আগামী দিনের সভ্যতা ইসলাম - লেখক : ড. ইউসুফ আল কারযাভী | Agami Diner Shovvota Islam by Dr. Yousuf Al Karjavi


আগামী দিনের সভ্যতা ইসলাম - লেখক : ড. ইউসুফ আল কারযাভী | Agami Diner Shovvota Islam by Dr. Yousuf Al Karjavi

আগামী দিনের সভ্যতা ইসলাম
লেখক : ড. ইউসুফ আল কারযাভী
প্রকাশনী : মক্তব প্রকাশন
বিষয় : মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতি
ভাষা : বাংলা

'আগামী দিনের সভ্যতা ইসলাম' (the future civilization of Islam) হলো লেখক : ড. ইউসুফ আল কারযাভী, রচিত জনপ্রিয় একটি ঐতিহাসিক বই। এই বইটি মূলত ইংরেজি এবং এটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। বিশ্বমানবতার সকল সংকট থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হল ইসলামী সভ্যতার বিনির্মাণ। মুসলমানগণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সাংস্কৃতিক ভাবে পিছিয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গোটা মানবতা, গোটা বিশ্বব্যবস্থা।মুক্তিকামী মানুষের প্রিয় ব্যক্তিত্ব, প্রখ্যাত আলেম প্রফেসর ড. ইউসুফ আল কারজাভীর অসাধারণ একটি গ্রন্থ “আগামী দিনের সভ্যতা ইসলাম”। যা আগামী প্রজন্মের সামনে সভ্যতা বিনির্মাণের চিন্তাকে অগ্রসর করাবে।


ইসলাম একটি জীবনাদর্শ- মানুষের সামগ্রিক জীবনের জন্যে উপযোগী একটি বাস্তবধর্মী বিধান । ইসলামের একটি তাত্ত্বিক দিক আছে । তা বিশ্ব প্রকৃতির ব্যাখ্যা দান করে এবং এর মাঝে মানুষের পজিশন নির্দেশ করে । নির্ধারণ করে মানব জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য । ইসলামের তাত্ত্বিক উৎস থেকে উৎসারিত হয় বিভিন্নমুখী ব্যবস্থা ও সংগঠন । এগুলো আবার মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় হয় বিকশিত । নৈতিকতা , সমাজ ব্যবস্থা , রাজনীতি , অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক- এসব কিছু সম্বন্ধেই ইসলামের আছে সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ । এই সার্বজনীন বৈশিষ্টের কারণে অচিরে মানব জীবনের সব দিক ও বিভাগ স্বীয় আওতাধীন করে ইসলাম পূর্ণরূপে বিকশিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে । 

আমার বিশ্বাস , ইসলামই হবে আগামী দিনের জীবন বিধান । ইসলাম সর্বব্যাপক এবং এর ব্যবস্থাগুলো পরস্পর সংগতিপূর্ণ । মানুষের জীবন , প্রয়োজন এবং কর্ম - প্রবাহের কোন একটি দিক সম্বন্ধেও ইসলাম উদাসীন নয় । ইসলাম বাস্তব জীবন হতে বিচ্ছিন্ন শুধু আবেগ - প্রসূত ধর্মীয় বিশ্বাসের নাম নয় । এটা ন্যূনতম পূজা - অর্চনার বিধি ব্যবস্থার নামও নয় যা ব্যক্তিগতভাবে বা সমষ্টিগতভাবে সম্পন্ন করলে ঈমানের দাবী আদায় হয়ে যায় । অন্যান্য অনেক মতবাদ মানুষের পার্থিব সমৃদ্ধি সাধন করতে গিয়ে ধর্মকে এড়িয়ে গেছে । সেই অভাবটুকু পূরণ করে শুধু পারলৌকিক জীবনে জান্নাত প্রাপ্তির পথ দেখাবার নামও ইসলাম নয় । 

ইসলামী ব্যবস্থার বিস্তৃতি এতো ব্যাপক যে বাস্তব জীবনের সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সম্পর্কহীন একটা আবেগভিত্তিক বিশ্বাস হিসেবে একে প্রমাণ করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য । দৈনন্দিন জীবনে এর সুস্পষ্ট অনন্য অনুষ্ঠানগুলো , এর ন্যায় - শাস্ত্র এবং পদ্ধতি - বিদ্যা অনুসরণ না করে যারা কতিপয় ধর্মীয় আচার মেনে চলে তাদেরকে আখিরাতে জান্নাত প্রাপ্তির প্রতিশ্রুতি প্রদানকারী প্রত্যয়বাদ হিসেবেও ইসলামকে বিবেচনা করা যায় না । ধর্মীয় বনাম জাগতিক এই দু'ভাগে জীবনকে ভাগ করা ইসলাম কোনদিন স্বীকৃতি দেয়নি । অন্যান্য যেসব মতবাদ নিজেদেরকে “ ধর্মীয় ” বলে দাবী করে কেবল ওগুলোই জীবনের এই বিভাজনকে স্বীকৃতি দেয় , ইসলাম নয় । 

আমরা দেখতে পাচ্ছি ইসলামকে আবেগ ও ধর্মীয় আচার - অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমিত রাখার উদ্দেশ্যে বেশ কিছুকাল পূর্ব থেকেই একটা প্রচেষ্টা পরিচালিত হচ্ছে । জীবনের বিভিন্নমুখী কার্যাবলী থেকে ইসলামকে বিচ্ছিন্ন রাখা এবং মানব জীবনের জাগতিক দিকের ওপর এর সামগ্রিক প্রতিপত্তি প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে । ইসলামের সর্বব্যাপকতা , বাস্তবমুখীনতা এবং প্রাধান্যের কারণে আন্তর্জাতিক খৃস্টবাদ সারা মুসলিম জাহানে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচার - প্রপাগ্যাণ্ডার নিরবচ্ছিন্ন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে । ইসলামের এই বৈশিষ্টগুলো চক্রান্তকারী আন্তর্জাতিক ইহুদীবাদের হয়রানীর কারণ হিসেবে বহুকাল বিরাজ করেছিলো । শিগগিরই খৃস্টবাদ এবং ইহুদীবাদ একত্রিত হলো । 

তাদের লক্ষ্য : ইসলামের চূড়ান্ত ধ্বংস ডেকে আনার জন্যে প্রথমে একে একটা আবেগ - ভিত্তিক আচার - অনুষ্ঠান সর্বস্ব একটা ধর্মরূপে প্রমাণ করা । বাস্তব জীবনে ইসলামী ব্যবস্থার যে শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে তাকে খর্ব করার ইচ্ছা নিয়েই এরা এই কাজ করে চলছে । বড়ো রকমের প্রচেষ্টা চালিয়ে তারা সফলও হয়েছে । তাদের প্রচেষ্টা সাফল্যের সর্বোচ্চ সীমা অর্জন করেছে কামাল আতাতুর্কের মাধ্যমে । কামাল আতাতুর্ক ইসলামী খিলাফতের পরিসমাপ্তি ঘটালেন । ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করলেন এবং তাঁর দেশকে পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করলেন । বিদেশী শাসনাধীন থাকাকালে অপরাপর মুসলিম দেশগুলোতেও এই ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে । এই প্রচেষ্টার লক্ষ্য ছিলো ইসলামী শরীয়াতকে আইনের একমাত্র উৎস হবার মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা , এর পরিবর্তে ইউরোপীয় আইন - কানুনের প্রচলন করা এবং ইসলামী শরীয়াতকে ' ব্যক্তিগত আইন ' নামে জীবনের এক সংকীর্ণ পরিসরে সীমাবদ্ধ করা । কামাল আতাতুর্কের মাধ্যমে চক্রান্তকারীদের প্রথম বিজয় অর্জিত হলো । 

এবার শুরু হলো পরবর্তী পদক্ষেপ- দ্বিতীয় লড়াই । সেই লড়াই চলছে আজকের সবগুলো মুসলিম দেশেই যেগুলো একদিন ছিলো ' ইসলামিক ’ । এমনকি শুধু ধৰ্ম হিসেবেও ইসলামকে উৎখাত করার চক্রান্ত চলছে । ইসলামের আসনে ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী ধ্যান - ধারণাকে বসাবার অশুভ প্রচেষ্টা তীব্রতর হচ্ছে । ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ধেয়ে আসছে তার নিজস্ব মূল্যমান , অনুষ্ঠান এবং ব্যবস্থা নিয়ে । ঈমানের অনুপস্থিতির কারণে সৃষ্ট শূন্যতাকে কুফরী মতবাদ দিয়ে পূরণ করার অভিপ্রায়ে এই তৎপরতা পরিচালিত হচ্ছে । ইসলামী পুনর্জাগরণের নেতা ও কর্মীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালানো হচ্ছে । নিপীড়নমূলক ব্যবস্থাদি গৃহীত হচ্ছে । পৃথিবীর সর্বত্র একই দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় । অপরাপর বিবদমান শক্তিগুলো কোনকালে কোন বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেনি । কিন্তু ইসলামের বিরোধিতার ক্ষেত্রে আজ তারা সবাই হাত মিলিয়েছে । তাদের সবার মনে আতংক । আসন্ন ইসলামী পুনর্জাগরণ- স্বাভাবিক কারণেই যার আবির্ভাব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ