আলোর ফেরিওয়ালা : লেখক মুহাম্মদ বরকত আলী | Alor Feriwala by Mohammad Borkot Ali

Titleআলোর ফেরিওয়ালা
Authorমোঃ বরকত আলী
Publisherশব্দভূমি প্রকাশনা
Qualityহার্ডকভার লিংক
Edition1st Published, 2020
Number of Pages80
Countryবাংলাদেশ
Review Credit 💕Harun Ar Rashid (click)
আলোর ফেরিওয়ালা : লেখক মুহাম্মদ বরকত আলী | Alor Feriwala by Mohammad Borkot Ali
আলোর ফেরিওয়ালা : পূর্নাঙ্গ কভার ফটো




কদমতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জুনিয়র শিক্ষক তপু মাস্টারের উপস্থিতির মাধ্যমে উত্তম পুরুষে লেখা 'আলোর ফেরিওয়ালা' উপন্যাসটির পথচলা শুরু। আলো বিলিয়ে দেয়ার আজন্ম নেশায় বুঁদ হয়ে একটি অজোপাড়া গাঁয়ের কিছু স্বপ্নদৃষ্টা মানুষের জীবন্ত ফসল এই কদমতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সকালের সোনালী রোদের ঝলকানির সাথে তাল মিলিয়ে যেখানে শুরু হয় নিত্য যাত্রা। অন্ধারাচ্ছন্ন সমাজের কুসুমকলিদের মাঝে সভ্যতার আলো ফেরি করে বেড়ানো গাজী নামের এক বোকা মাস্টারের জীবনের নিষ্ঠুর নির্মম গল্পটি পুরো উপন্যাসটিকে দিয়েছে জীবনের গল্পের এক ভিন্ন মাত্রা। 

একটি অবৈতনিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জীবন ঘনিষ্ট কিছু নির্মম সত্য লেখক তার আলোর ফেরিওয়ালা বইটিতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি চেষ্টা করেছেন 'অবৈতনিক' শব্দটাকে পুঁজি করে গ্রামীণ সমাজের মানুষ নামের কিছু দু'পায়া প্রাণির স্বার্থান্বেষী অপতৎপরতা ফুটিয়ে তুলতে।

লেখক বরকত আলী তার অালোর ফেরিওয়ালা উপন্যাসে দেখিয়েছেন, জীবন গল্প নয়। বরং গল্পই জীবন। যে জীবনের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে সোনালী স্বপ্নের আচ্ছাদনে নিষ্ঠুর নিয়তি আর নির্মোহ আবেগ। কিছু মানুষের জন্ম হয়েছে শুধু সভ্যতার আলো বিলিয়ে দিতে, আর কিছু মানুষ আলোর মুখ দেখেছে সভ্যতাকে পুঁজি করে ফেরি করা স্বপ্নগুলো চূর্ণবিচূর্ণ করে স্বীয় জীবনকে লালসার আবেশে সিক্ত করতে। 

আমার কাছে আলোর ফেরিওয়ালা গল্পটিকে মূলত গল্প মনে হয়নি। মনে হয়েছে আমারই সমাজে আমারই চোখের সামনে ঘটে যাওয়া কিছু বাস্তব ঘটনার রিভিউ যেন এই আলোর ফেরিওয়ালা। পাশাপাশি চরম মর্মাহত হয়েছি লেখকের গল্প বলার ধরণ দেখে। আলোর ফেরিওয়ালা গল্পে লেখক চেষ্টা করেছেন সুন্দর কিছু বলার। কিন্তু লেখকের উপস্থাপন কৌশলটা ছিল একেবারেই অগোছালো। বইটি পড়তে গিয়ে অনেক দৃশ্যপটে অনেক কিছুই স্বেচ্ছায় আমাকে বুঝে নিতে হয়েছে। বার বারই মনে হয়েছে, কোথায় যেন একটা খটকা রয়ে গেছে।

বইটির সবচেয়ে অসহনীয় দিক ছিল, প্রচুর ভুল বানান। একটা বইয়ে সর্বোচ্চ কতটা ভুল থাকতে পারে? ১০, ২০, ৩০, ৪০? এই বইটিতে ভুল বানানের পরিমাণ ছিল অসংখ্য। যা প্রিন্টিং মিসটেকের কাতারে যায় না। লেখকের বানানরীতি ছিল আশাহত যাচ্ছেতাই ধরণের। সাহিত্যের মানদণ্ডে বিচার করলে আলোর ফেরিওয়ালার গল্পটি চমৎকার হলেও, গল্প লেখা বা বলার ধরণটা পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি। লেখকে বাক্যচয়ন, শব্দ গঠন, গল্প বর্ণনার ধরণ এবং দৃশ্যপট তৈরিতে আরও দরদী হতে হবে বলে আমি মনে করি। 

উপন্যাসটি উপমা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও লেখক যথেষ্ট উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। 'আপনি' 'তুমি'র ব্যবহার ছিল হ-য-ব-র-ল অবস্থা। বইটির কাগজের মান ভালো থাকলেও বাঁধাই ছিল চলনসই গোছের। বর্ণবিন্যাসের ক্ষেত্রে চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে শব্দভূমি প্রকাশনী। এ বিষয়ে প্রকাশনীকে আরও যত্নশীল হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।

[PDF] Robindronath Ekhane Kawkhono Khete Aashenni - রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি (পিডিএফ)

সবশেষে আবারও বলব, আলোর ফেরিওয়ালা গল্পটি আমার কাছে সত্যিকার অর্থেই ভালো লেগেছে। লেখক চেষ্টা করলে, সাধনা করলে অদূর ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু দিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। প্রিয় পাঠক, জীবনঘনিষ্ঠ গল্প পড়তে চাইলে, সাজেস্ট করব আলোর ফেরিওয়ালা পড়তে পারেন। আমার দৃষ্টিগোচর হওয়া অসঙ্গতিগুলো মেনে নিতে পারলে গল্পটি যে আপনাকে মুগ্ধ করবে, এটি আমার দৃঢ় বিশ্বাস। হ্যাপি রিডিং।

     আলোর ফেরিওয়ালা বই রিভিউ ২

রিভিউ লেখক: রফিকুজ্জামান আকিব
বইয়ের নাম : আলোর ফেরিওয়ালা। 
লেখক৷ : মুহাম্মদ বরকত আলী। (Md Borkot Ali)
প্রকাশক : এইচ. এম. সাদী খান। 
প্রকাশকাল : ২১শে বইমেলা — ২০২০ 
প্রচ্ছদ : হিমেল হক৷ 

বইয়ের মূল বিষয়ের রিভিউ — আমি বইপ্রেমি বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। লেখাটা পড়ে যান। বইটা পড়ে এত ভাল লেগেছে যা বলে বোঝানো যাবে না, এক কথায় অসাধারণ। একটা বাস্তব কাহিনীকে কত সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন লেখক সেটাও আসলে বলে বোঝানো যাবে না, খুবই অসাধারণ। বইটা আর কারো না হলেও আমার মন কেড়েছে, সেজন্য লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ। সমাজের একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে গল্পটা। সমাজে বিনা বেতনে অবসর নেওয়া শিক্ষকদের নিয়ে লেখা হয়েছে গল্পটা। অনেক বস্তব ঘটনাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমাদের সমাজে এখনো অনেক মানুষ আছে যারা তালেব মাস্টার এবং কাদের গাজী মাস্টারের মত বিনা বেতনে, বেতনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে এক সময় বিনা বেতনেই অবসরে গিয়েছেন। কিন্তু তাদের কথা আমরা কেউ ভাবি না। আমাদের উচিত তাদের কথাও ভাবা এবং তাদেরকেও অন্যান্য শিক্ষকদের মত সমান মর্যাদা এবং সন্মানী দেওয়া। আমি এই বইটা পড়ে খুবই দুঃখ পেয়েছি সমাজের এমন একটা বাজে অবস্থা দেখে। 

যারা সারাজীবন নিজের জীবন বাজি রেখে, সুখ রেখে, আমাদের জন্য কষ্ট করেছেন, কিন্তু আমরা তাদের কথা ভাবি না। কেন ভাবি না, আমাদের তো তাদের নিয়েও ভাবা উচিত, তারা কিভাবে চলবে? তারা কিভাবে বাঁচবে? তাদের জীবনটা কেমন? কষ্টের নাকি দুঃখের? এগুলো ভাবা উচিত। আমি এক কথায় বলব, তাদের জীবন খুবই কষ্টের, তারা খুবই কষ্টের সাথে সমাজে জীবিকা করেছেন। আপনারা এই বইটা পড়লে বুঝতে পারবেন সমাজটা কত বৈচিত্র্যময়! মানুষকে জীবনটা কত কষ্টের! কেউ সুখী হয়, আবার কেউ হয় অসুখী! কেমন অসুখী হয় জানতে হলে, আমি বলব অবশ্যই এই বইটা পড়ুন। সমাজ নিয়ে অনেক সুন্দর বেদনাময় গল্প এটি। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, কেন আমি এই বইটা নিয়ে এত কথা লিখছি? আমি সেটার উত্তর দিব, লিখছি, কারণ আপনাদের সমাজ সম্পর্কে জানাতে চাচ্ছি । সমাজ কত বৈচিত্র্যময় সেটা দেখাতে চাচ্ছি। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, বইটি পড়ুন অনেক কিছু জানতে পারবেন। জানতে পারবেন আলো বিলিয়ে যাওয়া শিক্ষকদের জীবিকা নির্বাহের দারুন গল্প। দারুন বইটা বইটার একটা কথা পড়ে খুব খারাপ লাগল, কষ্ট লেগেছে কথাটা হলো " একেকটা ডাক্তার যেন একেকটা ডাকাতের মত আচরণ করে "। 

আরো পড়ুন ⤵️
তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, আমি অনেক বই পড়েছি ১০০০+ কেনো বই পড়ে আমি ভয় পেয়েছি, আবার কোনো বই পড়ে হেসেছি, আবার কোনো বই পড়ে রাগ হয়েছি, তবে কোনো বই পড়ে আজ পর্যন্ত কান্না আসিনি, তবে এই বইটা পড়ে অনেক কান্না পাচ্ছিল, কাদের গাজী মাস্টারের জন্য। যাক আর কোনো কথা বলব না। এইটুকুই বলার ছিল। কষ্টের বা সমাজ নিয়ে লেখা বইটা সংগ্রহ করে ফেলুন আজই। 

লেখকের কিছু কথা — বিকালের বিদায়ী রোদ গাছের ফাঁকে ঢলে পড়েছে ঘরের চালে। কলাপাতা ঘেরা বেড়া আর মাটির প্রাসাদ সেই রোদে চিকচিক করছে। বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই দেখি তথা কথিত গ্রামের বোকা মাস্টার চুলোর পাশে বসে মাথাটা ঝুকিয়ে ফুঁ দিচ্ছেন চুলোয়। পাট খঁড়ির সাদা ধোয়ায় চারদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে পাট খঁড়ির এক মাথা মুখে ঢুকিয়ে ফুঁ দিচ্ছেন অনবরত। গায়ে শত ছিন্ন ছেড়া একটা সাদা সেন্ডো গেঞ্জি। পাশে দাঁড়িয়ে সালাম দিলাম। আসসালামু আলাইকুম স্যার। আপনি একটু সরে বসেন আমি চুলাটা জ্বালিয়ে দিচ্ছি। কথা শুনে উনি অবাক চোখে আমার দিকে তাঁকালেন। হুড় মুড় করে উঠে দাঁড়ালেন। সালামের জবার দিয়ে লজ্জা জনিত কণ্ঠে বললেন, তপু,তুমি হঠাৎ কি মনে করে? একজন শিক্ষক আলোর ফেলিওয়ালা। যিনি সারা জীবন অন্যের মাঝে আলো বিলিয়েছেন কিন্তু নিজের জীবনে মেনে এসেছে একের পর এক অন্ধকার। কাদের গাজী স্যার তাদের দলেরই একজন। 

লেখকের লেখা ভূমিকা — " আমি যেন সেই হতভাগ্য বাতিওয়ালা ; 
                                           আলো দিয়ে বেড়ায় পথে পথে   
                                              কিন্তু 
                                              নিজের জীবনই অন্ধকারমালা। " 
কবিতার চরণগুলো কবি আশরাফ সিদ্দিকির লেখা বিখ্যাত কবিতা ' তালেব মাস্টার ' থেকে গৃহীত। এই কবিতাটা আমার হৃদয়ে অসংখ্য দাগ কেটেছে। একজন শিক্ষকের জীবনের করুণ বাস্তব কাহিনী। কবিতার শেষের দিকে তালেব মাস্টার অনুরোধ করেছে তার জীবন কাহিনি নিয়ে কেউ একটা বই লেখুক। বিশেষ করে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি অনুরোধ করেছেন তালেব মাস্টারকে নিয়ে ' পদ্মা নদীর মাঝি' র মত আরও একটি করুণ বাস্তবতার বই লিখতে। জানি না মানিক বাবু তালেব মাস্টারের কথা শুনেছিলেন কিনা। আমি চেস্টা করেছি তালেব মাস্টারের শেষ অনুরোধ রাখতে। তালেব মাস্টারের মতো অসংখ্য শিক্ষকের জীবন জিবীকার করুণ বাস্তবতা তুলে ধরতে চেস্টা করেছি। যুগের পর যুগ চলে গেছে, কত কিছু বদলেছে তবুও তালেব মাস্টারের মতো শিক্ষকদের ভাগ্য আজও বদলায়নি। এ সকল আলোর ফেরিওয়ালা মানবেতর জীবনযাপন করেন। অনেক শিক্ষক আছে যারা সারা জীবন শিক্ষকতা করে বেতনের অপেক্ষায় থেকে থেকে এক সময় বিনা বেতনে অবসরে গেছেন। সে সকল শিক্ষকদের জীবনের গল্প নিয়েই আমার এই উপন্যাস। গল্প/উপন্যাস বাস্তবতার উপর ভর করে কাল্পনিকের সংমিশ্রণেই লেখা হয়ে থাকে৷ আমার এই উপন্যাসটিতে মূলত বাংলাদেশের অবৈতনিক শিক্ষকদের জীবন জীবিকা, কমিটির দুর্নীতি, স্কুল পরিচালনা ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরার চেস্টা করেছি। হয়তো কোনো একদিন এদেশে একজনও অবৈতনিক শিক্ষক থাকবে না। প্রত্যেক শিক্ষক পাবে তাদের প্রাপ্ত মর্যাদা ও সন্মানী। কিন্তু তালেব মাস্টার, কাদের গাজী মাস্টারের মত অসংখ্য মাস্টার যারা বিনা বেতনে বলো বিলিয়েছিলেন নিজেদের সুখ বিসর্জন দিয়ে অসংখ্য সূর্যমুখীদের দোকানে ; তাদের মধ্যেই অনেকে আজ দেশের বড় বড় আসনে বসে দেশ পরিচালনা করছেন। তাদের কি মনে আছে কাদের গাজী স্যারের কথা? তারা যেন মনে রাখে তালেব মাস্টার, কাদের গাজী মাস্টার মাস্টারের মত শিক্ষকদের। যেসকল শিক্ষক বিনা বেতনে অবসর নিয়েছেন তারা অন্তত মানুষের অন্তরে এতটুকু ভালোবাসার যায়গা করে নিবেন। কখনো যেনো তাদের ভুলে না যায়। 

আপনারাও আজই সংগ্রহ করতে পারেন বইটি। যদি কেউ সংগ্রহ না করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই সংগ্রহ করেন। 🥰

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ