বাম পাঁজরের হাড় লেখক : মুনতাকীম রাজীব (রিভিউ) Bam Pajorer Har by Muntakim Rajib

বই : বাম পাঁজরের হাড় 
লেখক : Muntakim Rajib 
প্রচ্ছদ : Lutfi Runa  
প্রকাশন : তারুণ্যের উচ্ছ্বাস প্রকাশন 
ধরন : গল্পগ্রন্থ  
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৯৬ 
প্রি-অর্ডার মূল্য : ১২০৳ 
বইঃ বাম পাঁজরের হাড় লেখক : মুনতাকীম রাজীব | Bam Pajorer Har by Muntakim Rajib Book Review boipaw.com | most popular book review website of bangladesh


আংশিক বই থেকেঃ 
ঘোমটার ভেতর থেকে চিকন একটা কণ্ঠ ভেসে এলো। আমাকে উদ্দেশ্য করে সালাম দিলো মেয়েটি। অস্পষ্ট স্বরে সালামের উত্তর দিলাম। এরপর কী বলবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না৷ কেমন জড়তা কাজ করছে। সেইসাথে অস্বস্তিও লাগছে। পৌষের হাড়কাঁপানো শীতেও কেমন ঘামতে শুরু করলাম। মেয়েটিও নিশ্চুপ। ঘোমটা টেনে মুখ আড়াল করে বসে আছে মূর্তির মতো।
মনে মনে কী ভাবছে কে জানে। হয়তো মুখ টিপে হাসছে। বলছে, “কেমন ছেলেরে বাবা, মেয়ে দেখতে এসে কোন কথাই বলছে না!” 

আব্বার ওপর বেশ রাগ হলো। এখনি বিয়ের জন্য এতো তোড়জোড়ের কী দরকার ছিলো? নাহ এইসব মেয়ে দেখা, বিয়ে, সংসার এসব আমার কাজ নয় বাপু। লজ্জার মাথা খেয়ে নিঃশব্দে উঠে দাঁড়ালাম। 
 ঘোমটার ভেতর থেকে অকস্মাৎ মেয়েটা বললো, “এ-কী চলে যাচ্ছেন যে! আমাকে দেখবেন না?” 

 এমন অপ্রত্যাশিত কথায় পুরোই ভড়কে গেলাম। মেয়েটা তাহলে ঘোমটার ভেতর থেকেও আমাকে দেখতে পাচ্ছে? কী আচানক কাণ্ড! আমি লজ্জায় কুঁকড়ে যেতে লাগলাম। ইচ্ছে করছে ছুটে পালাই। কিন্তু কী মনে করে আবার ধপ করে বসে পড়লাম।
প্রবল অস্বস্তি নিয়ে বসে আছি৷ কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। মেয়েটা তখনও ঘোমটা টেনে ধরে আছে৷ ইচ্ছে করছে কঠিন এক ধমক দিয়ে বলি, “এতো বড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছেন কেনো? ঘোমটাটা সরান।”

মনের কথা মনেই দাফন করে দিলাম। এসব বললে মুহূর্তেই চাউর হয়ে যাবে৷ মেয়ে রেগে গিয়ে বাবা-মাকে বলবে। বাবা-মা রেগে গিয়ে প্রতিবেশীকে বলবে। ব্যস রটে যাবে, মেয়ে দেখতে এসে হুজুর এই এই করেছে। সবাই তখন ছি ছি করবে। মানসম্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। কী দরকার বাপু ঝামেলা করার! 

মেয়েটা আমাকে ফের চমকে দিয়ে বললো, “এ-কী! আপনি দেখি এই শীতের মধ্যেও ঘামছেন? ফ্যান ছেড়ে দেব?”

কী লজ্জাজনক ব্যাপার ভাবা যায়? এই দিনও দেখতে হলো আমাকে। ইচ্ছে করছে পাতাল ফেড়ে লুকিয়ে পড়ি। কিংবা মহাশূন্যে গিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। লজ্জায় মুখ, কান গরম হয়ে উঠছে। উষ্ণ তাপ বেরোচ্ছে। 
নিজের ওপর নিজেরই রাগ হলো আমি কিছু বলছি না কেনো? 
মেয়েটা ফের চমকে দিয়ে বললো, “আপনি কি কথা বলতে পারেন না? না মানে আপনি কি বোবা? ইয়ে মানে মাইন্ড কইরেন না। কোন কথা বলছেন না তো তাই কৌতূহল জাগলো আরকি।” 

এবার একটু ধাতস্থ হলাম। মনে প্রবল সাহস সঞ্চয় করে বললাম, “না মানে, আসলে কীভাবে কথা শুরু করবো কিছু বুঝতে পারছি না। অভিজ্ঞতা নেই তো..” 
মেয়েটি হেসে বললো, “বিয়ে করতেও অভিজ্ঞতা লাগে বুঝি?”...

লেখকের কথা....
টাইমলাইনে টুকটাক কিছু অখাদ্য লিখতাম। কেউ কেউ পড়তেন। জেনি আপু তাদের একজন৷ টাইমলাইনের সব লেখা পড়ে খাতায় লিখে সেসব লেখার সারসংক্ষেপে গুছিয়ে চমৎকার একটা রিভিউ দিয়েছিলেন। সেটাই ছিল আমার লেখালেখি জীবনের প্রাপ্ত প্রথম রিভিউ, প্রথম পুরস্কার।  ভালোলাগা, খারাপলাগাগুলো তুলে ধরেছেন৷ রিভিউটা দেখে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছি, অনুপ্রাণিত হয়েছি৷ 
নির্দ্বিধায়, স্পষ্ট করে খারাপলাগাটা তুলে ধরেছিলেন৷ আজকাল অনেকেই মনে করে রিভিউ মানে হচ্ছে লেখকের প্রশংসা করা৷ ভালো লিখলেও প্রশংসা, খারাপ লিখলেও প্রশংসা। 
শুধু শুধু প্রশংসা শুনলে আমার রাগ হয়৷ ঐ ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলি। কারণ, প্রশংসা সেটাই যে প্রশংসার সাথে সমালোচনা ও ভুলগুলোও আলোচিত হয়৷ 

আমার লেখার প্রথম রিভিউদাতা শুধু তাই নয়, আমার প্রথম বই “বাম পাঁজরের হাড়” এর প্রথম প্রি-অর্ডারকারীও৷ Meftahul Jannat Jenney
আপু, আপনার জন্য আন্তরিক দোয়া।

বইটির ভূমিকায় লেখক বলেন..
“ জন্মেছিস তো দাগ রেখে যা ! ” অনুপ্রেরণার বারুদ ভরা স্বামী বিবেকানন্দের এই কথাটি শোনার পর খুব ভাবনায় পড়ে গেলাম । একটা সময় পৃথিবীতে আমার কোন অস্তিত্বই ছিল না । মৃত্যুর পর আবার সে - ই অস্তিত্বহীনতার অতল গহ্বরে হারিয়ে যাব । তাহলে এই জন্মের সার্থকতা কোথায় ? আমি হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াই একটা দাগ , একটা পরিচয়ের । আমি দাগ রেখে যেতে চাই পৃথিবীর বুকে । সাদা কাগজের বুকে কালো কালো হরফের দাগ নয় শুধু । ভালোবাসার দাগ হয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাই মানুষের হৃদয়ে । এই ভাবনা থেকেই লেখালেখির যাত্রা শুরু । . কথা হলো- অনেকেই তো লেখে , ভালো লেখক ক'জন ? আমি এই ' অনেকেই তো লেখে গোত্রের । কিছু লিখলেই তা সাহিত্য হয়ে যায় না । অনেকেই মনে করেন লেখক মানেই সাহিত্যিক ।

 ' ইহা সত্য নহে । ' সাহিত্য অনেক বড় জিনিস । কোন একটা লেখা সাহিত্যের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হলে তার মধ্যে ভাষার কারুকার্য , ভাব - রসের গভীরতাসহ আরও অনেক গুণের সমন্বয় থাকতে হয় । আমার লেখায় এসবের ছিটেফোঁটাও নেই । তবুও কেন লিখছি ? প্রতিটি মানুষের জীবনেই বলার মতো কিছু না কিছু গল্প থাকে । আমারও তেমন কিছু গল্প আছে । লেখার মাধ্যমে আমি সে - ই গল্পগুলোই বলতে চাই । সত্য ও সুন্দরের মেলবন্ধনে , কল্পনার রঙ চড়িয়ে শব্দে আঁকা সে - ই গল্পগুলো থেকে মানুষ যেন উপলব্ধি করতে পারে সত্য ও সুন্দরকে । ধারণ করতে পারে নিজেদের জীবনে । তবেই আমার সার্থকতা । “ বাম পাঁজরের হাড় ” এটা আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ । যে চিন্তাভাবনা নিয়ে গল্পগুলো লিখতে বসেছিলাম তা আর পুরোপুরি লিখে উঠতে পারিনি । যে থিম ও প্লট নিয়ে লিখতে বসেছি দুয়েকটা ব্যতীত তার একটাও ধারেকাছে হয়নি । লেখা শেষে দেখলাম যে ভিন্ন এক প্লটের গল্প লিখে বসে আছি । এজন্য মন খচখচ করছে ! আমি চেয়েছিলাম এমনকিছু গল্প লিখতে যে গল্পগুলো পড়ে পাঠকের বোধোদয় ঘটবে । তরকারিতে লবণ কম হওয়ায় প্রবল আক্রোশে গরম তরকারির বাটি স্ত্রীর গায়ে ছুঁড়ে মারা অসভ্য স্বামীটি আর কখনো গরম তরকারির বাটি ছুঁড়ে মারবে না । 

ভাতের ভেতর চুল পেয়ে কোন স্বামী আর কখনো নিজ স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করবে না , প্রহার করবে না । ইচ্ছে করেই গভীর রাত করে বাড়ি ফেরা স্বামীটি আচমকা বদলে যাবে , রোজ সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসবে ...। গল্প সবাই বলতে পারলেও সবাই কিন্তু গল্প বলায় দক্ষ নন । একেকজন একেকভাবে গল্প বলেন । বলার ক্ষেত্রে যেমন দক্ষ - অদক্ষ আছে , তাদৃশ লেখার ক্ষেত্রেও দক্ষ - অদক্ষ আছে । নির্দ্বিধায় এ কথা স্বীকার করছি যে , আমি নিতান্তই অদক্ষ একজন । আমার লেখা সাহিত্যমান সম্পন্ন নয় । তবুও কেউ যদি সাহিত্যমান বিচার করতে গিয়ে কোন ভুলত্রুটি পেয়ে থাকেন আমাকে অবহিত করবেন । আমি সর্বদা নিজের ভুল স্বীকার করতে প্রস্তুত । কারণ , ভুলটাই হচ্ছে আমার শিক্ষা , জ্ঞান । আমার কৃত ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে তা সংশোধন করে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে পারবো ইন শা আল্লাহ !

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ