PDF (short) বইঃ আশারা মুবাশশারা : জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ সাহাবির জীবনকথা

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা . 

প্রকৃত নাম আবদুল্লাহ । ডাকনাম আবুবকর সিদ্দিক ও আতিক উপাধি । জাহেলি যুগে তার নাম ছিলো আবদুল কাবা । ইসলাম গ্রহণের পর মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রেখেছেন আবদুল্লাহ । পিতার নাম উসমান , ডাকনাম আবু কুহাফা । মাতার নাম সালামা , ডাকনাম উম্মুল খায়ের । বংশধারা — আবদুল্লাহ ইবনু উসমান ইবনু আমের ইবনু আমর ইবনু কাব ইবনু সাদ ইবনু তায়েম ইবনু মুররা ইবনু কাব ইবনু লুওয়াই । 

ইসলাম - পূর্ব জীবন 
ইসলাম গ্রহণের আগে আবুবকর রা . একজন বিত্তশালী ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন । তিনি সততা , সরলতা ও বিশ্বস্ততার কারণে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন । জ্ঞান , অভিজ্ঞতা ও সদ্ব্যবহারের জন্য মক্কাবাসী তাকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখতো । জাহেলি যুগে নরহত্যার জরিমানা হিসাবে নিহত ব্যক্তির পরিজনকে দেওয়া অর্থ তার কাছে গচ্ছিত থাকতো । অন্যকাউকে এই দায়িত্ব দিতে কুরাইশরা রাজি ছিলো না । 

তিনি ইসলাম গ্রহণের পর যেভাবে মদ ঘৃণা করতেন , জাহেলি যুগেও ঠিক সেভাবেই ঘৃণা করতেন । তিনি জাহেলি যুগের এক প্রশ্নের জবাবে মদকে ক্ষতিকারক বলে উল্লেখ করেছেন । মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তার শৈশব থেকেই গভীর সম্পর্ক ও হৃদ্যতা ছিলো । তিনি মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশিষ্ট বন্ধুদের অন্যতম ছিলেন । অনেক সময় ব্যবসা উপলক্ষে তারা দুজন একসঙ্গে মক্কার বাইরে সফরে গিয়েছেন ।  

দৈহিক গঠন 
ছিপছিপে হালকা দেহের অধিকারী ছিলেন আবুবকর সিদ্দিক । মুখমণ্ডলে গোশতের পরিমাণ ছিলো কম । গায়ের রং গৌর বর্ণ ছিলোকপাল ছিলো প্রশস্ত ও উন্নত । চোখ ছিলো কোটরাগত । বার্ধক্যে তিনি চুলে মেহেদি ব্যবহার করতেন । 

ইসলাম গ্রহণ 
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়তের দায়িত্ব লাভের পর তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় - বন্ধুদের কাছে অতি গোপনে তিনি এ সংবাদ প্রকাশ করেন । তখন পুরুষদের মধ্যে আবুবকরই সর্বপ্রথম দীক্ষা গ্রহণের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন । ঐতিহাসিকগণ তার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে লম্বা - চওড়া কাহিনি বর্ণনা করেছেন । কিন্তু সেসব কাহিনি সত্য নয় । আসলে আবুবকর রা . - এর হৃদয় আগে থেকেই নির্মল ও কলঙ্কমুক্ত ছিলো । তার অন্তরের স্বচ্ছ আয়না সত্যের আলোকরশ্মি গ্রহণ করার জন্য প্রতীক্ষা করছিলো । 

শৈশব থেকে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংসর্গে থাকার ফলে তার মুখ থেকে সত্যের বাণী শোনামাত্রই এর বাস্তবতা তিনি উপলব্ধি করতে পারেন । অবশ্য কোনো কোনো জীবনীকার তার সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন । তাদের কারও মতে খাদিজা রা . সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন । আবার কেউ মনে করেন , আলি রা . এই সৌভাগ্যের অধিকারী হয়েছেন । কারও মতে জায়েদ ইবনু হারেসা আবুবকর রা . - এর আগে মুসলিম হয়েছেন । 

কিন্তু বর্ণনার এতসব ভিন্নতা সত্ত্বেও যথেষ্ট সংখ্যক নিদর্শন দ্বারা প্রমাণিত হয় , সর্বপ্রথম আবুবকর রা . ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন । বিশেষজ্ঞরা এসব পরস্পরবিরোধী উক্তি ও তথ্যের সমাধান দিতে গিয়ে বলেছেন , মহিলাদের মধ্যে উম্মুল মুমিনিন খাদিজা , কিশোরদের মধ্যে আলি , ক্রীতদাসদের মধ্যে জায়েদ ইবনু হারেসা এবং স্বাধীন পুরুষদের মধ্যে আবুবকর সিদ্দিক রা . সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন।


ইসলামের প্রচার 
আবুবকর সিদ্দিক রা . মুসলিম হওয়ার পর দীনের প্রচার - প্রসারে প্রাণপণ চেষ্টা শুরু করেন । তারই প্রচেষ্টায় উসমান ইবনু আফফান রা . , জুবাইর ইবনু আওয়াম রা . , আবদুর রহমান ইবনু আউফ রা . , সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস রা . , তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ রা . ইসলাম গ্রহণ করেন । এ ছাড়া উসমান ইবনু মাজউন রা . , আবু উবায়দা রা . , আবু সালামা রা . , খালিদ ইবনু সায়িদ ইবনু আস রা . তারই মাধ্যমে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয়গ্রহণ করেন । এসব মহান সাহাবি ইসলামের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো ছিলেন । কিন্তু এসব নক্ষত্রের মূল কেন্দ্র ছিলেন আবুবকর সিদ্দিক রা .। 

সুখে - দুঃখে মহানবি সা . - এর সঙ্গী 
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়ত লাভের পর কাফেরদের অকথ্য নির্যাতন সত্ত্বেও তেরো বছর যাবত মক্কায় দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ অব্যাহত রাখেন । আবুবকর সিদ্দিক রা . মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ সহায় - সম্বলহীন অবস্থায় জান , মাল ও সময়োপযোগী পরামর্শ দিয়ে তার পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন এবং তার দুঃখ ও সুখের অংশীদার হয়েছেন । প্রতিদিন সকাল - সন্ধ্যায় রাসুল সা . আবুবকরের বাড়িতে চলে যেতেন এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দুজনের একান্ত বৈঠক চলতো । " আরবের বিভিন্ন গোত্র বা সাধারণ জনসমাবেশে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীন প্রচার করতেন । এসময় আবুবকর সর্বদা তার সহগামী হতেন । অনেকের সঙ্গে আবুবকর রা . - এর পূর্বপরিচয় থাকায় তিনি মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন । 

একবার মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবা শরিফে বক্তৃতা করছিলেন । পৌত্তলিকরা তার বক্তৃতায় ক্ষেপে গিয়ে তাকে নিষ্ঠুরভাবে মারপিট করে । ফলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন । এসময় আবুবকর সিদ্দিক রা . এগিয়ে এসে বললেন , আল্লাহ তোমাদের বিচার করবেন । তোমরা আল্লাহর নাম নেওয়ার অপরাধে একজন লোককে হত্যা করতে চাও !

Image


বইঃ আশারা মুবাশশারা : জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ সাহাবির জীবনকথা PDF Short Link
লেখক : মুফতি মুহাম্মাদ আসগর কাসেমি
প্রকাশনী : অর্পণ প্রকাশন
বিষয় : সাহাবীদের জীবনী
অনুবাদক : সিরাজুল ইসলাম
পৃষ্ঠা : 88, কভার : পেপার ব্যাক
ভাষা : বাংলা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ