বই কাশঘড় কতো না অশ্রুজল। লেখক-মুহাম্মাদ এনামুল হোসাইন

বই কাশঘড় কতো না অশ্রুজল।
লেখক-মুহাম্মাদ এনামুল হোসাইন। 
সম্পাদক-আসিফ আদনান।
প্রকাশনি-ইলমহাউস পাবলিকেশন।
পৃষ্ঠা সংখ্যা-২৬৪
নির্ধারিত মূল্য-২৬০ টাকা।

🌺বইটি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা:

প্রফেসর মা রং, ড. হু লিয়ানহি এবং হু আংগাং এর মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী শি জিনপিং এর অনুগত পূর্ব তুর্কিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি 'চেন চোয়াংগোয়া' কতৃক ২ কোটি ৪০ লাখ মুসলিম উইঘুর  উপর নির্যাতনের একটি প্রতিচ্ছবি এই বইটি। আমরা কুকুর বিড়ালের সাথে যেমন আচরণ করি, তেমন আচরণও জোটে না এই উইঘুর মুসলিম ভাইদের কপালে। পানির মতো টাকা খরচ করে খুব গোছানোভাবে গোটা বিশ্বের কাছ থেকে একবিংশ শতাব্দীর এই জেনোসাইডের খবর গোপন রেখেছে চীনা সরকার। কিন্তু শ্রদ্বেয় লেখক ও সম্পাদক মহোদয় প্রায় এক বছর ধরে একের পর এক প্রতিবেদন, গবেষণা, সাক্ষাৎকার পড়ার পর পাঠকদের কাছে সে গোপন তথ্যাবলী খুব সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন।

🌺বইটি যাদের নিয়ে লেখা:

১৭ লক্ষ বর্গকিলোমিটারের পূর্ব তুর্কিস্তান গণচীনের বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি প্রদেশ। ২৪ মিলিয়ন (২ কোটি ৪০ লাখ) মানুষের বসবাস এখানে। শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে এই সুবিশাল ছবির মতো সুন্দর এলাকায় বসবাস করে আসছে মুসলিম উইঘুর, কাযাখ, মঙ্গোল, কিরগিয ইত্যাদি যাযাবর জাতি। 
এই শান্তশিষ্ট মুসলমানদের প্রায় ৩০ লক্ষ উইঘুরকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। চরম নির্যাতন চালানো হচ্ছে তাদের ওপর। ১৫ বছরের পুরোনো পোকাধরা, নষ্ট হয়ে যাওয়া চালের ভাত খেতে বাধ্য করা হচ্ছে তাঁদের। 
দলকান ইসা ঠিকই বলেছিলেন: সতেরো লক্ষ বর্গকিলোমিটারের পূর্ব তুর্কিস্তান যেনো আজ পুরোটাই এক কারাগারে পরিণত হয়েছে।

🌺বইটিতে যা আছে:

লক্ষ লক্ষ মজলুম মা, বোনের রক্ত-অশ্রুর গল্প ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সম্পূর্ণ বই জুড়ে। গুম, খুন, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প, নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ যাদের নিত্যসঙ্গি। মূলত একটি জাতিসত্তার শেকড় উপড়ে ফেলার চিত্র দেখতে পাবেন বইটিতে। যেখানে জীবন্ত শরীর থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ৩৫ বছরের নিচের নারী-পুরুষদের-নির্বিচারে ধর্ষণ করা হচ্ছে। যাদের ৫ লাখ শিশুকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অ্যানেস্থেশিয়া ছাড়া নারীদের গর্ভপাত করা হচ্ছে। যেখানে বন্দীরা অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আকুল আবেদন জানায়-

'আমাকে মেরে ফেলো, প্লীজ মেরে ফেলো!'

জানি না উইঘুরদের শূন্য, নীরব  রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার আর ঘরগুলো আবারও কখনো  উইঘুবাসির পাদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে কিনা।
তবে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, চীনের বোর্ডিং স্কুলে বন্দী ৫ লাখ উইঘুর শিশুর কান্নার জন্য, ২০০ মানবসন্তানের সম্মুখে ধর্ষিতা বোনের জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। 
আমি দায়ী। আপনি দায়ী। আমরা সবাই দায়ী। আমরা সবাই দোষী।

কারণ, আমরা নীরব!

🌺বইটি পড়ার পর যা মনে হলো:

বইটি পড়তে গিয়ে বারবার অশ্রুশিক্ত নয়নে ঘৃণা, ক্রোধে অভিযোগের আঙুল তুলেছি নিজের দিকে, আর শরীরের সমস্ত অনু-পরমানু, মস্তিষ্কের প্রত্যেকটি কোষ থেকে ঘৃণা উথলে উঠেছে এই চীনাদের জন্য...।

🌺পাঠক অনুভূতি:

এইসব আঁধারের গল্পগুলো শুনলে একটু হয়তো মন খারাপ হয় আমাদের, কিন্তু পরক্ষণেই সেই গ্লানিবোধের জায়গাটুকু দখল হয়ে যায় ভবিষ্যতের সুখচিন্তায়। ডুবে যায় ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়ার চোরাবালিতে_আমরা ভুলে গেছি মুসলিম উম্মাহর অংশ হিসেবে, মানুষ হিসেবে আমাদের কি দায়িত্য ছিল।

আমরা ভুলে যাই; কিন্তু সবাই ভুলে যায় না।

🌺সমালোচনা:

বইটি সম্পর্কে সমালোচনা করার মতো তেমন কিছু পাঠকের দৃষ্টিগোচর হয়নি। তবে প্রথম সংস্করণ হওয়ায় বেশ কয়েকটি বানানে সমস্যা হয়েছে। পরবর্তী সংস্করণে তা শুধরে যাবে ইনশাআল্লাহ। 

🌺সারকথা:

বিশ্ব মোড়লদের চোখের সামনে আমাদের বোনদের কাপড় কেটে নিচ্ছে চীনা কুকুররা। নামায, রোযা, হজ্জ সব নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ঘোষণা দিয়ে কুরআন বিকৃত করছে। গোরস্থান ধুলোয় পরিণত করছে। মসজিদগুলোকে পার্টি হাউস বানাচ্ছে। যেই মিনার থেকে তাওহীদের আহ্বান ভেসে আসত সেখানে কমিউনিস্টের নোংরা পতাকা উড়ছে।
এত কিছুর পরেও, এত ধ্বংস, এত মৃত্যু, এত রক্ত, এত অশ্রু দেখেও আমরা চুপ করে আছি। কিছুই বলছি না!
কারণ, ঘুমিয়ে গেছি আমরা, ঘুমিয়ে পড়েছে মুসলিম উম্মাহ। এ এক মরণ ঘুম! 
বই কাশঘড় কতো না অশ্রুজল। লেখক-মুহাম্মাদ এনামুল হোসাইন।  সম্পাদক-আসিফ আদনান। প্রকাশনি-ইলমহাউস পাবলিকেশন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ