সাহসী মানুষের গল্প ৩ pdf download | Shahoshi Manusher Golpo 3 pdf download by Mosharraf Hossain Khan

জনপ্রিয় ইসলামী উপন্যাস pdf - সাহসী মানুষের গল্প পিডিএফ ডাউনলোড ৩য় খন্ড -লেখকঃ মোশাররফ হোসেন খান এর উপন্যাস | Sahosi Manuser Golpo 3rd part pdf download By Mosarrof Hosen Khan Islamic Books PDF Download

Image


ঘুমের ভেতর গ্রহের ছায়া
দারুণ খরার কাল! ভয়ানক দুর্ভিক্ষ!

বৃষ্টি নেই সারা বছর। ফসল ফলবে কিভঅবে?

অভাব আর অভাব। চারদিকে কেবল অভাবের কাল ছায়অ। ছায়াটি ক্রমশ দীর্ঘ হতে হতে এক সময গ্রাস করে ফেললৈা পুরো কুরাইশ গোত্রকে।

Shahoshi Manusher Golpo 1 part Link

Shahoshi Manusher Golpo 2 part Link
কে আর সচ্ছল আছে?

বনী হাশিমের মধ্যে মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ এবং তার চাচা আব্বাস তবুও কিছুটা ভাল আছেন। অন্যদের তুলনায়।

কিন্তু এই আকাল আর অভাবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়ে গেলেন আবু তালিব।

মান-সম্মান আর মর্যদার দিক থেকে কোনো কমতি নেই আবু তালিবের। কমতি নেই কোনো শরাফতি থেকেও। কিন্তু তাতে কী?

অভাব তাকে এমনভাবে গ্রাস করে ফেললো যে তিনি বিদিশা হয়ে পড়লেন।

ভাবছেন আবু তালিব।

একা হলেও কথা ছিল। সংসারে অনেক সন্তান। বিশাল একটি পরিবার।

এতবড় পরিবারটিকে তিনি কিভাবে সামলাবেন? এই চরম দুর্দিন আর অভাবের মধ্যে?

ভেবে কোনো কূল-কিনারা করতে পারছেন না আবু তালিব।

অথই আর উত্তাল সাগরে তিন যেন এক ভাসমান, কূলহারা নাবিক।

এমন সময়।–

ঠিক এমনি এক দুঃসময়ে নবী মুহাম্মাদের (সা) হৃদয়েও বেদনার ঝড় বয়ে গেল।

তিনিও ভাবছেন।

ভাবছেন  কী করে চাচা আবু তালিবের জন্য? ‍দুর্দশায় তিনিও অস্থির হয়ে পড়লেন। ভাবতে ভাবতে তিনি ছুটে গেলেণ চাচা আব্বাসের কাছে। বললেন:

চাচা! আপনি তো জানেন, আপনার ভাই আবু তালিবের কথা। জানেন তার পরিবারের কথা। কী যে দুঃসহ কষ্টের মধ্যে তাদের দিন কাটছে! তেগুলো সন্তান নিয়ে তিনি কেবলিই ক্ষুধার সাগরে হাবুডুবু খঅচেনছন। চলুন না আমরা তার কাছে যাই এবং তার কিছু ছেলের দায়িত্ব আমাদের কাঁধে তুলে নিয়ে তাকে কিছুটা হালকা করে তুলি! তার একটি ছেলেকে আমি নেব, আর একটি ছেলেকে আপনি নেবেন!

রাসূলের প্রস্তাব শুনেই হাসিমুখে বললেন আব্বাস: সত্যিই তুমি আমাকে একটি কল্যাণের দিকে আহবান জানিয়েছ। সত্যিই তুমি এক ভাল কাজের প্রতি আমাকে উৎসাহিত করেছ!

কথা শেষ।

সিদ্ধান্তে পালাও শেষ।

এবার যাবার পালা আবু তালিবের বাড়িতে।

রাসূল (স) এবং আব্বা-দু’জন মিলে চলে গেলেন আবু তালিবের কাছে। গিয়ে তাকে বললেন:

আমরা এসেছি। আমরা এসেছি আপনার পরিবারের কিছু বোঝা হালকা করার জন্যে। মানুষ যে দর্ভিক্ষের শিকার হয়েছে- তা থেকে আপনাকে কিছুটা ‍মুক্তি দিতে এসেছি আমরা।

তাদের কথা শুনে আবু তালিব একটি দীর্ঘশাস ছেড়ে বললেন:

আকীলকে আমার জন্য রেখে যা খুশি তোমরা তাই করতে পার। আমার কোনো আপত্তি নেই।

তার কথা শেষ হলে রাসূল (স) সাথে করে নিলেন আলীকে। আর আব্বাস নিলেন জাফরকে।

দু’জন –দুজনকে সাথে নিয়ে যার যার বাড়িতে ফিরে গেলেন।

আলী বড় হতে থাকলেন রাসূলেলর (সা) তত্তাবধানে।

আর জাফর বড় হচ্ছেন, লালিত-পালিত হচ্ছেন আব্বারে দায়িত্বে।

দুটো ছেলেকে বিদায় দেবার পর পিতা আবু তালিবের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো

হাজার হোক পিতা তো!

তার এক চোখে সন্তান দিয়ে দেবার লজ্জা এবং বেদনা, আর অন্য চোখে তাদের ক্ষুধা থেকে মুক্তির আনন্দ।

ঘাসের কাফনে ঘুমান সৈনিক অত্যন্ত সুন্দর , সুদর্শন একটি যুবক । নাম মুসয়াব ইবন উমাইর । মক্কার প্রতিটি মানুষ তাকে অবাক হয়ে দেখে । মুসয়াব ছিলেন পরিবারের দারুণ আদরের ধন । চোখের মণি । মায়ের অর্থের কোনো অভাব ছিল না । সেই সম্পদ দুই হাতে খরচ করতেন মুসয়াব । তিনি ছিলেন যেমন সৌখিন , তেমনি রুচিবান । 1 ভোগ বিলাসের প্রতি ছিল তার বেজায় ঝোঁক । জীবনের প্রথম দিকে । খুব মূল্যবান পোশাক পরতেন মুসয়াব । আর শরীরে মাখতেন রাজ্যির যত্তসব দামী দামী খোশবু , সুগন্ধি । 

মুসয়াব রাস্তায় হাঁটার সময় আশপাশের সবাই খোশবুর গন্ধে চোখ বন্ধ করেই বুঝতে পারতো , ঐ যাচ্ছে , নিশ্চয়ই মুসয়াব যাচ্ছে ! রাসূলও ( সা ) দারুণ পছন্দ করতেন মুসয়াবকে । পরবর্তীতে রাসূলের ( সা ) সামনে মুসয়াবের প্রসঙ্গে কথা উঠতেই মৃদু হেসে বলতেন : তিনি ‘ মক্কায় মুসয়াবের চেয়ে সুদর্শন এবং উৎকৃষ্ট পোশাকধারী আর কেউ ছিল না ' । আর তখনকার জ্ঞানীগুণী এবং ঐতিহাসিকরা সবাই এক বাক্যে বলতেন , মুসয়াব ছিলেন মক্কার সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধি ব্যবহারকারী ।
শুধু সৌন্দর্যের দিক দিয়েই মুসয়াব আলোচিত ছিলেন না । তিনি আলোচিত ছিলেন ব্যক্তি হিসাবেও । মুসয়াবের বাইরের পোশাক - আশাক , দেহগঠন যেমন ছিল সুন্দর , দর্শনীয় — ঠিক তেমনি পরিচ্ছন্ন ছিল তার অন্তরটিও । একেবারে ধবধবে সাদা । সাদা আর কবুতরের হালকা পালকের মত নরম মসৃন । সেই জাহেলিয়াতের যুগেও মুসয়াবের অন্তরে লাগেনি এতটুকু কালিমার দাগ । শিরক ও কুফরীর ব্যাপারে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সতর্ক - সজাগ । 

তখনও দীনের দাওয়াত পাননি মুসয়াব । ততোদিনে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন জাহেলী সমাজের কুফরী কার্যকলাপে । তিনি মুক্তির পথ খুঁজতে থাকলেন । একসময় তার সামনে হাজির হলো সেই কাংখিত মুক্তির পয়গাম । জ্বলে উঠলো তৃষিত চোখে আলোর ঝলক । ভোরের সোনালী সূর্যের আলোতে গোসল করলেন মুসয়াব । দুই হাত ভরে টেনে নিলেন ইসলামের শীতল - স্নিগ্ধ বাতাস । সেই প্রদীপ্ত সূর্য আর মুক্ত নির্মল বাতাসে আরও বিস্তৃত , আরও সুন্দর হয়ে উঠলো মুসয়াবের ভেতর , তার হৃদয় । ইসলাম গ্রহণের পর একেবারেই বদলে গেলেন মুসয়াব । 


তার সকল শ্রম , সকল চেষ্টা এখন ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যয় করেন । আর সেই সাথে মুসয়াবের বাড়ে জ্ঞান , বুদ্ধি , সাহস এবং দৃঢ়তা । আগের চেয়ে এখন তিনি অনেক বেশি সাহসী এবং সংকল্পে সুদৃঢ় । এমনি সুদৃঢ় যে , মুসয়াবের সত্যের পথ থেকে টলাতে পারে এমন কোনো বিপদ , এমন কোনো ভয় পৃথিবীতে ছিল না ।

মা অত্যন্ত ভালোবাসতেন মুসয়াবকে । . আর মুসয়াবও সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন মাকে । সেই সাথে ভয়ও করতেন । তার মা ছিলেন খুবই প্রতাপশালীনী । যেমন ছিল তার ব্যক্তিত্ব , তেমনি ছিল তার মেজাজ । মুসয়াব খুব ভাল করেই জানতেন তার মাকে । এজন্য ইসলাম গ্রহণের খবরটি তিনি প্রথম দিকে গোপন রাখতে চেয়েছিলেন । কিন্তু মুসয়াবের মত ব্যক্তির কোনো খবরই কি আর বেশিক্ষণ গোপন থাকে ? মুহূর্তেই মক্কার অলিতে গলিতে পৌঁছে গেল তার ইসলাম গ্রহণের খবর । 

খবরটি শুনে সবাই তো হতবাক । বিস্ময়ে বিমূঢ় । এও কি সম্ভব ! তারা মনে করলো , আমরা শত চেষ্টা করেও মুসয়াবকে ফেরাতে পারবো না । একমাত্র পারবেন তার মা । তারা আর দেরি না করে খবরটি মুসয়াবের মায়ের কানে পৌঁছে দিল । মা তো শুনেই আগুন ! এতবড় কথা , এতবড় স্পর্ধা ! সমাজ - গোত্রের মুখে চুনকালি মাখিয়ে ছেলে কিনা ইসলাম গ্রহণ করলো ! আমাদের বিশ্বাস এবং ধর্মের বিপরীত চলে গেল ! জ্বলে উঠলেন মা । 

আর সেই আগুনে বাতাস দিতে থাকলো সমাজপতিরা । তাই তো , মুসয়ারের এতবড় দুঃসাহস ! আমাদের চৌদ্দপুরুষের ধর্ম , আচার - অনুষ্ঠানকে পায়ে পিষে সে কিনা কবুল করলো মুহাম্মাদের ( সা ) মত এক হত দরিদ্র , এতিম মানুষের ধর্ম ইসলাম ! না , এটা সহ্য করা যায় না । অতএব - অতএব প্রতিশোধের দিকে এগিয়ে গেল তারা ।



মক্কার শত্রুদের আক্রমণ দিনে দিনে বাড়ছে। উত্তপ্ত আবহাওয়ার মক্কা নগরী বিষাক্ত। অশান্ত লু হাওয়া। আপাতত আর মক্কায় থাকা চলবে না। এখঅনে এখন ইসলাম প্রচার করা সম্ভব নয়।

তাহলে? কিছুক্ষণ ভেবে নিলেন নবী (স)। তারপর।–

তারপর সুদূরের পথ তায়েফ। বহু- বহু- দূরের পথ। নবীজ (স) মক্কা থেকে সাময়িক বিদায় নিয়ে তায়েফের পথে রওয়ানা হলেন।

মরুভূমির পথ। বালি আর বালি। কোথাও কোনো গাছ নেই। নদী নেই। শুধু আছে ধু-ধু মাঠ। আর আছে ছোট বড় পাহাড় পর্বত। পাথরের নুড়ি। বহু পথ অতিক্রম করে চলে এসেছেন নবী (স)। প্রায় সত্তর মাইল। পায়ে হেঁটে। বন্ধুর পথ। উঁচু-নিচু। পাথরের নুড়ি ছড়ানো। ব হু কষ্টে হেঁটে চলেছৈন দয়ার নবীজী (স)।

বাস নেই। প্লেন নেই। জাহাজ কিংবা লঞ্চও নেই। এক আছে গাধা এবং উট। প্রিয় নবীর সাথে সেসব বাহনও নেই। তিন চলেছেন পায়ে হেঁটে। ক্রমাগত হাঁটছেন তিনি।

আহার নেই।

নিদ্রা নেই।

বিশ্রাম নেই।

তিনি হাটছেন।

অবশেষে হাঁটতে হাঁটতে, বহু কষ্টে তিনি পৌঁছে গেলেন তায়েফ।

অপরিচিত একটি দেশ। অজানা-অচেনা রাস্তা-ঘাট। অচেনা একানকার মানুষ- জনপদ।

তবু মুসলমানের জন্যে প্রত্যেকটি দেশই তার নিজের দেশ।

প্রত্যেকটি দেশের মানুষেই তার আপন মানষ। কাছের মানুষ।

প্রত্যেকটি দেশেই তার ঘর।

পেছনে মক্কা নগরী ফেলে নবীজী (স) সুদূর তায়েফে এসেছেন। ইসলাম প্রচারের জন্যে।

মক্কার মানুষ আহ্বানে সাড়া দেয়নি। বরং তাঁকে কষ্ট দিয়েছে নির্মমভাবে। তবু তিনি নিরাশ হননি। হতাশ হয়ে ভেঙ্গে পড়েননি। তি অবশেষে কষ্ট স্বীকার করে তায়েফ এসেছেন ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্যে।

মানুষকে সত্য পথে ডাকতে।

আল্লাহর বাণী শোনাতে।

সুন্দর শহর তায়েফ। মনোরম।

তায়েফের আবহাওয়াতে ছটফটানি নেই। ঝড়েরর দাপাদাপি নেই। একটানা রোদের তেজ নেই। আবার একটানা ‍বৃষ্টিও নেই। চারদিকে সবুজের হাতছানি। ক্ষেত ভরা ফসল। সবুজ সবজির ঢেউ তোলা ভাঁজ। খেজুর গাছের ঘন পল্লবে আরও উজ্জ্বল, আরও সুন্দর হয়ে উঠেছে তায়েফের প্রান্তর। প্রাচুর্য আর সম্পদের শহর- তায়েফ।

কিন্তু সম্পদে তো আর সুখ বয়ে আনে না। সুখ আনে- মনের সৌন্দর্য, কোমলতা, পবিত্রতা এবং উত্তম চরিত্রে।

Shahoshi Manusher Golpo 3 By Mosharraf Hossain Khan PDF Download Link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ