শুদ্ধতার পাঠশালা - সত্যসন্ধানী টিম | Shuddhutar Pathshala By Shottoshondhani Team

Image

শুদ্ধতার পাঠশালা - 
প্রবন্ধ সমগ্র ও সংকলন
লেখক : সত্যসন্ধানী টিম
প্রকাশনী : হাসানাহ পাবলিকেশন
বিষয় : প্রবন্ধ সমগ্র ও সংকলন
সম্পাদক : মঈন উদ্দীন চৌধুরী সাকিব, হাবীবুল্লাহ সিরাজ
পৃষ্ঠা : 232, কভার : পেপার ব্যাক
ভাষা : বাংলা।

যে মৃত্যু সৌভাগ্যের - হাসান শুয়াইব

এক.
সাদ বিন মুআয রাযি.। আনসার সাহাবিদের সরদার। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় সাহাবি। ইসলামের ডাক শুনবার পর ঈমান এনেছেন একনিষ্ঠভাবে। ঈমানের দাবি পূরণে সচেষ্ট থেকেছেন সর্বদাই। আল্লাহ ও তার রাসুলের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। তিনি ইসলামের জন্য আত্মত্যাগের মহিমায় কতটা উজ্জ্বল ছিলেন, তার একটা গল্প বলছি; বদর যুদ্ধের কিছু পূর্বের কথা। সাহাবিরা যুদ্ধের জন্য বের হননি। কিন্তু যুদ্ধের প্রেক্ষাপট সামনে চলে এসেছে। সাহাবিদের নিয়ে বসে আল্লাহর রাসুল সবার মতামত জানতে চান। মুহাজির সাহাবিদের সংখ্যা ছিল অল্প। তাদের মধ্য থেকে আবু বকর ও ওমর রাযি. অপারগতার কথা প্রকাশ করেন। 

নবীজি আবারও জানতে চান সবার অভিব্যক্তি। আনসারি সাহাবিরা বুঝে ফেলেন, নবীজি মূলত তাদের অভিমত জানতে চাচ্ছেন। আঁচ করতে পারেন, ঈমানের দাবি পূরণের সময় এসে গেছে। শুরু হয়েছে পরীক্ষা। আর বসে থাকেননি। আনসারদের পক্ষ থেকে দাঁড়িয়ে যান সাআদ বিন মুআজ রাযি.। দৃপ্তকণ্ঠে আল্লাহর রাসুলকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি আসলে আমাদের মন্তব্য জানতে চাচ্ছেন। সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে এই মর্যাদা দান করেছেন, আপনার ওপর অবতীর্ণ করেছেন কিতাব । আমরা আপনার প্রতি ঈমান এনেছি, আপনাকে সত্যায়ন করেছি। আমরা এ সাক্ষ্যও দিয়েছি, আপনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু এনেছেন, তা সত্য। আপনাকে আমরা এ প্রতিশ্রুতিও দিয়েছি, আমরা আপনার প্রত্যেকটি কথা শুনবো ও মানবো।

আমি এ পথে কোন দিন চলিনি, এ ব্যাপারে আমার কোন জ্ঞানও নেই। তবুও বলছি, আল্লাহর কসম, আপনি যদি ইয়েমেনের বারকুল গামাদ পর্যন্ত আমাদের নিয়ে সফর করেন, তাহলে আমরাও ছায়াসঙ্গী হয়ে আপনার সাথে চলবো। হযরত মুসা আলাইহিস সালামকে যেমন বনি ইসরাইল বলেছিল, 'আপনি ও আপনার রব গিয়ে যুদ্ধ করুন, আমরা এখানেই বসে থাকলাম। আমরা আপনাকে এমনটা বলবো না। আমরা তো বলবো, 'আপনি ও আপনার রব গিয়ে যুদ্ধ করুন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। আপনি যার সাথে ইচ্ছা সম্পর্ক স্থাপন করুন, যার সাথে ইচ্ছা ত্যাগ করুন, যার সাথে ইচ্ছা দুশমনি করুন, যার সাথে ইচ্ছা আপস করুন।

আমাদের যতটুকু সম্পদ আপনি নিয়ে নিন, যতটুকু সম্পদ ইচ্ছা দিয়ে দিন। আপনি আমাদের কাছ থেকে যা নেবেন, তা আমাদের কাছে রাখা সম্পদের চেয়ে অধিক প্রিয় হবে। আপনি যে নির্দেশ দেবেন, আমাদের কাজ সে নির্দেশের অনুগামী হবে।

ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি যে বিষয়ের ইচ্ছা করছেন, সেটা বাস্তবায়িত করুন, আমরা আপনার সাথে আছি। সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে প্রেরণ করেছেন, আপনি আমাদেরকে নিয়ে সাগরেও ডুব দিলে আমরা আপনার সাথে সাগরেই ডুব দেব। আমাদের এক ব্যক্তিও আপনার থেকে পিছু হটবে না। আপনি কাল আমাদের নিয়ে শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করলে আমাদের জন্য এটা কখনই বিরক্তিকর হবে না। আমরা অবিচল থেকে যুদ্ধ করতে জানি, দুশমনের সাথে আমরা মোকাবিলা করি অসীম বীরত্বে। হতে পারে কাল আল্লাহ তায়ালা আমাদের হাতে এমন কিছু করাবেন, যা দেখে আপনার চোখ শীতল হয়ে যাবে। আল্লাহ বারকাহ দান করুন। আপনি নিশ্চিন্তে সামনে চলুন।' (বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ৩, পৃ; ২৬২) হযরত সাআদ বিন মুআজের কথা শুনে নবীজির অন্তর ভরে গেলো। তিনি সিক্ত হলেন নিখাদ ভালোবাসার স্নিগ্ধতায়।

জীবনের যাত্রাপথে খন্দক যুদ্ধের প্রেক্ষাপট চলে আসে। যুদ্ধ চলাকালে শত্রুপক্ষের একটা তীর তার পায়ে বিদ্ধ হয়। অনেক রক্ত ক্ষরণ হয় সেখান থেকে। গুরুতর আহতহোন তিনি। ব্যান্ডেজ লাগানোর পরে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। বেশ কিছুটা সময় বিশ্রাম নিতে হয় তাকে।

খন্দক যুদ্ধ শেষে বনু কুরায়যার অভিযানেও তিনি উপস্থিত ছিলেন। বনু কুরায়যা মুসলিমদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ভঙ্গ করেছে মৈত্রী চুক্তি। বিশাল বড় এক অন্যায় । এর শাস্তি স্বরূপ পুরুষদেরকে হত্যা করা এবং নারীদেরকে মুসলিমদের অধীন করার সিদ্ধান্ত তিনিই দিয়েছেন।

মক্কার মুশরিকরা যেন মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সাহসটাও না করতে পারে এমন একটা ইচ্ছা সর্বক্ষণ লালন করতেন তিনি। খন্দক যুদ্ধে মুশরিকদের শোচনীয় পরাজয় তার মনটাকে কানায় কানায় ভরিয়ে দিয়েছে আনন্দ উচ্ছ্বাসে। একপ্রকার নিশ্চিত তিনি এই বিপর্যয়ের পর মুশরিকদের কোমর ভেঙে গেছে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে আর উঠে দাঁড়াবার সাহস করতে পারবে না। আল্লাহর কাছে এই একটা আর্জি ছিল, মরণের আগে তিনি যেন এই অবস্থাটা দেখে যেতে পারেন। জীবনে আর তেমন চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। এখন শুধু একটাই তামান্না-শাহাদাতের মৃত্যু। মহান আল্লাহর দিদার লাভ এবং জান্নাতের মনোরম বাগানে মনের সুখে বিচরণ। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন 'হে আল্লাহ, মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের দাঁড়াবার শক্তি যদি খর্ব হয়ে থাকে তবে তুমি আমায় শাহাদাতের মৃত্যু দান করো। প্রবাহিত করো আমার ক্ষতস্থানের রক্ত।'

আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয় ছিলেন তিনি। আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল করেন। পায়ে ব্যান্ডেজ লাগানো অবস্থায় একটা শিবিরে শুয়ে ছিলেন তিনি। আল্লাহর কী মহিমা, আপনা আপনি খুলে যায় ক্ষত স্থানে লাগানো কাপড়ের বাঁধন। রক্তের স্রোত প্রবাহিত হয় যেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লাভ করেন শাহাদাতের পরম সৌভাগ্যময় মৃত্যু। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে ছিলেন। অনেকটা একাকী সময় পার করেছিলেন। খন্দক যুদ্ধে পরাজিত হযে মুশরিকদের লেজ গুটিয়ে পালানো এবং কাঙ্খিত বিজয় এর আনন্দের দ্যুতি তার লালাটে যেন খেলা করছে। এমন সময় হযরত জিবরিল আ. আসলেন তার কাছে। অবাক ও উচ্ছ্বাস মিশ্রিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন

‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনার সাহাবিদের মধ্যে কার মৃত্যু হলো?' আল্লাহর রাসুল কিছুটা অবাক হয়ে বললেন 'কেন কি হয়েছে? হযরত জিবরিল আমিন বললেন তার পুণ্যাত্মা আসমানে এতটাই প্রিয় ও ভালোবাসার যে, তার আগমনের খুশিতে আল্লাহর আরশও আনন্দে দুলছে!'

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মনে পড়ে গেল সাদ বিন মুআয এর কথা । এক প্রকার দৌড় দিয়ে গেলেন তার তাঁবুতে। পাশে বসলেন খুব আঁটোসাঁটো হয়ে যেন অনেক লোকের ভিড় তার কামরায়। অথচ কেউ নেই সেখানে। সাহাবাযে কেরাম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন 'ইয়া রাসুলাল্লাহ এখানে তো কেউ নেই, তবে কেন নিজেকে এতটা সংকুচিত করে বসলেন? নবীজি বললেন সাদকে দেখার জন্য এত পরিমাণ ফেরেশতা এসেছে যে বসার মতো জায়গায় পাচ্ছিলাম না। একজন ফেরেশতা তার ডানা সরিয়ে আমাকে বসার জন্য জায়গা করে দিয়েছে।

হযরত সাদ বিন মুয়াজ রাযি. এর গোসল ও কাফন পরানোর কাজ শেষ। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম তার জানাজার নামাজ পড়ালেন। তাকে মাটির নিচে রাখার জন্য খাটলিতে রাখা হয়েছে। তিনি ছিলেন দীর্ঘদেহী এবং স্বাস্থ্যবান। পর্যাপ্ত সাহাবায়েকেরাম মিলে তার খাটলি ওঠালেন। কিন্তু কি আশ্চর্য! একদম হালকা, কোন ভার নেই। সাহাবিরা বিস্ময়াভূত। এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনো হয়নি। একজন মানুষ এত হালকা হতে পারে!

সাহাবিদের মনে কৌতূহল আর মুনাফিকরা মন্দ ধারণা পোষণ করতেই ব্যস্ত। ওরা বলাবলি করছে ইহুদিদের বিরুদ্ধে তার দেয়া সিদ্ধান্ত ছিল মনগড়া। এটা আল্লাহর পছন্দ হয়নি, তাই সাদের এই পরিণতি। কিন্তু রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো দেখছেন আসলে কী হচ্ছে। একটু আওয়াজ দিয়ে সাহাবিদের কে বললেন, 'আরে তোমরা সাদের ওজন অনুভব করবে কিভাবে? আল্লাহ ফেরেশতারা যে ওকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে।'

এটাকে বলা হয় মৃত্যু। যাকে মাটিতে শোয়ানো পর্যন্ত সমস্ত কাজে শরিক থাকে আসমানের ফেরেশতারা। তাঁর আত্মা এতটাই দামি, আল্লাহর কাছে এতটাই প্রিয় যে তার আগমনের আনন্দে আরশ পর্যন্ত দুলতে থাকে। আসমানবাসীদের মাঝে সাড়া পড়ে যায় 'একজন আসছেন। 


দুই.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি.। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম এর চাচাতো ভাই। অন্যরকম একটা জীবন গড়ার প্রত্যয় ছিল ছোটবেলা থেকেই। নবীজির সাহচর্যে খুব বেশি সময় থাকতে পারেননি তিনি। তবে আসল কাজটুকু ঠিকই করেছেন। ছোট ছোট খেদমত করে রাসুলুল্লাহর মন জয় করেছেন। অর্জন করেছেন তার দোয়া। পরবর্তীতে সাহাবিদের কাছ থেকে ইলম লিখতে তিনি কোন প্রকার কার্পণ্য করেননি। নিজেকে তিলে তিলে বিলীন করেছেন আসমানী ইলমের জন্য। সময়ে আল্লাহ তাকে মর্যাদার উচ্চশিখরে পৌঁছে দিয়েছেন।

জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন তায়েফ নগরীতে। আকাশ ছোঁয়া সারি সারি পর্বতমালা ও মরু আরবের বুকে এক টুকরো সবুজ ভূমি এই তায়েফ। জীবনের গোধূলি বেলার মুহূর্তগুলো পার করার জন্য এই ছোট শহরকে কেন বেছে নিয়ে ছিলেন তিনি, সেটা আল্লাহই ভালো জানেন।

মেঘে মেঘে অনেকটা সময় চলে গেছে। চলে এসেছে পরম সত্য মুহূর্তটি। মাটির উপরিভাগকে বিদায় জানান তিনি। রহমতের ফেরেশতারা তার সুরভিত প্রাণকে নিয়ে উড়াল দেয় ঊর্দ্ধাকাশের উদ্দেশ্যে। তার গোসল ও কাফন পরানোর কাজ শেষ। একটু পরেই রাখা হবে মাটির নিচে। হযরত সাঈদ ইবনু যুবাইর বলেন অন্যরকম আকৃতির একটা পাখি দেখলাম। না এমন পাখি কোনদিন দেখিনি। এসে তার বাসায় ঢুকে পরল। পাখিটাকে আর বের হতেও দেখিনি। ইবনে আব্বাস কে সমাহিত করা হয়। তার কবরে মাটি চাপানোর কাজ শেষ। এমন সময় তার কবরের পাশে কে যেন তেলাওয়াত করছিল;

يا أيتها النفس المطمينة () ارجعي إلى ربك راضية مرضية () فادخلي في عبادي ()

جنتی وادخلي

'হে প্রশান্ত অন্তর তোমার রবের কাছে ফিরে যাও সন্তুষ্ট চিত্তে অতঃপর আমার বান্দাদের মাঝে ঢুকে যাও এবং প্রবেশ করো আমার জান্নাতে।' সুরা ফাজর : আয়াত নং ২৭-৩০

সন্তোষভাজন হয়ে।

অচেনা কণ্ঠে তেলাওয়াত শোনার পর উৎসের সন্ধানে এদিক ওদিক চোখ বুলাই, কিন্তু কাউকে দেখতে পাই না। অবাক হয়েছি। হয়েছি অভিভূত। ইবনু আব্বাস রাযি. মাটির নিচে রেখে এখনও নিজেদের হাতগুলো পরিষ্কারই করতে পারিনি, এর আগেই জান্নাতের দিকে আহ্বান! বিপুল মুগ্ধতায় প্লাবিত আমরা। শেষ পর্যন্ত কেউই সনাক্ত করতে পারিনি আয়াতগুলো কে তেলাওয়াত করেছে। এই হলো জীবন। মারা যাওয়ার সাথে সাথে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হচ্ছে। কেন এই সৌভাগ্যের মৃত্যু? 

হ্যা, তারা মন মতো জীবনটাকে পরিচালিত করেননি। জীবনের প্রতিটি ক্ষণে শুধু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার প্রতি ব্রতী ছিলেন। ফলে আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। দান করেছেন পবিত্র জীবন। মৃত্যুর সাথে সাথে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন 'এসো বান্দা আমার, জান্নাতে এসো! জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামত তোমাদের জন্যই তো!

আত্মভোলাদের আত্মহনন - এহসান উদ্দিন জুয়েল

এলোমেলো নানান চিন্তায় মাথাটা ভারী হয়ে আসছে। আলো থাকা সত্ত্বেও মনে হচ্ছে ঘুমোট এক অন্ধকার আছড়ে পড়ছে চারদিকে। বুকের ভেতরটা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে না পাওয়ার এক বেদনা। মনে হতে থাকে আমার উপস্থিতিই সকল অকল্যাণ আর সমস্যার সকল কারণ। আচ্ছা, আমার থাকার সার্থকতা কি আদৌ আছে?

না, আর ভাবা যায় না। সময়ের পরিক্রমায় মাথাটা মনে হয় ফাঁকা ফাঁকা লাগে। যেমনি জোয়ারের ঢেউ আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ভাটার টানে তারা আবার তলিয়ে যায়, হারিয়ে যায় অতল, অনিশ্চিত, আনকোরা সাগরে। আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা বা কিছু ঘটনার পর হয়তো কেউ কেউ একসময় এমন অপ্রিয় পরিস্থিতিতে পড়ে। যখন নিজের জীবনটা বিষের মতো লাগে। যে জীবনটাকে আমরা এত ভালোবাসি, এত যত্ম নিই, এত আয়োজনের

পসরা সাজিয়ে রাখি, সেটাই একসময় অচ্ছুৎ মনে হয়। মনে হতে থাকে জীবনের

চেয়ে মরণের প্রয়োজনটাই হয়তো বেশি।

চিন্তার শেষ সীমানায় দাঁড়িয়ে কেউ কেউ তখন আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এর চেয়ে ভালো সমাধান খুঁজে পাওয়া তার জন্য মনে হয় অসম্ভব কিছু। করোনার লকডাউনের সময় ভার্সিটির এক ছোটো ভাই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা

করে দুনিয়া থেকে পরকালে পাড়ি জমায়। মৃত্যুর সময় তার প্রোফাইলে লিখা ছিলো,

‘সিলিংয়ে ঝুলে গেলো সত্তা, নাম দিলে তারে আত্মহত্যা! শুধু এটাই শেষ নয় কিছুদিন আগেও ভার্সিটির আরেক বোন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। ঘটনাগুলো এ দুটোতে সীমাবদ্ধ থাকলে হতো। কিন্তু তা নয়। শুধু লকডাউনেই আরো বেশ কিছু আত্মহত্যার খবর দেখেছি। লিস্ট ধরে বলতে গেলে ক্যাম্পাসের পরিচিত বেশ কিছু ছোটো ভাই, ব্যাচমেট, বড়ভাইদের বেদনাদায়ক স্মৃতিও উঠে আসবে।

একটা পরিসংখ্যান দেখলে বিষয়টি বুঝা যায়, করোনার নয় মাসে দেশে আত্মহত্যার হার বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। মার্চ ২০২০ থেকে নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন ১ হাজার ৫৮ জন মানুষ! (জাগো নিউজ, ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)

চিন্তা করে দেখুন, বিশ্ব যখন কোভিড মহামারিতে পর্যদুস্ত আর চারদিকে ছিলো মৃত্যুর মিছিল। জীবন নিয়ে ছিলো অনিশ্চিত শঙ্কা, তখনও নিজের জীবন নিজে দেওয়ার মতো এত বেশি পরিমাণ ঘটনা ঘটেছে! ঘটনার পর ঘটনা আসে, একে একে হারিয়ে যায়, তারপর আবার তার পুনরাবৃত্তি ঘটে। বিবিসির তথ্য বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১১ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে! (বিবিসি বাংলা, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০)

আপনাদেরকে আরেকটা তথ্য দিই! জেনে অবাক হবেন নিশ্চিত! বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ পুরুষ ও নারী আত্মহত্যা করে, যা যে কোন যুদ্ধে নিহতের চেয়েও অনেক বেশি। অর্থাৎ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন নারী বা পুরুষ আত্মহত্যা করছেন! (স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)

প্রত্যেকের জন্যই তার নিজের জীবনটা অনেক মূল্যবান। সজ্ঞানে কেউ এটাও চায় না যে সহজে তার শরীরে একটি কাঁটাও ফুটুক! কিন্তু আত্মহত্যা করার সময় কোথায় থাকে তার সেই আত্মপ্রেম? মানুষ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও সহজে আত্মহত্যা করতে পারে না। কেউ গলায় ফাঁস লাগিয়ে দেওয়ার পর বুঝতে পারে সে আসলে কতো বড় একটা ভুল কাজ করে ফেলেছে। তাই, নিজের শেষ নিশ্বাস থাকা পর্যন্ত বেঁচে থাকার জন্য ছটফট করতে থাকে, বাঁচার আকুতি জানায়। কেউ একবার মৃত্যু মুখ থেকে বেঁচে ফিরলে সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আর কখনো হতে চাইবে না।

এই সুন্দর পৃথিবী। এত সুন্দর মানুষগুলো ছেড়ে কে চলে যেতে চায় এই পৃথিবী ছেড়ে? কবি তো এমনিতে বলেননি, 'মরিতে চাহিনা এই সুন্দর ভুবনে'।

মানুষ আত্মহত্যা কেন করে সেটা নিয়ে সময়ে সময়ে হয়েছে বিস্তর গবেষণা। মানুষ যখন নিজের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে যায়, বেঁচে থাকার কোন অর্থ খুঁজে পায় না, নিরর্থক মনে হয়, অর্থাৎ মরে যাওয়াটা নিজের অথবা সংশ্লিষ্ট অন্যের জন্য ভালো মনে করে তখন এই কাজে পা বাড়ায়। মানুষ নানা কারণে আত্মহত্যা করতে পারে । কিছুক্ষেত্রে রোগের কারণ থাকে যেটার সুচিকিৎসার প্রয়োজন। তবে অহরহ ঘটনার

পেছনে কোন না কোন হারাম কারণ জনিত!

ভুল বুঝবেন না! ভালো করে ভাবুন। ধরুন, কেউ মাদকে আসক্ত; সে নিজে শারীরিক, মানসিকভাবে ভালো থাকবে? তার পরিবারে কি তাকে নিয়ে অশান্তিতে থাকবে না? অপচয়ের ফলে তার রুজির বরকত থাকবে? দারিদ্র্যতার কষাঘাতে সে কি নিমজ্জিত হবে না? প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করা যেনো এখন একটা ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে।

ছাত্রাবস্থায় যারা আত্মহত্যা করে তাদের বেশির ভাগই প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহননের

পথ বেছে নেয়।

কেউ প্রেম করার কারণে ব্যক্তিগতভাবে বিয়ের চাপে থাকে। আবার পরিবার মেনে না নিলে সংসারে অশান্তি দেখা দেয়। আল্লাহর অবাধ্য হয়ে হারাম রিলেশনে যুক্ত হয়ে আবার তা না পাওয়ার কারণে দুনিয়ার সকল আপন বন্ধন ছিন্ন করে নিজেকে শেষ করে দেন কেউ কেউ।

আচ্ছা একে-তো হারাম করেছেন বিবাহ বহির্ভূত প্রেম করে। তার ওপর অনেকে হারাম শারীরিক সম্পর্ক করে তথাকথিত প্রেমের দায় রক্ষা করে! ফলে অনেকেই ফিরে আসার পথ হারিয়ে অন্ধকার ভবিষ্যতে নোঙর করে।

আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন। 

অনুরোধঃ- বই :  শুদ্ধতার পাঠশালা - সত্যসন্ধানী টিম এর প্রি অর্ডার চলছে ... তাই শুদ্ধতার পাঠশালা বইটি PDF Free Download চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না।
We Respect Every Author Hardwork - boipaw.com™

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ