ঈমান পরিচর্যা - লেখক : শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বিন আব্দুল মুহসিন বদর | Iman PPorichorja

ঈমান পরিচর্যা - pdf free download no available
লেখক : শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বিন আব্দুল মুহসিন বদর
প্রকাশনী : ওয়াফি পাবলিকেশন
বিষয় : ঈমান ও আকীদা
অনুবাদক : মাওলানা আতাউর রহমান, মাওলানা আবদুর রহমান বিন নুর
সম্পাদক : মাওলানা মাহমুদুল হক
পৃষ্ঠা : 144, কভার : পেপার ব্যাক, সংস্করণ : 1st edition 2022
ভাষা : বাংলা।
Image

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা......
‘আশ্চর্যের বিষয় এটা নয়, বহু মানুষ পরকাল ও তার শাস্তির ওপর ঈমান রাখে না। বরং আশ্চর্যের বিষয় হলো, একজন মুমিনের ঈমান ও ইয়াকীন দুটোই রয়েছে, কিন্তু এগুলো তার কোনো উপকারে আসছে না।’ঈমান নিয়ে বড়ই ভীতিকর কথা বলেছেন ইবনুল-জাওযী রহিমাহুল্লাহ। বিষয়টি বড়ই চিন্তার। কারণ, আমরা প্রায়ই দেখি, মনে ঈমান আছে দাবী করলেও সেই ঈমানের কোনো নাম ঘন্ধ নেই আমাদের ভিতর। 

আমল কমতে কমতে এমন দুরূহ অবস্থা হয়েছে যে, একটু অতিরিক্ত আমল করার আগ্রহটুকুও আর আসে নাফরজ ইবাদতগুলো হয়ে গেছে দায়সারা। কেন?ঈমানী দুর্বলতা। তবে ঈমান যেমন কমে, তেমনি এটি বাড়ানও যায়। কী করলে ঈমান বাড়ে আর কী করলে কমে—এসব নিয়েই লেখা ‘ঈমান পরিচর্যা’ বইটি। নির্লিপ্ত ঈমানকে চাঙ্গা করতে এবং ঘন ঘন দুর্বল হবার হাত থেকে রেহাই দিতে বইটি টনিকের মতো কাজ করবে ইনশাআল্লাহ্‌।

                 লেখকের ভূমিকা


সকল প্রশংসা ও স্তুতি আল্লাহ তাআলার জন্য। তাঁর পানেই চাই সাহায্য প্রার্থনা, ক্ষমা ভিক্ষা। তাঁর সকাশেই চাই আশ্রয়—কলুষিত হৃদয় হতে, কলঙ্কময় আমল থেকে। যাকে তিনি পথ দেখান সে কখনো পথ হারায় না; আর যাকে তিনি পথহারা করেন সে কখনো পথ পায় না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি একক ও লা-শারিক; আর মুহাম্মাদে আরাবী তাঁর পেয়ারা বান্দা ও প্রেরিত দূত। শান্তি ও রহমতের অফুরান বর্ষণ হোক তাঁর ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর।

ঈমান সবচেয়ে বড় দৌলত, ঈমান সবার আগে, সবকিছুর ঊর্ধ্বে। গুরুত্বের শৃঙ্গে, মর্যাদার তুঙ্গে। কেননা, দো-জাহানের সকল কল্যাণ নির্ভর করে নির্ভেজাল ঈমানের ওপর। এর উপকারিতা পর্যাপ্ত ও পরিব্যাপ্ত। এর ফল-ফলাদি সুস্বাদু ও সুমিষ্ট—রসে টসটসে, পরিপক্ক। প্রাচুর্যপূর্ণ চিরস্থায়ী সম্ভোগ। আরও কত যে ঢের কল্যাণ এতে নিহিত তার কোনো ইয়ত্তা নেই!

এ ঈমানের জন্যই অশ্বারোহী বাহিনী ছুটে চলে। প্রতিযোগী-দল পাল্লায় নামে। মুজাহিদ বাহিনী জীবন উৎসর্গ করে, পান করে শাহাদাতের অমিয় সুধা। কারণ, যে ব্যক্তি ঈমানের মতো মহাদৌলতের তৌফিক পেয়েছে সে সবকিছুর ওপর ঈমানকেই প্রাধান্য দেবে। দুনিয়ার সমূহ-সম্পদ দিয়ে হলেও তা সে রক্ষা করবে। জীবন দেওয়ার ডাকে ‘লাব্বায়িক’ বলতে কুণ্ঠাবোধ করবে না।

মুসলিম উম্মাহর অগ্রপথিকগণ এমনই ছিলেন। তারা ঈমান-বৃক্ষের গোড়ায় সদা বারিসিঞ্চন করেছেন—বুকের তপ্ত রক্ত দিয়ে হলেও তা সিক্ত রেখেছেন। আবার কখনো পরস্পর বসে কোরআন ও হাদীস নিয়ে গবেষণা করেছেন, আলোচনা পর্যালোচনা করেছেন। একে অপরের খবর নিয়েছেন, যাচাই করেছেন—ঈমান


শক্তিশালী হয়েছে, না-কি দুর্বলই রয়ে গেছে। কখনো-বা যিকিরের মজলিস কায়েম করেছেন। ঈমানকে নিয়ে তাদের কর্মশালার ফিরিস্তি অনেক বড়। নমুনাস্বরূপ কিছু তুলে ধরা হলো :

১. হযরত উমার রা. নিজ সাথিদের বলতেন, “এসো, আমরা ঈমান তাজা করি।'

২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলতেন, 'চলো আমরা ঈমান সতেজ করি।” তিনি দুআ করতেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট ঈমান-একীন ও জ্ঞানের সমৃদ্ধি চাই।'

৩. হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. বলতেন, 'চলো, আমরা কিছুক্ষণ বসে ঈমানী আলোচনা করি।'

৪. হযরত আব্দুল্লাহ বিন রওয়াহা রা. সঙ্গীদের হাত ধরে বলতেন, ‘চলো আমরা আল্লাহকে স্মরণ করি। তাঁর বন্দেগী করি। তাহলে ঈমান তাজা হবে। শুধু তা-ই না, সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে, তিনিও আমাদের স্মরণ করবেন। আমাদের নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করবেন। শেষে ক্ষমার ঘোষণা দেবেন।'

৫. হযরত আবু দারদা রা. বলতেন, ‘প্রকৃত জ্ঞানী তো সে-ই, যে নিজের জ্ঞানের হিসেব রাখে—তা বাড়ল না কমল। আর সে সদা সতর্ক থাকে—শয়তান কোন দিক থেকে তার ঈমান ছোঁ মেরে নিয়ে যায় কি না।”

৬. হযরত ওমায়ের ইবনে হাবীব আল খত্বমী রহ. বলেন, 'ঈমানের জোয়ার-ভাটা আছে।' জিজ্ঞেস করা হলো, “আচ্ছা তা বোঝার উপায় কী?’ শুধালেন, “আমরা আল্লাহ তাআলার যিকির করি, তাসবীহ পড়ি, শোকর করি—এতে ঈমানের জোয়ার আসে। পক্ষান্তরে যখন গাফেল হয়ে যাই, সময় নষ্ট করি, তাঁকে ভুলে যাই, তখন ঈমানের সাগরে ভাটা আসে।'

৭. হযরত আলক্বামা ইবনে কাইস আন-নাখয়ী রহ. একজন প্রথম সারির তাবেয়ী ছিলেন। তিনি সঙ্গীদের বলতেন, 'আমাদের সাথে থাকো, আমরা ঈমানকে সমৃদ্ধ করব।'

৮. হযরত আব্দুর রহমান বিন আমর আওযায়ীকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘ঈমান কি বাড়ে?' তিনি বললেন, 'হ্যাঁ, ঈমান বাড়তে বাড়তে পাহাড়সম হয়ে যায়।' পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, “ঈমান কি কমে?’ শুধালেন : 'হ্যাঁ, কমতে কমতে একসময় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।

৯. হযরত ইমামুল মুহাদ্দিসীন আহমদ ইবনে হাম্বল রহ.-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘ঈমানের হ্রাস-বৃদ্ধি কীভাবে হয়?’ জবাব দিলেন, ‘ঈমান বাড়ে, ঊর্ধ্বগতিসম্পন্ন হয়; সপ্তাকাশ পেরিয়ে আরশ পানে ছুটে চলে। আবার ঈমান কমে, অধোমুখী হয়; সপ্তভূমি ভেদ করে চলে যায় নরকের অতল গহ্বরে।

তিনি আরও বলেন, ‘ঈমান হলো মুখের কথন ও বচন আর তার যথাযথ বাস্তবায়ন। ঈমান সবল হয় আবার দুর্বলও হয়। তুমি সৎকাজ করবে তো ঈমান বেড়ে যাবে, আর সৎকাজ করবে না তো ঈমান কমে যাবে।

এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য ও মন্তব্য অগণিত। তাদের সুরত ও সীরাত অধ্যয়ন করলে, তাদের জীবন ও লিখন দেখলে ঈমানের মহত্ত্ব ও গুরুত্ব বুঝে আসে। বস্তুত এ মহামনীষীরাই সত্যিকারার্থে ঈমান নামক মহাদৌলত চিনতে পেরেছিলেন। তারা বুঝতে পেরেছিলেন কীভাবে তা মজবুত করতে হয় আর কেন তা নড়বড়ে হয়ে যায়। এসব ব্যাপারে তাদের ছিল সম্যক অভিজ্ঞতা। আর করণীয় কাজ করতে ও বর্জনীয় কাজ ছাড়তে তাদের ছিল যথেষ্ট যোগ্যতা। তাই তারা ঈমান বাড়াতে মেহনত করেছেন, প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করেছেন। আর কোশেশ করেছেন ঈমানকে যা দুর্বল করে তা বর্জন করতে। তাই তো তারা হয়েছেন স্মরণীয়-বরণীয়, মাননীয় ও সম্মানীয়।

তাই ঈমানের পরিচয় ও হ্রাস-বৃদ্ধির কারণসমূহ জানার মধ্যে নিহিত আছে বিস্তর ফায়দা। শুধু ফায়দাই নয়, বরং এসব জানা বান্দার জন্য অত্যাবশ্যক। কারণ, ঈমানই তো বান্দার মূল পুঁজি। এতেই তো তার পূর্ণতা ও সফলতা। এতেই হবে তার সম্মান বৃদ্ধি ও কল্যাণ সিদ্ধি—দুনিয়াতেও, আখেরাতেও।

প্রতিটি সচেতন মুসলিমেরই উক্ত কারণসমূহ জানতে আত্মনিয়োগ করা উচিত। প্রাণপণ চেষ্টা ও গবেষণা করা উচিত জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি ক্ষেত্রে। কারণ, তবেই তার ঈমান ও বিশ্বাসে সমৃদ্ধি আসবে। সাথে সাথে যে কাজে ঈমান

হ্রাস পায় তা থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তবেই সে রক্ষা পাবে অশুভ পরিণতি থেকে, কষ্টদায়ক পরিণাম থেকে। এমনটা কারও তৌফিক হলে সে মহাকল্যাণ অর্জন করতে পেরেছে। আল্লামা ইবনে সা'দী রহ. বলেন, ‘সুতরাং তৌফিকপ্রাপ্ত মুমিন বান্দা তো সে-ই, যে হর-হামেশা দুটি বিষয় কোশেশ করে :

প্রথমত : সে ঈমান ও তার শাখাসমূহ যাচাই-বাছাই করে এবং নিজ জীবনে তা বাস্তবায়ন করে।

দ্বিতীয়ত : সে ভেতর-বাইরের নষ্টামি ও দুষ্টুমি বিদূরিত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। কেননা, তা তার দেহমন করে আহত ক্ষতবিক্ষত। ঈমান-অমল করে রোগাক্রান্ত ও ভারাক্রান্ত। আর খাটো ও ছোট করে দেয় তার শাখা-প্রশাখাসমূহ। খাঁটি মুমিন বান্দা হঠাৎ করণীয় কাজে ভুল করে ফেলতে পারে, কিংবা বর্জনীয় কাজে ত্রুটি করে বসতে পারে—শয়তানের ধোঁকায় পড়ে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে নফসের চাহিদা পূরণে—কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সে অনুতপ্ত হয়ে খাঁটি মনে তওবা করে নেয়।'

প্রিয় পাঠক, বক্ষ্যমাণ পুস্তিকায় উল্লেখ থাকছে ঈমান হ্রাস-বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ কারণসমূহ এবং সেগুলোর উপযুক্ত বিচার-বিশ্লেষণ। এটি মূলত আমার রচিত কিতাব avi alatayi pay aihadig chees; -এর নাতিদীর্ঘ একটি পরিচ্ছেদ। কিছু সুহৃদ বন্ধুবরের পক্ষ থেকে জোরালো আবেদন ছিল, যেন আলোচনাটুকু স্বতন্ত্র পুস্তিকার রূপ দিই—যাতে মানুষের জন্য তা ব্যাপক কল্যাণময় হয়। সে লক্ষ্যেই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া যে, তাঁর করুণা ও তাওফীকে তা সমাপ্ত করতে পেরেছি। তিনি যেন নিয়তের পরিশুদ্ধি দান করেন এবং তাঁর সন্তুষ্টি দিয়ে আমাদের ধন্য করেন।

                   ঈমান পরিচর্যা


আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে কত কিছুই না আকর্ষণীয় বানিয়েছেন! অতঃপর বাতলে দিয়েছেন সেগুলো অর্জনের পদ্ধতি ও পন্থা। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় কাঙ্ক্ষিত, সর্বাধিক ঈপ্সিত বিষয় হচ্ছে ‘ঈমান'। আর তা বলিষ্ঠ ও শক্তিশালী করার জন্য রেখেছেন বহু আমল ও উপকরণ। আল্লাহ তায়ালা সেগুলো জানিয়ে দিয়েছেন কোরআনে; রাসূল -ও সেগুলো শুনিয়েছেন স্বীয় জবানে। তন্মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো এ পুস্তিকায় আলোচনা করা হবে, ইনশাআল্লাহ।


                    ইলমে নাফে’ শিক্ষা করা


ঈমান বাড়াতে হলে সবচেয়ে কার্যকর ও শুদ্ধিকর পদক্ষেপ হলো, উপকারী বিদ্যা বা শরীয়তের জ্ঞান অর্জন করা—যা কোরআন-সুন্নাহ থেকে উৎসারিত।

আল্লামা ইবনে রজব রহ. বলেন, ‘উপকারী বিদ্যা হলো—কোরআন-হাদীসের মূল বক্তব্য মুখস্থ ও আত্মস্থ করে সেগুলোর মর্ম উপলব্ধি করা। এ ক্ষেত্রে সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ীদের মত ও পথই গ্রহণযোগ্য—হোক সে মত হালাল-বিষয়ক বা হারাম-বিষয়ক, কিংবা আত্মার পরিমার্জন সম্পর্কে। এ লক্ষ্যে দুটি কাজ লক্ষণীয়— প্রথম পর্যায়ে সবল ও দুর্বল হাদীসগুলোর মাঝে পার্থক্য নিশ্চিতভাবে জানা। দ্বিতীয় পর্যায়ে সেগুলোর অর্থ ও উদ্দেশ্য বুঝতে চেষ্টা করা। যে ব্যক্তি হাদীসের জ্ঞান আহরণে এবং উপকারী বিদ্যা অন্বেষণে ব্যস্ত, তার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।'

ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, ‘উপকারী বিদ্যা বলতে বোঝায় শরয়ী বিদ্যা—যা সমৃদ্ধ করে জ্ঞানভান্ডার, পরিশুদ্ধ করে ঈমান-আকীদা, পরিপাটি করে ইবাদাত, লেনদেন ও আচার-আচরণ। তার অর্জনকারীকে ধন্য করে—আল্লাহ তাআলার মারেফাতের অমিয় সুধা পান করিয়ে, তাঁর সত্তা ও গুণাবলির সাথে পরিচয় করিয়ে। আর তা শিক্ষা দেয় তাঁর নির্দেশ যথাযথ পালন করতে এবং তাঁর পবিত্রতা ঘোষণায় সদা ব্রতী থাকতে। আর এ সবকিছুর মূল ভিত হচ্ছে তাফসীর, হাদীস ও ফিকাহশাস্ত্র।

এ ইলম যে অর্জন করে তার দিলে ঈমান ঘনীভূত হয়ে বিপরীত চাহিদাগুলো দূরীভূত হয়। কোরাআন-সুন্নাহে নজর বুলালে এ কথার যথার্থতা বুঝে আসে :

১. ফাতহুল বারী : ১/১৪১।


شهد الله أنه لا إله إلا هو والملائكة وأولو العلم قائما بالقسط لا إله إلا هو العزيز الحكيم ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ফেরেশতাগণ এবং

ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনি

পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।' (সূরা আলে ইমরান : ১৮)

لكن الراسخون في العلم منهم والمؤمنون يؤمنون بما أنزل إليك وما أنزل من قبلك والمقيمين الصلاة والمؤتون الزكاة والمؤمنون بالله واليوم الآخر أوليك سنوتيهم أجرا عظيما

তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা ও মুমিনরা আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতেও ঈমান আনে। আর যারা সালাত কায়েমকারী, যাকাত দানকারী এবং আল্লাহ ও কেয়ামতে আস্থাশীল। বস্তুত এমন লোকদের আমি দান করব মহাপুণ্য।' (সূরা নিসা : ১৬২)

قل أمنوا به أو لا تؤمنوا إن الذين أوتوا العلم من قبله إذا يتلى عليهم يخرون للأذقان سجدا ، ويقولون سبحان ربنا إن كان وعد ربنا لمفعولًا، ويخرون للأذقان يبكون ويزيدهم خشوعا

'বলুন, তোমরা কোরআন মান্য করো অথবা অমান্য করো—যারা পূর্ব থেকে ইলম প্রাপ্ত হয়েছে, যখন তাদের কাছে এর তিলাওয়াত করা হয়, তখন তারা নতমস্তকে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং বলে, আমাদের পালনকর্তা পবিত্র, মহান। নিঃসন্দেহে আমাদের পালনকর্তার ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে। তারা ক্রন্দন করতে করতে নতমস্তকে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়ভাব আরও বৃদ্ধি পায়।' (সূরা ইসরা : ১০৭-১০৯)

وليعلم الذين أوتوا العلم أنه الحق من ربك فيؤمنوا به فتخبت له قلوبهم وإن الله لهاد الذين امنوا إلى صراط

এবং এ কারণেও যে, যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে, তারা যেন জানে যে এটা আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে সত্য; অতঃপর তারা যেন এতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর যেন এর প্রতি বিজয়ী হয়। আল্লাহই বিশ্বাস স্থাপনকারীকে সরল পথ প্রদর্শন করেন।' (সূরা হাজ্ব : ৫৪)

ويرى الذين أوتوا العلم الذي أنزل إليك من ربك هو الحق ويهدي إلى صراط العزيز الحميد

যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত, তারা আপনার পালনকর্তার নিকট থেকে অবতীর্ণ কোরআনকে সত্য জ্ঞান করে এবং এটা মানুষকে পরাক্রমশালী, প্রশংসাই আল্লাহর পথ প্রদর্শন করে। (সূরা সাবা : ৬)

إنما يخشى الله من عباده العلماء إن الله عزيز غفور

‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী

ক্ষমাশীল।' (সূরা ফাতির : ২৮) يرفع الله الذين أمنوا منكم والذين أوتوا العلم درجات والله بما تعملون خبير

‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উঁচু করে দেবেন। আল্লাহ খবর রাখেন, যা কিছু তোমরা করো।' (সূরা মুজাদালাহ : ১১)

বুখারী ও মুসলিমে হযরত মুয়াবিয়া রাযি.-এর সূত্রে নবীজী থেকে বর্ণিত, ‘আল্লাহ তাআলা যাকে প্রভূত কল্যাণ দিতে চান তাকে দীনের সঠিক বুঝ দিয়ে দেন। ১

মুসনাদে আহমাদে আবু দারদা রাযি.-এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের পথসমূহের কোনো একটিতে উঠিয়ে নেন। ফেরেশতারা জ্ঞান অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেয়। আসমান ও যমীনের মাখলুকাত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি পানির গভীরে বসবাসকারী মাছও! সাধারণ ইবাদতগুজার ব্যক্তির ওপর আলেমের

১. বুখারী : ১/১৬৪, ৬/২১৭, ১২/২৯৩; ফাতহুল বারী; মুসলিম ৩/১৫২৪।


ফজিলত হল তারকারাজির ওপর পূর্ণিমার চাঁদের যেমন ফজিলত। আলেমরা নবীদের ওয়ারিশ। নবীগণ উত্তরাধিকার সূত্রে কোনো দিনার বা দিরহাম রেখে যান না; তারা রেখে যান শুধু ইলম। সুতরাং যে ইলম অর্জন করতে পেরেছে সে ভরপুর কামিয়াবি অর্জন করেছে। ১

তিরমিযী ও অন্যান্য কিতাবে আবু উমামা রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘আবেদের ওপর আলেমের মর্যাদা ঠিক তেমন, যেমন তোমাদের সাধারণ ব্যক্তির ওপর আমার মর্যাদা। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা, ফেরেশতাকুল, আকাশমণ্ডলী ও ভূপৃষ্ঠের অধিবাসীগণ, এমনকি পানির মৎস ও গর্ভের পিপিলিকা পর্যন্ত ইলম শিক্ষাদানকারীর জন্য কল্যাণের দুআ করতে থাকে। গর্

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসের দ্ব্যর্থহীন ভাষ্য থেকে অনুমেয়, ঐশী জ্ঞানের গুরুত্ব ও সম্মান কত বেশি, তার ফজিলত ও অবস্থান কত ঊর্ধ্বে। এর দ্বারা উভয় জগতের কল্যাণ ও মর্যাদা অর্জন হয়, অন্তরে সৃষ্টি হয় বিনয় ও আনুগত্য। বস্তুত বিদ্বান ব্যক্তি আপন মা'বুদ ও তার পেয়ারা হাবিবকে যথাযথভাবে চিনতে পারেন। শরীয়াহ্ এবং তার গণ্ডি কতটুকু তা সঠিকভাবে নিরূপণ করতে পারেন। বুঝতে পারেন, আল্লাহ কী পছন্দ করেন, কিসে তার সন্তুষ্টি। এবং কী অপছন্দ করেন, কিসে তার অসন্তুষ্টি। ফলে তিনি ইলম অনুযায়ী আমল করতে পারেন—বর্জনীয় কাজ ছাড়তে পারেন, করণীয় কাজ করতে পারেন। তবে এ সবকিছু তখনই সম্ভব যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে তাওফীক দেওয়া হয়; নতুবা তার ইলম তার জন্য ডেকে আনে ধ্বংস।

আল্লামা আজুররী রহ. তার আখলাকুল উলামা কিতাবের ভূমিকায় উল্লেখ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা সুমহান মহিমান্বিত, পূত-পবিত্র নামসমূহ তারই জন্যে। তিনি আপন সৃষ্টি থেকে যাদের চান ঈমানের দৌলত দান করেন। তাদের থেকে আবার বাছাই করে একদলকে শ্রেষ্ঠত্বের সিংহাসনে আসীন করেন। বিশেষ অনুগ্রহে তাদের কৃতার্থ করেন; করুণার বারি ঢেলে শেখান ঐশীজ্ঞান। হৃদয়ের রুদ্ধ দুয়ার খুলে কিতাব ও হিকমাহ্ ভরে দেন। এটা আল্লাহর সর্বযুগীয় নীতি। ইলম দিয়ে তাদের সম্মানিত করেন এবং সহনশীলতা দিয়ে সুসজ্জিত করেন।

১. মুসনাদে আহমাদ : ৫/১৯৬; আবু দাউদ : ৩/৩১৭; তিরমিযি : ৫/৪৯; ইবনে মাজাহ : ১/৮১; দারামী: ১/৯৮। ২. তিরমিযি : ৫/৫০; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, মুনযিরী : ১/১০১; ইমাম তিরমিযি রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহা


হক-বাতিল, হালাল-হারাম, কল্যাণ-অকল্যাণ, ভালো-মন্দ নির্ণয়ের মাপকাঠি তারাই। তাদের সম্মান ও মর্যাদা সীমাহীন। তারা নবীদের ওয়ারিশ এবং ওলীদের নয়নমণি। সাগরতলের মৎস তাদের জন্য ক্ষমাপ্রর্থনা করে। ফেরেশতারা সম্মানের আতিশয্যে তাদের পদতলে ডানা মেলে ধরে। কেয়ামতের দিন নবীদের পর তারাই সুপারিশ করার মর্যাদা অর্জন করবে।

তাদের সংস্রবে হিকমাহ্ অর্জন হয়, জীবনে ফিরে আসে কর্মচাঞ্চল্য। তাদের শ্রেষ্ঠত্ব সাধারণ ইবাদতগুজার ও দুনিয়া-বৈরাগীদের থেকে বহু ঊর্ধ্বে। তাদের বেঁচে থাকা সৃষ্টিকুলের জন্য সৌভাগ্য, তাদের মৃত্যু বিশ্ববাসীর জন্য দুর্ভাগ্য। তারা চেতনাহীনে চেতনা জোগায়, জ্ঞানহীনে জ্ঞান বিলায়। তাদের জীবন হয় সাদামাটা পুণ্যময়। তাদের দীক্ষার জাদু-আকর্ষণে ছুটে আসে অনুসারীরা, তাদের বয়ানের মধু-বর্ষণে পাপ ছেড়ে দেয় পাপাচারীরা। তাদের ঐশীজ্ঞান-বিনে সৃষ্টিকুল নিতান্তই অসহায়... তারাই তো মানুষের জন্য প্রদীপ-শিখা, তাদের দ্বারাই মেলে পথের দিশা। তারা জাতির অভিজ্ঞ রাহবার, প্রকৃত জ্ঞানের অথৈ পাথার। জগতে তাদের দৃষ্টান্ত রাতের আঁধারে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায়—যা দেখে কাফেলা পথ চলে, পথহারা পথিক ফিরে পায় দিশা।১৷

অতঃপর তিনি কোরআন-সুন্নাহর বর্ণনা ও মনীষীদের বাণী থেকে উপরোক্ত বিষয়ে প্রমাণ পেশ করেছেন।

ইলম অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ফোকাস হয় নিম্নের আয়াতে, يرفع الله الذين أمنوا منكم والذين أوتوا العلم درجات والله بما تعملون خبير

‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উঁচু করেন।

(সূরা মুজাদালাহ : ১১)

এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, সাধারণ মুমিনের চেয়ে আলেমের মর্যাদা আল্লাহ বৃদ্ধি করে দেন। মর্যাদা বৃদ্ধি শ্রেষ্ঠত্বের দলিল। কেননা উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাদের ছাওয়াব বড়িয়ে দেওয়া। মূলত অধিক ছাওয়াবের কারনেই তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। এ মর্যাদা বৃদ্ধির ফলে দুনিয়াবাসীর অন্তরে তাদের প্রতি মহব্বত সৃষ্টি করা হয়। চতুর্দিকে

১. আখলাকুল উলামা: পৃ. ১৩-১৪।


সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। আর আখেরাতে তারা পাবে ‘মহা’ পুরস্কার।

আল্লাহ বলেন,

وقل رب زدني علما

আপনি প্রার্থনায় বলুন : হে আমার রব, আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন।” (ত্বহা : ১১৪)

এ আয়াত ইলমের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের পরিচায়ক। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ পয়গম্বরকে ইলম ছাড়া অন্য কিছু বৃদ্ধির জন্য দুআ করতে আদেশ করেননি। কেননা, এর ওপরই ঈমানের সমৃদ্ধি ও দীনের দৃঢ়তা নির্ভরশীল। আল্লাহ তাআলা বলেন,

لكن الراسخون في العلم منهم والمؤمنون يؤمنون بما أنزل إليك وما أنزل من قبلك والمقيمين الصلاة والمؤتون الزكاة والمؤمنون بالله واليوم الأخر أوليك م أجرا عظيمًا ستؤتيهم أ

তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা ও মুমিনরা আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতেও ঈমান আনে।' (সূরা নিসা : ১৬২)

شهد الله أنه لا إله إلا هو والملائكة وأولو العلم قائما بالقسط لا إله إلا هو العزيز الحكيم

'আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ফেরেশতাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।' (সূরা ইমরান, ৩:১৮)

শেষোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ. মিফতাহু দারিস-সাআদাত গ্রন্থে বহু পন্থায় ইলমের ফজিলত তুলে ধরেছেন—যার গণনা দেড় শ ছাড়িয়ে যাবে! ২

১. ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/১৪১।

২. মিফতাহ দারিস সাআদাহ পৃ. ৫২ পৃষ্ঠা থেকে শুরু।


জ্ঞান ও জ্ঞানীর সম্মান ও মর্যাদায় নবীজী ** যেন ফুলঝুড়ি ছড়িয়েছেন। তবে নিম্নোক্ত বাণীটির জুড়ি নেই,

‘আল্লাহ যার প্রভূত কল্যাণের ইচ্ছা করেন তাকেই দীনের গভীর জ্ঞান দান করেন।” কারণ, উক্ত হাদীসে। ও (খাইরান) শব্দটির অর্থ ‘কল্যাণ’। আর আরবীতে নিয়ম হলো, কোনো শব্দ নির্দিষ্টবোধক উপসর্গ থেকে মুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হলে অর্থের মাঝে ব্যাপকতা আসে। এ অনুযায়ী ওপরের হাদীসের অর্থ দাঁড়ায়, ‘কল্যাণ-এর যত প্রকার আছে আল্লাহ তার সব তাকেই দিয়ে দিতে চান যাকে তৌফিক দিয়েছেন দীনের সঠিক জ্ঞান ও বুঝ অর্জনের। সাথে সাথে এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয়, দীনের জ্ঞান হতে বঞ্চিত ব্যক্তি সমূহ-কল্যাণ হতে বঞ্চিত।

আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ. একই বক্তব্য পেশ করে বলেন, ‘তবে এ জ্ঞানের ক্ষেত্রে নিছক অর্জনটাই উদ্দেশ্য নয়; বরং দ্দেশ্য হচ্ছে, যা মানুষকে অনুপ্রাণিত করে বাস্তবে রূপায়ণের প্রতি। কারণ, শুধু জ্ঞান শিখে নিলেই সকল কল্যাণ অর্জিত হয়ে যায় না; বরং কল্যাণ ও শান্তি নিকেতনের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখা হয় মাত্র। আর কাঙ্ক্ষিত কল্যাণ অর্জন করতে হলে একে একে আমলের সিঁড়িগুলো মাড়িয়ে বহু ধাপ অতিক্রম করে যেতে হয়। ১

ইবনে হাজার রহ. বলেন, হাদীস থেকে বোঝা যায়, যে ব্যক্তি দীনের জ্ঞান অর্জন করবে না, অর্থাৎ ইসলামের মৌলিক ও শাখাগত আহকাম শিখবে না, সে সমূহ কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে। কেননা, যে জ্ঞান অন্বেষণ করে না সে তো ফকীহ নয়, জ্ঞানী তো নয়ই। তাহলে কীভাবে সে হাদীসে উল্লেখিত ‘প্রভূত কল্যাণ’-এর আশা করতে পারে? এখান থেকেই প্রমাণিত হয়, আলেমদের মর্যাদা সকল মানুষের ঊর্ধ্বে। আর ঐশীজ্ঞানের মর্যাদা সকল জ্ঞানের ওপরে। ২

প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য হচ্ছে, এক আল্লাহর ইবাদত করা। কাঙ্ক্ষিত ও মনোনীত পন্থায় শুধু একত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত করা। আর সেটা ঐশীজ্ঞান ছাড়া সম্ভব নয়। এ কারণেই এ জ্ঞান এত মর্যাদাপূর্ণ।

১. মিফতাহ পারিস সাআদাহ : পৃ.৬৫; আল-ফাতওয়া : ২৮/৮০।

২. ফাতহুল বারী : ১/১৬৫৷

ইলমের উদ্দেশ্য

নিছক ইলম কখনো উদ্দেশ্য নয়; বরং, ইলম অর্জনের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমল করা এবং তা দ্বারা আল্লাহর দাসত্ব প্রদর্শন করা। তাই শরীয়তে কোনো জ্ঞান কাঙ্ক্ষিত হলে তা ওই জ্ঞানই হবে যা দ্বারা তাঁর দাসত্বের চর্চা হয়। ইলম অর্জনের নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যগুলো সেদিকেই ইঙ্গিত করছে:

• এক: (আল্লাহর পরিচয় লাভ)

শরীয়ত প্রণয়ন ও নবী আগমনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর সাথে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং তাদেরকে ইবাদত বা দাসত্বের শিক্ষা দেওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন,

يا أيها الناس اعبدوا ربكم الذي خلقكم

'হে লোকসকল, তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করো।' (সূরা বাকারাহ : ২১)

الر كتاب أحكمت أياته ثم فصلت من لدن حكيم خبير، ألا تعبدوا إلا الله

‘আলিফ-লাম-রা, এই কিতাব প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞেয়ের নিকট থেকে; এর আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট, সুবিন্যস্ত ও পরে বিশদভাবে বিবৃত যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করবে না।' (সূরা হুদ : ১-২)

وما أرسلنا من قبلك من رسول إلا نوحي إليه أنه لا إله إلا أنا فاعبدون

'আমি আপনার পূর্বে এমন কোনো রাসূল প্রেরণ করিনি, যার প্রতি এই ওহী দেওয়া হয়নি যে, 'আমি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত করো।' (সূরা আম্বিয়া : ২৫)

আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন। We Respect Every Author Hardwork - boipaw™

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ