লেখক : ড. খালিদ আবু শাদি
প্রকাশনী : মুহাম্মদ পাবলিকেশন
বিষয় : সন্তান প্রতিপালন
পৃষ্ঠা : 208, কভার : হার্ড কভার
আইএসবিএন : 9789849537793,
ভাষা : বাংলা
সন্তান প্রতিপালন এমন একটিব্যবহারিক বিদ্যা বা শাস্ত্র, যার রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা
সন্তান প্রতিপালনে সম্মিলিত প্রচেষ্টা
এক. সন্তানের অনেক পিতা বা বাবা আছেন, যারা সন্ধ্যায় ঘরে ফেরেন ক্লান্ত-শ্রান্ত ও অবসন্ন শরীর নিয়ে। নেতিয়ে পড়া দেহ নিয়ে ছেলে-মেয়েদের খোঁজখবর নেওয়ার ইচ্ছে তখন আর থাকে না। এদিকে সারাদিন ওদের পেছনে খাটাখাটুনি করে মা-ও বিছানায় এলিয়ে দেন তার অবসাদগ্রস্ত ধড়টা। তার এখন দরকার প্রিয় স্বামীর একান্ত সান্নিধ্য, একটুখানি প্রেমের পরশ, আদর-যত্ন আর মমতা-সোহাগ।
এ সময় মায়ের কোল থেকে সন্তানকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে বাবা যদি একটু ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দেন, তাহলে পারস্পরিক বন্ধনের সেতুগুলো সহজে পূর্ণতা পায়—
এক. বাবা ও সন্তানের মাঝে ঐশ্বরিক তথা জৈবিক বন্ধন তরতর করে বেড়ে ওঠে।
দুই. এর মাধ্যমে স্ত্রীর প্রতিও আন্তরিকতা ও গুরুত্ববোধ প্রকাশ পায়। ঘর সামলাতে সারাদিন যে ধকল তার পোহাতে হয়, তারও মূল্যায়ন করা হয়ে যায়।
তিন. সবচেয়ে বড় কথা হলো—স্ত্রীর কাছে তখন মনে হয় স্বামী আমার সন্তান হওয়ার আগে যেমন ভালোবাসতো, এখনও তেমনি ভালোবাসে। গুরুত্ব দেয়। কেয়ারিংয়ে ভাটা পড়েনি তার এতটুকুও।
আবার কিছু বাবা তো এমন আছেন, যারা সারাদিন অফিসে পড়ে থাকেন সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে কোনোমতে নাকে-মুখে দুয়েক গাল খেয়ে ভোঁ দৌড়। সেই গেছে তো গেছে, ফেরার নামটিও নেই। ছেলে-মেয়ে স্ত্রী ঘরে পড়ে আছে—আর সে জমে আছে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায়। কিছু বলতে গেলে জবাব দেয়—শোনো! এটি কিন্তু আমার বিয়ের আগের অভ্যাস! ইচ্ছে করলেই বন্ধুবান্ধব ছেড়ে ঘরে বসে থাকতে পারি না।
তার যে নতুন একটা সংসার হয়েছে, ঘরে নতুন মেহমান এসেছে, সামনে এখন কত দায়িত্ব, পটে পটে এখন কত বৈচিত্র্য; এখন সে একজন বাবা। দুজনে মিলে সংসারটাকে নিপুণভাবে পরিকল্পনা করে এগিয়ে নিতে হবে। নিজেকে এখন পরিবর্তন করা দরকার— এসব কথা সে বেমালুম ভুলে যায় নাকি ভুলে যাওয়ার ভান করে, সেটা আল্লাহ মাবুদ ভালো জানেন!
অনেক সময় সংসারে বাবা ছেলেমেয়েদের সামনে স্ত্রীর প্রতি বিশেষ ভালোবাসা প্রকাশে সংকোচবোধ করে। স্ত্রীকে এটাও খুব খেয়াল রাখতে হবে। এই সংকোচ দূর করতে— তার মানসিক চাহিদাগুলো পরিপূর্ণরূপে সরবরাহ করতে সচেষ্ট থাকতে হবে। এই যেমন —ঘরে ঢুকতেই সালাম কালামের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানানো বা তার খাবার গোসল জামা-কাপড়ের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ধীরে-সুস্থে মার্জিত উপস্থাপনে খেয়াল রাখা খুবই জরুরি।
—আরে! বেটা মানুষেরা সন্তান মানুষ করার কী বুঝে—এসব বলে পিতা আর সন্তানের মাঝে কখনোই দূরত্ব সৃষ্টি করা যাবে না।”
দুই. প্রতিপালনের দায়দায়িত্ব
মনে রাখতে হবে, সন্তান লালন-পালনের সব দায়দায়িত্ব পিতামাতা উভয়ের ওপরেই বর্তায়। সন্তান লালন-পালনে শুধু বাবার ওপর অসহযোগিতার অভিযোগ চাপালেই হবে না, বরং তাকে উৎসাহিত করতে হবে। সহযোগিতার সকল ব্যবস্থাপনা তার জন্য প্রস্তুত করে দিতে হবে।
সন্তানদের শাস্তি-শাসনের ক্ষেত্রে স্বামীর ওপর পুরোপুরি নির্ভর করে বসে থাকলে চলবে না। এমনটি চলতে থাকলে একটা সময় সন্তানের মস্তিষ্কে বাবা অপরাধ দমনকারী পুলিশের আকৃতিতে চিত্রিত হয়ে যাবে। শেষতক মত-চাহিদার দূরত্ব ব্যতীত উভয়ের মাঝে আর কোনো বন্ধন বাকি থাকবে না।
একইভাবে সন্তানদের নিয়ে বাবা-মায়ের দ্বন্দ্ব-বিবাদের কুফল সম্পর্কে তাদের সজাগ থাকতে হবে। এটি উভয়ের কর্তৃত্বকে কিছুটা হলেও শিথিল করে দেয়। সন্তানরা একে সুযোগ হিসেবে বেছে নেয়। এমনকি এটি সন্তান ভুলের অতলে ডুবে য়ার পথ তৈরি করে দেয়। সন্তানকে বোঝাতে হবে, পিতামাতা—উভয়ের কর্তৃত্ব একই। বিশেষ
করে বাবা-মায়ের বিবাদ যদি সন্তানের সামনেই হয়, তাহলে এর প্রভাব আরও মারাত্মক ক্ষতিকর। সন্তানের হতাশা আর পেরেশানি বাড়িয়ে দেয়। অনেক পরিবার আছে, যেখানে একজন আরেকজন সম্পর্কে সন্তানের মনে বৈরী মনোভাব গেড়ে দেওয়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। এর চেয়ে মন্দ কাজ আর কী হতে পারে। একটি ঘরে যেন হাজারটা শত্রুর বসবাস।
আবার অনেক বাবা আছেন, যারা সন্তানের দীক্ষা বলতেই বোঝেন—কঠোরতা, মারধর আর ‘ওম’ ধরে থাকা। ঘরে ঢুকতেই ভ্রু আর কপালের ক্রোধরেখা পরিণত হয় ভয়ংকররূপে। যেন প্রতিশোধের অনলে পুড়ছেন বা এখনই শত্রুর ওপর হামলে পড়বেন!
এর ফলাফল কী হয়?
সন্তান বাবা থেকে দূরে সরে যায়। বাড়ির সবাই চুপচাপ ঘরের কোণাকাঞ্চিতে পালিয়ে থাকতে চায়। এটি তার প্রতি সম্মান বা লজ্জাবোধের কারণে নয়, বরং তার খিটখিটে মেজাজ আর বদ রাগের ভয়ে। এটি সন্তান প্রতিপালন-নীতির সম্পূর্ণ বহির্ভূত আচরণ। ইসলাম মোটেই এসবকে সমর্থন করে না।
আল্লামা ইবনে খালদুন বলেন— যেসব ছাত্র, গোলাম বা খাদেমের তরবিয়ত কঠোরতার আর ঝাড়িঝুড়ির ওপর দিয়েই গঠিত হয়, কঠোরতা তাদেরকে গ্রাস করে নেয়। মন ছোট হয়ে যায়। কাজের উদ্যম হারিয়ে যায়। অলসতা তাদেরকে পেয়ে বসে। কখন জানি হঠাৎ করে ক্রোধের খড়্গ নামে—এই ভয়ে ধীরে ধীরে মিথ্যা আর অসৎ পন্থা অবলম্বনে বাধ্য হয়। এসব তার সামনে ধোঁকা আর প্রবঞ্চনার পথ খুলে দেয়।
তিন. মাতৃত্বের দায়িত্ব
সন্তান শাসন-প্রতিপালনের প্রথম দিকের সময়গুলোতে অমনোযোগিতার প্রায়শ্চিত্ত সারাজীবনেও শেষ হয় না। পশ্চিমা সংস্কৃতির দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা যায়— পারিবারিক কাঠামো সেখানে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। অভিভাবকদেরই নতুন করে শিক্ষাদীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষামন্ত্রী ট্রেল পল পারিবারিক সমস্যাগুলোর ব্যাপারে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আমেরিকার কোনো কোনো স্কুলে শিক্ষাব্যবস্থার অধোগতি পরিবার ব্যবস্থাপনার ওপর চরম প্রভাব ফেলছে। এখানে সামান্য কিছু পরিবার আছেন, যেখানে
বাবা-মা উভয়ে সংসার দেখভাল করেন। আর অসংখ্য পরিবার আছেন, যেখানে বাবা হোক বা মা—সংসারের পুরো দায়দায়িত্ব তার একার ওপর থাকে।'
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জর্জ ডি ভোস ( George A. De Vos) বলেন, ‘সন্তান গড়ে তুলতে জাপানি নারীদের গুরুত্ববোধ ও প্রভাব খুবই সুদৃঢ়। কারণ, তারা সন্তানের শিক্ষার বিষয়টিকে একমাত্র তার দায়িত্ব বলে মনে করে। স্কুলের সময়টাকে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আর সন্তানের দেখভাল তো জন্মের পর থেকে শুরু হয়ে যায়। [৪]
চার. পিতামাতার আচরণ, সন্তানের ব্যক্তিগত ও মানসিক সমস্যা
অনেক সময় মাতাপিতার কিছু কিছু আচরণ সন্তানকে চারিত্রিক ও মানসিক সমস্যায় ফেলে দেয়। এমন কয়েকটি নিচে উল্লেখ করছি—
এক. কর্তৃত্বের অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ। অর্থাৎ সন্তানকে অধিক শাসনে রাখা। তার ছোটবড় সব কাজে নজরদারি করা। এটি তার ব্যক্তিত্ব নষ্ট করে দেয়। এমনকি মানসিকতা বিকৃত করে দিতে এর প্রভাব অনেক বেশি।
দুই. অতিরঞ্জিত ভালোবাসা অর্থাৎ সন্তানের সকল কাজ অভিভাবক নিজেই করে দেন।
কিছু চাইলেই তৎক্ষণাৎ তা পূরণ করে দেওয়া। এটি তার আত্মনির্ভরশীল মানসকে নষ্ট
করে দেয়।
তিন. উদাসীনতা বা বেখেয়ালিপনা। অর্থাৎ কোনো কাজে সফল হলে পুরস্কৃত করা বা উৎসাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে কৃপণতা করা। আবার কোনো অপরাধ করলে বা ব্যর্থ হলে শাস্তি বা শাসন পরিত্যাগ করা।
চার. অতিরিক্ত আহ্লাদ, সন্তান যা চায় তা-ই পূরণ করা। এর কারণে সন্তান বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
পাঁচ. অনিয়ন্ত্রিত কঠোরতা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিভাবক সন্তানকে শারীরিক বা মানসিক শাস্তি দিতে গিয়ে অধিক কঠোরতা অবলম্বন করে ফেলেন, যার কারণে সন্তান হয়ে পড়ে ভীতু কিংবা হতাশাগ্রস্ত।
[৩] (দি প্লেইন ট্রুথ (The Plain Truth) ম্যাগাজিন অক্টোবর ১৯৮৭ সংখ্যার সূত্রে ‘আল বয়ান’ ম্যাগাজিন নবম সংখ্যা। দি প্লেইন ট্রুথ একটি দাতব্য মাসিক পত্রিকা। সাতটিরও অধিক ভাষায় এটি প্রকাশিত হয়ে থাকে এবং প্রতি সংখ্যায় প্রায় বিশ মিলিয়ন কপি ফ্রি বিতরণ করা হয়) [৪] 'আল বয়ান' ম্যাগাজিন নবম সংখ্যা
আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন। We Respect Every Author Hardwork, boipaw ™
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....