বইঃ রিভার গড
লেখকঃ উইলবার স্মিথ
অনুবাদঃ মখদুম আহমেদ।
"রিভার গড",বইটি নাটকীয়তা, রহস্য, প্রেম এবং ক্রোধের আগুনে ঠাঁসা হারিয়ে যাওয়া ফারাও যুগের অসাধারণ কাহিনী।৷ টাইটার বর্ণনায় উঠে এসেছে সকল কাহিনি।
প্রাচীন মিশরের, ফারাও যুগ সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় আছে।। ফারাও এর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চলছিলো নিরন্তন কিন্তু দূর্বল ফারাও সম্রাট মামোস কিছুই করতে পারছে না এবং তার উত্তরাধিকারী ছেলে সন্তানও ছিল না।
সেনাপতি ট্যানাস ভালোবাসে উজির কন্যা লসট্রিসকে তার রুপের মহিমায় আবিষ্ট তখন পুরো জাতি তাকে ভালোবাসে আরেকজন প্রতিভাধর অপুরুষ।
ওরিসিস উৎসবের নাটকে মহান ফারাও লাসট্রিসকে দেখে তাকে বিয়ে করতে চান কিন্তু লসট্রিস তখন ট্যানাসের প্রেমে পরে। একে অপরের প্রতি তখন তাদের গভীর প্রণয়। নাটকের দিন ট্যানাসের কিছু কথায় ফারাও তার প্রতি অসন্তোষ হয়। তার জন্যই তিনি ট্যানাসকে দুই বছরের মধ্যে শ্রাইক দস্যুদের নির্মূল করার আদেশ দেন আর সেটা না পারলে তার মৃত্যুদণ্ড প্রদান করবেন।।
অন্যদিকে নতুন সংকট দেখা দেয়, যাদের নাম হিকস বাহিনী ।
রিভার গড বইটি প্রথম পড়ার সময় তেমন একটা উৎসাহ পায় নি, তবে গল্প কিছুদূর এগুতেই মনোমুগ্ধকর ভাবে পড়ে গিয়েছি। টাইটার মাধ্যমে লেখক প্রতিটি লাইন এমন ভাবে স্থাপন করেছেন মনে হয়েছে, সকল ঘটনাই আমি চোখের সামনে দেখছি। সেইসাথে সারা গল্প জুড়েই টাইটা ছিল এক অনন্য বিস্ময়। একজন ক্রীতদাস যে কি না একাধারে লিপিকার, নাট্যকার, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, জ্যোতিষবিদ্যা, গণিতবিদ ছাড়াও অসংখ্য বিষয়ে পন্ডিত অথচ থাকতে হয় সবার আড়ালে।
অসাধারণ বিস্ময় ফুটে উঠেছে টাইটার চরিত্রে। কাহিনি এতো সুন্দর করে ফুটে উঠেছে যা পাঠক হ্রদয়েও আলোড়ন তুলবে।প্রতিটি চরিত্র অসামান্য সুন্দর।
রিভার গড উইলবার স্মিথের একটি অনবদ্য উপন্যাস। যারা রোমাঞ্চকর উপন্যাস পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি একটি দারুণ বই। প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতাকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাসের কাঠামো গড়ে উঠেছে । এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বহুগুণের অধিকারী এবং বুদ্ধিদীপ্ত একজন দাস টাইটা হেরাসের প্রশ্বাসে বসে ভাবছে সময়ের সাথে সাথে লসট্রিস আরও বেশি সুন্দরী ও পরিণত হয়ে উঠছে। একেবারে শিশু বয়স থেকে লসট্রিসকে মানুষ করার দায়িত্ব তার উপর। হেরাসের প্রশ্বাসে বসে টাইটার কপালে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কারণ এই যে শিকারে লসট্রিসের অংশগ্রহণ তার বাবার কাছে গোপন করা হয়েছে ।
টাইটা হচ্ছে লসট্রিসের বাবা ইনটেফের দাস। কিশোরী লসট্রিসের অভিভাবক হিসাবে দেখাশোনার দায়িত্ব পরে টাইটার উপর । লসট্রিসের প্রতি যেমন একধরণের মুগ্ধতা ও ভালোবাসা আছে টাইটার তেমনি তার বাবা ইনটেফের প্রতি আছে প্রবল ঘৃণা। তাই লসট্রিসের সাথে ট্যানাসের সম্পর্ক, একসাথে জলহস্তী শিকারে যাওয়া এবং ট্যানাসের জাহাজ হেরাসের প্রশ্বাসে অবস্থান করা সবই করা হয় প্রভু ইনটেফের অগোচরে । টাইটা শুধু ইনটেফের দাসই নয় একই সাথে ইনটেফের সকল গোপন কাজের সাক্ষী এবং গুপ্তচরদের নিয়ন্ত্রক ।
ইনটেফের অনেক অন্যায় কাজের একমাত্র সাক্ষী এই টাইটা। সমাজের উচ্চশ্রেণির অন্দরমহলের সুনিপুণ চিত্র পাওয়া যায় টাইটার বর্ণনায়। ফারাও মামোসের চিকিৎসা এবং অমনরার ইন্দ্রজালের মাধ্যমে মিশরের উত্তরাধিকার সম্পর্কে ভবিষ্যৎবানী, ফারাওর সাথে লসট্রিসের বিয়ে, ট্যানাসের বিচার এবং অভিযোগ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ দুর্ধর্ষ ডাকাত বাহিনীকে পরাস্ত করা, ইনটেফের মিশর থেকে পলায়ন এবং মিশরের ফারাওর সাথে হিকসসদের যুদ্ধে মিসরীয়রা নিজ ভুমি থেকে বিতাড়িত হয় । শুরু হয় আরেক উপাখ্যান। মিশরীয়রা স্বদেশ ত্যাগ করে যাত্রা করে অজানার উদ্দেশ্যে সাথে থাকে নতুন ফারাও, ভবিষ্যৎ মিশরের উত্তরাধিকারী ।
সেই অজানা যাত্রায় এক নতুন পৃথিবীর সাথে দেখা হয় অভিযাত্রী দলের, সবুজ গাছপালা, পাহাড়, বন, বন্য প্রাণী ও নতুন মানব বসতি এক নতুন অভিজ্ঞতার সাথে পরিচয় হয় মিশরবাসীর। নিজ মাতৃভূমির টানে আবারো শক্তি সঞ্চয় করে ফেরার টান অনুভব করে অভিযাত্রী দল এরই মাঝে নতুন জনপদে যুদ্ধ হয় স্থানীয়দের সাথে প্রাণ হারায় অনেক শক্তিশালী যোদ্ধা।
এরই মাঝে বনের ভিতর তৈরি করা হয় ফারাওর জন্য সমাধি। গহীন বনে সুরক্ষিত সেই সমাধিক্ষেত্রের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয় মিশরের বাহিনী এইবার ফেরার পালা। মাতৃভূমি শত্রু মুক্ত করার এই লড়াইয়ে হিকসসদের সাথে শুরু হয় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। যার সব বর্ণনা উঠে আসে টাইটার সুনিপুণ লেখায়।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....