আমি পরামানব পিডিএফ (সংক্ষিপ্ত) এবং রিভিউ। লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল
Title | আমি পরামানব |
Author | মুহম্মদ জাফর ইকবাল |
Publisher | সময় প্রকাশন |
Quality | হার্ডকভার এবং পিডিএফ লিংক |
ISBN | 9789844583818 |
Edition | 1st Published, 2022 |
Number of Pages | 120 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবালের এ বইটি এ মেলায় প্রকাশিত নতুন সায়েন্স ফিকশন। বইটি দেশ থেকে আনলাম দু'দিন আগে। দুই বসায় শেষ করে ফেললাম।
আমি পরামানব বইটি তাঁর আর অন্য সব বইয়ের মতোই ধরলে ছাড়া যায় না জাতীয় একটি বই। কৌতূহল নিয়ে পড়তে থাকতে হবে। বুদ্ধির দীপ্তি তো এখানে ওখানে থাকছেই। তার উত্তম পুরুষে "আমি" করে লেখা বইগুলোর মধ্যে মাদকতা থাকে। তবে এক জায়গায় এসে মনে হলো, তিনি কী খেই হারিয়ে ফেলছেন? কিন্তু না, আরেকটু এগুতেই দেখি চমৎকার সব আইডিয়া। সেখানে দেখা যাবে মানুষের মহত্ব , সাহস, আর বুদ্ধি। এগুলোতে পাঠকক বুদ্ হয়ে যাবে।
এই বইটাতে সায়েন্স খুব যে বেশি রয়েছে তা নয়। শুধু উঁচু পর্যায়ের সামান্য কিছু রয়েছে। এর পরে পরামানাবের যে মূল শক্তি (স্পয়লার না দেওয়ার কারণে খুলে বলছি না) , সেটাতে সায়েন্স তেমন নেই। কীভাবে সম্ভব, এসব ব্যাখ্যায় তিনিও যান নি। কিন্তু বিষয়টা একটা মোহ তৈরী করে। অবিশ্বাস না হয়ে বরং রুদ্ধ শ্বাস তৈরী হয়। কোন অবান্তর আইডিয়াটা মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরী করবে, কোনটা অবিশ্বাস তৈরি করবে, সেটা বুঝতে পারাই হলো বড় লেখকের গুন্।
বরাবরের মতোই তিনি বইটিতে তীব্র টেনশন তৈরী করেছেন। সেই পরামানবকে ধরতে এলো নিষ্ঠুর কিছু প্রহরি। কিন্তু তারা বুঝতে পারছিলো না কে পরামানব। একবার ধরলে ভয়ঙ্কর শাস্তি, তারপর মৃত্যু। তারা পরামানবকে বুঝতে না পারার কারণে বললো, সবাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন একটি পুতুলের মতো মিষ্টি মেয়ে সবাইকে বাঁচানোর জন্যে বলে বসলো সেই পরমানব। পরামনাবকে বারবার বলে দেওয়া হয়েছে, তোমার বাঁচতে হবে। ছোট খাট উপকার করতে গিয়ে, কয়েকজনকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিও না। তোমার উপরে অনেক বড় দায়িত্ব। পুরো পৃথিবীর দায়িত্ব তোমার উপরে। তারপরেও সব অগ্রাহ্য করে সেই পরমানব বলে উঠলো, আমি পরামানব। সে যে পরামনাব সেই প্রমাণও দিল। নিষ্ঠুর দুনিয়ার নিষ্ঠুর প্রহরীরা তাকে ধরে নিয়ে গেলো। এই যে জীবন মৃত্যুর সংকট তৈরী করে সেখান থেকে সাহসী মানুষের মহত্ত দেখানো, সেখানেই তিনি পাঠককে চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় সব সফল সায়েন্স ফিকশন বইতেই মূল ঘটনার আকর্ষন হচ্ছে মানবিক গুণাবলীর মধ্যে। প্রাগ্রসর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিনব ধারণা এসব তো রয়েছেই, কিন্তু সব কিছুর মূলে থাকছে হিংসা, ঘৃণা, প্রেম-ভালোবাসা। মানুষের অথবা রোবট বা এলিয়েনের শঠতা, নিষ্ঠুরতা, মহত্ত্ব, এবং বুদ্ধিমত্তা, এই সমস্ত আবেগই পরিশেষে একটি বইকে সার্থক সায়েন্স ফিকশন করে তুলে। আর জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশনে এসবের ছড়াছড়ি।
এই বইটির ঘটনাকে যদি আমরা রূপক হিসাবে ধরি, তাহলে দাঁড়ায়, একজন অনন্য মানুষের এতো বেশি গুন্ থাকতে পারে, নেতৃত্বের গুন্, অথবা অন্য কোনও বিরল গুন্, যা দিয়ে সে ব্যাপক মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে। তাদের জীবন বদলে দিতে পারে। এমনকি পৃথিবীটাকেই বদলে দিতে পারে।
অনন্য সাধারণ মানুষ যুগে যুগে আগেও মানুষের জীবনকে বদলে দিয়েছে, এখনও আমরা তা দেখি, এবং ভবিষ্যতেও নিশ্চয়ই পরামানব আসবে। হয়তো এমন এক জনই পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ দুর্দশা ঘুচিয়ে দেবে, যুদ্ধ থামিয়ে দেবে, অসাম্য-অন্যায় দূর করে দেবে। বিজ্ঞানের গবেষণাও কী তাহলে তা নিয়ে হওয়া উচিত? কীভাবে সেই একজন মানুষকে পৃথিবী পেতে পারে?
আমি পরামানব কাহিনি সংক্ষেপ:
পৃথিবীর জন্য সময়টি ভালো নয়— সমস্ত পৃথিবীর মানুষের কাছে যত সম্পদ এক দুইজন মানুষের কাছে সম্পদ তার থেকে বেশী। সেই বিশাল সম্পদ নিয়ে কী করবে তারা জানে না। মানুষের ভূমিকায় তারা আর থাকতে চায় না, ঈশ্বরের ভূমিকায় যেতে চায় এখন। সেজন্য নূতন প্রজাতির অতিমানব জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করল। প্রকৃতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য জন্ম দিল অল্প কিছু পরামানবের।
কিন্তু পৃথিবী কি প্রস্তুত এই পরামানবের জন্য?
আমি পরামানব পাঠ প্রতিক্রিয়া:
প্রথমেই ধন্যবাদ জানিয়ে রাখি বই স্পন্সর সাকী ভাইকে। এরপর ধন্যবাদ কাউসারকে, অটোগ্রাফ এনে দেবার জন্য।
স্যারের সাই-ফাই পড়ে পড়েই তো বড়ো হয়েছি। তাই পাঠ-প্রতিক্রিয়া বায়াসড হবেই৷ এককালে সাই-ফাই বলতে তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। আজিমভের সঙ্গে পরিচয়ও তার হাত ধরেই।
বিভিন্ন গল্পেই তো তিনি লেখেন। টুকি ও ঝা কিংবা টুকুনজিলে যেমন হিউমারটা বেশি, আবার মেতসিস, ক্রুগো, যারা বায়োবট সায়েন্সি আবহটা বেশি।
একই ভাবে ত্রাতুলের জগত, ক্রোমিয়াম অরণ্য, নিসঙ্গ গ্রহচারী এক হিসেবে ভবিষ্যতের বুকে মানুষের আর মানবিকতার গল্প।
আমি পরামানবও সেই কাতারেই পড়ে।
জানি না কেন, তবে স্যারের এই ধরনের লেখা খুবই স্পর্শ করে আমাকে। গল্প অনেকটাই ফর্মুলেয়িক—
১. একজন অনাথ থাকবে, যার খুবই মিনিয়াল জব থাকবে, সঙ্গী-সাথী থাকবে না৷
২. সে ভাগ্যের ফেরে খুবই অসাধারণ একজন হিসেবে আবিষ্কৃত হবে।
৩. অন্যকে বাঁচানোর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবে।
৪. এরপর পাশার দান উলটে যাবে।
৫. শুধু প্রেমিকার কাছে নিজের ভূমিকা বলবে।
তবে একই ফর্মুলাকেই নানা ভাবে উপস্থাপন করেন তিনি। আমার কাছে এই উপস্থাপনাটাই ভালো লাগে।
বিশেষ করে তার কর্তা-বাচ্যে বর্ণনা করার ভঙ্গিটা৷ খুব বেশি রিলেট করতে পারি। নিজেকে নীল-ত্রাতুল-সোহান মনে হয়। হয়তো ভালোলাগার কারণও সেটাই।
এত ছোটো বইতে ক্যারেক্টার স্টাডি হয় না ঠিকমতো। তবে প্রাথমিকভাবে ক্যারেক্টার স্টাডি বোধহয় বলাই যায়।
খারাপ দিকের প্রসঙ্গে আসি৷ লেখনশৈলী নিয়ে কথা না বলি, একেকজনের একেকরকম ভালো লাগে৷ স্যারের লেখা এখন একটা বাহুল্যদুষ্ট মনে হয়৷ বিশেষ করে সর্বনামের ক্রমাগত ব্যবহার। তবে মজা নষ্ট হয়নি তাতে।
প্রোডাকশন নিয়ে মাথাব্যথা আগেও ছিল না, এখনও নেই। পড়তে পারলেই খুশি, তবে মনে হয় না এই বইয়ের প্রোডাকশনে কারও খুব বড়ো আপত্তি থাকবে।
একমাত্র সমস্যা, আমার কাছে অন্তত, বইয়ের মেকাপে। পেজে ২৬/২৭ লাইন দেওয়া, তাতে সমস্যা নেই। সমস্যা হলো: ফন্টটা আরেকটু বড়ো করে দেওয়া যেত৷ তাতে পড়তে সুবিধা হতো আরও৷ ২৭ লাইন করে রেখে ছাপালেও পৃষ্ঠা সংখ্যা বাড়ত না। আর তাছাড়া—উনার বইতে নিশ্চয়ই পাতা গুনে দাম রাখা হয় না?
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....