নাসীহাহ : আপনার খিদমতে একগুচ্ছ উপদেশ - লেখক : শায়খ মোখতার আহমাদ | Nasihah - Apnar Khidmote Akguccho Upodesh By Shaykh Mokhtar Ahmad

নাসীহাহ : আপনার খিদমতে একগুচ্ছ উপদেশ (pdf download no available) 
লেখক : শায়খ মোখতার আহমাদ
প্রকাশনী : সন্দীপন প্রকাশন
বিষয় : আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা
পৃষ্ঠা : 184, কভার : পেপার ব্যাক
ভাষা : বাংলা

আজকের এই যুগে মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা ‘ডিপ্রেশন’। ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকা অনেকে জানেনই না তার এই ডিপ্রেশনের কারণ!

ফলাফল?

সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে দৌড়ানো, তার কাছে মনে

র অবস্থা শেয়ার করা, ভিজিট দেওয়া, ট্রিটমেন্ট নেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।

অথচ এই সমস্যার গোড়ায় আছে দুনিয়াসক্তি; ইসলামের ছায়ায় আসতে না পারার ব্যর্থতা। মাথার ব্যথায় পায়ে মলম লাগালে যেমন কাজ হয় না, তেমনি ইসলামের প্রতি অনুগত না হয়ে অন্যকিছুর পেছলে ছুটলেও ডিপ্রেশন সমস্যার সমাধান অধরাই থেকে যায়।

মানসিক অশান্তি ও অস্থিরতার মৌলিক একটি ঔষধ হলো—নাসীহাহ বা দ্বীনি পরামর্শ। টগবগ করে ফুটতে থাকা দুনিয়াসক্ত মগজকে শান্ত করতে দ্বীনি নাসীহাহ-র চেয়ে উত্তম কোনো উপায় নেই। দ্বীনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক একটি নাসীহাহ-সংকলন হলো আপনার হাতের এ বইটি। শাইখ মোখতার আহমাদ (হাফিযাহুল্লাহ) এখানে পরম যত্নে কুরআন-সুন্নাহ-সীরাহ থেকে খুঁজে এনেছেন বিষয়ভিত্তিক কিছু প্রেরণাময় কথামালা।

দ্বীনে ফিরেছেন কিংবা এখনো ফেরেননি—এমন যে কারো জন্যেই ‘নাসীহাহ’ হতে পারে ডিপ্রেশনের প্রেসক্রিপশন!

         আল্লাহর ভয়ে ঝরে যে অশ্রু

একদিন মালিক ইবনু দিনার (রহিমাহুল্লাহ) যাচ্ছিলেন এক জায়গা দিয়ে। হঠাৎ দেখলেন পথের ধারে কান্নাকাটি করছে এক যুবক। যুবকটির পরনে পুরোনো জামা। চেহারা উস্কোখুস্কো। মালিক ইবনু দিনার যুবকটিকে দেখে চিনতে পারলেন। ওর নাম উতবা। মালিক দেখলেন, উতবার কপাল থেকে ফোঁটায়-ফোঁটায় ঘাম ঝরছে। অথচ তখন ছিল শীতকাল!

এই দৃশ্য দেখে খুবই অবাক হলেন মালিক ইবনু দিনার। তিনি উতবাকে প্রশ্ন

করলেন, ‘হে যুবক, তুমি কাঁদছ কেন? আর এই শীতের দিনে এভাবে ঘামছ কেন?’

জবাবে উত্তরা বলল, ‘একবার এই জায়গায় আমি একটি গুনাহ করেছিলাম! আজ এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় সেই গুনাহের কথা স্মরণ হলো। তাই আমি আল্লাহর ভয়ে কাঁদছি!’৷১।

দেখুন! আমাদের পূর্ববর্তী যুগের মুসলিমদের চিন্তাভাবনা কেমন ছিল। আর আমরা? আমরা সকাল-সন্ধ্যা, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা অসংখ্য গুনাহে লিপ্ত; অথচ আমাদের কোনো বিকার নেই! আমরা হেসে-খেলে বেড়াচ্ছি, দুনিয়ার ভোগবিলাসে মত্ত রয়েছি। যেন আমাদের চিন্তাভাবনার কোনো কারণ নেই। এজন্যই যদি কেউ আমাদেরকে বলে, 'তুমি আল্লাহকে ভয় করো! ইত্তাকিল্লাহ!'—তাহলে এই কথাটিকে আমরা অপমানজনক মনে করি! আমরা ভেবে নিই, সে আমাকে অপমান করছে!

অথচ জ্ঞানীরা বলেন, 'যদি কোনো ব্যক্তি আপনাকে আল্লাহকে ভয় করার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, তা হলে সে-ই আপনার প্রকৃত বন্ধু। দুনিয়াভর সম্পদ পাবার বদলে এমন বন্ধু পাওয়াই অধিক সৌভাগ্যের বিষয়। 

             ফেরেশতাদের ভয়

আল্লাহ তাআলা বলেন,

‘তারা তাদের ওপর পরাক্রমশালী তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং তারা যা আদেশ পায়, তা করে গা

রাসূল বলেন,

‘নিশ্চয়ই ফেরেশতারা আল্লাহর ভয়ে কম্পমান অবস্থায় থাকে। [8]

আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের চোখ থেকে সর্বদাই অশ্রু বইতে থাকে নদীর মতো। যখন তারা মাথা তুলে বলেন, 'সমস্ত পবিত্রতা আল্লাহর জন্য! যেভাবে আল্লাহকে ভয় করা উচিত ছিল, সেভাবে আমরা আল্লাহকে ভয় করতে পারছিনা!' জবাবে আল্লাহ বলেন, ‘বহু কসমকারী আমার নামে মিথ্যা কসম করে, কিন্তু তারা এ বিষয়ে জানে না।'

রাসূল বলেন, ‘মিরাজের রাতে আমি দেখলাম, আল্লাহর ভয়ে জিবরীলের অবস্থা একটি শতছিন্ন কাপড়ের মতো হয়ে গেছে!

একবার জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নবি-এর কাছে এসে কাঁদতে লাগলেন। নবি বললেন, ‘তুমি কাঁদছ কেন?' জবাবে জিবরীল বললেন, ‘যেদিন থেকে আল্লাহ জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে আমার চোখ কখনো শুকায়নি। সব সময় আল্লাহর ভয়ে আমি কাঁদছি। যদি আমি কখনো তাঁর অবাধ্য হই আর তিনি আমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন—এই ভয়ে আমি কাঁদছি! গা

ইয়াজিদ আর-রুকাশী বর্ণনা করেন, 'আরশের চারপাশে কিছু ফেরেশতা আছেন। তারা সদাসর্বদা ক্রন্দনরত অবস্থায় থাকেন। তাদের চোখ থেকে নদীর মতো অশ্রুধারা বইতে থাকে। কিয়ামাত পর্যন্ত তারা এভাবেই কাঁদতে থাকবেন। তারা আল্লাহর ভয়ে এমনভাবে কম্পমান আছেন, যেন বাতাস তাদেরকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। তাই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বলেন, “হে আমার ফেরেশতারা! তোমরা তো আমার

[২] মুখতাসারু মিনহাজিল কাসিদিন, ইবনু কুদামা ২৬৯।

[৩] সূরা নাহল ১৬:৫০।

[৪] বাইহাকি, ৯১৪; তারিখু বাগদাদ, ১২/৩০৭/ [৫] মুসনাদু আহমাদ, ৪/২৫-২৬।

[৬] বাইহাকি, ১১৫।

সাথেই আছো, তা হলে ভয় পাচ্ছ কেন?' জবাবে তারা বলেন, 'হে আমাদের রব! আমরা যেভাবে আপনার সম্মান ও মর্যাদার কথা জানি, যদি জমিনের বাসিন্দারাও সেভাবে আপনার সম্মান ও মর্যাদার কথা জানত, তা হলে তারা কোনো খাদ্য পানীয় উপভোগ করার অবসর পেত না, বিছানায় শয্যা-গ্রহণের চিন্তা করত না! তারা মরুভূমিতে চলে যেত এবং যেভাবে গরু চিৎকার করে সেভাবে চিৎকার করতে থাকত!’

                  নবিদের কান্না

ওয়াহাব বলেন, ‘জান্নাত থেকে অবতরণের পর আদম (আলাইহিস সালাম) ৩০০ বছর কান্না করেন। এই ৩০০ বছরে তিনি একবারের জন্যেও আসমানের দিকে মাথা তুলে তাকাননি।'

ওয়াহাব ইবনু আল-ওয়ারদ বলেন, 'নিজের ছেলের ব্যাপারে সুপারিশ করার জন্য

আল্লাহ নূহ (আলাইহিস সালাম)-কে তিরস্কার করলেন। এরপর নূহ (আলাইহিস সালাম) বললেন, 'হে আমার পালনকর্তা, আমার যা জানা নেই এমন কোনো দরখাস্ত করা হতে আমি আপনার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন, দয়া না করেন, তা হলে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব।”

এই ঘটনার কারণে নূহ (আলাইহিস সালাম) তিন শ বছর ক্রন্দন করেন। এতে তাঁর

চোখের নিচে পানি প্রবাহের দাগ বসে যায়।'

মুজাহিদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, 'যখন দাউদ (আলাইহিস সালাম) একটি ভুল করলেন, তিনি টানা ৪০ দিন আল্লাহর কাছে সিজদারত অবস্থায় পড়ে রইলেন। এই ৪০ দিন তিনি এমনভাবে কান্নাকাটি করেন যে, তার চোখের পানিতে মাটি ভিজে যায়। আর সেখানে শেওলা ও লতাপাতা গজিয়ে উঠে। লোকেরা দাউদ (আলাইহিস সালাম)-কে দেখতে আসত। আর মনে করত তিনি অসুস্থ। কিন্তু দাউদ (আলাইহিস সালাম)-এর মধ্যে কোনো অসুস্থতা ছিল না। আল্লাহর ভয়েই এই অবস্থা হয়েছিল তাঁর।'

ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর সামনে যখন মৃত্যুর আলোচনা হতো, তখন তাঁর চামড়া ফেটে রক্ত বের হতো।

[৭] সূরা হুদ ১১:৪৭।

[৮] মুখতাসারু মিনহাজিল কাসিদিন, ইবনু কুদামা ।

          আল্লাহর রাসূলের ভয়

আয়িশা (রদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, 'মেঘমালা দেখলে রাসূলুল্লাহ -এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেত। একবার তিনি ঘরে প্রবেশ করতেন, আরেকবার বেরিয়ে আসতেন। একবার সামনে যেতেন, আরেকবার পেছনে যেতেন। মেঘ যখন বৃষ্টি হয়ে ঝরে যেত, তখন তাঁর এই অবস্থা দূর হতো।

আয়িশা (রদিয়াল্লাহু আনহা) তাঁর এরূপ অবস্থা হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘তুমি কি জানো, হয়তো তা সেই মেঘ-ই হবে, যে সম্পর্কে হূদ (আলাইহিস সালাম)-এর জাতি বলেছিল, “এই তো মেঘ, আমাদেরকে বৃষ্টি দিবে।””

রাসূলুল্লাহ যখন সালাত পড়তেন তখন তাঁর বুক থেকে পানি ফুটানোর মতো শব্দ হতো। তিনি এভাবে কান্না করতেন। [১]

একদিন রাসূল আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রদিয়াল্লাহু আনহু)-এর কাছ থেকে কুরআন শোনার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তিনি কুরআন শুনাতে শুনাতে যখন এই আয়াতে এসে পৌঁছলেন,

فكيف إذا جئنا من كل أمة بشهيد وجئنا بك على هؤلاء شهيدا

‘আর তখন কী অবস্থা দাঁড়াবে, যখন আমি ডেকে আনব প্রতিটি উম্মাতের মধ্য থেকে অবস্থা বর্ণনাকারী এবং আপনাকে ডাকব তাদের ওপর অবস্থা বর্ণনাকারীরূপে৷৷১১)

তখন রাসূল বললেন, “থামো, যথেষ্ট হয়েছে।' আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি দেখলাম তাঁর দু’ চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। খ

ইবনুল কাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘যাদুল মাআদ’ গ্রন্থে বলেন, ‘নবিজির কান্না ছিল তাঁর হাসির মতোই মৃদু। তিনি উচ্চস্বরে কান্না করতেন না। গলার আওয়াজ উঁচু করতেন না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতেন। যেভাবে হাসির সময় তিনি উচ্চস্বরে হাসতেন না বরং মৃদু হাসতেন বা মুচকি হাসতেন। কিন্তু কান্নার সময় তার চোখ জলে ভরে যেত। এরপর সেই অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকত। নবিজির পাশে কেউ থাকলে সে নবি -এর বুক থেকে ফুটন্ত পানির মতো কান্নার আওয়াজ শুনতে পেত। কখনো

তিনি কাঁদতেন মৃত ব্যক্তির প্রতি দয়ামায়া ও রহমত অনুভব করার কারণে, আবার কখনো কাঁদতেন উম্মাতের প্রতি ভালোবাসার কারণে, আবার কখনো কাঁদতেন উম্মাতের পরিণতির কথা ভেবে। আল্লাহর ভয়ের কারণেও তিনি কাঁদতেন। কুরআন তিলাওয়াত শুনলেও অশ্রু ঝরত নবিজির চোখ থেকে। এই কান্না ছিল ভক্তি-ভালোবাসা ও বিরহ মিশ্রিত। আল্লাহর প্রতি বিনীত হওয়ার কারণেই তিনি কাঁদতেন।'

আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন। We Respect Every Author Hardwork-boipaw team

Image

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ