একদিন ডানামেলা পাখি হবো pdf (short) লেখক : সাইফুল্লাহ আল মাহমুদ এর বই | Ami Akdin Danamela Pakhi Hobo

একদিন ডানামেলা পাখি হবো pdf link (short)
লেখক : সাইফুল্লাহ আল মাহমুদ
প্রকাশনী : পথিক প্রকাশন
বিষয় : ইসলামী সাহিত্য
পৃষ্ঠা : 160, কভার : পেপার ব্যাক
ভাষা : বাংলা


যদি হারিয়ে যাও অন্ধকার কোনো অজানা পথে, অচেনা হয়ে যাও সন্ধ্যের ঘনঘোর কোনো আঁধারে। তবে সন্ধ্যাতারার পানে চেয়ে সত্যিকারের পথ খুঁজে নিও। আকাশপানে তাকিয়ে দেখো আরেকবার—আসমানে কোনো সিতারা আছে কিনা..!


তাহলে আর দেরী করো না। এবার ফিরতি পথ ধরো। তব ফিরে যাও আপন নীড়ে। সামনের পথটি অমানিশা। তোমাকে অতলতায় ডুবিয়ে দিবে। অন্ধকারের গহব্বরে তোমাকে হারিয়ে ফেলবে। তোমার ডানা দু’টিকে ভেঙে দিবে। সে পথ ভয়ঙ্কর। একবার হারিয়ে গেলে আর তুমি নীড়ে ফিরতে পারবে না। আকাশের রুপোলি জোছনার ইশারায়, বুনো ফুলের বুনো গন্ধে, ডাহুকের ডাক শুনে, বাহুডোরে তাঁর ভালোবাসা নিয়ে, অনুতপ্তের হাওয়া গায়ে মেখে উড়ে-উড়ে এসো তোমার রবের পানে। উড়তে থাকো দ্বীনের আকাশে। এই তো… আর কয়েকটা দিন। অতঃপর… মুক্ত ও স্বাধীন
পাখির মতো ডানামেলে উড়তে থাকবে আকাশের ওপারে, তোমার রবের সৃজিত জান্নাতে।

Image


বাকের আল মোহাম্মাদ এর জীবনী
..............একদিন ডানামেলা পাখি হবো


বাকের আল মোহাম্মাদ। অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। অল্প বয়স তার। সুদর্শন যুবক। শরীরের অবকাঠামো বেশ সুন্দর। কোনো কিছুর অভাব ছিলো না। দামী গাড়ি, বিলাশবহুল বাড়ি—সবকিছুই তার ছিল। যুবক বয়সেই অনেক টাকার মালিক হয়েছিল সে। জীবনে কোনো কিছুর কমতি ছিলো না। সাজানো-গোছানো সুখের ছকে আঁকা এক ফ্যান্টাসির জীবন। যে জীবনে কষ্টের কোনো চিহ্ন নেই। নেই কোনো দুঃখবোধ। বলা যায় — আকাশছোঁয়া ও দূর্দান্ত এক জীবন। যে জীবন আকাশ ছুঁতে পেরেছিল—বলা যায়।

তারপর হঠাৎ একদিন...। সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়েছিল বাকের। ডাক্তার দেখালেন—ডাক্তার যা বলল, তাতে বাকের আল মোহাম্মাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। চেকআপ ও টেষ্ট করানোর পর জানা গেল, বাকের আল মোহাম্মাদ ব্রেইন ক্যান্সারে আক্রান্ত। সাজানো-গোছানো সুখের ছকে আঁকা এ জীবন মুহুর্তে পাল্টে গেল। বাকের আল মোহাম্মাদকে জানিয়ে দেয়া হলা— সে আর বেশী দিন বাঁচবে না। হয়ত আর অল্প ক'দিন এই গোলক ধাঁধা দুনিয়াকে দেখতে পারবে, এরপরে জীবনের এই অর্থ, স্ট্যাটাস, দামি গাড়ি, বিলাশবহুল বাড়ি ছেড়ে তাঁকে পাড়ি জমাতে হবে ওপারে। না ফেরার দেশে।

ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর সে উপলব্ধি করল— এ জীবন আসলে আমার নয়। এ জীবন আল্লাহর। জীবনের সবকিছুর মালিক আল্লাহ। সে আরো বুঝতে পারলো, সামান্য এই ক্যান্সারের কাছে সে কতটা অসহায়। বন্দি। আজ তার টাকা-পয়সা সব আছে, কিন্তু এই টাকা-পয়সা তাকে দুনিয়াতে বাঁচিয়ে রাখতে পারছে না। সে আরো বুঝতে পারছিল, আমার দামি-দামি ব্যবসা আর বিলাশবহুল জীবন এগুলো ছেড়ে অচিরেই চলে যেতে হবে। সাথে করে সে কোনো কিছুই নিয়ে যেতে পারবে না। জাষ্ট তার একাই যেতে হবে। একেবারে একা। কারণ, কাফনের কাপড়ের যে কোনো পকেট নেই। নেই কোনো টাকা রাখার ব্যবস্থা। মাটির বিছানা, বাঁশের বেড়া এবং তিন টুকরো কাপড়ই হবে দুনিয়ার সামানা। এতটুকুই মৃত ব্যক্তির জন্য দামি সামানা। এর বেশী সে পাওয়ার যোগ্য না।

ক্যান্সার ছিলো বাকেরের জীবনে আল্লাহর পক্ষ থেকে হিদায়াতের কারণ এবং উপলক্ষ। ক্যান্সার-ই তাকে আল্লাহর রাস্তায় টেনে নিয়ে আসল। সে ধীরে-ধীরে আল্লাহকে জানার চেষ্টা করতে থাকলো। আল্লাহর দেয়া প্রতিটি নিঃশ্বাসকে সে গুরুত্ব দিতে লাগল। প্রতিটি নিঃশ্বাসকে সে নিয়ামাহ মনে করে দুনিয়ার বাকি জীবনটাকে গনিমত মনে করে আমূল পাল্টে গেল।

ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর বাকেরের শরীরের অবকাঠামো একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ে। শরীরের মাংসপিন্ডগুলো সব শুকিয়ে যায়। বাকের বুঝতে পেরেছিল—এই শরীর, মাত্র এক ফোঁটা পানির নাম। সামান্য ক্যান্সারের কারণে সেই সব দূর্দান্ত জীবন বিনষ্ট হয়ে গেল। চলাফেরা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল। হসপিটালের বেডে খাওয়া-দাওয়াসহ সবকিছু করতে হয়েছে তাকে।

হতে পারে আল্লাহ তাআলা বাকেরকে এই কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে পূর্বের সকল পাপ মুছে দিয়েছেন। ঝরা পাতার মত ঝরিয়ে দিবেন আগের সব অন্যায়। সব পাপ। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“যে কোনো মুসলিমের কোনো কষ্ট পৌঁছে, কাঁটা লাগে বা তার চেয়েও

কঠিন কষ্ট হয়; আল্লাহ তাআলা এর কারণে তাঁর পাপসমূহ মোচন করে

দেন, এবং তার পাপসমূহকে এভাবে ঝরিয়ে দেওয়া হয়; যেভাবে গাছ

তার পাতা ঝরিয়ে দেয়।”

বাকের আল মোহাম্মাদ তার জীবনের সব সম্পত্তি আল্লাহর রাস্তায় সাদাকাহ করে দিলেন। কোনো কিছুই তার কাছে বাকি ছিল না। হাসপাতালের বেডে শুয়ে-শুয়ে ইশারা করে জামাতের সাথে সালাত আদায় করতেন। মৃত্যুর আগে তার কাছে কিছু টাকা ছিল। অর্থহীন দুনিয়া থেকে বিদায়ের আগে সেই টাকাগুলোকে অস্ট্রেলিয়ান দাঈ মোহাম্মাদ হোবলসকে দিয়ে বলেন— শাইখ, আপনি আমার এই টাকাগুলো মানুষের মাঝে সাদাকাহ করে দিবেন।

অতঃপর এক রাত্রিবেলা বাকের আল মোহাম্মাদ ঘুমের কোলে হারিয়ে গেলেন। কিন্তু তিনি সেই ঘুম থেকে আর জাগেননি। আকাশে সকালের সূর্য আবার ঠিকই উঠলো, কিন্তু বাকেরের জীবনে সূর্য আর উদিত হয়নি। বাকের আল মোহাম্মাদ এই নশ্বর দুনিয়া ছেড়ে পাড়ি জমান ওপারে। মৃত্যুর সময় তিনি হাসতে হাসতে মারা যান। মোহাম্মাদ হোবলস বলেন— ওয়াল্লাহি, আমি বাকেরের মৃত্যু খুব কাছ থেকে দেখেছি। এত সুন্দর মৃত্যু আর কোনোদিন দেখিনি। মৃত্যুর পর কবরে দাফনের পর

[১] আস সহিহ, ইমাম বুখারি: ৫৬৪৮; আস সহিহ, ইমাম মুসলিম: ২৫৭১।

অস্ট্রেলিয়ান দাঈ মোহাম্মাদ হোবলস তাঁর কবরের শিয়রে দাঁড়িয়ে আগত লোকদের উদ্দেশ্যে একটি বক্তব্য রাখেন। যে বক্তব্যের সারমর্ম হলো এই

আপনারা উনাকে আমার থেকে ভালো চিনবেন। আমি বলবো না যে, আমি ওনাকে খুব বেশী ভালোভাবে চিনতাম, আমি জাস্ট এতটুকুই জানি যে, যখন আমি ওনাকে দেখতে এসেছি, ওনার মুখে অন্যরকম একটি হাসি দেখতে পেয়েছি। ওনি মৃত্যুর সময় খুব হাসছিলেন। হাসির ঝিলিকগুলো তার মুখে ঝিকমিক করছিল।

আজকে আমরা এখানে দাঁড়িয়ে উনার জন্য দুঃখ অনুভব করছি। কষ্ট পাচ্ছি। ওয়াল্লাহি, আজকে উনার জন্য আমাদের দুঃখিত হবার কোনো প্রয়োজন নেই। আলহামদুলিল্লাহ! এ বাকের আল মোহাম্মাদ অত্যন্ত সম্মানজনক মৃত্যু পেয়েছেন। উনি মারা গেছেন, তাই এখন আমি উনার প্রশংসা করতেই পারি৷ জীবিত থাকাকালে হয়ত আমি উনার প্রশংসা করতে চাইনি৷

আমার ভাইয়েরা, আমাদের কবরস্থানে আসা উচিত। আমাদের নিজেদের বুঝা এবং দেখা ও উপলদ্ধি করা উচিত। আমাদের নিজেদের উপকার ও পরিবর্তনের জন্য প্রতিদিন কবরস্থানে আসা উচিত। এই যে কবর। সাড়ে তিন হাত মাত্র একটি জায়গা। এখানে আমাদের সাথে অনেক স্বজনরা আসবে, কিন্তু আমাকে রেখে সবাই এক-এক করে চলে যাবে। নির্জনে এই জায়গায় আমাকে থাকতে হবে জনম-জনম। কত খুশির রাত আসবে, সবাই দুনিয়ার আনন্দে মেতে উঠবে, কিন্তু আমাদের তখন এই কবরে একাকী থাকতে হবে। বছর পেরিয়ে ঈদ আসবে, বাঁকা চাঁদের হাসিতে পৃথিবীর সবাই আনন্দে নেচে উঠবে—শুধু কবরবাসী ছাড়া। ঈদের দিন তো উনাদের কষ্টের দিন।

আমরা এখন কবরের ভিতরে দেখছি, আর ভাবছি, বেচারা ক্যান্সারে মারা গেছে। এই ক্যান্সার আসলে বাকেরের জন্য সৌভাগ্য ছিল। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সময় উনার হাতে ছিল। উনি মারা যাবার আগের দিন আমি উনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম৷ বাকের আল মোহাম্মাদ আমাকে বলেছিলেন—(ক্যান্সার আমার জীবনের জন্য রহমত এবং হেদায়েতস্বরূপ) ক্যান্সার হবার কিছুদিন আগে উনি উনার বিশাল বাড়িটি ছেড়ে দেন। 

উনার মন সাঁয় দিচ্ছিল না বাড়িটি রাখার জন্য৷ আর আমরা! যত দিন যাচ্ছে ততবেশী সুদ-ইন্টারেস্টে ডুবে চলেছি৷ বিভিন্নভাবে সুদে জড়িয়ে আছি। আমাদের প্রতিটি কাজে সুদ। আমাদের পোষাকগুলো পর্যন্ত সুদ বা রিবার পোষাক। অথচ সুদ অনেক পাপ৷ এটি এমন একটি পাপ, যা একেবারে স্বয়ং আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করার মত। আমরা আঠারো ফুট একটি জায়গার জন্য মহান আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করে চলছি। অথচ এই যে সমাধি! এটা নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই, মাথা ব্যথা নেই। অথচ এই কবর-ই হলো আমাদের শেষ বাসস্থান।

এই জীবন আসলে কী? এই ক্যারিয়ার আর পার্থিব জীবন থেকে আমরা কী নিয়ে যাবো কবরে? এসব নিয়ে আমরা কখনো ভেবে দেখেছি? নির্জনে কখনো ভেবেছি?

বাকের আল মোহাম্মাদ৷ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে যাবার পরেও প্রতি ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে আদায় করেছিলেন। কখনো তিনি তার রবকে ভুলে যাননি৷ সালাত আদায় করতে তার কত কষ্ট হয়েছিল, তবুও এক ওয়াক্ত সালাত তিনি ছেড়ে দেননি। আর আমরা হলে অসুস্থতার দোহাই দিয়ে সালাতকে এড়িয়ে চলতাম। বলতাম, বাদ দিন তো ভাই, বিছানা থেকেই তো উঠতে পারছি না। সালাত পড়বো কীভাবে?

আমরা তরুণ, সুস্থ৷ আমাদের চলাফেরা করার জন্য গাড়িসহ কত ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরেও আমরা সালাত আদায় করি না। রবের ডাকে সাড়া দেই না, অথচ তিনি প্রতিদিন আমাদের পাঁচবার ডাকেন, কত দরদ আর আবেগ দিয়ে ডাকেন৷ তবুও আমরা মুখ ফিরিয়ে চলছি। উনি ডাকেন হিদায়াতের দিকে, আর আমরা ছুটে চলছি ভ্রষ্টতার দিকে৷ উনি ডাকেন তাঁর কাছে যেতে, আর আমরা চলে যাচ্ছি তাঁর রহমত থেকে দূর বহুদুরে৷ উনি ডাকছেন আমাদের তাঁর কল্যাণের দিকে, আর আমরা ছুটে চলছি অকল্যাণ আর পাপাচারের দিকে।

"ওয়াল্লাহি, বাকেরের জন্য আমাদের কোনো টেনশন করার প্রয়োজন নেই৷ আমাদের উচিত; নিজেদের জন্য চিন্তা-ভাবনা করা৷ নিজের ঈমান-আমল, তাকওয়াকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করা"

ওয়াল্লাহি, বাকের আল মোহাম্মাদ শেষ বিদায়ের আগে আমাকে এই টাকাগুলো দিয়েছেন, এবং বলেছেন, আমি যেন উনার হয়ে এই টাকাগুলো দান করে দেই। বাকের আল মোহাম্মাদ মৃত্যুর সময় একটি টাকাও রেখে মারা যাননি। সব টাকাই আল্লাহর রাস্তায় দান করে গেছেন। আর পক্ষান্তরে আমরা আমাদের ধন-সম্পদকে যেন আঁকড়ে ধরতে চাই।

ওয়াল্লাহি, আমি অনেক মৃতকে গোসল করিয়েছি, বাকের আল মোহাম্মাদের মত এত শান্ত আর প্রশান্তি কোনো লাশে পাইনি। পুরোটা সময় মনে হয়েছে, উনি যেন হাসছেন। আমার মনে হচ্ছে— আমি তাকে বলি, ভাই বাকের, তুমি কোথায় আছো? বলো! আমিও তোমার সাথে সেখানে যেতে চাই। তুমি যেসব চিত্র দেখছো,

আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন।

We Respect Every Author Hardwork - boipaw.com™

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ