বেদনার স্বাদ : হামিদা আব্বাসী | Bedonar Shad by Hamida Abbasi

বইয়ের নাম:- বেদনার স্বাদ
লেখিকা :- হামিদা আব্বাসী
ধরণ :- গল্পগ্রন্থ 
প্রকাশনী :-জুঁই প্রকাশ
প্রথম প্রকাশ :- অমর একুশে বইমেলা ২০২২
প্রকাশক :- আজিজ ইবনে গণি
প্রচ্ছদ :- মাহাবুব আলম
মূল্য :- ১৮০৳
আইএসবিএন :- ৯৭৮-৯৮৪-৮০০৬-১৬-০
বেদনার স্বাদ : হামিদা আব্বাসী | Bedonar Shad by Hamida Abbasi
বেদনার স্বাদ ফ্ল্যাপ থেকে:-
----------------------- "বেদনার স্বাদ" সব সময়ই মধুর, এ মধুর স্বাদ পেতে হলে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হয়। অন্যের খুন টাঁসাকে এড়িয়ে যেতে হয়, অন্যের অসৎ পরামর্শকে খন্ডন করার প্রখরতা রাখতে হয়। আর হতাশ না হয়ে পরিবারের সব সদস্যরা মিলে এই গুণ গুলোকে সমন্বয় করে কাজ করলে বেদনার স্বাদ যে মধুর তা..........

বেদনার স্বাদ উৎসর্গপত্র:-
----------------------- পৃথিবীতে হতাশাগ্রস্ত বেদনায় বিপর্যস্ত মানুষগুলোর উদ্দেশ্যে বেদনার পরেও যে একটি সুন্দর জীবন আছে। এই বইটি পড়ে যদি সেই বিষয়টা কেউ অনুভব করতে পারে তবে তাদের জন্য ই লেখিকার এই বইটি উৎসর্গিত। 

এই জায়গা দিয়ে বলাই যায় লেখিকা বেশ সফল। এত সুন্দরভাবে কেউ হতাশাগ্রস্ত মানুষগুলোর বেদনায় অনুপ্রেরণা হয়ে তাদের সমর্থনে উৎসর্গ করতে পারে। নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এই দিকটি।

বেদনার স্বাদ বইটির সংক্ষিপ্ত সার:-
------------------------------------ "বেদনার স্বাদ" লেখিকা হামিদা আব্বাসী রচিত একটি গল্পগ্রন্থ। উক্ত গল্পগ্রন্থতে লেখিকা মোট ১২ টি গল্পের সমন্বয়ে বইটিতে রূপ দিয়েছে একেকটি গল্পকথাকে। প্রতিটা গল্পের দিক দিয়ে বলতে গেলে আলাদা আলাদাভাবে একেকটা গল্প তাঁদের নিজেরই উদাহরণস্বরূপ। লেখিকা নিখুঁতভাবে বর্ননা দিতে চেয়েছেন প্রতিটি গল্পে। একটা গল্প যখন একটা বাস্তবতার কথাই বলে যায়। 
কয়েকটা গল্প একদম জীবনের কথাই বলেছে যেন আবার কিছু গল্পে বেদনার আর সুখের মিশ্রণে কিভাবে বেদনাকে মেনে নিয়ে জীবনকে গুছিয়ে নেওয়া যায় সেই কথাই বলেছে "বেদনার স্বাদ" গল্পগ্রন্থে।

আমার সবচেয়ে ভালো লাগার কিছু গল্প তুলে ধরি:-

~বেদনার স্বাদ : ক্যাম্পাসের একটি রাত:-
---------------------------------------- এই গল্পে লেখিকা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া প্রতিদিনকার নিত্য নতুন বা কখনো পুরনো প্লটে মোড় নেওয়া সেই মুহূর্ত গুলো। ক্যাম্পাসের ভেতরে সুখ-দুঃখের অভিযোগ, অনুভূতি, আনন্দ, হতাশা,ও বেদনার সংমিশ্রণেই যে যে যার মতো করে দিনশেষে ভালো থাকতে পারে মানিয়ে নিতে পারে তার-ই সুস্পষ্ট বর্ণনা লেখিকা দিয়েছেন উক্ত গল্পে।

বেদনার স্বাদ, অংশীদার:-
--------------------- এই গল্পে লেখিকা সুন্দর একটি ম্যাসেজ আমাদের নিকট দিতে চেয়েছেন। সত্যি বলতে প্রতিটা বাবা-মার কাছেই তার সন্তানগুলো সমান। কোনো পিতামাতার ই চায়না ছেলেমেয়ে ভালো-মন্দ যাই হোকনা কেন তবুও বাবা-মা দেখে সবাইকে সমান চোখেই। কয়েকটি চরিত্রের সমন্বয়ে রূপ নেওয়া অংশীদার গল্পে লেখিকা দুই ভাইয়ের সম্পত্তি ভাগ-বাঁটোয়ারার একটি বিষয়কে সামনে তুলে তার সমস্যা ও সমাধানের সুন্দর একটি পথ দেখিয়েছেন। যা সত্যি ভালো লাগার ও শিক্ষণীয় বটে।

💕বেদনার স্বাদ অপরিপক্ক:-
--------------------- আমাদের জীবনে আসলেই দুঃখের মুহূর্ত বা দিন সামনে না আসলে আমরা প্রকৃত সুখের সন্ধানটা উপলব্ধি করতে পারিনা। যেমনটা আমরা ভুল করে বুঝি হারিয়ে, অপরিপক্ক গল্পেও লেখিকা এমন একটি বিষয়কে তুলে ধরেছেন যে অল্প বয়সের কিছু ভুল যে মানুষের জীবন পর্যন্ত নিয়ে নিতে পারে এবং বেঁচে থাকলেও তার ফলাফল যে ভয়াবহ হতে পারে তারই অর্থপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছেন লেখিকা। শেষ পর্যায়ে মানুষ ভুল বুঝে যখন সঠিকটা গ্রহন করে নেয় তখনই জীবন সুন্দর হতে বাধ্য এমন একটি গল্পই লেখিকা গুছিয়ে বলেছেন।

~বেদনার স্বাদ বই উপেক্ষা:-
------------------ কিছু বিষয় দূর থেকেই সুন্দর। কাছে এলে এর প্রকৃত অর্থটা অস্পষ্ট ও কদর কমে যায়। মানুষ মূলত ভালোলাগা থেকেই অন্যকিছুর কথা ভাবে। তবে একটা সময় দেখা যায় সামান্য অবহেলায় তার ফলাফল আসে বিপরীতমুখী যা কাম্য নয়। একসময় যে মানুষটাকে ছাড়া কল্পনা করাও অপর প্রান্তের মানুষের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে ঠিক বাস্তবতার কাছে দেখা যায় মানুষ একটা সময় নিজেকে কঠিন করে তুলে পরিবর্তন করে ঠিকই। ঠিক যেমনটা লেখিকা উপেক্ষা গল্পে চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। উপেক্ষা করতে পারলেই জীবন সুন্দর নয়তো জীবনের পথটা একটু বেশিই কঠিন হয়ে পড়ে।

বেদনার স্বাদ:-
গল্পগ্রন্থের নামানুসারে এই গল্পটি অন্যরকম ভালো লেগেছিল পড়ে। মানুষের খারাপ সময়গুলোতে যখন পাশে কাউকেই পাওয়া যায়না এবং নিজেই যখন নিজের নির্ভরযোগ্য হয়ে পথটা চলতে হয় ঠিক তখনই উপলব্ধি করা যায় জীবনের নিগূঢ় সত্যি ও রহস্য। এই নিগুঢ় রহস্য টাই হয়তোবা জীবনকে দাঁড় করায় এমন একটা পরিস্থিতিতে যখন অবজ্ঞা বা অবহেলিত মানুষগুলো সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে শিখে ও সে পথ তৈরি হয়। সুখ বা দুঃখ কোনটাই দীর্ঘস্থায়ী নয়,মানুষের জীবনে বেদনা আসাটা যেমন স্বাভাবিক ঠিক সেই সময়ে নিজেদের মধ্যে ধৈর্য রেখে সেই সময়টা মোকাবিলা করতে পারলেই সেই বেদনা কাটিয়ে সুখী হওয়া খুব কষ্টকর নয়। লেখিকা সত্যি সার্থক এই গল্পটিকে প্রাণ দিতে। 

উপরে আমি ৫ টা গল্পের দিক নিয়ে আলোচনা করলাম। তার মানে এটা নয় কেবল এই ৫ টা গল্পই শুধু ভালো লেগেছে। সবগুলো গল্পই আলাদা দিক দিয়ে আলাদা প্রশংসার দাবিদার। আমি শুধু ইঙ্গিত ও বেশি ভালোলাগা গল্পগুলো তুলে ধরলাম। বাকিগুলো ও অনেক ভালো লাগছে সবগুলো তুলে ধরিনি কারণ আপনারা ই বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে দেখবেন সেই প্রত্যাশা রাখি।

★ভালো লাগার লাইন:-
---------------------------------- 
~ বেদনার পরে আসে যে সুখ,
       সেই সুখই বেদনার স্বাদ। 

~ফুটো গামলায় কি পানি থাকে?
    থাকেনা।
    তাহলে ক্ষত দেহে জীবন থাকবে কেমনে?

~ব্যক্তি মাত্রই একা,সে একা-একা 
   জন্মগ্রহণ করে এবং একা একাই
    মৃত্যুবরণ করে।

~একজনের উপেক্ষায় সংক্ষিপ্ত জীবনকে 
   বিক্ষিপ্ত করার কোনো মানে হয়না।

~বেদনার স্বাদ সব সময়ই মধুর।

~মানুষের জীবন হচ্ছে গামলায় রাখা 
  পানির মতো। যেমন গামলা একটু ফুটো 
  হলেই পানি আস্তে-আস্তে করে পড়ে যায়,
  তেমনি মানুষের দেহের কোনো এক
  অঙ্গে ক্ষত হলেই, ধীরেধীরে সেই 
   ক্ষত সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে যায়।

★পাঠ-প্রতিক্রিয়া:-
----------------------------- ভালোলাগার সবকিছুই আমাদের কাছে আনন্দের অনুভূতি হয়ে ধরা দেয়। আমি যখন গল্পগুলো পড়া শুরু করলাম। প্রতিটা গল্প মন থেকে অনুভব করতে চেয়েছি, গল্পকথায় বলা গল্পগুলো লেখিকা এমনভাবেই সবার সামনে উপস্থাপন করেছেন যে স্বীকার করতেই হয় গল্পের সমন্বয় ও সবদিক দিয়ে মাধুর্যতা ছিল বেশ। পড়ার সময় যে একটা উৎকণ্ঠা নিয়ে পাঠকরা পড়বে লেখিকা সেভাবেই ঠিক গুছিয়ে নিয়েছেন প্রতিটি গল্প। কোনো কোনো গল্পে দেখা গেছে জীবনের সুখ-দুঃখের অভিযোগ উঠে এসেছে আবার কোনো গল্পে নির্মম বাস্তবতার স্বীকার হয়ে বেঁচে থাকার দরুণ এক ভয়াবহ সংগ্রামের কথাও উঠে এসেছে।

জীবনকে কখনোই থামিয়ে রাখা উচিত নয় বরং জীবনকে বেদনা-আনন্দ সব পরিস্থিতিতেই মানিয়ে নেওয়ার মতো শক্ত অবস্থান তৈরি করতে হবে। হতাশা বা ব্যর্থতা কখনোই জীবনকে মুক্তি দিতে পারেনা বরং এগুলো কে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে কিভাবে জীবনকে উপভোগ করা যায় লড়ে বেঁচে থাকা যায় সেইভাবেই প্রচেষ্টা চালাতে হয়। নিজেই নিজের অনুপ্রেরণা হয়ে বাঁচতে হবে,বুঝতে হবে কেউই কারো জন্য অপরিহার্য নয় বরং জীবনকে জীবনের জন্য নিজের মতো করে গুছিয়ে নিতে হবে। বেদনাকে উপভোগ করতে হবে, ভেঙে পড়া নয়। আমার মতে,বইটি সকলের জন্য অনুপ্রেরণা মূলক হবে। 

ব্যক্তিগতভাবে বইয়ে থাকা প্রতিটি গল্প আমার অনেক ভালো লেগেছে ও দোয়া করি লেখিকা এভাবেই লিখে যাক আমৃত্যু। 
সবাই বইটি পড়ে দেখবেন অন্তত লেখিকা যে ম্যাসেজগুলো দিতে চেয়েছেন তা অনুভব করে নিজেকেও সেখানেই দাঁড় করাবেন দেখবেন জীবন সত্যিই সুন্দর। 

★লেখিকা হামিদা আব্বাসী পরিচিতি :-
হামিদা আব্বাসী ১৯৯৮ সালের ২৫শে অক্টোবর হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার পূর্বজারিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা: মোহাম্মদ আব্বাস উল্লাহ ও মাতা: সুফিয়া খাতুন।

তার সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখালিখি শুরু। তিনি জীবন জগৎ,সামাজিক-সাংস্কৃতিক অর্থাৎ সাহিত্য রচনা করা যায় এমন সব দিকেই বিচরণ করতে আগ্রহী। পাঠক হিসেবেও খুব মনোযোগী।  

বাংলা সাহিত্য ক্লাব হিসেবে একটি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠিত করেন। এছাড়াও 'সমতা' সাহিত্য সাময়িকী এবং 'ডাকঘর' চিঠি সাময়িকী হিসেবে দুইটি সাহিত্যের ছোট কাগজ সম্পাদনা করেন।

রিভিউ লিখেছেন 💕 :- সাইফা শান্তা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ