বইয়ের নাম- দ্বীপরাষ্ট্র মার্টিন
লেখক- স্বপ্নীল শাকিল
প্রকাশনী- কুহক প্রকাশনী
প্রচ্ছদ মৌমিতা কর
পৃষ্ঠা-৬৪
মলাট মূল্য- ২০০
দ্বীপরাষ্ট্র মার্টিন বইটি লিখা হয়েছে ২জন মানুষের কাল্পনিক চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়ে। যেখানে মার্টিন নামের এক যুবক থাকবে মূল ভূমিকায়। সমাজ নিয়ে নানা ভাবনা ও জীবনের গল্পগুলো তার চিন্তা ও ভাষায় প্রকাশ পাবে। আর এর সঙ্গী হবে আরেক যুবক জোসেফ। যার আগ্রহেই মার্টিন একসময় এই বাংলাদেশ ছেড়ে গিয়ে নতুন একটি দ্বীপরাস্ট্র গঠন করবে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, দ্বীপটি গঠনই হবে বই পড়াকে প্রাধান্য দিয়ে। একসময় তারা হয়ে ওঠবে একটি শিষ্টাচারী সভ্য নগরীর বাসিন্দা। আরো জানতে হলে বই আসার অপেক্ষায় থাকুন।
বই থেকে সামান্য...
সমাজের শিক্ষিত, নম্র-ভদ্র, সমঝদার, বিনয়ী, মান্য-গণ্য, জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গড়ে ওঠেছে দ্বীপরাষ্ট্র মার্টিন। এখন যারা এখানে বসবাস করছে, এরা সবাই একসময় বাংলাদেশ এর বাসিন্দা ছিলো।"
বাংলাদেশে জ্ঞানী-গুণীদের খুব একটা কদর করা হয় না দেখে এই জনমানবশূন্য দ্বীপে এসে তারা নতুন করে বসতি স্থাপন করেছে।"
নগরীর প্রধান মার্টিন। মার্টিন এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী জোসেফ। জোসেফ এর অনুরোধেই মার্টিন এর নামে এই দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছে মার্টিন দ্বীপ।"
মার্টিন এর সাথে জোসেফ এর পরিচয় হওয়াটা অদ্ভুত। তখন তারা বাংলাদেশ এর বাসিন্দা।"
গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এসেছে এক যুবক। যুবকের মনে নানা প্রশ্ন। আজ পর্যন্ত কেউ তার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। যারা দিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই ভুলভাবে দিয়েছেন। যুবকের মনে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি সেটি হলো- এই পৃথিবীতে বড় কী? যা সকল সবকিছুর উর্ধ্বে!"
🍁নাম ও প্রচ্ছদ- বইটির নামের একটা যথার্ত কারণ আছে,, এমন এক নগরী নিয়ে বইটি যা পুরো বইটির মূলভাব কে ফুটিয়ে তুলে আর সেই প্রেক্ষিতে এর নাম দ্বীপরাষ্ট্র মার্টিন।।সেই সাথে প্রচ্ছদের ও মিল ছিলো নাম ও কাহিনীর সাথে,, জলরাশির মধ্যে ভেসে থাকা কোন এক দ্বীপে বইয়ের মাঝে হারিয়ে যাওয়া এক বইপ্রেমির প্রতিচ্ছবি
🍁উৎসর্গ- বই প্রেমিদের প্রাণের মেলা "বই আন্দোলন বাংলাদেশ"..
🍁কেমন হতো যদি একটা আলাদা পৃথিবী থাকতো যেখানে থাকবে গুনি মানুষ রা, যেখান থাকতো কেবল মেধার চর্চা,, থাকতোনা অধিপত্যের যুদ্ধ,,ধর্মে ধর্মে যুদ্ধ,, দখলদারিত্বের যুদ্ধ,, সম্পদ লুণ্ঠনের যুদ্ধ,, বর্ণবৈষম্য,, হত্যা,,নির্যাতন,,খুন,,ধর্ষন,,
কেমন হতো যদি এই বৈষম্যের পৃথিবীতে পরিশ্রমের মূল্য থাকতো,, প্রতিযোগীতা করে নিজের যোগ্যতা যাচাই করে নেওয়ার সুযোগ থাকতো.. যেখানে কর্মদক্ষতা আর দায়িত্বশীলতাই হবে মূল্যায়নের মাপকাঠি.. যেখানে থাকবেনা চাটুকারিতা,, মর্যাদা থাকবে মেধা-শ্রম আর নিষ্ঠার... ??
কেমন হতো এমন একটা পৃথিবী যদি হয়??
এমন-ই এক চিন্তানশীল চরিত্র নিয়েই লেখা মার্টিন দীপরাষ্ট্র,, রোমান্টিক, থ্রিলার,গল্প, উপন্যাসের বাইরে অন্যরকম এক বই।। যেখানে মূলত চিন্তাকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে,, যেখানে আছে বাস্তবতা মিশ্রিত কঠিন সমাজের রূপ গুলো
🍁কাহিনী সংক্ষেপ- বাংলাদেশে জ্ঞানী-গুণিদের খুব একটা কদর করা হয়না,তাই জ্ঞানী ও মেধাবী দের নিয়ে আলাদা একটা দ্বীপে আসার পরিকল্পনা করে মার্টিন ও জোসেফ,, যেখানে থাকবে কেবল জ্ঞানী রা আর মূল্যায়ন থাকবে তাদের.. তাই সমাজের শিক্ষিত,নম্র-ভদ্র,, সমঝদার,,বিনয়ী,মান্য-গণ্য ব্যাক্তিদের নিয়ে গড়ে উঠেছে মার্টিন দ্বীপ মার্টিনের নামের উপর-ই দীপের নাম রাখা হয় মার্টিন দ্বীপ,,জোসেফের অনুরোধে রাখা হয় এই নাম।।নগরীর প্রধান মার্টিন যার মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, কিন্তু কেউ-ই দিতে পারেনা সে উত্তর,, তার মনের সব চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো এই পৃথিবীতে সব চেয়ে বড় কি??যা সব কিছুর উর্ধে। অনেকের মতে সব চেয়ে বড় হচ্ছে ধর্ম, কিন্তু সব মানুষ তো একি ধর্মের অনুসারী নয়,কিন্তু সবাই মানুষ.. তাই সবার উপরে মানুষ তার পর ধর্ম.. কিন্তু তাও কেন মানুষে মানুষে এত ভেদাভেদ??
তাই এই বৈষম্যের ভিতর থেকে আলাদা একটা সুন্দর নগরী গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন মার্টিন আর জোসেফ সেই ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠে মার্টিন দ্বীপরাষ্ট্র.. কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হয় কিভাবে?? জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে বইটি..
মার্টিন ও জোসেফের স্বপ্নের বাস্তবায়ন করার লক্ষে তাদের পাশে ছিলেন তরুন কবি টরেক্স,,শিক্ষক হবার্ট,, চিন্তাবিদ আ্যস্ট্রোন, চিকিৎসক লাথাম,, সহ আরো কয়েক জন তরুন.. মার্টিনের লক্ষ ছিলো সমাজের জ্ঞানী ব্যাক্তিদের নিয়ে এই নগরী গড়ে তোলা কিন্তু সবাই তো এক ধর্মের অনুসারী নয় তাই সবাই আলাদা আলাদা করে নিজেদের ধর্মের উপাসনালয় তৈরি করে এবং সবাই কে বলা হয় নিজ নিজ ধর্ম পালন করবেন কেউ কারো ধর্মে ব্যাকতর্ক করবেন না.. এবং বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় সব ও আশেপাশের বাকি শহড় গুলোর সাথে যোগাযোগ করার ব্যাবস্থা করা হয়।।
🍁চরিত্র সমূহ- বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলো মার্টিন ও জোসেফ... এছাড়াও টরেক্স,হবার্ট,, আ্যস্ট্রোন,,লাথাম ও নবদম্পতি হেরি ও হেলেন..
মার্টিন চরিত্র টাই ছিলো আমার প্রিয়,, কারণ এই কেন্দ্রীয় চরিত্রকে কেন্দ্র করেই পুরো বইটির সার্থকতা... জোসেফের চরিত্র টাও ছিলো ভালো লাগার মত,, পাঠকদের জন্য মার্টিন চরিত্র টাতেও একটা চমক আছে যেটা থাকবে বইয়ের শেষে।।
🍁ব্যাক্তিগত মতামত- বইটি পড়ে পড়তে আমিও হাড়িয়ে গেছি মার্টিন দ্বীপে..বইটি ছিলো আনকমন চিন্তা-ধারার একটি বই.. যার মাঝে চিন্তনশিলতার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে সমাজের এমন কিছু ঘুনে ধরা অংশ যা চোখ মেলে তাকালেই আমরা দেখতে পাই.. আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি,শিক্ষা,, চিকিৎসা,রাজনীতি,,এমন কি ব্যাক্তিগত জীবনেও ছেয়ে গেছে দুর্নীতি যার ফলে সমাজ টা ঘুনে ধরা কাঠের মত হয়ে গেছে,,ভেঙ্গে পড়ছে প্রতিনিয়ত আর বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ, মেধাবী মানুষ গুলো.. বইটিতে একি সাথে ছিলো ভালোবাসা,প্রতিবাদ,সচেতনতা ও প্রতিকারের পথ.. বইটিতে এমন কিছু মেসেজ ছিলো যা আমাদের প্রত্যেকের জন্য জরুরি.. বইটিতে ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে যে দেশপ্রেম ফুটে উঠেছে তা প্রতিটা পাঠকের ভালো লাগবে,, একি সাথে সমাজের বসবাসকারী সকল মানুষের, সকল শ্রেনী পেশার মানুষের ভালো লাগবে..এছাড়াও বই পড়ার প্রতি তরুন দের জন্য ছিলো দারুন মেসেজ।। এক কথায় বইটি অসাধারণ..
🍁বইটির যে দিক টি আমার একটু খারাপ লেগেছে সেটা হচ্ছে চরিত্র গুলোর নাম.. যেহেতু বাংলাদেশের পটভূমি বা প্রেক্ষাপট কে কেন্দ্র করে লিখা তাই নাম গুলো হয়তো বাঙ্গালী নাম হলেই বেশি ফুটে উঠতো..
🍁বইটির বাধাই, ছাপা ছিলো খুবি ভালো এছাড়াও ভাষা ছিলো সহজ ও বোধগম্য..
🍁সব শেষ বলতে চাই বইটি হয়ে উঠুক আমাদের প্রতিটা মানুষের চিন্তা যা আমাদের পরিবর্তন এর মাধ্যমে নতুন এক মার্টিন দ্বীপ উপহার দিবে... প্রতিটা তরুন হয়ে উঠুক একজন মার্টিন যাদের হাত ধরে সৃষ্টি হবে সুন্দর একটা সমাজ,,একটা মার্টিন দ্বীপ
ব্যাক্তিগত রেটিং-১০/১০
রিভিউ ও ছবি- ফাতিমা নূর
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....