লেখকঃ অশোকা রায়না
প্রকাশনীঃ বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নাল পাবলিশিং
ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার অজানা অধ্যায়
অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ আবু রুশদ।
পৃথিবীর অন্য কোনো সংস্থা , ভারতের মন্ত্রী পরিষদ সচিবালয়ের অধীন বৈদেশিক গুপ্তচর সংস্থা ' রিসার্চ এন্ড এ্যানালিসিস উইং ' অর্থাৎ ' র ' - এর মতো মাত্র বার বছর সময়কালের মধ্যে এতো শোরগোল ও সমালোচনার ঝড় তুলতে পারেনি । জনগণের নিকট সিনেমা , বইপত্র , পত্র - পত্রিকার রিপোর্টের মাধ্যমে বন্যার ন্যায় ক্রমাগত প্রবহমান ‘ বিকৃত তথ্যের উপস্থাপনা ' ( ইন্টেলিজেন্স জগতের অর্থহীন অপভাষা প্রয়োগে ) তাদের মনে একটি বিকৃত চিত্রের প্রতিস্থাপন ঘটায় । প্রকৃত সত্যের পরিবর্তে অজ্ঞানতার বিভিন্ন স্তর সাধারণ জনগণের নিকট উপস্থাপন করা হয় ।
সাধারণের মনে এ ধারণা জন্মে যে , ‘ র ’ - এর ঝুলিতে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার সঞ্চয়ই বেশি । যে কোনো সরকার এমনকি আমাদের সরকারও ‘ সাফল্যের তুলনায় অধিক ব্যর্থতার বোঝা বহনকারী এমন কোনো ‘ প্রচুর ব্যয়সাপেক্ষ ’ সংস্থাকে দীর্ঘদিন পুষতে পারেন না । ' র ' - এ কর্মরত ব্যক্তিবর্গ যারা ‘ গুপ্তচর ' হিসেবে পরিচিত , তারা প্রতিবাদের কোনো বিশেষ সুযোগ না থাকায় মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে বাধ্য হন । এটা অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার যে , কোথাও যখন ‘ র ’ বিরোধী প্রচারণা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখন সরকার পর্যন্ত অনুরূপ ' চুপচাপ ' থাকার নীতি অবলম্বন করেন ।
তবে প্রথমবারের মতো ১৯৮০ সালের ৯ ই জুলাই নয়াদিল্লিতে সি আই ডি - র ( Criminal Investigation Department ) সম্মেলনের সমাপ্তি দিবসে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পূর্ববর্তী সরকারের ( জনতা সরকার - মোরারজী দেশাই ) আমলে ' র ' - এর বিরুদ্ধে পরিচালিত কর্মকাণ্ডের প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং উল্লেখ করেন , সংসদে ও বাইরে একটি ভুল ধারণার জন্ম হয়েছে যে , এ সংস্থা ( ' র ' ) দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাচ্ছে , কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এ ধরণের গুজব সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয় ।
গুপ্তচরবৃত্তি সংক্রান্ত কোনো বই লেখার জন্য বিভিন্ন উৎস বা সূত্রের প্রয়োজন হয় । কিন্তু এ বিষয়টির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে দালিলিক তথ্য প্রমাণ গ্রন্থকারের নিকট হয়তো খুবই অল্পমাত্রায় অথবা একেবারেই সহজলভ্য হয় না । তবে স্পর্শকাতর সংবাদ প্রতিবেদন ও জনসমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘ র ’ - এ কর্মরত ও পূর্বে কাজ করেছেন এমন অনেকে এ ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তান্বিত ছিলেন এবং তাদের কর্মকালের অনেক বিবরণ প্রকাশ করতে আগ্রহান্বিত হন । এর ফলে আমি তাদের অনেককে ‘ কথা বলার ' মতো পরিস্থিতিতে পেয়ে যাই । এখানে আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই যে , ‘ র ’ - এর কর্মরত কোনো ব্যক্তি আমার এ বইটির কোনো তথ্যে বা ঘটনার সরাসরি অনুমোদন দেননি বা তাদের কেউ পরোক্ষভাবে বা ইঙ্গিতেও বইটি লেখায় উদ্বুদ্ধ করেননি ।
আসলে আমি যখন ‘ র ’ - এর সাবেক প্রধান আর এন কাও - এর সাথে যোগাযোগ করি তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন , “ এ বইটি কখনো লেখা উচিৎ নয় । ” অবশ্য ততোদিনে বইটির প্রথম খসড়া তৈরি শেষে তা প্রকাশকের কাছে পাঠানো হয়ে গেছে । কাও গুপ্তচর জগতের প্রাচীন প্রবাদ “ যার যতোটুকু জানা প্রয়োজন তার শুধু ওটুকুই জানা দরকার " -এ নীতিবাক্যের উল্লেখ করে আমাকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেন । বইটি লেখার প্রথম দিকে আমার বেশকিছু বন্ধু - বান্ধব আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন , আমি কীভাবে ' র ' সম্পর্কে লিখতে পারি যেখানে আমি কখনো ওই সংস্থায় কর্মরত ছিলাম না ? যারা এভাবে চিন্তা করতেন , তাদের কাছে আমার শুধু একটি কথাই বলার আছে ।
একজন সাংবাদিক যিনি যে কোনো বিষয়ের ' তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদক ' হোন না কেন , তাকে কোনো বিষয়ে প্রতিবেদন লিখতে হলে তার ওই রূপ পরিস্থিতি বা পরিবেশে অবস্থানের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকা একান্ত বাঞ্ছনীয় নয় । যাহোক , আমাকে প্রচুর তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ , পর্যালোচনা ও পড়াশোনা করতে হয়েছে । আমি মনে করি , এ বইয়ে যে সব তথ্য ও ঘটনাই সন্নিবেশিত থাকুক না কেন তা ইতোমধ্যে ' অন্যপক্ষের ' জানা হয়ে গেছে । পাকিস্তানী ইন্টেলিজেন্স , চীনা ইন্টেলিজেন্স , মার্কিন সি আই এ , বৃটিশ সিক্রেট সার্ভিস ( এস আই এস ) বা রাশিয়ান কে জি বি ও অন্যান্য দেশের ইন্টেলিজেন্স সংস্থা এ বইয়ে উল্লিখিত ঘটনাপঞ্জি ভালোভাবেই জানে এবং বর্ণিত এসব ঘটনা এরমধ্যে ঘটেও গেছে ।
সুতরাং ভারতীয় জনগণের এ সব ' ব্যাপার স্যাপার ' জানায় কোনো বাধা থাকা উচিত নয় বরং এর যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণও নেই । এখানে যা বিধৃত হয়েছে তা আমার তিন বছরাধিককালের পরিশ্রমের ফসল । অবশ্য এরমধ্যে খণ্ড খণ্ডভাবে পত্র - পত্রিকায় ছিটেফোঁটা কিছু লিখেছি । অনুমতিসাপেক্ষে কারো দেয়া তথ্য ছাড়া যাদের নাম লেখনীর ধারাবাহিকতায় সংযোজিত হয়েছে তারা কোনো উপায়েই আমাকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনো তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করেননি । ঘটনার সত্যাসত্য নির্ধারণে অতীতে ' র ' - এ কর্মরত ও বর্তমানে কর্মরত কেউ কেউ বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন ।
তাদের নাম তদীয় ইচ্ছানুসারে প্রকাশ করা সম্ভব হলো না । আমি তাদের প্রতি একান্তভাবে কৃতজ্ঞ । তাদের বছরের পর বছর অসচেতনভাবে বর্ণিত ঘটনাপঞ্জির সাহায্য ছাড়া , কল্পিত ঘটনা ও বাস্তবের মধ্যে সীমারেখা টেনে ' র ' সম্পর্কিত পরিপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন সম্ভব ছিল না । এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে , ' র ' - এর কার্যক্রম নিয়ে এটি একটি পরিপূর্ণ বই ও সম্ভবত এখানে উল্লিখিত ঘটনাসমূহের বর্ণনার বাইরে এ সংক্রান্ত নতুন কিছু যোগ করার নেই এবং তা করলেও সত্যের অপলাপ হবে মাত্র ।
তবে আমি দাবি করছি না যে , এ সবই সর্বাংশে সত্য ও নিখুঁত । যখন আমি বিভিন্ন অপারেশনের বর্ণনা দিয়েছি তখন অনেক ক্ষেত্রে ঘটনা বর্ণনায় ও এর সাথে সংশ্লিষ্টদের নাম পরিবর্তন করেছি মাত্র । কিছু কিছু ঘটনা উল্লেখ করায় অনেকেই আমার শত্রুতে পরিণত হতে পারেন বলে কাউকে ব্যক্তিগত আঘাত দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয় । আমি শুধুমাত্র ' র ' - এর প্রয়োজনের দিকটিই ভেবেছি ।
এ বইয়ে বর্ণিত বিষয়াবলী আমার নিজস্ব সংগ্রহ , ‘ বেনামি ' ব্যক্তিবর্গের গৃহীত সাক্ষাৎকার , সংবাদপত্রের রিপোর্ট , সাময়িকী ও বইপুস্তক থেকে নেয়া হয়েছে । আমি স্বনামে ও বেনামে উল্লিখিত সবার নিকট ও প্রকাশকের কাছে তাদের সহযোগিতার জন্য বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ । অনেকেই সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও তথ্য সংগ্রহে সহৃদয় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন । আমি বিশেষ করে মিসেস ইন্দিরা লাউল যিনি পাণ্ডুলিপিটি পড়ে দিয়েছেন ও আমার পিতা লে . কর্ণেল বি এল রায়না যিনি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়ে আমাকে ধন্য করেছেন তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই ।
সবশেষে আমার স্ত্রী নীরা , যে এ বিষয়টিকে পুরোপুরি ‘ সতীনের ' মতো মনে করেও যথেষ্ট শ্রম দিয়েছে ও দু'পুত্র রজত ও রাজীব যারা হৈ হট্টগোল না করে আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটায়নি ( ! ) তাদের কথাও এখানে স্মরণ করতে হয় । যখন বইয়ের সব কাজ শেষ হলো তখন দশ বছর বয়সী রাজবী তার এক বন্ধুকে ব্যাখ্যা করে বলছিল যে , “ আমার আব্বা , ' র ' - নিয়ে একটি বই লিখেছে । এটা গুপ্তচরদের গল্প নিয়ে লেখা , যা বড়রা বুঝতে পারে না , উনি তাদের বোঝাতে চাচ্ছেন , আসলে ব্যাপারটা কি । ” আমি মনে করি না এর চেয়ে ভালোভাবে অন্যকিছু বলার আর প্রয়োজন আছে ।
নয়া দিল্লি,
অশোকা রায়না। Inside Raw Book PDF Download
Tag - That U Search On Internet
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....