদেরকে গুহাতে আশ্রয় দিলেন এবং সূর্যালোক থেকে নিরাপদে রাখলেন। বহু বছর পর যখন তাদের ঘুম ভাঙ্গলো তাঁরা দেখলেন সেই জনপদের অবিশ্বাসী লোকেরা বিদায় নিয়েছে এবং ভালো লোকদের দ্বারা মন্দ লোকেরা প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
শিক্ষাঃ ঈমানের উপর পরীক্ষা।
২) দুইটি বাগানের মালিক ব্যক্তির ঘটনাঃ একজন লোক যাকে আল্লাহ দুইটি প্রাচুর্যময় সুন্দর বাগান দিয়ে ধন্য করেছিলেন, কিন্তু লোকটি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে ভুলে গেল এমনকি পরকালের অস্তিত্ব সম্পর্কে আল্লাহর ওয়াদার উপর সন্দেহ পোষণ করল। কাজেই, এই অকৃতজ্ঞ লোকটির বাগানকে আল্লাহ তায়ালা বিরান করে দিলেন-সে অনুতপ্ত হল, কিন্তু ইতোমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে এবং তার এই অসময়ের অনুশোচনা তার কোন উপকারে আসল না।
শিক্ষাঃ সম্পদের উপর পরীক্ষা।
৩) খিজির ও মুসা আলাইহি সালাম এর ঘটনাঃ যখন মূসা আলাইহি সালামের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “এই পৃথিবীতে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কে?” তিনি উত্তর করেছিলেন, “আমি” কিন্তু আল্লাহ তাঁর কাছে উন্মোচন করে দিলেন যে, এমন এক ব্যক্তি আছেন যাকে আল্লাহ তাঁর চেয়েও বেশি জ্ঞান দান করেছেন। মুসা আলাইহি সালাম সেই ব্যক্তির সাথে ভ্রমণ করলেন এবং দেখলেন, শিখলেন কিভাবে অনেক সময় আল্লাহ তাঁর অসীম জ্ঞানের কারণে এমন অনেক ঘটনা ঘটান যেগুলো আমাদের চোখে খারাপ বলে মনে হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেগুলো মানুষের ভালোর জন্যেই করা হয়।
শিক্ষাঃ জ্ঞানের উপর পরীক্ষা।
৪) যুলকারনাইনঃ এটা সেই ক্ষমতাধর বাদশাহর ঘটনা যাকেএকই সাথে জ্ঞান এবং ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল এবং তিনি সেই উভয় দানের শুকরিয়াস্বরুপ মানুষের উপকারে এবং কল্যাণে তা ব্যয় করতেন। তিনি জনপদের লোকদের ইয়াজুজ মাজুজ এর সমস্যার সমাধান করে দিলেন এবং একটি বিশাল প্রাচীর নির্মাণ করে দিলেন।
শিক্ষাঃ ক্ষমতার উপর পরীক্ষা।
আসুন, এবারে জেনে নেয়া যাক, সূরা কাহাফ এবং দাজ্জালের মধ্যে কিসের সম্পর্ক?
দাজ্জাল আবির্ভুত হবে শেষ সময়ে কিয়ামতের একটি বড় লক্ষণ হিসেবে, সে এই চারটি ফিতনা একত্রে নিয়ে আসবেঃ
ক) সে মানুষকে আদেশ করবে যেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার ইবাদত করে ঈমানের উপর পরীক্ষা।
থ) তাকে বৃষ্টি বর্ষণ/ অনাবৃষ্টি সৃষ্টির ক্ষমতা দেয়া হবে এবং সে মানুষকে তার সম্পদ দিয়ে লোভ দেখাবে সম্পদের উপর পরীক্ষা।
গ) সে মানুষকে পরীক্ষায় ফেলে দিবে তার ‘জ্ঞান’ এবং নানারকম সংবাদ প্রদান করে জ্ঞানের উপর পরীক্ষা।
ঘ) সে পৃথিবীর এক বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করবে ক্ষমতার উপর পরীক্ষা।
সূরা কাহাফ পাঠের ফযীলাতঃ
১. হযরত আবুদারদা থেকে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে” (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও মুসনাদে আহমদ)
২. হযরত সাহল ইবনে মুয়াজ থেকে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম ও শেষ আয়াতগুলি পাঠ করে, তার জন্য তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একটি নূর হয়ে যায় এবং যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ পাঠ করে, তার জন্য যমীন থেকে আসমান পর্যন্ত নূর হয়ে যায়।” (মুসনাদে আহমদ) অন্য বরণায় আছে, “যে ব্যক্তি শুক্রবার সূরা কাহফ তেলাওয়ত করে, তার পা থেকে আকাশের উচ্চতা পর্যন্ত নূর হয়ে যাবে, যা কিয়ামতের দিন আলো দেবে এবং বিগত জুমা থেকে এই জমা পর্যন্ত তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।” (ইমাম ইবনে কাসির এই রেওয়াতটিকে মওকুফ বলেছেন)
৩. হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ যে জুমার দিন সূরা কাহাফ পাঠ করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সর্বপ্রকার ফেতনা থেকে মক্ত থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয়, তবে সে তার ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে।” (হাফেজ জিয়া মুকাদ্দাসী ‘মুখতারাহ’)
৪. হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ “সূরা কাহাফ সম্পূর্ণটুকু এক সময়ে নাযিল হয়েছে এবং সত্তর হাজার ফেরেশতা এর সঙ্গে আগমন করেছেন, এতে এর মাহাত্ম্য প্রকাশ পায়।” (রুহুল মা’আনী)
আসুন আমরা সূরা কাহাফের শিক্ষা গ্রহণ করি এবং সাপ্তাহে একদিন শুক্রবার সূরা কা’হফ পাঠের অভ্যাস গড়ি, এবং এর সাওয়াব অর্জনে সচেষ্ট হয়। আর সাথে রাখতে পারেন Montasir Mamun ভাইয়ের এই নোট সূরা আল কাহাফ (গুহা): goo.gl/EshMfk আশা করি ভালো লাগবে।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....