নববি কাফেলা দাওয়াহ সংস্করণ ও প্রিমিয়াম কোয়ালিটি PDF short
লেখক : মাহমুদ শীত খাত্তাব
প্রকাশনী : রুহামা পাবলিকেশন
বিষয় : ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ইসলামি ইতিহাস ও ঐতিহ্য
পৃষ্ঠা : 612, কভার : হার্ড কভার
সাপ্লায়ার জানিয়েছেন এই পণ্যটি 19 February প্রকাশিত হতে পারে। প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে পণ্যটি পেতে আগেই অর্ডার করে রাখুন ।
দুই দুইটি সুপার পাওয়ারের দম্ভ যাঁরা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিলেন, জাহিলিয়াতের ধ্বংসস্তূপের ওপর যাঁরা উড়িয়েছিলেন দ্বীনে ইসলামের বিপ্লবী ঝান্ডা, ইতিহাসের সেই সব মহানায়কদের সম্পর্কে জানতে আপনার মন কি কৌতূহলী হয়ে ওঠে না? তাঁদের জন্ম ও বেড়ে ওঠার রোমাঞ্চকর সময়গুলো তাঁদের সংগ্রামমুখর জীবনের উত্তাল দিনগুলো সম্পর্কে জানতে আপনার মন ব্যাকুল হয় না?
তাঁদের দুঃসাহসিক অভিযানগুলোর গল্প শুনতে কি আপনার মন আকুলি – বিকুলি করে না? তাদের কুরবানি ও শাহাদাতের লোমহর্ষক দৃশ্যগুলো দেখতে আপনার হৃদয়ে কি উৎসাহের ঢেউ জাগে না?
আমরা তো এই মহান লোকদেরই ভাগ্যবান বংশধর । এই ইতিহাস তো আমাদেরই পূর্বপুরুষদের ইতিহাস । আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের এই আলো-ঝলমলে পাতাগুলো কি আমরা উলটাব না? প্রিয় পাঠক, ইতিহাসের এই আলোকিত দৃশ্যগুলো নিয়েই আপনাদের প্রিয় প্রকাশনী রুহামার নতুন আকর্ষণ, প্রখ্যাত ঐতিহাসিক, সমরবিদ ও সিরাত-গবেষক শাইখ মাহমুদ শীত খাত্তাবের এক অমর অজর রচনা ‘কাদাতুন নাবিয়্যি এ’—’নববি কাফেলা’ ।
গোটা ইসলামি কুতুবখানার দিকে হাত বাড়ালে এমন সমৃদ্ধ ও গবেষণামূলক গ্রন্থ খুব বেশি দেখা যায় না । শাইখ খাত্তাবের সামরিক প্রতিভা, গবেষকসুলভ অন্তর্দৃষ্টি ও বিপুল অধ্যয়নের ছাপ পাওয়া যায় বইটির পাতায় পাতায় । আল-মাদরাসাতুন নাবাবিয়াহ থেকে উত্তীর্ণ সামরিক ও প্রশাসনিক সাহাবি নেতৃবৃন্দের ঐতিহাসিক কর্মগাথার রীতিমতো একটি বিশ্বকোষ এই বই । রাসুলুল্লাহ -এর পবিত্র হাতে গড়া ৩১ জন মহান সামরিক কমাণ্ডার এবং প্রশাসনিক নেতৃবৃন্দের জীবন, কর্ম ও অবদান নিয়ে ধাপে ধাপে নির্মাণ করা হয়েছে এই মূল্যবান গ্রন্থটি । আসুন, আমরা আমাদের এই মহান পূর্বপুরুষদের গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে জানি, কদম রাখি তাঁদের মতোই সাফল্যলাভের পথে—
জীবনের অন্তিম মুহূর্তেও যে পথের পথিকদের মুখে উচ্চারিত হয়, ‘কাবার রবের শপথ’ আমি সফলকাম হয়েছি !’…নেতৃত্ব, দক্ষতা ও কুরবানীর গৌরবময় ইতিহাস জানতে পড়ুন।
محمد رسول الله والذين معا أشداء على الكفار رحماء بينهم تراهمركعا سجدا يبتغون فضلا من الله ورضوانا سيماهم في وجوههم من أثر السجود‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সিজদারত দেখবেন। তাদের মুখমণ্ডলে রয়েছে সিজদার চিহ্ন।(সুরা আল-ফাতহ, ৪৮: ২৯।
لقد كان لكم في رسول الله أسوة حسنة لمن كان يرجو الله واليوم الآخر وذكر الله كثيرا‘তোমাদের যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে, তাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।(সুরা আল-আহজাব, ৩৩: ২১)
রাসুল সাঃ -এর কমান্ডারগণের মাঝে আরব ও মুসলিমদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা ও উপদেশ
সকল প্রশংসা মহান রব্বুল আলামিনের জন্য। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সৃষ্টির সেরা নবিদের সর্দার মুহাম্মাদ -এর ওপর এবং তাঁর পবিত্র পরিবার পরিজন ও সাহাবিদের ওপর।
কিতাব রচনার ক্ষেত্রে 'নববি কাফেলা' নামক কিতাবখানা থেকে আমি যে পরিমাণ উপকৃত হয়েছি এবং উপভোগ করেছি, তা অন্য কোনো কিতাবের বেলায় হয়নি। এর রচনা ছিল আত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উপকারের একটি সম্মিলিত সুন্দর ও মনোরম সফর।
রচনা শেষে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিতাবটি পুনরায় পাঠ করলাম। এ পাঠ কোনো অর্থ ও মর্মের প্রতি পুনঃদৃষ্টি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ছিল না। ফলে মূল কিতাবে কোনো শব্দ বা বাক্যের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করিনি। নতুন কোনো চিন্তা বা মতামতও সংযোজন করিনি। শুধু এতটুকু করেছি, ভুলে কোনো শব্দের ফোঁটা বাদ গেলে ফোঁটা দিয়ে দিয়েছি এবং অনিচ্ছায় কোনো ভুল শব্দ লেখা হয়ে থাকলে তা সংশোধন করেছি। কিন্তু পুনরায় কিতাবটি পড়তে গিয়ে সময় একটু দীর্ঘায়ত হয়ে গেল। পাঠ উপভোগ করতে গিয়ে এবং ধারাবাহিক বিজড়িত প্রচুর চিত্রের মাঝে আত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে একটু বেশি উপকৃত হওয়ার জন্য চার সপ্তাহ লেগে গেল। আর মানুষের জন্য সময়টা অনেক মূল্যবান বটে। দুনিয়াতে আমার সবচেয়ে দামি সম্পদ ও সবচেয়ে লোভনীয় বস্তু হলো এই সময়। বস্তুত বৈধ কোনো বিষয়ে বা উপকারী কোনো কাজে সময়ের ব্যবহার কখনো বৃথা যায় না।
এ কিতাব রচনা ও তা পুনরায় পাঠ করে যে স্বাদ উপভোগ করেছি এবং যত উপকার আমার অর্জন হয়েছে, তার গোপন ভেদ প্রকাশ করা প্রয়োজন মনে হচ্ছে না। বরং এ ভেদ উন্মোচন করা পাঠকের জিম্মায় রাখাই উত্তম মনে হচ্ছে। যাতে রহস্য উদ্ধারের মিষ্টতা থেকে কেউ বঞ্চিত না হয়। অবশ্য এটা হতে পারে, আমি যে স্বাদ পেয়েছি এবং আত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক যে উপকার লাভ করেছি, সে স্বাদ ও অর্জন হয়তো অন্যরা নাও পেতে পারে।
এই কিতাব রচনা ও পুনরায় পাঠকালে আমি আল্লাহর কাছে আশা করেছি, যেন মুসলিমদের নেতারা উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত ব্যক্তি বসাতে রাসুল -কে উত্তম আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। শুধু সামরিক বিভাগেই নয়; বরং সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সকল সেক্টরে যেন তারা এদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখে। যাতে জাতিকে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা নেতৃত্ব দেয় এবং সামরিক ও বিভিন্ন সেক্টরে জাতিকে বিজয় ও উন্নতির দিকে পরিচালিত করে।
এ কিতাবে সর্বপ্রথম যে শিক্ষাটি আমি পেয়েছি, তা হলো বিভিন্ন অঙ্গনে যথাস্থানে যথাযোগ্য ব্যক্তিকে বসানোর ক্ষেত্রে রাসুল -এর অভিনব পদ্ধতি এবং বুদ্ধিদীপ্ত নীতি। বিশেষত সামরিক সেক্টরে কমান্ডার নিয়োগের ক্ষেত্রে, যা পাঠক এই কিতাব পড়ামাত্রই বুঝতে পারবে। পাশাপাশি অন্যান্য সেক্টরেও বিভিন্ন কমান্ডার নিযুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর সুবাসিত সিরাতে উত্তম আদর্শ খুঁজে পাবে।
সামরিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তাঁর যেমন বিশেষ নীতি ও পদ্ধতি ছিল—যা এই কিতাবে একেবারেই সুস্পষ্ট–তেমনই অন্যান্য বেসামরিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও ছিল তাঁর অনেক নীতি ও পদ্ধতি। যার মাধ্যমে তিনি সেরা নেতৃত্বের এক প্রজন্ম গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। ফলে মহান রব্বে কারিমের ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় বেসামরিক ও সামরিক অঙ্গনে বিরাট সংখ্যক নেতৃত্ব তিনি রেখে গিয়েছিলেন। যাঁদের প্রত্যেকেরই ছিল স্ব স্ব সেক্টরে বিরাট ও স্থায়ী অবদান।
গাজওয়া ও মারিয়্যা যুদ্ধ
২৮টি যুদ্ধে স্বয়ং রাসুল -ই ছিলেন যুদ্ধের জেনারেল। তন্মধ্যে মাত্র নয়টি ময়দানে ইসলাম ও কুফরের মাঝে যুদ্ধ বেধেছিল। আর বাকি ১৯টি ময়দানে যুদ্ধ ছাড়াই অর্জিত হয়েছিল রাসুল সাঃ -এর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যো।
হিজরতের পর থেকে গাজওয়াসমূহে রাসুল -এর জিহাদ সর্বমোট সাত বছর চলমান ছিল । দ্বিতীয় হিজরির সফর মাসে তিনি ওয়াদ্দান যুদ্ধে বের হন। এটাই ছিল প্রথম গাজওয়া, যেখানে তিনি নিজেই নেতৃত্ব দেন। আর নবম হিজরির রজব মাসে বের হন তাবুকের যুদ্ধে। এটিই ছিল তাঁর জীবনের সর্বশেষ যুদ্ধ ।
কিন্তু রাসুল জ-এর জিহাদ শুধু গাজওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং তাঁর জিহাদ গাজওয়ার সাথে সারিয়্যা অভিযানেও বিস্তৃত ছিল। গাজওয়া এবং সারিয়্যা অভিযানের মধ্যে পার্থক্য আছে। সরাসরি রাসুল -এর নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধকে বলে গাজওয়া আর তাঁর নির্দেশে কোনো সাহাবির নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধকে বলে সারিয়্যা।
রাসুল -এর সারিয়্যার সংখ্যা ছিল ৪৭টি। আরেক বর্ণনামতে তার চেয়েও বেশি। তবে প্রথম মতটি অধিক বিশুদ্ধ। কারণ অধিকাংশ নির্ভরযোগ্য উৎসগ্রন্থ প্রথম মতের ওপর একমত পোষণ করেছে।
এই অভিযানগুলো নয় বছর চলমান ছিল। শুরু হয়েছিল প্রথম হিজরির রমাদান মাসে হামজা -এর নেতৃত্বে ঈস অভিমুখে প্রেরণের মাধ্যমে এবং শেষ হয়েছিল দশম হিজরিতে মাজহাজ অঞ্চলে আলি -এর নেতৃত্বে বাহিনী প্রেরণের মাধ্যমে।
এই সাত বছরের গাজওয়া ও নয় বছরের সারিয়্যার বড় ফলাফল ছিল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাজিরাতুল আরব এই আরবেরই সন্তান মুসলিমদের নেতৃত্বের অধীনে ইসলামের পতাকাতলে একত্রিত হয়। আরবের ভূমিকে বহিরাগত অনুপ্রবেশকারীদের থেকে মুক্ত করা হয় এবং সমস্ত অঞ্চল থেকে মূর্তি ও প্রতিমাগুলোকে ভেঙে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। ফলে তাওহিদ ও ঐক্যের দ্বীন ইসলামের বদৌলতে পুরো আরব কোনো শরিকবিহীন এক ইলাহের ইবাদতকারী হয়ে যায়।
অভিযানসমূহে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন ৩৭ জন সাহাবি। যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন মোট ৪৭টি অভিযানে। কেউ একটিতে, আবার কেউ বিভিন্ন সময়ে একাধিক সারিয়্যা পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তালিকায় আমরা ৩৮ জন কমান্ডারের নাম পাব। সেখানে আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর আনসারি -এর নামও যুক্ত করা হয়েছে। যিনি উহুদ যুদ্ধে তিরন্দাজ বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পেশ করেছিলেন জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ ও কুরবানি। পাহাড়ের ন্যায় অটল-অবিচল ছিলেন নিজ অবস্থানে। বীরত্ব, সাহসিকতা, আনুগত্য, অবিচলতা এবং ত্যাগ ও কুরবানির ক্ষেত্রে রেখে গেছেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উত্তম আদর্শ। তাই তাঁর বরকতময় জীবনী নবিজি -এর কমান্ডারগণের জীবনীর সাথে যুক্ত করার লোভ সামলাতে পারলাম না। তাঁর নেতৃত্বের অনন্য বৈশিষ্ট্যাবলির প্রতি সম্মান দেখিয়ে এবং তাঁর বিরল বীরত্বকে মূল্যায়ন করে এখানে তা যুক্ত করলাম। যাতে প্রতিটি মুসলিম সৈনিক ও কমান্ডারের সামনে উত্তম আদর্শ হিসেবে থাকতে পারে। তার ওপর আবার স্বয়ং রাসুল -ই তাঁকে তিরন্দাজ বাহিনীর কমান্ডার নির্বাচন করেছিলেন। যারা উহুদে মুজাহিদ বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন। কারণ তাঁরাই সেদিন মুসলিম বাহিনীকে পেছনের দিক থেকে রক্ষা করেছিলেন। আর তাঁদের অবস্থানক্ষেত্রটিই ছিল সবচেয়ে বিপজ্জনক, কঠিন ও কষ্টসাধ্য।
আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর – যদিও রাসুল -এর অভিযানসমূহ থেকে অন্য কোনো অভিযানে নেতৃত্ব দেননি। শুধু উহুদের যুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ কষ্টসাধ্য অংশের কমান্ডার ছিলেন। কিন্তু উহুদে তিরন্দাজ বাহিনীর নেতৃত্ব দানের ব্যাপারটি অন্য কোনো অভিযানে বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আবার যোগ্যতা, সম্মান ও সক্ষমতার ক্ষেত্রে আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর অন্য কোনো কমান্ডারের চেয়ে কোনো অংশে কম নন।
গাজওয়া ও সারিয়্যাগুলোতে জিহাদের ফলাফলগুলো ছিল বাস্তবিকই পরিপক্ক। আর এমন ফলাফল অর্জনের ক্ষেত্রে রাসুল -এর নেতৃত্বের ছিল চূড়ান্ত এবং যুগান্তকারী প্রভাব। সে প্রভাব ছিল গাজওয়া জিহাদে প্রত্যক্ষভাবে রাসুল হয়ে কমান্ডিং করার কারণে এবং সারিয়্যা জিহাদে ছিল পরোক্ষভাবে সবচেয়ে সেরা ব্যক্তিকে কমান্ডের দায়িত্ব দেওয়ার কারণে। অর্থাৎ যথাস্থানে যথাযোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়ার কারণে।
সারিয়্যাগুলোর নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাসুল -এর এই যে অনন্য নীতি ও পদ্ধতি, উপযুক্ত ও যোগ্যতাসম্পন্ন জিম্মাদার নির্বাচনের এই যে অসামান্য আকাঙ্ক্ষা; যাতে তা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সকল মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর হয়— তার মাঝে অবশ্যই এমন উপদেশ ও শিক্ষা আছে, যা থেকে বর্তমানের নেতা ও অনুগত সবারই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, যদি যুদ্ধে জয়ী হতে চাই এবং উন্নতি সাধন করতে চাই। কারণ সকল মুসলিমের জন্যই আজ বিজয় ও উন্নতি দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এককালের বিজয়ী ও উন্নত জাতি আজ পরিণত হয়েছে পরাজিত ও অনুন্নত জাতিতে। এটা তখন থেকে হয়েছে, যখন থেকে তারা মুসলিমদের গড়ে তোলা ভিত থেকে সরে দাঁড়িয়ে পরিপূর্ণ মনোযোগ দিয়েছে মানব ধ্বংসের পেছনে। এবং উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত ব্যক্তিকে বসানোর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে অযোগ্য ব্যক্তির হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়েছে। ফলে আমাদের কপালে ধ্বংস আর বরবাদিই নেমে এসেছে।
নেতা নির্বাচন
উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত ব্যক্তি বসানো সহজ কোনো কাজ নয়। এটা বাস্তব জীবনে নেতা ও অনুগত সবারই সফলতার রহস্য। যুদ্ধ ও শান্তিকালীন উভয় সময়েই।
অবশ্য এটা কোনো সহজ ব্যাপার নয়। কারণ আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত বান্দা ছাড়া, সর্বদাই মন্দের নির্দেশদাতা মানবাত্মা নিজ থেকে জ্ঞান ও যোগ্যতায় উত্তম ব্যক্তিকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এ দুষ্ট আত্মা তার আশপাশ থেকে চাকচিক্যতা ছিনিয়ে নেওয়ার ভয় পায় এবং এর ফলে সে ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কায় থাকে।
উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত ব্যক্তিকে নেতৃত্ব দান নেতা ও অনুগতদের সফলতার রহস্য। বরং এতে তাদের সফলতার অঙ্গনে রয়েছে আরও অনেক উন্নতির রহস্য। কারণ সৎ ও যোগ্য নেতাগণ তাদের জনগণকে যুদ্ধের সময় বিজয়ের দিকে পরিচালিত করে এবং শান্তিকালীন সময়ে উন্নতি ও সফলতার দিকে নিয়ে যায়।
রাসুলুল্লাহ ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত। এই সাহায্যের ছিল নিশ্চিত প্রভাব তাঁর সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হওয়ার ক্ষেত্রে, ফায়সালা ও বিধান দানের ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক ও পরিচালকের আসনে, কমান্ডার ও সৈনিক হওয়ার ক্ষেত্রে, মুরব্বি ও শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে এবং পরিপূর্ণ মানব হওয়ার ক্ষেত্রে, এমন মানব— যার কাছে ওহি পাঠানো হয়।
এসব যোগ্যতাই হচ্ছে উত্তম আদর্শ। যে আদর্শকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার জন্য একজন বিবেকসম্পন্ন মুমিন অবশ্যই তার দিকে তাকিয়ে থাকবে। কারণ এগুলো এমন যোগ্যতা, যা অর্জন করার জন্য যেকোনো অনুসরণীয় ব্যক্তিই সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাবে।
মহান আল্লাহ সত্যই বলেছেন :الله أعلم حيث يجعل رسالته -‘আল্লাহ ভালো জানেন, তিনি তাঁর রিসালাতকে কোথায় অর্পণকরবেন।”
তবে ওহি দ্বারা সাহায্য একমাত্র নবি-রাসুলদের মাঝে সীমাবদ্ধ।
রাসুল -এর সিরাত এবং তাঁর কমান্ডারগণের জীবনী অধ্যয়ন করে যে জিনিসটা আমি পেয়েছি, তা হলো, রাসুল -এর সকল যোগ্যতার মধ্যে একটি বিরল যোগ্যতা ছিল উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার প্রতিভা।
তিনি এ যোগ্যতাকে তাঁর বরকতময় জীবনে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন। এটাকেই তিনি যুদ্ধের দিনে বিজয় অর্জন এবং শান্তির সময়ে আরও অধিক সফলতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুনিয়াবি মাধ্যম হিসেবে অবলম্বন করেছিলেন।
রাসুল তাঁর সাহাবিদের জানতেন সবিস্তারে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে। প্রত্যেক সাহাবিকে তাঁর সেই বৈশিষ্ট্য সহকারে চিনতেন, যে বৈশিষ্ট্য নতুন ইসলামি সমাজের উপকারে আসবে। ফলে সেসব বৈশিষ্ট্যকে তিনি এই সমাজের উন্নতি ও কল্যাণে এবং সকল মুসলিমের কল্যাণে ব্যবহার করতেন।
১. সুরা আল-আনআম, ৬:১২৪।
একই সময়ে তিনি সকল সাহাবির স্বভাবজাত ত্রুটি সম্পর্কেও খবর রাখতেন। সেসব ত্রুটির থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখতেন, সেগুলোকে সংশোধনের চেষ্টা করতেন এবং সেগুলোর অনিষ্টতা থেকে দূরে রাখতেন। তিনি সকল সাহাবিকে তাঁদের উত্তম বৈশিষ্ট্যের সাথে স্মরণ করতেন এবং সেটার ব্যাপারে তাঁদের উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি সাহাবিদেরকে তাঁদের মুসলিম ভাইদের দোষ-ত্রুটি এড়িয়ে গিয়ে তাদের উত্তম বৈশিষ্ট্যগুলোকে মূল্যায়ন করার ব্যাপারে নির্দেশ দিতেন।
রাসুল * তাঁর এই চমৎকার পদ্ধতির মাধ্যমে উত্তম বৈশিষ্ট্যাবলির দ্বারা সাহাবিদের গড়ে তুলতেন। আর তাঁদের ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে তা উত্তম পন্থায় সংশোধন করতেন।
এই বিস্ময়কর পদ্ধতির মাধ্যমেই রাসুল একজন মুসলিমকে গড়ে তুলতেন, তাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতেন। বক্রতাকে সোজা করতেন, সোজা করতে গিয়ে ভেঙে ফেলতেন না। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উভয়টাকে একসাথে মজবুত করতেন। শুধু বর্তমান বা একটি সময়ের জন্য সংহত করতেন না।
সাহাবিদের মাঝে থাকা বৈশিষ্ট্যাবলি বেকার রেখে দিতেন না। বরং নতুন সমাজের কল্যাণে তা ব্যবহার করতেন। এর মাধ্যমে তাঁদের সেসব বৈশিষ্ট্য পরস্পর একীভূত হয়ে উম্মাহর ভিতকে শক্তিশালী করত এবং উম্মাহকে বিজয় ও নির্মাণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেত।
রাসুল তাঁর সাহাবিদের সক্ষমতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখতেন। তাঁদের কারও কোনো যোগ্যতাকেই তিনি ছোট মনে করতেন না এবং উপেক্ষা করতেন না কোনো যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির যোগ্যতাকে। ফলে বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তার সাথে আরও যোগ্যতা এসে যোগ হতো। এরপর তাঁর মাঝে সে যোগ্যতাগুলো চমকাতে থাকত।
তিনি প্রত্যেক উত্তম যোগ্যতার অধিকারীকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত স্থানে নির্বাচন করতেন।
যে দুই শর্তকে সামনে রেখে রাসুল নেতৃত্ব প্রদান করতেন, সে দুই শর্ত হলো ইসলাম এবং যোগ্যতা। আর মজবুত আকিদা ছিল নেতৃত্ব পাওয়ার মৌলিক শর্ত; যাতে নেতা তার কাজের মূল ভূমিকা পালন করতে পারে এবং তার কর্মের ফল যেন থাকে সন্দেহ-সংশয় থেকে মুক্ত; যেন তা পূর্ণতা পর্যন্ত পৌঁছায়। কারণ এ ধরনের বিশ্বাসী কমান্ডার তার যোগ্যতা আর আকিদার ভিত্তিতে সঠিক পথে ও অন্তর্দৃষ্টির সাথে কাজ করতে পারে। নিজের এবং পরিবারের তুলনায় সে তার আকিদা ও সমাজের জন্য বেশি কাজ করে। আর এটাই হচ্ছে আকিদা বিশ্বাসহীন কমান্ডারের ওপর অথবা যে কমান্ডারের খারাপ আকিদা থাকে— ফলে সে তার খারাপ বিশ্বাসের কারণে সমাজ বা জনকল্যাণের জন্য কাজ না করে নিজের জন্য কাজ করে তাদের ওপর বিশ্বাসী কমান্ডারদের শ্রেষ্ঠত্বের গোপন রহস্য।
তা ছাড়া উচ্চতর যোগ্যতাও ছিল নেতৃত্ব পাওয়ার একটি মৌলিক শর্ত। যাতে কমান্ডার তার দায়িত্ব আদায়ে প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে। এবং তার কর্ম সন্দেহ-সংশয় থেকে দূরে থেকে পরিপূর্ণতার কাছাকাছি থাকে। কারণ যোগ্যতাসম্পন্ন কমান্ডার যোগ্যতার বলে এর নির্ভরতা নিয়ে কাজ করে। অস্থির ও এলোপাতাড়ি কাজ করে না। যোগ্যতা তাকে ভুল থেকে বাঁচিয়ে সঠিকতার দিকে পরিচালিত করে। তাড়াহুড়া থেকে দূরে রেখে সুচিন্তিত কাজের নিকটবর্তী করে।
রাসুল -এর ৩০ জন কমান্ডার সূচনালগ্নেই ইসলাম কবুল করেছিলেন। তাঁদের ২১ জন বদরি সাহাবি। যাঁরা রাসুল -এর নেতৃত্বে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এঁরা ছিলেন খাঁটি এবং গভীর ইমানের অধিকারী। তাঁদের আকিদায় ইখলাস ও একনিষ্ঠতা ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে। তাঁরা দৃঢ়ভাবে দ্বীনকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। এ কারণে রাসুল তাঁদের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা রাখতেন। নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে অন্যদের ওপর তাঁদেরই প্রাধান্য দিয়েছিলেন।
তাঁদের মাঝে শুধু কুরজ বিন জাবির আল-ফিহরি হিজরতের পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। রাসুল তাঁকে একটি সারিয়্যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কারণ তিনি ছিলেন দুঃসাহসী অশ্বারোহী ও নির্ভীক বীর। নিপুণভাবে আক্রমণ ও পশ্চাদ্ধাবন করতে পারতেন। তিনি যে অভিযানের নেতৃত্ব পেয়েছিলেন,
বইটির বাকি অংশ দেখতে বা পড়তে - অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন।
boipaw.com™ Respect Every Author Hardwork
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....