সালাফদের চোখে দুনিয়া - salafder chokhe duniya pdf short link

সালাফদের চোখে দুনিয়া - salafder chokhe duniya by Imam Ibn Abid Duniya books [pdf download short link]
লেখক : ইমাম ইবনু আবিদ দুনইয়া
প্রকাশনী : মুহাম্মদ পাবলিকেশন
বিষয় : আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা, যুহদ বিষয়ক বই
কভার : হার্ড কভার
ভাষা : বাংলা
ভাষান্তর : সাইফুল্লাহ আল মাহমুদ
সম্পাদনা : উস্তাদ আকরাম হোসাই
বানান সমন্বয় : মুহাম্মদ পাবলিকেশন সম্পাদনা পর্ষদ
পৃষ্ঠা : ২৭২
কভার: হার্ড কভার।
Image


এই দুনিয়া মরিচীকার। দু-দিনের। দুনিয়া এক রঙিন স্বপ্নের নাম। ক্ষণস্থায়ী জীবনের নাম। দু-দিনের দুনিয়া নিয়ে মানুষ আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন দেখে। জীবনের স্বপ্ন পূরণে ছুটে চলে প্রান্তর থেকে প্রান্তর। তবুও স্বপ্ন পূরণ হয় না। ক্রমেই দুনিয়া নিয়ে হতাশা বাড়তে থাকে। কারণ দুনিয়া কখনো মানুষের সব স্বপ্ন পূরণ করে না। একদিন জীবনের সুতোয় টান পড়ে, জীবন বাতি নিভে যাওয়ার উপক্রম হয়, ওপারে পাড়ি জমানোর সময় চলে আসে। মৃত্যুর বিছানাতে এই ধূসর দুনিয়া নিয়ে আফসোস হয়। 

কিন্তু! সেদিনের শত আফসোস কোনো কাজে আসে না।দুনিয়া হলো পরজনমের পাথেয় অর্জনের একমাত্র স্থান। এখান থেকেই পরকালের পাথেয় জোগাতে হবে। দুনিয়ার যশ-খ্যাতি, সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব কষতেই কেটে যায় আমাদের দিন-রাত্রিগুলো। দিকভোলা হয়ে এই দুনিয়াতে আমরা হেঁটে চলছি। দুনিয়ার রূপ-রস, গন্ধে আমরা ভুলে যাই পরজনমের পাথেয় সংগ্রহ করার কথা। ধূসর দুনিয়ার মোহের হাতছানিতে আমরা ভুলে যাই রবকে। আখিরাতকে।

দুনিয়া কী? দুনিয়ার সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত? এখানে মানুষ কেন আসে? আবার কেনই-বা ক’দিন পরে চলে যায়? আমাদের রব, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুম এবং সালাফগণ দুনিয়াকে কোন চোখে দেখতেন। তারা দুনিয়ার মোহ থেকে বেঁচে থেকে কীভাবে যুহুদ অবলম্বন করতেন এই বিষয়টি নিয়েই তৃতীয় হিজরি শতকের মহান একজন প্রসিদ্ধ সালাফ ইমাম ইবনু আবিদ দুনিয়া রহিমাহুল্লাহু রচনা করেছেন কিতাবুয যুহুদ নামক একটি পুস্তিকা। তারই অনূদিত রূপ—সালাফদের চোখে দুনিয়া

দুনিয়ার পরিচয়, প্রকৃতি ও চরিত্র

দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার

[১] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

বলেছেন—

الدنيا سجن المؤمن وجنة الكافر

‘দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার আর কাফিরের জন্য জান্নাত। [১]

দুনিয়া নর্দমার আবর্জনা

[২] একবার বাশির ইবনু কা'ব রহিমাহুল্লাহু তার বন্ধুদেরকে বলেন

‘এসো, আজ আমি তোমাদেরকে দুনিয়ার স্বরূপ দেখাব। এ কথা বলে তিনি তাদেরকে একটি নর্দমার কাছে নিয়ে যান। অতঃপর বলেন, দুনিয়া হলো নর্দমায় পড়ে থাকা মৃত প্রাণী, পচা ফলমূল এবং খাবারের উচ্ছিষ্টের মতো। য

[১] সহিহ মুসলিম : ২৯৫৬।

দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী মুসাফিরখানা

[৩] হাসান বসরি রহিমাহুল্লাহু বলেন—

‘তোমরা এখন এমন ঘরে বসবাস করছ, যে ঘর তার মালিকের জন্য খুবই বেমানান। কারণ, এ ঘরটি তোমাদের পরীক্ষার জন্য দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ ঘর ধ্বংস করে ফেলা হবে। এই অমোঘ সত্যটি আল্লাহ তোমাদের জানিয়েও দিয়েছেন। কাজেই দুনিয়ার পরীক্ষায় তোমাদের উত্তীর্ণ হতে হবে। দুনিয়ার জীবন পরিচালনার জন্য মহান আল্লাহ যে আদেশ-নিষেধ করেছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।

মনে রাখবে, মহান আল্লাহ মানুষকে দুনিয়ার প্রতি নির্মোহ থাকার আদেশ করেছেন। কোথাও দুনিয়ার প্রতি অনুরাগী হতে বলেননি। যারা আল্লাহর খাঁটি বান্দা, তারা অনুধাবন করতে পারেন যে, দুনিয়া সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর বিশেষ একটি উদ্দেশ্য আছে। আর তা হলো আমলের মাধ্যমে আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ ও পাথেয় সংগ্রহ। বান্দার আমলের ওপর ভিত্তি করেই আল্লাহ তাআলা জান্নাত কিংবা জাহান্নামের ফায়সালা করবেন। যারা জান্নাতে যাবে, তারা অনেক সুখে থাকবে। আর যারা জাহান্নামে যাবে, তাদের দুঃখের কোনো সীমা থাকবে না। তারা চিরকাল জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।

দুনিয়া হলো ‘দারুল আমাল' বা আখিরাতের সওদা খরিদ করার উন্মুক্ত বাজার। এখান থেকেই আখিরাতের বাজার করে নিতে হবে। যারা দুনিয়ার ব্যাপারে নির্মোহ থাকে, তারাই ভাগ্যবান। আর যারা দুনিয়ার মোহে পড়ে, তারাই হতভাগা।

শুনে রাখো, দুনিয়ার জীবন ক্ষয়ের। আখিরাতের জীবন চিরকালের। কাজেই দুনিয়ার

সামান্য সুখের জন্য আখিরাতের অনন্তকালের সুখকে বিসর্জন দিয়ো না।'

দুনিয়ার মুখে দুনিয়ার পরিচয়....

[৪] ফুদাইল ইবনু ইয়াজ রহিমাহুল্লাহু বলেন—

একবার জনৈক ব্যক্তি কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এক বৃদ্ধার সঙ্গে তার দেখা হয়। বৃদ্ধা আপাদমস্ত দামি অলংকার সুন্দর পোশাকে আচ্ছাদিত ছিল। পথচারীরা পেছন থেকে দেখে চোখ ফেরাতে পারছিল না। বারবার তার দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিল। কিন্তু সামনে আসতেই তাদের আশা ভঙ্গ হচ্ছিল। কারণ, পেছন থেকে তাকে যতটা

[২] তারিখে দিমাশক: ১১/১৯১।

আকর্ষণীয় দেখাচ্ছিল, সামনে থেকে ঠিক ততটাই কদাকার দেখাচ্ছিল। কারণ, বৃদ্ধার চোখ দুটি ছিল যেমন বড়, তেমন নীল।

পথচারী লোকটি বৃদ্ধার এই দ্বৈত রূপ দেখে বলল, 'আমি তোমার বিষয়ে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।' বৃদ্ধা বলল, ‘যতদিন তুমি টাকা-পয়সাকে নিকৃষ্ট না জানবে, ততদিন তুমি আমার হাত থেকে মুক্তি পাবে না।' লোকটি জিজ্ঞাসা করল, ‘হে বৃদ্ধা, তুমি কে?’ বৃদ্ধা বলল, ‘আমি-ই রঙিন দুনিয়া।

দুনিয়া জাদুকর

[৫] মালেক ইবনু দিনার রহিমাহুল্লাহু বলেন, দুনিয়া বড়ই আজব জাদুকর। তোমরা এই জাদুকর থেকে দূরে থাকো – অনেক দূরে। দুনিয়া নামক জাদুকরের জাদু অনেক সাংঘাতিক। এই জাদু আলিমদের হৃদয়কেও বশীভূত করে ফেলে।

[৬] আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

বলেছেন—

إحذروا الدنيا؛ فإنّها أسخر من هاروت وماروت

—তোমরা দুনিয়া থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, দুনিয়া ‘হারুত-মারুত’-এর চেয়েও বড় জাদুকর।

দুনিয়া একঢোক পানি মাত্র

[৭] আবদুল ওয়াহিদ রহিমাহুল্লাহু বলেন—

দুনিয়া কী? দুনিয়া তো বেশি কিছু না। প্রচণ্ড তৃষ্ণার সময় মানুষ মাত্র এক ঢোক পানির বিনিময়ে পুরো দুনিয়া বিক্রি করে দিতে চাইবে।

[৮] মুসতাওরিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন—

والله ما الدنيا في الآخرة إلا مثل ما يجعل أحدكم إصبعه في اليم،

فلينظر ما يرجع إليه

[৩] ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন: ৩/২২৯। [৪] ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন: ৩/২২৩।

[৫] কানযুল উম্মাল : ৩/১৮৩। হাদিস মুনকার।

‘বিশাল সমুদ্রে আঙুল চুবিয়ে উঠালে তাতে যতটুকু পানি লেগে থাকে, আখিরাতের তুলনায় দুনিয়া ঠিক ততটুকু। সুতরাং তোমরা দুনিয়ার প্রাপ্তি যথাযথভাবে বিচার করো। ি

দুনিয়া অভদ্র ও ঝগড়াটে

[৯] আবু সুলাইমান রহিমাহুল্লাহু বলেন—

কোনো মানুষের অন্তরে আখিরাত জায়গা করে নিলে, দুনিয়া সঙ্গে সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে দেয়। অপরদিকে দুনিয়া কারও অন্তরে এসে বাসা বাঁধলে আখিরাত নীরবে দূরে সরে যায়। কারণ, আখিরাত ভদ্র। আর দুনিয়া অভদ্র ও ঝগড়াটে।

দুনিয়া ঘৃণার পাত্র

[১০] মুসা ইবনু ইয়াসার রহিমাহুল্লাহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

বলেছেন—

إنّ الله جل ثناؤه لم يخلق خلقا هو أبغض إليه من الدنيا، وإنه منذ

خلقها لم ينظر إليها

‘মহান আল্লাহ যা-কিছু সৃষ্টি করেছেন, তন্মধ্যে দুনিয়াই তার কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। একারণে সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি দুনিয়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করেননি। [৮]

দুনিয়া ছলনাময়ী

[১১] আবু জা'ফর রহিমাহুল্লাহু বলেন—

একবার জনৈক জ্ঞানী এক বাদশাহকে বলেন, মহামান্য বাদশা! দুনিয়ার অর্থ-সম্পদ ও বিত্ত-বৈভব যাকে যত বেশি দেওয়া হয়েছে, দুনিয়া তার কাছে তত বেশি নিন্দাযোগ্য। কারণ, দুনিয়া এমন লোকের মানসিক স্বস্তি ও আত্মিক প্রশান্তি কেড়ে নেয়। তখন সে ভয় করে, আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনায় তার ধনসম্পদ বিনষ্ট হয়ে যায় কিনা! কেউ এসে তার সুখ-সম্ভার কেড়ে নেয় কিনা! কোনো ছদ্মবেশী প্রিয় ভাজন কুক্ষিগত ক্ষমতায় ভাগ

[৬] সহিহ মুসলিম: ২৮৫৮।

[৭] ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন: ৩/২২৪। সাফওয়াতুস সাফওয়াহ ৪/২২৫। [৮] জামিউস সাগির: ১৭৮০। যয়িফ। মুরসাল। কেউ কেউ মাওযু (বানোয়াট) বলেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ