নিউক্লিয়ার ফিজিকস Nuclear physics
লেখক : আব্দুল গাফফার রনি
Publisher ছায়াবীথি
Quality হার্ডকভার
ISBN 9789844360808
Edition 1st Published, 2021
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা
চারপাশের চিরচেনা জগতের যেমন বৈজ্ঞানিক ছন্দ আছে , পরমাণুর গভীরে নিউক্লিয়াসের ছোট্ট কুটিরে লুকিয়ে আছে যেন এলিসের আশ্চর্য জগৎ । একবার এর ভেতরে ঢুকে পড়লে , এর রূপ - রস - গন্ধ আপনাকে মাতাল করে তুলবে । কখন কোন মায়াবী আবেশে ভুলে যাবেন ‘ পদার্থবিজ্ঞানের জগৎটা জটিল আর নিরস মনে হয় ’ , আসলে এই অপবাদ তার প্রাপ্য নয় । যে জগৎ খালি চোখে দেখা যায় না , গণিতের মারপ্যাঁচে শক্তির আলোকে খুঁজে নিতে হয় যে জগতের দরজা , তার ভেতরের সৌন্দর্য যেন তেপন্তরের মাঠ পেরিয়ে সাত - সমুদ্দুর তেরো নদীর ওপারের রূপকাথার সেই স্বপ্নপুরির চেয়েও ঘোর লাগা সৌন্দর্য নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ।
শুধু সাহস করে , হাট করে দরজা খুলে একবার ঢুকে পড়ুন , নিশ্চয়তা দিচ্ছি কণাপদার্থবিজ্ঞানের আশ্চর্য জগতের প্রেমে পড়তে আপনি বাধ্য । তবে সাবধান ! পরমাণুর অভ্যন্তরের নিউক্লিয়াসপুরির সেই জগত্তের বৈজ্ঞানিক সৌন্দর্য যেমন আছে , এর ভেতর ঘুমিয়ে আছে রূপকথার সেই কদাকর দৈত্যও । আইনস্টাইনের ভরশক্তির সমীকরণের সোনার কাঠি রুপার কাঠির ছোঁয়ায় একবার তার ঘুম ভাঙলে ধ্বংস করে দিতে পারে গোটা দুনিয়াটাকেই । যেমনটা করেছিল ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ।
এই বই পড়তে গিয়ে সেই মহাশক্তির তালাশ করতেই যাচ্ছেন আপনি । পরমাণুর খুদে জগতে আরও খুদে খুদে সব কণাদের বসবাস । সেব কণাদের খুঁজে বের করা বিজ্ঞানীদের জন্য অতটা সহজসাধ্য ছিল না । রীতিমতো গোয়েন্দা বনে গিয়ে , বিশালসব দক্ষযজ্ঞের আয়োজন করে সেগুলো কান ধরে বাইরে বের করে এনেছেন বিজ্ঞানীরা । সেইসব আবিষ্কারের কাহিনি টান টান উত্তেজনার থ্রিলারের চেয়েও কম রোমাঞ্চকর নয় ।
সেইসব কাহিনিকে শুধু ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সাজানো গল্পের বই এটা নয় । বরং নিউক্লিয়ার ফিজিকসের ‘ কার্যকারণ ’ , ‘ কী ও কেন’র ব্যাখ্যা সহজ উদারহণসহ গল্পের ঢঙে বলার চেষ্টা করা হয়েছে এই বইয়ে । নিউক্লিয়াসের অলিগলি চেনাতে ছোট খাটো অংকও উঠে এসেছে । তবে সেগুলো এমন আহামরী জটিল নয় । স্কুলের বীজগণিত ও পাটিগণিতের সঙ্গে যাদের সখ্য আছে , তাদের বুঝতে সমস্য হওয়ার কথা নয় । আর যাদের খুব সামন্য গণিতেও ভীতি আছে , তাঁরা চাইলেই সমীকরণগুলো বাদ ,দিয়ে পড়ে যেতে পারেন বইটি । এতে নিউক্লিয়ার ফিজিকস কী , সেটা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় । মোটকথা ছেলেবুড়ো সবাই যাতে বুঝতে পারে , সেভাবেই লেখা হয়েছে বইটি । নিউক্লিয়ার ফিজিকস এদেশে সিরিয়াসলি পড়ানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্মান শ্রেণিতে গিয়ে । পাঠ্যবইগুলো এমনভাবে লেখা হয় , যেন হুট করে একটা সমীকরণ , একটা তত্ত্ব এসে পড়ে ।
বেশিরভাগক্ষেত্রেই বুঝতে সমস্যা হয় , সমীকরণ কিংবা এই তত্ত্ব কেন পড়ছি ? বাস্তবিক জীবনেই বা এটা কী কাজে লাগবে ? যাঁরা উচ্চশিক্ষার জন্য নিউক্লিয়ার ফিজিকস পড়ছেন , অনেকেরই সুযোগ আছে ভালো ভালো ইংরেজি বই পড়ে নিউক্লিয়ার ফিজিসকের তাৎপর্যটা বুঝে নেওয়ার । তাঁদের জন্য এই বই নয় । কিন্তু যাঁরা সত্যিকার অর্থে নিউক্লিয়ার ফিজিকস পড়তে গিয়ে সমস্যায় পড়েন , তাঁরা পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি এই বই পড়তে পারেন । সিলেবাস ধরে ধরে পয়েন্ট টু পয়েন্টে জনপ্রিয় ধারার বিজ্ঞান বই লেখা যায় না । বরং আবিষ্কারের ঐতিহাসিক ও প্রসঙ্গের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে লেখাটাই সুবিধাজনক ।
এই বই সেভাবেই লেখা হয়েছে , যথাসাধ্য সহজ বাংলায় । খটোমটো পরিভাষার বদলে অনেক বৈজ্ঞানিক শব্দের বাংলা না করে ইংরেজিটাই রেখে দেওয়া হয়েছে । তবে সেগুলো লেখা হয়েছে বাংলা হরফে যেমন ‘ নিউক্লিয়াস ’ শব্দের অর্থ সহজ বাংলা করলেও ‘ কেন্দ্রীন ’ লিখতে হয় । কেন্দ্রীন শব্দটা আমাদের কাছে অতটা পরিচত নয় । তারচেয়ে নিউক্লিয়াস শব্দটাই জুৎসই । সব মিলিয়ে সহজ বাংলায় নিউক্লিয়ার ফিজিকস যাতে বোঝা যায় , সে চেষ্টাই করা হয়েছে । নিউক্লিয়ার ফিজিকসের এ টু জেড জেনে যাবেন এই পড়লে , তেমন দাবি করছি না । একবিংশ শতাব্দীতে এসে নিউক্লিয়ার ফিজিকস অন্যমাত্রায় চলে গেছে । এখনকার নিউক্লিয়ার ফিজিকস অনেকটাই কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরিনির্ভর । ফিল্ড থিওরি পদার্থবিজ্ঞানের জটিলতম বিষয় । তাই নিউক্লিয়ার ফিজিকসের সাত সতেরো জানতে হলে , ফিল্ড থিওরি বোঝা জরুরি । ফিল্ড থিওরি সমেত একটা বই লিখতে গেলে বইটার সহজবোধ্যতাটা ধরে রাখা সম্ভব হতো না ।
তাই ফিল্ড থিওরি বাদ দিয়ে যতটা সহজভাবে নিউক্লিয়ার ফিজিকস বোঝা যায় , এই বইয়ের কলেবর ততটুকুই । কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি কিংবা স্ট্রিং থিওরিনির্ভর কণাজগৎটাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা হয়েছে এই বইয়ে । ভবিষ্যতে ফিল্ড থিওরি ও স্ট্রিং থিওরি নিয়েও একটা সহজ বই লেখা চেষ্টা করা যেতেই পারে । প্রায় দুবছরের চেষ্টায় বইটার কাজ শেষ হলো । এজন্য আমি বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ । তিনি প্রায়ই তাগাদা দেন বইটা শেষ করার ব্যাপারে ।
এছাড়া অনুজ উচ্ছ্বাস তৌসিফ নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন , বিশেষ করে বিভিন্ন রেফারেন্স বইয়ের হদিস দিয়েছেন । অনেকগুলো রেফারেন্স বইয়ের খবর পেয়েছি বাসার ভাইয়ের কাছে । বিশেষ করে বায়োগ্রাফি অব E = mc2 ও জিম বাগটের মাস বইয়ের সন্ধান আমি তাঁর কাছ থেকেই পাই । এই বইয়ের জন্য আমি কৃতজ্ঞ ছায়াবীথির প্রকাশক জাহাঙ্গীর আলমের কাছেও । কারণ দাম হাতের নাগালে রেখে সর্বোচ্চ মানের বাঁধাই ও ছাপার নিশ্চয়তা তিনি দিয়েছিলেন বলেই মানসিকভাবে অনেকটাই নির্ভার ছিলাম । বাকি কৃতজ্ঞতাটুকু আমার পাঠকদের প্রাপ্য , বিশেষ করে তরুণ পাঠকদের , যাঁরা আমার বই পড়েন ।
কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ সেইসব পাঠকদের , যাঁরা বই পড়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের ভালোলাগা বা মন্দলাগার কথা বলে যান । সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ আসলে সমালোচকদের কাছে , যাঁরা বিভিন্ন সময় আমার বইয়ের ভুল - ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করেছেন । অনেকে ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন , বানান প্রমাদ দেখিয়ে দিয়েছেন তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞ । নিউক্লিয়ার ফিজিকস নিয়েও আমার একই রকম আশা - পাঠক পড়বেন , সমালোচনা করবেন , ভুল ধরিয়ে দেবেন , অনেকে হয়তো ভালো লাগার কথাও বলবেন - সবাইকে অগ্রিম ধন্যবাদ ।
আবদুল গাফ্ফার ঢাকা ,
ফেব্রুয়ারি ২০২১
ichamoti71@gmail.com
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....