সংক্ষিপ্ত তাজউইদ - লেখক : আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর | Songkhipto Tajwed By Abdullah IBN Zafar

সংক্ষিপ্ত তাজউইদ (pdf free download no available)
লেখক : আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর
প্রকাশনী : Inbaat Publication
বিষয় : কুরআন বিষয়ক আলোচনা
পৃষ্ঠা : 136, কভার : পেপার ব্যাক
ভাষা : আরবী, বাংলা
Image

“কুরআন, আল্লাহর মহিমান্বিত বাণী। আমার জীবনের সংবিধান। কিন্তু এর কতটুকু মর্যাদা দিতে পেরেছি আমি? বয়স অনেক হয়ে গিয়েছে তবুও রবের পাঠানো চিঠিটা আমি ঠিকমতো পড়তেও জানি না। পরম যত্নে গিলাফে জড়িয়ে শেল্ফের ওপর রেখে দিয়েছি। ধুলোর পুরু আস্তরণ পড়ে গিয়েছে এতদিনে, তবু কুরআনটা আমি খুলেও দেখি না। দুনিয়ায় যত পদের শিক্ষা রয়েছে, সবই তো মানুষ আয়ত্ত করছে, তা যতই কঠিন হোক না কেন। 

কিন্তু কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষার বেলায় এসে আমার যত আলসেমি আর অবহেলা। কুরআনের সাথে এরূপ আচরণ এটিই প্রমাণ করে যে, কুরআনের প্রতি আমার ভালোবাসা মুখগহ্বর পার হয়ে অন্তরে পৌঁছাতে পারেনি। এখনো কি সময় হয়নি আল্লাহর কালাম শেখার?” দেখুন তো, ওপরের কথাগুলো আপনার সাথে মিলে যাচ্ছে কি না?
সংকলকের কথা ...

بسم اللہ الرحم رحمن الرحيم الحمد لله رب العالمين والعاقبة للمتقين . د الله ، إمام والصلاة والسلام على عبده ورسوله نبینا محمد بن عبدا الدعاة إليه وصلى الله وسلم وكرم وبارك عليه وعلى آله وعلى أصحابه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين أما بعد

আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি অসীম দয়ালু ও পরম করুণাময়। সকল প্রশংসা জগতের প্রতিপালকের জন্য এবং অন্তিম প্রতিদান মুত্তাক্বীদের জন্যই। সলাত ও সালাম আল্লাহর বান্দা, রাসূল, আমাদের নবী মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ -এর ওপর, যিনি আল্লাহর পথে আহ্বানকারীদের ইমাম। তাঁর ওপর আল্লাহ -এর দয়া, অনুগ্রহ ও বরকত নাযিল হোক। অনুরূপ তাঁর পরিবার ও তাঁর সাহাবীদের ওপর এবং কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তাঁদেরকে উত্তমভাবে অনুসরণকারীদের ওপর।

অন্ধকারে ডুবে থাকা মানুষদেরকে সরল পথের খোঁজ দিতে আল্লাহ নাযিল করেছেন তাঁর শেষ কিতাব, কুরআনুল কারীম। এ এমন এক ঐশী গ্রন্থ যা মূলত রবেরই কালাম। এতে নেই কোনো বক্রতা, রয়েছে হিদায়াতের নূর। সেই কুরআন পাঠ করতে হয় নির্দিষ্ট শৃঙ্খলা বজায় রেখে ও নিয়ম-কানুনের দিকে সূক্ষ্ম নজর দিয়ে। এটি তিলাওয়াত করতে হয় ঠিক সেভাবেই, যেভাবে আল্লাহর মনোনীত রাসূল মুহাম্মাদ তিলাওয়াত করেছেন এবং যেভাবে তিনি সাহাবীদের শিখিয়েছেন। তিলাওয়াতের সেই মানদণ্ড বজায় রাখতেই তাজউইদ-শাস্ত্রের উৎপত্তি ও বিকাশ।


‘আত-তাজউইদ’ (১১), ২া) শব্দটি এসেছে আরবী শব্দ থেকে যার অর্থ 'সুন্দর' বা ‘ভালো’। পারিভাষিকভাবে বলা যায়, কুরআন তিলাওয়াত সঠিক, নির্ভুল ও সুন্দর করতে যে শাস্ত্রের প্রয়োগ হয় তাকে তাজউইদ বলে। তাজউইদ এমন এক জ্ঞান, যে জ্ঞান হাসিল করা প্রত্যেকের জন্য ফরজ। অন্তত তাজউইদের ততটুকু জ্ঞান প্রত্যেক মুসলিমের থাকতেই হবে, যতটুকু থাকলে কুরআন শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করা সম্ভব হয়। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এই কিতাবটি সাজানো। কিতাবটিতে তাজউইদের সেই বিষয়গুলোই কেবল আনা হয়েছে যতটুকু একজন মুসলিমের না জানলেই নয়, যতটুকু না জানলে কুরআনের তিলাওয়াত শুদ্ধ হবে না।

আদতে উক্ত শাস্ত্র সুবিশাল সমুদ্রের মতোই, যেই সমুদ্রের অপর বেলাভূমি দৃষ্টিগোচর হয় না কখনোই। কিন্তু সাধারণ মানুষের সবটুকু না জানলেও চলে, তাই আমাদের মুসলিম-সমাজে তাজউইদের আবশ্যক সিলেবাসকে বিভিন্ন আঙ্গিকে সংক্ষেপণ করা হয়ে থাকে। এ কারণে অধিকাংশ মানুষের এ রকম ধারণা রয়েছে যে, তাজউইদ হয়তো মৌলিকভাবেই সংক্ষিপ্ত একটি অধ্যায়। আর এ ভাবনা থেকেই অনেকেই তাজউইদের একদম সাধারণ ও প্রাথমিক জ্ঞান রপ্ত করেই মনে করতে থাকেন যে, এই বিষয়ক পড়ালেখার বুঝি আর কোনো দরকার নেই। এমনটি ভাবা অবশ্যই দূষণীয়।

অধমের সংকলিত আরেকটি বই 'মালামিহু ফিত তাজউইদ'। সেই বইটিতে তাজউইদের বিস্তৃত ইতিহাস, ঐতিহ্য, ক্রমবিকাশ ও বিস্তারিত আহকাম একত্রে সংকলিত হয়েছে এবং বইটি তাদের জন্য উপাদেয় যারা তাজউইদ-শাস্ত্র নিয়ে গভীরভাবে পড়াশোনা করতে চান। অপরদিকে, কুরআন শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করতে পারাই কেবল যাদের উদ্দেশ্য তাদের জন্য 'সংক্ষিপ্ত তাজউইদ' বইটি উপকারী হতে পারে। ‘সংক্ষিপ্ত তাজউইদ' বইটি মূলত ‘মালামিহু ফিত তাজউইদ' বইটির বিস্তারিত আহকাম অংশের সংক্ষিপ্তরূপ। 

তবে প্রয়োজনের খাতিরে কিছু সংযোজনও এতে যুক্ত করা হয়েছে। যেমন : বইয়ের ‘আদব' অধ্যায়টি handeli al, Sylhet, কিতাব থেকে নেয়া। তাজউইদের হুকুম-আহকামের আলোচনার পর তিলাওয়াত চর্চা ও শুদ্ধিকরণের জন্য বহুল পঠিত মোট নয়টি সূরা (সূরা ফাতিহা, সূরা কাফিরূন, সূরা আসর, সূরা নাসর, সূরা কাউসার, সূরা ইখলাস, সূরা মাসাদ, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস) নিয়ে শাব্দিক আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু আমাদের উপমহাদেশে ইন্দোপাক/মাজেদী লিপির মুসহাফ অধিক পঠিত তাই বইয়ের আরবী শব্দ বা উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে উক্ত মাজেদী লিপিই ব্যবহৃত হয়েছে।

বইটিকে যথেষ্ট সংক্ষিপ্ত ও সহজ করতে তাজউইদের মৌলিক কিছু বিষয়কে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীগণ সহজে রপ্ত করতে পারে। ফলে অনেকের কাছে মনে হতে পারে যে, বইয়ে তাজউইদ বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়েছে। যেহেতু উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে তিলাওয়াত শিক্ষা দেয়া, তাজউইদের বিস্তারিত আহকাম বা সংজ্ঞাদি শেখানো উদ্দেশ্য নয়, তাই এরূপ সংক্ষেপণ বৈধ। তবে এই বইটিতে উল্লেখিত সকল নিয়ম-কানুনের বিস্তারিত রূপ প্রদত্ত রয়েছে মালামিহু ফিত তাজউইদ' বইটিতে। তাই এরূপ চিন্তা হলে অবশ্যই উক্ত বইটি দ্রষ্টব্য।

তবে নিজেকে ভুলের ঊর্ধ্বে মনে করছি না। আল্লাহ এই জ্ঞানহীন, গুনাহগার বান্দার কীবোর্ড থেকে যা কিছু বের করে এনেছেন তাতে ভুল থাকতেই পারে। সেসব ভুলের জন্য বিতাড়িত শয়তান ও আমি নিজে দায়ী। এরূপ কোনো ভুল চোখে পড়লে নির্দ্বিধায় আল্লাহর এই বান্দাকে স্মরণ করবেন, লজ্জিত হয়ে ভুল শুধরে নেব ইন শা আল্লাহ।

দুনিয়ার এই পথচলায় রসদ জোগানো হয়নি কিছুই। তাই আল্লাহ আমার এতটুকু

মেহনত আমার নিজের ও অন্যের আখিরাতের পাথেয় করুন, এই ফরিয়াদ রইল রবের

নিকট।

আব্দুল্লাহ ইবনে জা'ফর

৫ রজব, ১৪৪৩

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২।



১. কুরআন পাঠের আদব

আলেমগণ তিলাওয়াতের জন্য নির্দিষ্ট কিছু শিষ্টাচার নির্ধারণ করেছেন যা তিলাওয়াতের পূর্বে ও তিলাওয়াতের মাঝে অনুসরণীয়।

* পরিপূর্ণ ইখলাস, আল্লাহ -কে খুশি করা ও সওয়াব অর্জনের নিয়ত অন্তরে ধারণ

করা। ★ তিলাওয়াতের পূর্বে পবিত্রতা অর্জন করা জরুরি। শরীর, কাপড় ও স্থানের

পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা ও মিসওয়াক করে নেয়া কাম্য।

মুসহাফ!১] ওযু ব্যতীত স্পর্শ করা জায়েয নয় এবং জুনুব (সহবাস বা বীর্যপাতজনিত নাপাকি) অবস্থায় কুরআন দেখে কিংবা মুখস্থ তিলাওয়াত করা নিষেধ, যতক্ষণ না ফরজ গোসল সম্পন্ন করা হয়। নারীদের ক্ষেত্রে হায়েয অবস্থায় স্মৃতিশক্তি থেকে কিংবা কুরআন স্পর্শ না করে তিলাওয়াত করা বৈধ রয়েছে। যে

★ তিলাওয়াতের সময় কিবলামুখী হয়ে বসা কাম্য।

★ তিলাওয়াতের শুরুতে আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাওয়া, যাতে শয়তান তিলাওয়াতের মাঝে ভুল করাতে না পারে, তিলাওয়াতের সময় দুনিয়াবী কোনো মোহের প্ররোচনায় ফেলতে না পারে এবং কুরআনের তাদাব্বুর থেকে যাতে বিরত

[১] কুরআনের কপি।

[২] হানাফী মাযহাব মতে হায়েয অবস্থায় কোনোভাবেই তিলাওয়াত বৈধ নয়।

[৩] কুরআন পাঠের পূর্বে বলে আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাওয়াকে বলা হয় 'ইস্তি'আযা’ (63Gazl)। তবে এটাও উল্লেখ থাকে যে, ইস্তি’আযা কেবল মুখে মুখে বললেই চলবে না, শয়তানের চক্রান্ত থেকে নিজেকে পরিপূর্ণ বিরত রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। [৪] কুরআন তিলাওয়াতের পূর্বে ইস্তি'আযা পাঠ করা মুস্তাহাব। [] তবে অনেকে একে ওয়াজিবও বলেছেন।

★ ইস্তি'আযা পাঠ করার পর কুরআন তিলাওয়াতের পূর্বে বলতে হয় :

بسم الله الرحمن الرحيم

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে।

"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম' বলে আল্লাহর নামে তিলাওয়াত শুরু করাকে বলা হয় ‘বাসমালা’ (Acne)। প্রতিটি সূরার শুরুতেই বাসমালা রয়েছে; সূরা তাওবাহ ব্যতীত। এমনকি অনেক ফক্বীহ বাসমালাকে সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াত হিসেবে অন্তর্ভুক্তও করে থাকেন। বাসমালার মাধ্যমে পরপর দুটি সূরাকে আলাদা করা সম্ভব হয়। যখন বাসমালা নাযিল হতো তখন রাসূল বুঝতেন যে, নতুন সূরা নাযিল হচ্ছে।[৬]

★ তিলাওয়াতের সময় তাজউইদের হুকুম-আহকাম পরিপূর্ণভাবে খেয়াল করা বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া যতটুকু সম্ভব কণ্ঠ সুন্দর, সুললিত ও আবেগময় করার বিষয়ে হাদীস থেকে নির্দেশনা পাওয়া যায়।

[৩] তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা নাহল, ৯৮-এর তাফসীর

[৪] ইগাসাতুল লাহফান, ইবনুল কাইয়্যিম

[৫] তাফসীরে তাবারী

[৬] সুনানে আবু দাউদ, ৭৮৮


★ আল্লাহর কালামের অর্থের প্রতি খুশু থাকতে হবে। আয়াতে কী বোঝানো হচ্ছে সেটার প্রতি তাদাব্বুর, তাফাক্কুর করতে হবে।

★ কুরআনের আদেশ-নির্দেশ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা ও কুরআনকে নিজের আখলাক হিসেবে অবলম্বনে সচেষ্ট হতে হবে। আমল ব্যতীত ইলমে কোনো ভালাই

নেই।

★ তিলাওয়াতে অতিরঞ্জন ও জটিলকরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। অতিরিক্ত প্রসারিত করে তিলাওয়াত করা, মাত্রাধিক্য কৃত্রিম প্রতিধ্বনি যুক্ত করা, উচ্চ সুর প্রয়োগ করা, গানের সুরে তিলাওয়াত করা, তিলাওয়াতের এমন স্থানে থামা যেখানে থামলে অর্থের পরিবর্তন ঘটে—এই সবই বর্জনীয়।

★ তিলাওয়াতের মাঝে হাসাহাসি করা বা অপ্রয়োজনে পানাহার করা থেকে বিরত থাকা, এ সময় অপ্রয়োজনীয় দুনিয়াবী কথায় মশগুল না হওয়া, বাম হাত দিয়ে মুসহাফ ধরা বা স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি কুরআনের আদবের অন্তর্ভুক্ত।

★ তিলাওয়াতের মাঝে আল্লাহর রহমতের আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে তাঁর রহমত চাওয়া, আযাবের আয়াত আসলে আযাব থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া, তিলাওয়াতের মাঝে সাজদাহর আয়াত আসলে সাজদাহ করা ও সুজুদে তিলাওয়াতের দুআ পড়া,৭] তাসবীহের আয়াত আসলে তাসবীহ পড়া, কোনো কিছু চাওয়ার ব্যাপারে আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং পানাহ চাওয়া সম্পর্কিত আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া।

★ তিলাওয়াতের সময় হাই তোলা থেকে বিরত থাকা। কেননা, হাই তোলা অলসতার প্রতীক এবং তা আসে শয়তানের তরফ থেকে। অপরদিকে, কুরআন হচ্ছে আল্লাহর কালাম।

[৭] সুজুদে তিলাওয়াতের পড়তে হয়- 

তাজউইদ সম্পর্কিত  আরো পড়তে অথবা জানতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন।
We Respect Every Author Hardwork - boipaw team

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ