ঘুম পাড়ানী গল্প
লেখক : মোঃ শফিউল আলম
প্রকাশনী : আযান প্রকাশনী
বিষয় : শিশু কিশোরদের বই
পৃষ্ঠা : 72,
সংস্করণ : 1st Published, 2021
সম্পাদক: রাজিব হাসান
শারঈ সম্পাদনা: শাইখ আব্দুল্লাহ মাহমুদ
“আপনার বাচ্চা রাতে ঘুমাতে চায় না বলে হাতে মোবাইল তুলে দিয়েছেন। বড় ভুল করে ফেলেছেন। এই কাজটি আর করবেন না। আপনার আদরের বাচ্চাকে শুনিয়ে দিন কিছু ঘুম পাড়ানী গল্প। আপনার বাচ্চাকে ভালো কিছু শিখিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিন। ওর দুনিয়া ও আখিরাত দুটোই উত্তম হবে ইন শা আল্লাহ।
অভিবাবকদের উদ্দেশ্যে দু’টি কথা
নাৰ্মাদুহু ওয়া নুসল্লি আ'লা রাসুলিহিল কারিম। গল্প শুনতে কে না ভালবাসে। আর গল্প শিক্ষা দানের জন্য খুবই উপযোগী একটি মাধ্যম। এজন্যই আল্লাহ্ তাআ'লা মহা পবিত্র কুরআনে আগেকার যুগের অনেক শিক্ষনীয় গল্প বা ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আর গল্প শুনিয়ে বাচ্চাদেরকে ঘুম পাড়ানোর ঐতিহ্য অনেক পুরনো। কিন্তু অহেতুক কিচ্ছা কাহিনী শুনিয়ে সাময়িক বিনোদন ব্যতিত কোন উপকার নেই। এর পরিবর্তে আমরা যদি আমাদের সন্তানদেরকে কুরআন ও হাদিসের আলোকে কিছু শিক্ষনীয় গল্প শুনাতাম, তাহলে আমাদের সন্তানরা শিশু বয়সেই ঈমান, আমাল, আখিরাত তথা ইসলাম সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পেতো। আর শিশুমনে যে জ্ঞান বা বিশ্বাসের বীজ আপনি বপন করবেন বড় হলে তার ফলই আপনি দেখার আশা করতে পারেন। সেই ভাবনা থেকেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। কুরআন ও হাদিসের অসংখ্য সত্য ঘটনার ভান্ডার থেকে কিছু শিক্ষনীয় ঘটনাকে এই বইএ শিশুতোষ গল্পাকারে পেশ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কতটুকু হয়েছে জানিনা, তবে যতটুকু হয়েছে আল্লাহ্ তাআ'লার অসীম দয়ায় হয়েছে। আল্লাহ্ তাআ'লা যেন এর ভুল ত্রুটি বেয়াদবি মাফ করে আমদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হিদায়াতের জরিয়া হিসাবে কবুল করেন, আমীন।
পরিশেষে, যারা এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে বাস্তবে নিয়ে আসার পেছনে বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করেছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, আল্লাহ্ যেন তাদের উত্তম প্রতিদান দান করেন। এই বইএর যেকোন ভুল-ত্রুটি, অসঙ্গতি কারো নজরে আসলে বা যে কোন গঠনমূলক পরামর্শ থাকলে আমাকে জানালে পরবর্তী সংস্করণে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ্।
• আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেক আমাল তাঁর সন্তুষ্টির জন্য করার তৌফিক দান করুন, আমীন।
গল্পের সূচি
- আগুন হল জান্নাতের বাগান
- লাঠি নাকি সাগ
- মহাপ্পাবন
- আবাবিল
- ফেরেশতা জগৎ আল্লাহ্ তাআ'লার আজীব সৃষ্টি জগৎ
- হুদহুদ
- মহানবী (সাঃ) এর আখলাক
- নাसाজী कूलि
- গোয়ালিনীর মেয়ে
- সত্যবাদিতা
- কৃপণতার পরিণাম
- জীবে দয়া
- মায়ের সেনা
- ইচ্ছা শক্তি
- তিন বনি ইসরায়েলী
- ফাতিমার দাদুর দাদু
- ফাতিষার প্রশ্ন
- আখিরাতের দিনলিপি
- জান্নাতের নেয়ামত
- জাহান্নামের আমার
- এক সাহাবীর (রাঃ) জান্নাতের আগ্রহ
আগুন হল জান্নাতের বাগান
হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম একজন সম্মানিত নবি ও রাসুল ছিলেন। তাঁকে আল্লাহ্ তাআ'লা এমন সময় দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন যখন মানুষ ব্যাপকভাবে মূর্তিপূজা করত। নিজের হাতে মাটি, পাথর ইত্যাদি বস্তু দিয়ে মূর্তি বানিয়ে তার উপাসনা করত। তারা মূর্তিকেই তাদের ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখ, ইজ্জত বেইজ্জত, কল্যাণ-অকল্যাণ এসবের মালিক মনে করত। কিন্তু হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম তা মানতে পারতেন না। তিনি ছিলেন খুবই চিন্তাশীল। সবকিছু নিয়ে তিনি বেশ ভাবতেন। তিনি ভাবতেন যাকে নিজের হাত দিয়ে বানানো হল সে কিভাবে রব হতে পারে, সে কিভাবে ইবাদতের উপযুক্ত হতে পারে। তিনি লোকদের মূর্তিপূজাকে একদম মানতে পারতেন না। এই ঘৃণিত কাজ থেকে সবাইকে ফেরানোর জন্য তিনি খুব করে বুঝাতেন। কিন্তু কেউই তাঁর কথায় কান দিতো না। তাঁকে পাত্তা দিতো না। তিনি চিন্তা করতেন কিভাবে এদেরকে মূর্তিপূজার মত এরকম একটি নোংরা কাজ থেকে বাঁচানো যায়।
একবার এক মেলার সময় সবাই যখন মেলায় যাবে, তখন হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম অসুস্থতার কথা বলে তাদের সাথে গেলেন না। সবাই চলে যাওয়ার পর, তিনি একটি বড় মুগুর নিয়ে চুপিচুপি মূর্তির ঘরে প্রবেশ করলেন। একে একে সবগুলো মূর্তি ভেঙ্গে লণ্ডভণ্ড করে দিলেন। কিন্তু বুদ্ধি করে সবচেয়ে বড় মূর্তিটাকে ভাঙলেন না। তাকে অক্ষত রেখে দিলেন। এরপর বড় মুগুরটা মূর্তিটির কাঁধে ঝুলিয়ে রাখলেন।
মেলা শেষে সবাই এসে তাদের মাবুদদের ভয়াবহ অবস্থা দেখতে লাগলো। সবাই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে এদিক সেদিক পড়ে আছে। হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে ডেকে আনা হল। তাকে জিজ্ঞসা করা হল, তাদের মাবুদগুলিকে কে ভেঙ্গেছে? তিনি বড় মূর্তিটির দিকে ইশারা করলেন। তারা বলল, এই মূর্তি কিভাবে সবগুলোকে ভেঙ্গে চুরমার করতে পারে, নিশ্চয় এটা তোমারই কাজ।
সবাই হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে ধরে নমরুদের দরবারে নিয়ে গেল এবং তার শাস্তি দাবী করল। নমরুদ ছিল সারা পৃথিবীর বাদশাহ। নমরুদ সিদ্ধান্ত নিল যে, হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হবে। আগুন জ্বালানোর জন্য ছয়মাস ধরে লাঠি-লাকড়ি সংগ্রহ করা হল। এরপর বিশাল এক অগ্নিকুণ্ড প্রস্তুত করা হল। প্রচণ্ড তার তাপ-উত্তাপ। এত তাপ • যে উপর দিয়ে পাখি উড়ে গেলে তা পুড়ে ছাই হয়ে যেত। এবার সেই আগুনের কুণ্ডলীতে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে নিক্ষেপ করা হবে। এই দৃশ্য দেখে পানির ফেরেশতা, বাতাসের ফেরেশতাসহ হযরত জিবরীল আলাইহিমুস সালাম এসে উপস্থিত হলেন।
বাতাসের ফেরেশতা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে সাহায্য করার জন্য বলল, আপনি বললে বাতাস দিয়ে আগুনকে
উড়িয়ে দিই। পানির ফেরেশতা বলল, আপনি চাইলে আগুনকে পানি দিয়ে নিভিয়ে দিই। কিন্তু হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম একমাত্র আল্লাহ্ তাআ'লার উপর ভরসা রাখলেন। তিনি বললেন, আমার জন্য এক আল্লাহ্ তাআ'লাই যথেষ্ট। সাথে সাথে আল্লাহ্ তাআ'লা আগুনকে হুকুম দিলেন, “হে আগুন তুমি আমার ইব্রাহিমের জন্য শান্তিদায়ক ঠান্ডা হয়ে যাও”। সাথে সাথেই আগুন হয়ে গেল জান্নাতের বাগান, অপার এক শান্তির জায়গা।
বাহির থেকে আগুনের চেহারা আগুনের মতই দেখালো, কিন্তু হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের একটি পশমও পুড়াতে পারলো না। এভাবে চল্লিশ দিন তিনি আগুনের ভিতরে ছিলেন। পরবর্তীতে যখন হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করা হল, দুনিয়াতে আপনি সবচেয়ে বেশি শান্তি কোথায় পেয়েছেন? তিনি বলেছিলেন, যে চল্লিশ দিন আমি আগুনের ভিতরে ছিলাম সেই দিনগুলোতেই আমি সবচেয়ে বেশি শান্তিতে ছিলাম। এভাবেই মানুষ যখন আল্লাহ্ তাআ'লার উপর ভরসা করে তাঁর হুকুম পালন করতে থাকে, তখন অভাব-অনটন, দারিদ্রতা, দুঃখ-কষ্ট, পেরেশানি ইত্যাদির ভিতরেও তিনি তাঁকে জান্নাতের শান্তিতে রাখেন।
লাঠি নাকি সাপ
হযরত মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ্ তাআ'লার একজন রসুল ছিলেন। তিনি আল্লাহ্ তাআ'লার সাথে কথা বলতেন। তাই তাঁর উপাধি ছিল কালিমুল্লাহ। তিনি একটি লাঠি ব্যবহার করতেন।
একদা আল্লাহ্ তাআ'লা হযরত মুসা আলাইহিস সালামকে ডেকে বললেন, হে মুসা তোমার হাতে কি? তিনি বললেন, হে আল্লাহ্ এটা আমার লাঠি, এর সাহায্যে আমি হেলান দিয়ে দাঁড়াই, এটা দিয়ে আমি বকরি চড়াই, গাছ থেকে পাতা পেড়ে বকরিকে খাওয়াই, এটা আমার অনেক উপকারে আসে।
• আল্লাহ্ তাআ'লা বললেন, হে মুসা! তুমি তোমার লাঠি জমিনে নিক্ষেপ করো। মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ্ তাআ'লার হুকুমে লাঠিটি জমিনে নিক্ষেপ করলেন। অমনি লাঠিটি বিশাল এক সাপ হয়ে তাঁর সামনে ইয়া বড় হা করে ফণা তুলল। এ দৃশ্য দেখে মুসা আলাইহিস সালাম আশ্চর্য হয়ে গেলেন। খানিক আগেই তো এটা লাঠি ছিল, তাঁর কতো আপন ছিল, কতো উপকারে আসতো। আর এখন সাপ হয়ে তাঁরই দিকে তেড়ে আসছে। মুসা আলাইহিস সালাম বেশ ভয় পেয়ে গেলেন আল্লাহ্ তাআ'লা আবার হুকুম করলেন, হে মুসা ভয় পেয়ো না! তুমি তাকে ধরো! আমি তাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেবো! আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণের আল্লাহ্ তাআ'লার প্রতি বিশ্বাস ও ভরসা ছিল পর্বতসম দৃঢ়। তাই তাঁরা ছিলেন আল্লাহ্ তাআ'লার একান্ত অনুগত বান্দা। অর্থাৎ তাঁরা আল্লাহ্ তাআ'লার হুকুম পালন করতে দেরী করতেন না। মুসা আলাইহিস সালামও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তিনি সাহস করে সাপকে ধরে ফেললেন, আর তা সাথে সাথে লাঠি হয়ে গেল।
মুসা আলাইহিস সালাম শিক্ষা পেয়ে গেলেন যে, আল্লাহ্র হুকুম ছাড়া কোন জিনিসই তাঁর কে উপকার অপকার করতে রেনা। আল্লাহ্ তাআ'লা চাইলে কোন জিনিসকে লাঠি বানিয়ে উপকার করতে পারেন আবার সেই লাঠিকে সাপ বানিয়ে বান্দার ক্ষতিও করতে পারেন। সত্য কথা বলতে, আল্লাহ্ তাআ'লার হুকুম পালনের মধ্যে আমাদের কোন যুক্তিতর্কের সুযোগই নেই। এই হুকুম মানার মধ্যেই আমাদের সফলতা রয়েছে। এই শিক্ষা মুসা আলাইহিস সালামের জীবনে অনেক কাজে লেগেছিল।
মিশরের বাদশাহ ফেরাউন। সে ছিল অত্যাচারী শাসক। নিজেকে সে রব দাবী করেছিল। আল্লাহ্ তাআ'লা নবি মুসা আলাইহিস সালামকে পাঠিয়েছিলেন তাঁকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাঁকে বিভিন্নভাবে আল্লাহর দিকে ডাকলেও সে তাঁর কথা শুনেনি। মুসা আলাইইস সালামকে নবি হিসেবে মেনে নেয়নি। বরং তাঁর মুজেজাকে যাদু বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। সে বলেছিল, ‘হে মুসা তুমি কি যাদুর জোড়ে আমদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার জন্য এসেছো। তাহলে তোমার যাদুর সাথে আমাদের যাদুর মোকাবেলা হবে'।
মোকাবেলার জন্য একটি দিন ধার্য করা হল। ফেরাউনের জাতির উৎসবের দিন হবে সেই মোকাবেলা। ফেরাউন শহরের বড় বড় যাদুকর আর তাদের সাজ-সরঞ্জামের ব্যবস্থা করল। অতঃপর সেই কাঙ্ক্ষিত দিন চলে আসলো। মোকাবেলার মাঠে রাজ্যের সমস্ত মানুষ জমা হয়ে গেল।
মুসা আলাইহিস সালাম যাদুকরদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তাদেরকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিলেন, তাঁর আযাবের ভয় দেখালেন। তাঁর কথা শুনে যাদুকরদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা-বিভক্তি হল। কিন্তু ফেরাউনের প্ররোচনায় তারা তাঁর মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হল। তাদের সর্দার শামাউন, মুসা আলাইহিস সালামকে বলল, তাহলে তুমিই প্রথমে শুরু করো, নাকি আমরা করব? মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, তোমরাই প্রথমে শুরু করো। তারা তাদের হাতের রশি আর লাঠি মাটিতে নিক্ষেপ করল। যাদুবলে সেগুলো সাপ হয়ে ছুটাছুটি করতে লাগলো।
এ দৃশ্য দেখে মুসা আলাইহিস সালাম কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন। আল্লাহ্ তাআ'লা বললেন, “ভয় করো না, তুমিই বিজয়ী হবে। তোমার ডান হাতে যা আছে তুমি তা নিক্ষেপ করো। এটা যা কিছু তারা করেছে সব কিছুকে গ্রাস করে নেবে।” মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ্ তাআ'লার হুকুম পালন করলেন। তাঁর হাতে থাকা লাঠিটি মাটিতে ফেলে দিলেন। সাথে সাথে লাঠিটি বিশাল এক সাপ হয়ে গেল আর যাদুকরদের সবগুলো সাপ আর তাদের সকল সাজ সরঞ্জাম গিলে খেতে লাগলো। এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত যাদুকরেরা রবের সিজদায় পড়ে গেল। তাঁরা বলল, “আমরা মুসা ও হারুনের রবের প্রতি ঈমান আনলাম।”
🚫 এখানে উল্লেখ্য ক্রিত সকল গল্পগুলই আংশিক, তাই এই বইয়ের পূর্ণাঙ্গ গল্পগুলো উপভোগ করতে অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....