Title রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি
Author মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
Publisher বাতিঘর প্রকাশনী
Quality হার্ডকভার
ISBN 9789848729755
Edition ২১তম নব সংস্করণ, ২০২১
Number of Pages 271
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা
গন্ধটা যেনো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো তাকে ! ট্যাক্সিক্যাবের দরজা খুলে মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে টের পেলো বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে অদ্ভুত একটি গন্ধ । এ জীবনে নেয়া যতো গন্ধ আছে তার মধ্যে এটি একেবারেই অজ্ঞাত । এর মধ্যে যে সম্মোহনী ক্ষমতা রয়েছে । সেটাও টের পেলো খুব দ্রুত । টানা চার - পাঁচ ঘণ্টা ক্যাবে করে ভ্রমণ করার পর এমনিতেই খিদেয় পেট চৌ চৌ করছিলো , প্রলুব্ধকর গন্ধে সেটা যেনো বিস্ফোরণের মতো ছড়িয়ে পড়লো এবার । তার থেকে মাত্র বিশগজ দূরে , রাস্তার পাশে রেস্টুরেন্টটি দেখতে পেয়ে সানগ্লাস খুলে ভালো করে তাকালো । সাইনবোর্ডে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অদ্ভুত আর অপ্রচলিত নামটি । দুই ঠোঁটে চেপে রাখা জ্বলন্ত সিগারেটে জোরে টান দিলো সে । পা বাড়ানোর আগে ট্যাক্সি ক্যাবের দিকে ফিরে তাকালো ।
ড্রাইভার জানালা দিয়ে মাথা বের করে রেখেছে । তার সাথে চোখাচোখি হতেই মাথা নেড়ে সায় দিলো লোকটি চলে যাবার ইশারা করতেই হুস্ করে শব্দ তুলে ট্যাক্সিক্যাবটি চলে গেলো । তার চোখের সামনে যে রেস্টুরেন্টটি দাঁড়িয়ে আছে সেটা গর্বসহকারেই জানান দিচ্ছে : রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি ! একদম সত্যি কথা । আমিও কখনও এখানে আসতাম না , যদি ... বুক ভরে গন্ধটা নিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালো সে । মহাসড়কের পাশে চমৎকার একটি বাংলো বাড়ির মতো একতলার এই রেস্টুরেন্টটির সামনে লম্বা বারান্দা , সেই বারান্দার উপরে সবুজ রঙ করা টিনের ছাউনি । বড় বড় ফ্রেঞ্চ জানালা আর নক্সা করা বিশাল একটি কাঠের দরজা - এক নজরেই জায়গাটা মানসপটে স্থান করে নেবে । রাস্তার পাশে এমন চমৎকার রেস্টুরেন্ট খুব কমই আছে । মহাসড়কের পাশে যেসব রেস্টুরেন্ট থাকে সেগুলো মূলত যাত্রিবাহী বাসের স্টপেজ হিসেবে কাজ করে ।
বড়বড় বাস - সার্ভিস কোম্পানি নিজেরাই কিছু রেস্টুরেন্টের মালিক । ওগুলোর সামনে বিশাল খালি জায়গা রাখা হয় বাস - কোচ পার্ক করার জন্য কিন্তু এই অদ্ভুত রেস্টুরেন্টটি সে - রকম নয় । এর সামনে যে খোলা জায়গাটি আছে সেখানে বড়জোর দশ - বারোটি প্রাইভেটকার রাখা যাবে । সম্ভবত দূরপাল্লার কোনো বাস - কোচ এখানে রাখা হয় না । তাহলে কোথায় রাখা হয় ? জবাবটা পেয়ে গেলো রেস্টুরেন্টের বামদিকে । রবীন্দ্রনাথের এক - দেড়শ ' গজ দূরে একটি পেট্রলপাম্প । সেখানে অনেকগুলো বাস - ট্রাক - কোচ দাঁড়িয়ে আছে । চারপাশে তাকিয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে নজর দিলো আবার । এ মুহূর্তে সামনের প্রাঙ্গণে সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকার আর কালো রঙের মাইক্রোবাস ছাড়া কিছু নেই । দুপুর গড়িয়ে গড়িয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বিকেলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । সবকিছু যেনো ঝিমিয়ে পড়েছে এখানে ।
মহাসড়কটিও অলসভাবে পড়ে আছে মৃত সাপের মতো । অনেকক্ষণ পর পর দুয়েকটা বাস - ট্রাক যাচ্ছে - আসছে তার উপর দিয়ে । রেস্টুরেন্টের আশেপাশে ডোবা - নালা আর ধানক্ষেত । পেছনে , বহু দূরে একটি গ্রামীণ জনপদ । বিস্তীর্ণ ক্ষেতের মাঝে গুচ্ছ গুচ্ছ কৃষকের বসতবাড়ি । সরু একটি পথ চলে গেছে সেই বসতবাড়িগুলোর দিকে । মেঠোপথের দু - ধারে প্রচুর আবাদি জমি । মাঝে - মাঝে ছোটো - বড় ডোবা - নালা , পুকুর , খাল । চারদিকে তাকালে সবুজ প্রান্তরে আকাশ মিশে যাবার সেই চিরায়ত দৃশ্য চোখে পড়ে । বারান্দার কাছে এসে একটু থেমে সুখটান দিয়ে সিগারেটটা ছুড়ে ফেলে দিলো । ধূমপান নিষেধ লেখা সাইনের পাশেই নক্সা করা বিশাল দরজা , সেটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই থমকে গেলো কয়েক মুহূর্তের জন্য । হালকা ভলিউমে রবীন্দ্রসঙ্গীত ভেসে বেড়াচ্ছে । অবাক হলো না সে ।
এটা প্রত্যাশিতই ছিলো , বিশেষ করে এরকম নামের একটি রেস্টুরেন্টে । ঘরের ভেতরে নজর দিলো এবার । সাজসজ্জা আর পরিবেশ একদমই আলাদা । টেবিল - চেয়ারগুলো একটু ভিন্নভাবে সাজানো । এক একটা রাউন্ড টেবিল ঘিরে আছে তিন থেকে চারটা করে চেয়ার । এরকম পাঁচ - ছয়টি টেবিল আছে ঘরে । সর্বোচ্চ বিশ - পঁচিশজন বসতে পারবে । এই বিশাল জায়গাটি যতো কাস্টমার ধারণ করতে পারে তার অর্ধেকের বসার ব্যবস্থা রয়েছে । এর মালিক যেনো স্পষ্ট একটি বার্তা দিচ্ছে সবাইকে : আমি নিছক টাকা কামানোর জন্য রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করি না । আমি যেটা করি সেটা এক ধরণের শিল্প !
রিভিউ : রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি
আপনি কি আপনার চিরযৌবন ধরে রাখতে চান? ধরে রাখতে চাইলে কি করবেন তা জানার জন্য পড়ুন " রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি"
হা হা একটু মজা করলাম। আপনারা সবাই জানেন "রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি" এটি একটি থ্রিলারধর্মী উপন্যাস। উপন্যাসটি বাংলাদেশ যেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঠিক তেমনি ভারতেও এই উপন্যাস বেশ জনপ্রিয়। মূলত কাকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাস গড়ে উঠেছে?
সে আর কেউ নয় মুসকান জুবেরী এবং নুরে ছফা। নুরে ছফা একজন ডিটেকটিভ।একজন নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় নুরে ছফাকে।নুরে ছফা জানতে পারে সেই নিখোঁজ ব্যক্তিদের শেষ লোকেশন একটি গ্রামে। তদন্তের উদ্দেশ্যে সেই গ্রামে হাজির হয় নূরে ছফা। গাড়ি থেকে নেমে দেখতে পায় একটি হোটেল যার নাম রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি। আজব লাগায় সে বেশ কৌতূহল অনুভব করে এবং সে হোটেলে ঢুকে করে খাবার অর্ডার করে। সে দেখে হোটেলটির পরিবেশ অন্যান্য হোটেলের তুলনায় ভিন্ন। শুধু তাই নয় হোটেলের বিভিন্ন তৈজসপত্র বেশ ভিন্ন ধরনের।
সে যখন খাবার অর্ডার করার জন্য মেনু কার্ড দেখে তখন সে দেখে প্রতিটি খাবারের নামের সাথে মুসকান শব্দটি রয়েছে। যখন সে অর্ডার বয়কে অর্ডার দেয় তখন সে অর্ডার বয়কে মুসকান কথাটি লেখার কারণ জিজ্ঞাস করে। অর্ডার বয় বলেন যে এই হোটেলটির মালিক মুসকান জুবেরী। সে এই হোটেলটি চালায়। অজপাড়াগায় একজন মহিলা একা এত বড় হোটেল চালাচ্ছে তা শুনে নুরএ ছফা অবাক হয়। সে যে সকল খাবার গুলো অর্ডার করে সে সেই সকল খাবারগুলোকে খেয়ে খুবই তৃপ্তি অনুভব করে এবং হোটেলটি থেকে বাইরে বেরিয়ে একটি চায়ের দোকানে সিগারেট কিনতে যায়।চায়ের দোকানে তার সাথে পরিচয় হয় আতর আলীর সঙ্গে। আতরআলী একজন খোচর। গ্রামের সকলের খবরই তার জানা। নুরে ছফা যখন আতর আলীর কাছে মুস্কান জুবেরির সম্পর্কে জানতে চায় তখন আতরআলী মুসকান জুবেরিকে ডাইনি বলে আখ্যায়িত করে।
নূরের ছফা আতরআলী সাহায্যে ওই নিখোঁজ ব্যক্তিকে খোঁজার তদন্ত শুরু করেন।
কিন্তু তাদের তদন্তের সাথে জড়িয়ে পড়ে মুসকান জুবেরী। এক সময় মুসকান জুবেরী নুরে ছফাকে তার বাসায় নিমন্ত্রণ দেন এবং নুরে ছফা সেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করার জন্য তার বাসায় উপস্থিত হয়। সেই সময় নুরে ছফা মুস্কান জুবেরি সম্পর্কে অনেক অপ্রিয় তথ্য সংগ্রহ করেন। নুরে ছফা জানতে পারে মুসকান জুবেরী অত্যন্ত বয়স্ক হওয়া সত্বেও তার রূপ ২৫/৩০বছরের যুবতীদের মতো।সে কীভাবে তার রূপ-যৌবন এত ধরে রেখেছে সেই সম্পর্কে মুস্কান জুবেরী নুরে ছফাকে বলে। নুরে ছফা সেই সব শুনে অবাক হয়ে যায়। কিন্তু আফসোস, নুরে কথা সেই সব মনে রাখতে পারে না। কেন পারে না তা জানতে হলে আপনাদের বইটি পড়তে হবে।শুধু তাই নয় কিভাবে মুস্কান জুবেরী তার রূপ যৌবন ধরে রেখেছে তা জানতে আপনাদেরকে পড়তে হবে রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি।
শুধু এইটুকু বলে রাখি উপন্যাসটির নাম রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি হওয়ার কারণঃ
মুস্কান জুবেরী অত্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ভক্ত। যে গ্রামে মুস্কান জুবেরী তার হোটেলটি স্থাপন করেছে সেই স্থানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথের আসার কথা থাকলেও ব্যক্তিগত কারণে সে আসতে পারেন নি।সেই আক্ষেপ থেকেই মুস্কান জুবেরী তার হোটেলের নাম রেখেছে রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি।
এই বই নিয়ে বলা শুরু করলে থামা যাবে না। কিন্তু এই উপন্যাসটির থ্রিলিং পার্ট সম্পর্কে আমি যদি আপনাদের বলে দেই তাহলে আপনারা বইটি প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।তাই আর বেশি কিছু বলবো না।
তবে এই উপন্যাসটি আপনাদের পড়ার জন্য অনুরোধ করলাম।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....