লেখক : শাইখ আব্দুল্লাহ মাহমুদ
সম্পাদনা: মুহাম্মাদ সাজেদুল ইসলাম
প্রকাশনী : আযান প্রকাশনী
বিষয় : ইসলামি বিবিধ বই, ইবাদত ও আমল
পৃষ্ঠা : 224, কভার : পেপার ব্যাক
ভাষা : বাংলা
রেটিং : ⭐⭐⭐⭐⭐
শাইখ আব্দুল্লাহ মাহমুদ এর বহুল আলোচিত বই “বারো চান্দের ফজিলত” বইটি মূলত আরবি বারোটি মাসের মাসনূন আমল ও তার ফজিলতসমূহ নিয়ে রচিত একটি অনবদ্য কিতাব। এই বইটি থেকে পাঠকবৃন্দ বারো মাসের সুন্নাহভিত্তিক আমলের ব্যাপারে যেমন জানতে পারবে, একই সাথে সমাজে প্রচলিত বানোয়াট, জাল, ভিত্তিহীন বিদাআতী আমলের ব্যাপারেও জানতে পারবে। আরবি প্রতিটি মাসের ইতিহাস, সেসব মাসের মাসনূন আমল, প্রচলিত দলিলবিহীন অগ্রহণযোগ্য আমল নিয়ে বইটিতে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে।
_________________________________________________
ইসলামি ক্যালেন্ডার নিয়ে কিছু কথা
অতীত ইতিহাসকে সংরক্ষণ করতে কিংবা আগত দিনগুলোকে হিসাব করে সুবিন্যস্ত রাখতে ক্যালেন্ডার বা বর্ষপঞ্জি অপরিহার্য। এ কারণে যুগে যুগে পৃথিবীতে অসংখ্য ক্যালেন্ডারের প্রচলন হয়েছে। আর সেসব ক্যালেন্ডারের হিসাবের সূচনা করা হয়েছিল বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জন্ম বা মৃত্যুদিন কেন্দ্রিক কিংবা কোনো রাজা-বাদশাহর ক্ষমতায় আরোহণের দিনকে কেন্দ্র করে অথবা কোনো আযাব-গযব বা কোনো বিশেষ দিনকে ঘিরে।
যথারীতি দ্বিন ইসলামেও স্বীকৃত ক্যালেন্ডার রয়েছে। তবে এ ক্যালেন্ডারের ভিত্তি হচ্ছে চাঁদ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
الذي جعل الشمس ضياء والقمر نورا وقدره منازل لتعلموا عدد السنين والحساب
তিনি সূর্যকে করেছেন তেজোদীপ্ত আর চাঁদকে করেছেন আলোকময়। চাঁদকে তিনি কতকগুলো পরিমাপ স্তরে বিন্যস্ত করেছেন, যাতে তোমরা বছরের সংখ্যা ও (সময়ের) হিসাব জানতে পারো।1
এ আয়াত থেকে প্রমাণ হয়, চাঁদ হচ্ছে আরবি বর্ষপঞ্জির ভিত্তি। এ আয়াত থেকে আরও প্রমাণ হয়, কুরআন মতে সময় নির্ধারণ হবে চাঁদের হিসাবে।
1
সুরা ইউনুস, আয়াত : ৫
ইসলামি মাস হচ্ছে ১২টি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
إن عدة الشهور عند الله اثنا عشر شهرا في كتاب الله يوم خلق
السماوات والأرض আল্লাহ যেদিন থেকে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকে আল্লাহর বিধানে মাসের সংখ্যা বারোটি।
ইসলামি ক্যালেন্ডারের সাথে অন্যান্য ক্যালেন্ডারের মূল ফারাক হচ্ছে, ইসলামি ক্যালেন্ডার স্থায়ী ও অপরিবর্তনীয়। অথচ অন্যান্য ক্যালেন্ডার স্থায়ী নয় বরং পরিবর্তনশীল। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ক্যালেন্ডার হচ্ছে ইংরেজি বা ঈসায়ি ক্যালেন্ডার। এ ক্যালেন্ডারকে প্রথমে রোমান ক্যালেন্ডার বলা হতো। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৫৩ সালে রোমিদের প্রসিদ্ধ শহর রোমের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। যেদিন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়, সেদিন থেকে তারা রোমান ক্যালেন্ডারের সূচনা করে। এতে তাদের ১ বছর ছিল ৩০৪ দিনে এবং বছরে মাস ছিল ১০টি। এভাবে তাদের প্রথম মাস ছিল মার্চ। রোমান ক্যালেন্ডারের শেষের চার মাস আমাদের আলোচনাকে আরও বলিষ্ঠ করে। সেপ্টেম্বর মানে সপ্তম, অক্টোবর মানে অষ্টম, নভেম্বর মানে নবম এবং ডিসেম্বর মানে দশম। পরবর্তীকালে তারা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস যুক্ত করে বারো মাসে বছরের হিসাব গণনা শুরু করে।
একইভাবে ঈসায়ি ক্যালেন্ডার কখনো মার্চ থেকে শুরু করা হয়, আবার কখনো সেপ্টেম্বর থেকে। সর্বশেষ ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে জানুয়ারি মাসের মাধ্যমে ঈসায়ি ক্যালেন্ডার গণনা শুরু করা হয়। তাদের সাথে ইউরোপ ও আমেরিকা একমত পোষণ করে জানুয়ারি থেকে তারাও গণনা শুরু করে।
ইসলামি ক্যালেন্ডারের কিছু বৈশিষ্ট্য
চান্দ্র ক্যালেন্ডারের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্যান্য ক্যালেন্ডারে নেই। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :
১. চান্দ্র ক্যালেন্ডারে দিন বা তারিখের গণনা শুরু হয় সূর্যাস্তের পর থেকে, অন্যদিকে দিন বা তারিখ পূর্ণ হয় সূর্যাস্তের মাধ্যমে। এভাবে এক সূর্যাস্তের পর থেকে নিয়ে পরের সূর্যাস্ত পর্যন্ত এ ২৪ ঘণ্টা সময়টুকুকে একদিন বলা হয়। এ কারণে শাবান মাসের শেষদিন সূর্য ডুবলেই রামাদান মাস শুরু হয়ে যায় এবং তারাবিহ পড়া শুরু হয়। একইভাবে রামাদান মাসের শেষদিন সূর্য ডুবলেই এই মাস শেষ হয় এবং শাওয়াল মাস তথা ঈদ শুরু হয়।
এ কারণে চান্দ্রমাস খুব সহজ এবং সবার জন্য উপযোগীও বটে। সবশ্রেণির লোক দিনের শুরু ও শেষ অনায়াসেই দেখতে পারে। তাছাড়া দিন কখন শেষ হচ্ছে, আর কখন শুরু হচ্ছে তা নির্ণয়ের জন্য ঘড়িরও প্রয়োজন পড়ে না। অথচ এর বিপরীতে ইংরেজি ক্যালেন্ডার দেখুন। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের দিনের শুরু হয় রাত ১২:০১ মিনিট থেকে, আর শেষ হয় রাত ১২:০০টায়। গভীর রাতে, দিনের শুরু ও শেষ হওয়ার কারণে তা সবার পক্ষে অবলোকন করা সম্ভব হয় না। তাছাড়াও দিনের শুরু ও শেষ নির্ধারণ করার জন্য ঘড়ি হাতে ধরে থাকতে হয়।
২. কেউ চান্দ্র ক্যালেন্ডার ছাড়া অন্যান্য ক্যালেন্ডারের তারিখ ভুলে গেলে অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করা ছাড়া বা ক্যালেন্ডার দেখা ছাড়া তারিখ উদ্ধার করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে কেউ যদি এমন স্থানে অবস্থান করে যেখানে কোনো মানুষ বা ক্যালেন্ডার নেই, সেখানে তার পক্ষে তারিখ জানা কিছুতেই সম্ভব নয়। কিন্তু চান্দ্র তারিখের ক্ষেত্রে এমন বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় না। চাঁদের দিকে তাকালে বোঝা যায় আজ কত তারিখ; বিশেষ করে ১৪ তারিখের চাঁদের দিকে তাকালে যেকেউই জানতে পারবে, আজ চান্দ্র মাসের ১৪ তারিখ। ঘটনাক্রমে এরপরও কেউ যদি তারিখ নির্ধারণে ভুল করে,
তাহলে প্রথম দিনের নতুন চাঁদ দেখে সেই ভুল দূর হয়ে যায়।
৩. সালাত ছাড়া আরও অন্যান্য ইবাদত চাঁদ ও সূর্যের সময়ের সাথে সংযুক্ত। চাঁদ ও সূর্যের সময়ের সাথে ইবাদতগুলো সংযুক্ত করার মাধ্যমে সবশ্রেণির লোকের এবং সকল যুগের জন্য উপযোগী হয়। যেমন, সালাতের সময়ের হিসাব হচ্ছে, সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়লে যুহরের সময়, প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হলে আসরের সময়, সূর্য অস্ত গেলে মাগরিবের সময়...।
এভাবে চাঁদ ও সূর্যের সাথে ইবাদতগুলোর সময় নির্ধারণ করার কারণে যেকেউ চাঁদ-সূর্য দেখেই ইবাদতগুলো খুব সহজে আঞ্জাম দিতে পারে। ফলে কোনো ঘড়িরও প্রয়োজন হয় না, শিক্ষিতও হতে হয় না; পৃথিবীর সবচেয়ে নিরক্ষর ব্যক্তিটিও জানতে পারবে এখন কোন ইবাদতের সময় হয়েছে। কিন্তু এগুলো যদি ঘড়ির সময় বা অন্যান্য ক্যালেন্ডারের সময়ের সাথে সংযুক্ত করা হতো, তাহলে সময় ও ঋতু পরিবর্তনের সাথে উক্ত সময় বাতিল হয়ে যেত। ছোটো দিনের জন্য এক সময় নির্ধারণ করতে হতো, আর বড় দিনের জন্য আরেক সময় নির্ধারণ করতে হতো। সবার হাতে হাতে ঘড়ি থাকতে হতো। এছাড়াও হরহামেশাই নানান বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো।
৪. চান্দ্র মাসের শুরু ও শেষ হয় চাঁদ দেখার মাধ্যমে। তাই গ্রাম-শহর, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকল শ্রেণির লোক মাসের শুরু ও শেষ নিয়ে অবগত হতে পারে। বরং বর্তমানে দেখা যায়, শিক্ষিত সমাজের তুলনায় অশিক্ষিত সমাজের লোকেরাই চান্দ্র মাসের শুরু ও শেষ সম্পর্কে বেশি অবগত থাকে।
৫. চান্দ্র মাস কখনো ২৯ দিনে হয়, আবার কখনো ৩০ দিনে। এটা সম্পূর্ণ
নির্ভর করে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার ওপর। দুনিয়ার সমস্ত মানুষ একত্র
হয়ে তা পরিবর্তন করতে চাইলেও পারবে না। কিন্তু অন্যান্য ক্যালেন্ডার মানুষ চাইলে পরিবর্তন করতে পারে, যেমনটি পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
৬. চান্দ্র মাসের মাসগুলোর মাঝে মাত্র একদিন কমবেশি হয়ে থাকে; মাস হয় ২৯ দিনে, আর নাহয় ৩০ দিনে। এর বিপরীতে অন্যান্য ক্যালেন্ডারে
চারদিন পর্যন্ত পার্থক্য হয়। তাদের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মাস কখনো ২৮ দিনে হয়, আবার কখনো ২৯ দিনে হয়, কখনো আবার ৩০ দিনে হয়, আবার কখনো ৩১ দিনে হয়।
বর্তমান হিজরি বছরের গণনা যেভাবে শুরু হয়
বিখ্যাত তাবিয়ি মুহাম্মাদ ইবন সিরিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন, দ্বিতীয় খলিফা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর এক গভর্নর তাকে বলেন, আপনারা কেন ক্যালেন্ডারের প্রচলন করেছেন না? তার কথা শুনে সাহাবিগণ ক্যালেন্ডার ব্যবহারের ইচ্ছে করেন। তবে প্রথম বছর হিসেবে কোন বছরকে গণ্য করা যায়, তা নিয়ে গন্ডগোল দেখা দেয়। কেউ বলেন, প্রথম বছর ধরা হোক নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াতপ্রাপ্তির বছরকে। আবার কেউ বলেন, তাঁর ওফাতের বছরকে প্রথম বছর ধরা হোক। তৃতীয় দল প্রস্তাব দেন, বরং হিজরতের বছরকে প্রথম বছর ধরা হোক। এ প্রস্তাব শোনার পর সবাই এর পক্ষে মত দেন। তারা প্রথমে সিদ্ধান্ত নেন, বছরের প্রথম মাস হিসেবে নির্ধারণ করা হবে রামাদানকে। পরবর্তীতে তারা আবার মুহাররাম মাসকে প্রথম মাস গণ্য করার সিদ্ধান্ত নেন।
মুহাম্মাদ ইবন সিরিন রাহিমাহুল্লাহ আরও বলেন, ইয়ামান থেকে এক ব্যক্তি এসে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, 'আমি ইয়ামানে একটি জিনিস লক্ষ করলাম। তারা একে তারিখ বলে; মানুষেরা লেখে, অমুক তারিখ, অমুক মাস, অমুক বছর।' উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তার কথা শুনে বলেন, 'এটা তো অনেক সুন্দর পদ্ধতি। তাহলে আপনারাও তারিখ নির্ধারণ করুন।'
এরপর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু এ নিয়ে পরামর্শ সভার আহবান করেন। পরামর্শ সভায় মতভিন্নতা দেখা যায়, কোন বছরকে প্রথম বছর ধরা হবে, তা নিয়ে। কেউ বলেন, হিজরতকে প্রথম বছর হিসেবে নির্ধারণ করা হোক। আবার কেউ বলেন, প্রথম বছর ধরা হোক নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
3
তারীখু খলিফা ইবন খাইয়াত, ১৪, মুহাম্মাদ ইবন সিরিন পর্যন্ত সনদ সহিহ
সাল্লাম এর নবুওয়াতপ্রাপ্তির বছরকে। আবার কেউ বলেন, তাঁর ওফাতের বছরকে প্রথম বছর ধরা হোক। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তাহলে হিজরতের বছরকে প্রথম বছর গণ্য করা হোক।
এরপর আবার প্রশ্ন ওঠে, কোন মাসকে প্রথম মাস নির্ধারণ করতে হবে? কেউ প্রস্তাব দেন, রজবকে প্রথম মাস ধরা হোক। কারণ, আইয়ামে জাহিলিয়্যাতেও এ মাসকে বিশেষ সম্মান করা হতো। কেউ বলেন, রামাদান মাসকে প্রথম মাস নির্ধারণ করা হোক। আবার কেউ বলেন, জুলহাজ্জাহ মাসে যেহেতু হজ পালন করা হয়, তাই বছর শুরু হোক জুলহাজ্জাহ মাসের মাধ্যমেই। আবার কেউ প্রস্তাব দেন, যে মাসে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরত করেন, সেই মাসকে প্রথম মাস করা হোক। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, মুহাররামকে প্রথম মাস নির্ধারণ করা হোক। কারণ, এটি একটি সম্মানিত মাস এবং আরবরা এই মাসকেই প্রথম মাস হিসেবে গণনা করে। তাছাড়া এ মাসে হাজিরা ঘরে ফিরে যায়। অতঃপর তার কথা শুনে মুহাররাম মাসকে প্রথম মাস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।
আল্লামা সুহাইলি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, সাহাবিদের হিজরতের বছরকে প্রথম বছর নির্ধারণ করার ভিত্তি হচ্ছে এ আয়াতটি :
لمسجد أسس على التقوى من أول يوم
প্রথমদিন থেকেই তাকওয়ার ওপর ভিত্তি করে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত।
কারণ, হিজরতের দিন থেকেই ইসলামের বিজয় ও গৌরবময় ইতিহাসের সূচনা হয়। সেদিন থেকেই নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিগণ
4 তারীখু দিমাশক, ১/৪৫; ফাতহুল বারী, ৭/৩৩৬, মুহাম্মাদ ইবন সিরিন পর্যন্ত সনদ সহিহ 5 সুরা তাওবা, আয়াত: ১০৮, আয়াতটি কুবা মসজিদ কেন্দ্রিক। আর কুবা মসজিদ নির্মাণ করা হয় মদিনায় পৌঁছে।
নির্ভার জীবন শুরু করেন। পূর্ণ নিরাপদ ও নির্ভয়ে ইবাদত করতে সক্ষম হন। সেদিন থেকেই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এ কারণে সাহাবিগণ মতামত দেন হিজরত থেকে ইসলামি ক্যালেন্ডারের যাত্রা শুরু করা হোক। যেন আয়াতে প্রথম দিন দ্বারা ইসলামি ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন উদ্দেশ্য।
আমর ইবন মাইমূন রাহিমাহুল্লাহ বলেন, উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে একটি চেক পেশ করা হয়। শাবান মাসে সেই চেকটি আদায় করার কথা লিখা ছিল। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করেন, কোন শাবান মাস; চলতি শাবান মাস না কি আগামী শাবান মাস?
এরপর তিনি পরামর্শ সভার আয়োজন করেন এবং সাহাবিদের বলেন, একটি ক্যালেন্ডার প্রচলন করতে হবে যার মাধ্যমে দিন ও মাস নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। পরামর্শ সভায় কেউ কেউ মত দেন, আমরা রোমান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করতে পারি। তাদের এ মতকে খণ্ডন করে বলা হয়, তারা যুলকারনাইনের ঘটনা থেকে তাদের হিসাবের সূচনা করে; আর এটা তো অনেক আগের ঘটনা। আরেকদল বলেন, তাহলে আমরা পারস্য ক্যালেন্ডার অনুসরণ করতে পারি। এ দলের প্রস্তাবের প্রত্যুত্তরে বলা হয়, পারস্যদের নীতি হচ্ছে, যখন তাদের নতুন বাদশাহ ক্ষমতায় আসেন তখন আগের ক্যালেন্ডার বাতিল করে দেওয়া হয়। এরপর সবার ঐকমত্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের বছর থেকে হিসাব শুরু করা হয়।
মোটকথা, আমরা বলতে পারি, বিভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার পর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু ক্যালেন্ডার প্রচলনের গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং সাহাবিদের সাথে পরামর্শক্রমে হিজরতের বছরকে প্রথম বছর এবং মুহাররাম মাসকে প্রথম মাস গণ্য করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
6
ফাতহুল বারী, ৭/৩৩৫
যঈফ তারীখুত তবারী, ৭/৫৮, আমর ইবন মাইমূন পর্যন্ত সনদ সহিহ
মুহাররাম মাসের নামকরণের কারণ
মুহাররাম ইসলামি ক্যালেন্ডারের প্রথম চান্দ্রমাস। জানুয়ারি মাসের মাধ্যমে যেমন ইংরেজি বছর শুরু হয়, তেমন এই মাসের মাধ্যমে আরবি বছর শুরু হয়। মুহাররাম শব্দের অর্থ যাকে সম্মান করা হয় বা সম্মানিত। এ নামে নামকরণের ব্যাপারে আল্লামা আবু আলি আহমাদ ইবন মুহাম্মাদ আল আসবাহানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
وإنما سمي محرما لأنهم يحرمون الفذال فيه
মুহাররাম নামকরণ করার কারণ হচ্ছে, তারা এই মাসে যুদ্ধ করা
হারাম মনে করত।
আল্লামা আলিমুদ্দীন সাখাভী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
أن المحرم سمي بذلك لكونه شهرا محرما، وعندي أنه سمي بذلك تأكيدا لتحريمه؛ لأن العرب كانت تتلعب فيه، فتجله عاما وتحرمه عاما
সম্মানিত হওয়ার কারণে এই মাসকে মুহাররাম বলা হয়। আমার মতে, এই নামে নামকরণের কারণ হচ্ছে, এই মাসের সম্মানের ব্যাপারে জোরালোভাবে গুরুত্ব প্রদান করা। কেননা আরবরা এই মাসের ব্যাপারে মত পরিবর্তন করে এ মাসে এক বছর যুদ্ধ করা হালাল করে নিত, আবার অন্য বছর হারাম করে দিত।
8 কিতাবুল আযমিনাহ ওয়াল আমকিনাহ, পৃ. ২০৫ তাফসির ইবন কাসীর, ৪/১৪৬
আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন।
অনুরোধঃ- বই : বারো চান্দের ফজিলত এর প্রি অর্ডার চলছে ... তাই বারো চান্দের ফজিলত - শাইখ আব্দুল্লাহ মাহমুদ বইটি PDF Free Download চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না।
We Respect Every Author Hardwork - boipaw.com™
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....