ইমাম গাযালীর চিঠি পিডিএফ ডাউনলোড
লেখক : হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী (রহ.)
প্রকাশনী : ওয়াফি পাবলিকেশন
বিষয় : আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা
পৃষ্ঠা : 55, কভার : পেপার ব্যাক
রূপমজ্ঞানের পথে ‘শর্টকাট’ বলে কিছু যদি থেকে থাকে, তাহলে একটাই আছে। আর তা হলো, অভিজ্ঞদের উপদেশ নেয়া। তাদের উপদেশ হয় গোটা জীবনের সারাংশ। জীবনের কঠিন থেকে কঠিন অভিজ্ঞতার গল্প, প্রতিটি হোঁচট থেকে উঠে দাঁড়াবার গল্প, ব্যর্থতা আর সফলতার রাজপথে চলার গল্প।
.
ইমাম গাযালী (রহ.) এই বইতে এমনই কিছু গল্প বলেছেন। তবে চিঠির ভাষায়। প্রিয় ছাত্রের সমীপে। দীর্ঘকাল তাঁর সান্নিধ্যে থাকা ছাত্রকে তিনি এখানে শিখিয়েছেন জ্ঞানের আসল স্বরূপ, আখিরাতের রশদ যোগাড়ের পথ-পদ্ধতি। প্রজ্ঞায় ভরপুর কথামালা দিয়ে সাজানো এর প্রতিটি অধ্যায়। হৃদয়গ্রাহী আলোচনায় মোড়ানো এর প্রতিটি বাক্য। যেন বিদায়কালে সন্তানের প্রতি বাবার শেষ অসীয়ত। শত বছর হয়ে গেলেও যার কথাগুলো আজও রয়েছে জীবন্ত।
.
বইয়ের মোড়কে ইমাম গাযালীর সেই চিঠিগুলো আজ আপনার ডাকবাক্সে পৌঁছে গেছে। হবে কি সময় খুলে দেখবার?
○ বইটির ভালোলাগা অংশ
“দুনিয়াবি অর্জনগুলো দুনিয়াতেই থেকে যায়। সাথে যায় শুধু সেটাই, যেখানে ইখলাস থাকে, আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকে। অতত্রব, জ্ঞানকে কাজে লাগাও জ্ঞানের প্রতিদান বিলীন হবার আগেই।”
ইমাম আবু হামিদ আল-গাযালী রহ.-এর এমন অসাধারণ সব নাসিহায় ভরপুর ‘ইমাম গাযালীর চিঠি’ বইটি। কেউ যদি জিজ্
ঞাসা করে, এই বইয়ের কোন দুটো লাইন আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে— আমি সহজে বলতে পারব না। কারণ, এর প্রতিটি পৃষ্ঠায় আমার পছন্দের বানী আছে। আমি মনে করি, এটি বার বার পড়ার মতো একটি বই।
○ বইয়ের সারসংক্ষেপ
দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জনের সবচেয়ে সহজ এবং উপযোগী পন্থা হল বিজ্ঞ আলিমদের পরামর্শ নেওয়া। তাদের দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়া। কারণ, তারা গোটা জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে উপদেশ দেন। এই উপদেশগুলো কখনও প্রদীপ হয়ে অন্ধকারে পথ দেখায়, আবার কখনও জ্ঞান থেকে সৃষ্ট অন্তরের রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
ইমাম গাযালী রহ.-এর এক প্রিয় ছাত্র দীর্ঘদিন তাঁর সংস্পর্শে থেকে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। জ্ঞান অর্জনের যাত্রায় এক পর্যায়ে এসে তার মনে নানান প্রশ্ন উদয় হতে থাকে। দুনিয়ায় অর্জিত জ্ঞান কীভাবে তাকে জীবনের চূড়ান্ত সফলতা জান্নাত লাভে সহায়তা করতে পারে—এটাই ছিল তার সব প্রশ্নের সারাংশ। প্রশ্নগুলোর উত্তরে ইমাম গাযালী রহ. এক অসাধারণ চিঠি লিখেছিলেন। যেখান থেকে পাওয়া যায় চব্বিশটি যুগান্তকারী উপদেশ। এই উপদেশগুলো নিয়েই রচিত বই ‘ইমাম গাযালীর চিঠি’।
○ আলোচ্য বিষয়বস্তু
বইটি হাজারো বছর আগের হলেও আমাদের যুগের সাথে পুরোপুরি মানানসই। এ যুগে দ্বীনের জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী ছাত্রদের মধ্যে খুব কমন একটা সমস্যা হচ্ছে—আমল কমে যাওয়া। এই বইয়ে উল্লেখিত উপদেশগুলোর মধ্যেও জ্ঞানের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে আমলের ওপর। তাই তো ইমাম গাযালী রহ. বলেন, “আমল ছাড়া ইলম পাগলামি বৈ কিছু নয় এবং ইলম ছাড়া আমল বাতিল বৈ কিছু নয়।”
জান্নাতে পৌঁছতে চাইলে ঈমান লাগবে, সাথে আমলও লাগবে। আর ঈমান-আমল বাড়ানোর জন্যই প্রয়োজন দ্বীনের জ্ঞান। এ বিষয়গুলো নিয়ে বইতে যেমন আলোচনা এসেছে, তেমনি দ্বীনের সঠিক জ্ঞান কাদের কাছে পাওয়া যাবে, তাদের বৈশিষ্ট্য কেমন হবে—সেই বিষয়েও আলোচনা এসেছে। এ ছাড়াও জ্ঞান অর্জনের পথে চলতে গেলে একজন ছাত্রকে সময়, নাফস, তাওয়াক্কুল, তাকওয়া, ইখলাস, দাওয়াহ, মৃত্যু সহ জীবনের নানান বিষয়ে সচেতন থাকতে হয়। প্রতিটি বিষয়েই লেখক সংক্ষিপ্ত ভাষায় গভীর এবং গোছালো উপদেশ দিয়েছেন। ছোট ছোট চিঠি আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে উপদেশগুলো।
○ বইটি কাদের জন্য
আমি মনে করি, যারা শুধু দ্বীনের জ্ঞান অর্জনকেই গুরুত্ব দেন, সর্বদা ফিকহি বিষয়ে তর্কে লিপ্ত থাকেন এবং আমলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন—তাদের জ্ঞান উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। তারা অন্তরের রোগে ভুগছেন। এই বই তাদের রোগের ওষুধ হতে পারে। এ ছাড়াও প্রতিটি মুসলিমেরই বইটি পড়া উচিত। কারণ, ফরজ জ্ঞান সবারই অর্জন করতে হয়। আর জ্ঞান অর্জনের পথে খুঁটিনাটি যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয় সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। এক কথায় বলতে গেলে, দুনিয়ায় অর্জিত দ্বীনের জ্ঞানকে পরকালের পাথেয় বানানোর জন্য এই বইয়ে দেওয়া উপদেশগুলো মানাই যথেষ্ট।
○ লেখক সম্পর্কে
‘ইমাম গাযালীর চিঠি’ বইয়ের লেখক হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযালী রহ.-কে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তিনি একাদশ শতাব্দীর একজন কালজয়ী ইমাম। তখনকার সময়ে ইসলামকে গ্রিক দর্শনের কুপ্রভাব থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে তিনি ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। ইসলামের গভীর ও দার্শনিক জ্ঞান অর্জনে ইমাম গাযালী রহ.-এর বই অনন্য। তীক্ষ্ণ মেধা ও অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন এই আলিম তাঁর কর্মজীবনে প্রায় চারশো অমূল্য গ্রন্থ রচনা করে গেছেন যা যুগ যুগ ধরে জ্ঞানের ছাত্রদের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে আছে।
○ বই সম্পর্কে আমার মতামত
‘ইমাম গাযালীর চিঠি’ বইয়ের অনুবাদ আমার কাছে সরল ও সাবলীল লেগেছে। নাসিহাগুলো ছোট ছোট চিঠি আকারে থাকায় পড়ায় সহজে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয় না। বইটি পড়ার সময় আমার মনে হয়েছে, ইমাম গাযালী রহ. যেন আমাকে উদ্দেশ্য করেই চিঠিগুলো লিখেছেন। কিছু সংক্ষিপ্ত উপদেশ থেকে পাঠক যাতে ভুল না বোঝেন সেজন্য অনুবাদক নিজ থেকে টিকা যুক্ত করে দিয়েছেন।
এই বই পড়তে গেলে অনেক অসাধারণ উপদেশ পাবেন যা আপনার পুরো চিন্তাধারাই বদলে দিতে পারে। উক্তিগুলো দাগিয়ে বার বার পড়া উচিত। যার মাথায় কথাগুলো থাকবে সে জ্ঞান দ্বারা সহজে পথভ্রষ্ট হবে না, ইনশা আল্লাহ।
○ পছন্দের কিছু উক্তি
“জীবন বড়ই দামি, তার চেয়ে বেশি দামি শত ব্যস্ততার ভিড়ে পাওয়া অবসর সময়টুকু।” – ইমাম গাযালী রহ.
“দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জনে ব্যস্ত ছাত্রদের অনেকে মনে করে পরকালে রক্ষা পেতে ইলমের পাহাড়ই যথেষ্ট, আমলের প্রয়োজন নেই। মজার বিষয় হলো, বিভ্রান্ত দার্শনিকদের বিশ্বাসও এরকম।” – ইমাম গাযালী রহ.
“যারা মনে করে চেষ্টা ছাড়াই তাদের লক্ষ্যে (অর্থাৎ জান্নাতে) পৌঁছুতে পারবে, তারা দিবা স্বপ্ন দেখছে। আবার যারা মনে করে, শুধু চেষ্টা দিয়েই তাদের লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারবে (আল্লাহর দয়ার প্রয়োজন নেই), তারা আত্মতৃপ্তিতে ভুগছে।” – আলী ইবনু আবি তালিব (রাযি.)
পরিশেষে বলব, আমাদের এই যুগ ফিতনার যুগ। তথ্যের সাগরে ভাসছি আমরা। উপকারী-অপকারী সব জ্ঞানই আমাদের সামনে উপস্থিত। এর মধ্যে নিজেকে ঠিক রাখার জন্য, দ্বীনের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে জান্নাত লাভের জন্য এই বইয়ের উপদেশগুলোকে নিত্যদিনের সঙ্গী করে রাখা উচিত।
Credit ✍️ Minhaz Mohammad ☑️
১.
‘তুমি শতবছর পড়াশোনা চালিয়ে যাও এবং শত বইয়ের সংগ্রহশালা বানিয়ে ফেল তবুও আমল ছাড়া আল্লাহ তা’আলার দয়া লাভের পাত্র হতে পারবে না’ – ইমাম আবু আহমাদ আল-গাযালী।
ইলম খুব দামি একটা জিনিস। ইলমের পথে ছুটতে গিয়ে বারংবার হোঁচট খাই, উঠে দাঁড়াই আবার ছুটে চলি। একটা সময় দেখা যায়, আমি জ্ঞানের পাহাড়
গড়েছি। পঠিত বইয়ের তালিকায় শতশত বইয়ের নাম জুড়েছে। বাজারে আসা নতুন বইগুলো সবার আগেই পড়ে ফেলছি। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সেই ইলম থেকে আমি কতটুকু ফায়দা লাভ করছি? নাফসের তাঁবেদারি ছেড়ে প্রাপ্ত উপদেশগুলোকে কতটুকু কাজে লাগাচ্ছি? নিজের আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং অন্যের কল্যানের পথে অর্জিত জ্ঞানকে কতটুকু ব্যয় করছি? অথচ অর্জিত ইলম যে কাজে লাগাবে না, কিয়ামাতের দিন সেই ইলমই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে।
আমাদের অনেকের মধ্যে একটা ভুল ধারণা থাকে। আমরা ইলমকেই একমাত্র মুক্তির পথ ভেবে বসি। কিন্তু স্রেফ জ্ঞান কোনদিনও আমার আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি এবং দ্বীনি অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারবে না। সেজন্যে ইলম অনুযায়ী আমল চাই। অনেক দিন আগে আলী রা. এর একটা কথা পড়ে খুব চমকে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘ইলম আমলকে ডাকে, যদি আমল ইলমের ডাকা সাড়া দেয় তাহলে ইলম অন্তরে স্থায়ী হয়। নচেৎ নয়।’ হাসান আল বাসরি রহি. তো আরো কঠিন কথা বলেছেন। ‘আমল ছাড়া জান্নাত তালাশ করা তো পাপের অন্তর্ভুক্ত।’
দিনশেষে আমল বিহীন ক্ষণস্থায়ী ইলম নিয়ে আমি আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না তো? অথবা শত বিনিদ্র রজনী বইয়ের পেছনে ব্যয় করছি শুধুমাত্র দুনিয়ার তুচ্ছ বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ এবং জাগতিক মর্যাদা লাভের উদ্দেশ্যে নয় তো?
অন্তরে এই কথাটা খোদাই করে রাখি। ‘আমল ছাড়া ইলম পাগলামী বৈ কিছু নয় এবং ইলম ছাড়া আমল বাতিল বৈ কিছু নয়।’ আর সমস্ত আমলের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।
২.
দেহের চিকিৎসকের খোঁজ তো হরহামেশাই রাখি কিন্তু কে হবে আমার হৃদয়ের চিকিৎক? কী-ই-বা হবে আমার আত্মার ওষুধ, অন্তরের ব্যাধির প্রতিষেধক? অথচ সত্য পথের পথিক তথা সালিক মাত্রই তার একজন শায়েখ বা আধ্যাত্মিক শিক্ষক থাকা চাই। যিনি তাকে দিকনির্দেশনা দেবেন, তারবিয়াতের মাধ্যমে তার বদগুণগুলো ধুয়েমুছে সাফ করে দেবেন এবং সুন্দর গুণাবলি দিয়ে সাজিয়ে তুলবেন৷
আধ্যাত্মিক শিক্ষক চেনার উপায়, তার কার্যাবলি, তার প্রতি বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ শ্রদ্ধা কেমন হওয়া উচিত?
এছাড়াও সালিক মাত্রই রয়েছে তার অনেক করণীয়। নিরঙ্কুশ আকিদার পাশাপাশি তাকে আরো তিনটি গুণাবলির অধিকারী হতে হবে। তাকে জানতে হবে তাসাউফের দুটি বৈশিষ্ট্য, দাসত্বের তিনটি সমষ্টি। স্পষ্ট থাকতে হবে তাওয়াক্কুল আর ইখলাসের মূলকথা সম্বন্ধে।
সিরাত্বল মুস্তাকিমের পথিক হতে চাইলে আমাদের এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতেই হবে। কোথায় মিলবে মূল্যবান সব প্রশ্নের জবাব?
৩.
হাতিম আল আসাম রহি. ছিলেন শাকিক আল-বালখি রহি. এর সাথী ভাইদের একজন। একদিন শাকিক হাতিমকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তিরিশ বছর হবে তুমি আমার সান্নিধ্যে আছো। এতদিন একসাথে থেকে কী শিখলে?’ হাতিম বললেন, ‘আমি আটটি জ্ঞানগর্ভ বিষয় শিখেছি। আর এগুলো আমার জন্য যথেষ্ট। আখিরাতে মুক্তি পেতে এগুলোই আমার জন্য যথেষ্ট হবে।’ হাতিম রহি. আটটি বিষয় বললেন। সব শুনে শাকিক রহি. বললেন, ‘আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুক। তোমাকে সফল করুক। আমি তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল এবং কুরআনে দেখেছি এই চারটি আসমানি গ্রন্থই তোমার এই আটটি বিষয়কে ঘিরে আলোচনা করেছে। যে-কেউ এগুলো মেনে চলবে সে তো চারটি কিতাবই মেনে চললো।’
সেই আটটি বিষয় কী কী? আমি তো মনে করি, সকলেরই জানা উচিত। কারণ ওয়াল্লাহি! আল্লাহ চাইলে কেউ যদি এই ৮টি বিষয় নিজের জীবনের পরতে পরতে কাজে লাগাতে পারে তবে দুনিয়ার জিন্দেগীতে সে সফল এবং রব্বের প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে৷ আর ইনশা আল্লাহ আখিরাতেও এগুলো যথেষ্ট হবে।
আমি এখানে ১টি বিষয় তুলে ধরছি-
‘‘আমি সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করলাম। দেখলাম, সবারই প্রিয় মানুষ রয়েছে, মাহবুব রয়েছে যাকে সে খুব করে চায় এবং ভালোবাসে। এসব মাহবুবদের কেউ কেউ তাদেরকে আমৃত্যু সঙ্গ দেয় আবার কেউ যায় কবর পর্যন্ত। তারপর সবাই ফিরে আসে। ছেড়ে আসে সম্পূর্ণ একা ফেলে। কেউ তার সাথে কবরগৃহে প্রবেশ করে না। বিষয়টি নিয়ে ভাবলাম এবং নিজেকে বললাম, ব্যক্তির আসল মাহবুব তো সেটাই, যা তার সাথে কবর পর্যন্ত যায় এবং নিঃসঙ্গতা দূর করে। দেখলাম, একমাত্র নেক আমলই এমন সঙ্গ দেয়। তাই এটাকেই আমি আমার মাহবুব হিসেবে গ্রহণ করলাম। যাতে কাল অন্ধকারে এটাই হয় আমার প্রদীপ, আমার নিঃসঙ্গ মুহূর্তের সঙ্গী; আমাকে একা ছেড়ে যাবে না কক্ষনো।’
নিজের জন্য এটা উপকারী মনে করলে বাকি ৭টা বিষয় আপনি খুঁজে নিবেন ইনশা আল্লাহ।
৪.
লোকমান হাকিম ছেলেকে অসিয়ত করে গিয়েছিলেন, ‘প্রিয় সন্তান মোরগ যেন তোমার চাইতে অধিক বুদ্ধিমান না হয়ে যায়। সে ভোরবেলা ডাকে, যখন কিনা তুমি ঘুমিয়ে থাকো।’
আমরা রাতের একটা চমৎকার সময় ইচ্ছা করেই হারিয়ে ফেলি। আরামের বিছানা, কম্বলের উষ্ণতা আর ঘুমের আধিক্য ছুড়ে ফেলে রব্বের সামনে দাঁড়াতে পারি না। অথচ দিনের বেলা বারংবার দাবী করি, আমি আল্লাহ তা’আলাকে ভালোবাসি। আমি আল্লাহ তা’আলাকে সত্যিই ভালোবাসি কিনা এবং আল্লাহ তা’আলা আমাকে কতটুকু ভালোবাসেন, আমি তার মর্যাদাবান বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কিনা এইসবের নির্ধারক এবং নিদর্শন হলো কিয়ামুল লাইল। আল্লাহ তা’আলা রাতকে বলেছেন কুরআন পড়ার জন্য উপযুক্ত সময়। তিনি এই রাতেই বান্দাকে ডাকেন, তার প্রয়োজন শুনতে চান। দাম্পত্য সুখ থেকে শুরু করে যেকোন দু’আ আল্লাহ তা’আলার কাছে কবুলিয়াতের সঠিক সময় তো এটাই।
কেমন হয় যদি কোন বই থেকে আপনার ঘুম কাতুরে স্বভাব বিসর্জন আর কিয়ামুল লাইল পড়ার ব্যাপারে অসম্ভব সুন্দর কিছু নাসীহাহ খুঁজে পান? যে নাসীহাহ করেছিলেন ইমাম আবু আহমাদ আল-গাযালী।
৫.
আলহামদুলিল্লাহ আজকাল আমরা সবাই দা’য়ী হতে চাই। চাই অন্য কারোর হিদায়াতের উসীলা হতে। এটা সত্যিই আনন্দের বিষয় যে, আমরা নিজেদের ভেতর দা’ওয়াহ দেওয়ার গুণটা আনছি৷ কিন্তু এর ক্ষতি বৃহৎ হবে যদি না আমি নিজে নিজ কথার উপর আমল করি। এছাড়াও দা’য়ী হতে গেলে কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। কিছু জিনিস পরিত্যাগ করতে হবে। দা’ওয়াহ দেওয়ার আগে এসব জানা অবশ্যই জরুরি।
আমাদের যেহেতু অন্তর আছে তাই এই অন্তরে কখনো বসন্ত আসে। আবার কখনো প্রবল ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যায় সব। কখনো ফিৎনা শেকড় গেড়ে বসে আর ছড়িয়ে দিয়ে যায় হাজারো ব্যাধি। এমন সব ব্যাধির মধ্যে কিছু নিরাময় যোগ্য আবার কিছু দুরারোগ্য। আমার অন্তরেও যদি এমন ব্যাধি থেকে থাকে? সেগুলো নিরাময়ের উপায় কী? কিংবা দুরারোগ্য ব্যাধি হলে তার সূত্রপাতই বা কোথা থেকে হলো? আমাদের এগুলোর উত্তর জানা উচিত। কারণ অসুস্থ অন্তর নিয়ে ইবাদাতের স্বাদ আর কলুষযুক্ত জীবন কখনোই পাওয়া যায় না।
….
এতক্ষণ কেবল প্রশ্নই ছুড়ছিলাম এবার উত্তরের ব্যাপারে বলি। এই প্রত্যেকটা প্রশ্নের সুনিপুণ উত্তর মিলবে ইমাম গাযালীর চিঠি বইটাতে। বইটি কিছু চিঠির সংকলন। প্রিয় ছাত্রের প্রতি ইমাম গাযালীর চিঠি। কিছু প্রশ্ন তার ছাত্রকে ক্রমে অস্থির করে তুলছিল৷ উপায়ন্তর না পেয়ে ঝটপট উস্তাদকে লিখে ফেললেন চিঠি। প্রতুত্তরে ইমাম চব্বিশটি উপদেশ সম্বলিত যে চিঠি লিখেছিলেন তা ছিল বিস্ময়কর! অল্প কথায় এমন গভীর ও গোছালো উপদেশ খুব কম উস্তাদই তার ছাত্রকে দিতে পারে। উস্তাদ কখনো সাবধান করেছেন, কখনো দিকনির্দেশনা দিয়েছেন আবার কখনো সময়, মৃত্যু কবর এবং আখিরাতের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। ইলম, আমলের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
বইটা খুব ছোট। মাত্র ৫০ পৃষ্ঠার একটা বই। এক বসাতেই শেষ করে ফেলা যায় কিন্তু আমি বেশ সময় লাগিয়েই পড়েছি। একেকটা চিঠি কয়েক বার পড়েছি তার শিক্ষা হৃদয়াঙ্গম করার উদ্দেশে। পাঠক হিসেবে বারবার উপলব্ধি করেছি, এই চিঠিগুলো যেন আমার জন্যই লেখা। এই নাসীহাহগুলো যেন আমার জন্যই এসেছে। আমি খুব সামান্য অংশই পোস্টে লিখেছি বাকি অসংখ্য মণি-মুক্তা অপেক্ষা করছে পাঠকের জন্য বইয়ের পাতায় পাতায়৷ সময়ের গুরুত্ব, ইলমকে কাজে লাগানো এবং আমল করা, ইবাদাত এবং আখিরাত, মৃত্যু, নিফাকি, কবর, আনুগত্য ও শারীয়াহ, আল্লাহর পথের পথিকদের গুণাবলী, হাতিম আল আসাম রহি. এর ৮টি জ্ঞানগর্ভ শিক্ষা, আধ্যাত্মিক শিক্ষক, দা’ওয়াহর ক্ষেত্রে করণীয়-বর্জনীয় এবং অন্তরের ব্যাধি এমন সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে চিঠিগুলো লেখা। আর লিখেছেন ইমাম আবু আহমাদ আল গাযালী।
আমি পাঠকের ভিন্ন রুচিভেদের কারণে কখনোই তেমন জোর দিয়ে কোন বই পড়তে বলি না। তবে ‘শেষের অশ্রু’ বইটার পর এটার ক্ষেত্রে মনে হয়েছে, সবার পড়া দরকার। অনুবাদক নিজেও লিখেছেন, ‘পাঠক যে স্তরেরই হোক না কেন এখানে সে খুঁজে পাবে হিদায়াতের আলোকবর্তিকা, প্রিয় বাবার ছায়া, আদর্শ শিক্ষকের দয়ার পরশ।’ আসলে জ্ঞানী বুযুর্গদের কথার মেজাজই এমন। খুব ছোট্ট কথাও অন্তরে দাগ কেটে যায়, নাসীহাহগুলো মেনে চলতে ইচ্ছা করে। তবে কেবলমাত্র উপদেশ শুনে বসে থাকলেই তো চলবে না। বরং বুঝদার ছাত্র মানেই সে উস্তাদের কথা মেনে চলে আর বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ সব অবস্থান থেকেই শ্রদ্ধা জানায়৷ ইমাম আবু আহমাদ আল-গাযালী একটি কথাতেই পুরো বিষয়টা তুলে ধরেছেন-
‘তুমি আমাকে কিছু প্রশ্ন করেছিলে। আসলে এগুলোর উত্তর লিখে কিংবা মুখে বলে বোঝানো দায়। তুমি যখন উপরে আলোচিত স্তরে পৌঁছুতে পারবে, তখন বুঝে আসবে। অন্যথায় বিষয়টি অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। আর যা অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে হয়, তা অভিজ্ঞতা ছাড়া শেখা অসম্ভব। স্বাদের কথাই চিন্তা করো। কোনটা মিষ্টি আর কোনটা তেতো না চেখে দেখলে কি বোঝা সম্ভব?’
অনুবাদ করেছেন মহিউদ্দিন রূপম। অনুবাদও বেশ প্রাঞ্জল আর ঝরঝরে ছিল। অনুবাদক প্রতিটি অধ্যায়কে স্বতন্ত্র চিঠিতে রূপ দেওয়ায় বইয়ের সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেছে। আল্লাহ তা’আলা লেখক, অনুবাদক এবং বইয়ের সাথে জড়িত সকলের উপর রহম করুন। তাদের পরিশ্রমগুলোকে কবুল করে নিন। পাঠকদের উপকারী ইলম কাজে লাগাবার তাওফিক দান করুন। আ-মিন। Credit ✍️Hafsa☑️
We Respect Every Author Hardwork - boipaw.com™
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....