বইয়ের নামঃ হৈমি
লেখকঃ তুর্জয় শাকিল
জনরাঃ সামাজিক উপন্যাস
প্রচ্ছদঃ নিয়াজ চৌধুরী তুলি
প্রকাশনীঃ কলি প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশঃ একুশে বইমেলা ২০২২
পৃষ্ঠাঃ ১৪৩
মুদ্রিত মূল্যঃ ২৫০ টাকা
রেটিংঃ ৪/৫
#নামকরণ: একটি উপন্যাসের অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নাম। এই নামকরণ যদি সঠিক, সুন্দর হয় এবং উপন্যাসের প্লট ও কাহিনীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তাহলে পাঠকরা ওই উপন্যাস পড়ে অধিক সন্তুষ্ট হয়। এক্ষেত্রে "হৈমি" নামটি এই উপন্যাসের জন্য যথার্থ একটি নাম এবং উপন্যাসের প্লটের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। 'হৈমি' নামটি মূলত উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হৈমির নাম থেকে নেয়া হয়েছে।
#প্রচ্ছদ: প্রচ্ছদটিও খুব সুন্দর করে ডিজাইন করেছে প্রচ্ছদ শিল্পী। অশুভ্র সাদার মধ্যে ও লোহিত ও সাদা রঙের রং তুলিতে মেঘের কালো রঙের কেশবতীর রূপে ফুটিয়ে তুলেছেন হৈমিকে। রূপ প্রদান করেছেন লেখকের কল্পনার তৈরি হৈমিকে।
#মূল_চরিত্রসমূহ: হৈমি, নওফেল এবং টুকু। এমনকি বিহগ চড়ে বসবাসরত প্রতিটা মানুষ, প্রতিটি চরিত্রকে লেখক প্রধান চরিত্র করে তুলেছেন আপন শক্তিতে।
#প্রিয়_চরিত্র: উপন্যাসের প্রধান চরিত্র 'হৈমি'। কারণ হৈমির সাহসিকতা, প্রতিবাদী মনোভাব কিংবা অপ্রকাশিত প্রণয় সকল বিষয়ে যেন নিজেকে উপলব্ধি করতে পেরেছি। যেন আমার প্রতিচ্ছবি সে এবং আমি তার।
#কাহিনি_সংক্ষেপ: উপন্যাসের কাহিনি শুরু হয় হৈমির কৈশোর থেকে। তার দুরন্তপনা ও চঞ্চলতা সাথে বিহগ চড়ের বসতি স্থাপনের ইতিহাস কিংবা গল্প থেকে। তাদের সহজ সরল জীবন যাপনের এক জটিলতা হিসেবে উপস্থিত হয় মহাজন জিরাব আলী। লোভ, একতা, শক্তি, সংঘবদ্ধতা, শত্রুতার সূত্রপাত ঘটে সেই সাধারণ মানুষ গুলোর জীবনে। সেই সাথে আগমন ঘটে হৈমির জীবনে এক নতুন অনুভূতির। আগমন ঘটে নওফেল নামক ছন্নছাড়ার। এরপর কী ঘটে? নওফেল কী জানতে পারবে হৈমির অনুভূতি? মিলন ঘটবে কী দস্যি মেয়ের সাথে এক ছন্নছাড়ার নাকি;-
কীই বা ঘটে বিহগ চড়বাসীদের সঙ্গে? কোন সীমা পর্যন্ত যান মহাজন নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে কিংবা তিনি তার অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে কী সফল হয়েছিলেন?
#পাঠপ্রতিক্রিয়া: হৈমি সম্পর্কে বলবো, "হৈমি হচ্ছে একদল সাধারণ মানুষের অসাধারণ গল্প। এক সাধারণ নারীর অসাধারণ গল্প।"
এই উপন্যাস নিয়ে আমার অনুভূতি অন্যরকম এবং অজস্র। ছোট বেলা থেকেই মোটামুটি বাংলা সাহিত্যের প্রতি দুর্বলতা আমার। যদিও তা পরে উপলব্ধি করতে পেরেছি। তখন বাংলা বইয়ের গল্প কবিতা পড়ার সময় যখন লেখক পরিচিতি পড়তাম তো বিভিন্ন জেলার লেখকের নাম পড়ে আফসোস করে বলতাম, "ইশশশ! আমার জেলায় কী কোনো লেখক জন্মগ্রহণ করেননি। আমার জেলায় কেনো কেউ লেখালেখি করে না?" সপ্তম শ্রেণীতে একজন পেয়েছিলাম খুঁজে। এবং মাধ্যমিক শ্রেনীর পর স্যোসাল মিডিয়ায় অল্প স্বল্প জানতে পারলাম হৈমির লেখককে। এই অনুভূতি এবং উচ্ছ্বাসটা ভিন্ন ছিলো।
আমার অঞ্চল ও আঞ্চলিক ভাষায় লেখা হৈমি। যদিও লেখকের কল্পনা ও কলমের সংমিশ্রণ হৈমি। তবুও কোনো একদিন বিহগ চড় যাওয়ার ইচ্ছে আছে হৈমির সন্ধানে।
#লেখকের_উদ্দেশ্য_কিছু_কথা: প্রথমেই লেখককে ধন্যবাদ জানাই আমাদের এত সুন্দর একটি বই উপহার দেওয়ার জন্য এবং শুভ কামনাও রইল। আঞ্চলিক ভাষায় উপন্যাস লেখা অনেকটা দ্বিধান্বিত ব্যাপার। কারণ ভিন্ন অঞ্চলের মানুষ সেটাকে কীভাবে নিবে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। সেক্ষেত্রে লেখক সার্থক। বিশাল পাঠক সমাজ গ্রহণ করেছে 'হৈমি'। উপরন্তু, নিজের চিরাচরিত লেখার ধরন এবং কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন তিনি।
ভবিষ্যতে লেখকের থেকে আরও ভালো কিছুর আশা রাখছি। একদিন আসুক যেদিন গর্ব করে বলতে পারি, "ইনি হচ্ছেন আমাদের লেখক।"
(রিভিউ লিখতে পারি না। তবুও দিলাম। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)
পুনশ্চঃ ফটোগ্রাফি করা হয় নি তেমনভাবে। তবে প্লটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নদীর দৃশ্যপট দিলাম। সাধারণ মানুষের গল্পের সাধারণ ফটোগ্রাফি।
- 'আন্নের তো দেহি সাহস বাইড়া গেছে! আগে আমাগো জানালার ধারে যাইতেই ডরাইতেন , আর এহন আমারে ঘরের তন ডাইকা গাঙ পাড় লইয়া আইছেন! সাহস কি গঞ্জের তন কিন্না আনছেন নাকি?’
- 'সাহস কিনতে যামু কিলিগা! বিয়ার কতা হুইন্না সাহস বাড়ছে। আইচ্ছা আমারে যে আন্নের ভালা লাগে, বিয়া করতে চান আগে কন নাই কিলিগা!!’
- 'মাইয়া মাইনষে পরাণ ভইরা ভালোবাসতে জানে, তয় কইতে পারে না। কইবো তো বেডা মাইনষে, কইতে না পারলে হেয় আবার কিয়ের বেডা মানুষ!!' হৈমি ভেংচি কাটলো।
উপরের কথাগুলো হৈমি উপন্যাসের।
হৈমি চঞ্চল, রোমান্টিক ও প্রতিবাদী নারী চরিত্রের মিশ্রণ। হৈমি উপন্যাসটি মূলত নদীর তীরবর্তী অঞ্চল ও চরাঞ্চলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে লেখা। চাঁদপুরের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা মেঘনা নদীর মাঝে অবস্থিত বিহগ চরকে কেন্দ্র করে লেখা এই উপন্যাস। এই উপন্যাসের মূল চরিত্র হৈমি। তার ভাই টুকুও এই উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। শৈশব পেরোতেই হৈমি নওফেল নামক এক ছন্নছাড়া ছেলের প্রেমে পড়ে। এদিকে মহাজন বিহগ চরের পাশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ করে বিহগ চরের বাসিন্দারা। এই প্রতিবাদের রেশ ধরে খুন হয় হৈমির বাবা হাসমত মিয়া। চরের আরও যুবকের প্রাণ যায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে। শেষে মৃত্যু ভয়ে চুপসে যায় বিহগ চরের প্রতিবাদ। এতে বিহগ চরের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। তখন চরের একজন সাধারণ মেয়ে হৈমি একাই রুখে দাঁড়ায় মহাজনের বিরুদ্ধে। একজন সহজ সরল সাধারণ মেয়ে কীভাবে বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার সাথে নিজের জন্মস্থানকে রক্ষা করে তাই জানা যাবে এই উপন্যাসে।
উপন্যাস টি বিহগ চরের স্থানীয় ভাষায় লেখা। তবে শব্দগুলো প্রচলিত অর্থ উপন্যাসের শেষে দেওয়া আছে।
উপন্যাস: হৈমি
লেখক: তুর্জয় শাকিল
কলি প্রকাশনী
বইমেলা ২০২২
রকমারি অর্ডার লিংক- hardcover with short pdf link
সহজ একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জিতে নিন হৈমি বইটি।
প্রশ্ন: হৈমি বইটি অমর একুশে বইমেলার কত নাম্বার স্টলে পাওয়া যাবে?
কমেন্টে আপনার উত্তর দিবেন এবং পোষ্টটি আপনার টাইমলাইনে শেয়ার করতে হবে।
সঠিক উত্তর দাতাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে দুইজনকে হৈমি বইটি পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....