হৃদয়জ : তানিয়া শেখ (রিভিউ) Hridoyz Tania Shekh

উপন্যাসের নাম: ❝হৃদয়জ❞
লেখক: তানিয়া শেখ
ধরন: সমকালীন
প্রকাশনী: নবকথন প্রকাশনী 
প্রচ্ছদ : পরাগ ওয়াহিদ 
মুদ্রিত মূল্য : ২৯৯
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৬০
প্রকাশকাল: বইমেলা ২০২২
হৃদয়জ : তানিয়া শেখ pdf download free  (রিভিউ) Hridoyz Tania Shekh books
হৃদয়জ লেখক: তানিয়া শেখ


📌ফ্লাপে লেখা:
শাহরিয়ার শৈশবে এতিম, তারুণ্যে হয়েছে পরান্নপুষ্টে। সমবয়সীদের মতো রঙিন চমশার ভেতর দিয়ে পৃথিবীটা দেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। জীবনের রূঢ় বাস্তবতার চপেটাঘাতে বার বার সংকুচিত হয়ে উঠেছে জীবন, নত হয়েছে মাথা। উজানে ভেসে যাওয়া কচুরিপানার মতো ভাসতে থাকে জীবন! ভাসতে ভাসতে একপর্যায়ে মামাবাড়ি থেকে ঠাঁই হয় খন্দকার বাড়িতে। দুমুঠো ভাত, মাথার ওপর একটুখানি ছাদের বিনিময়ে এ বাড়ির গৃহশিক্ষক হয়। চোখে তার একটাই স্বপ্ন বড়ো হতে হবে, অনেক বড়ো। লক্ষ্য যখন গলগ্রহের জীবন থেকে পরিত্রাণের, তখনই দেখা নিজেরই মতো ভাগ্য বিড়ম্বিত এক বালিকার সাথে। খন্দকারের ভাতিজি এবং আশ্রিতা চতুর্দশী কাজরি। মেয়েটি ভারি মুখচোরা। কিন্তু এই মুখচোরা মেয়েটির প্রতি বিশেষ করুণা জাগে শাহরিয়ারের। যেই অনুভূতিকে করুণা, সহমর্মিতা বলে মনে ঠাঁই দিলো- সে জানে না, এই করুণা সময়ের আবর্তে কতটা ওপরে গিয়ে ঠেকবে। প্রভাবিত করবে তার সমগ্র জীবনটাকে। 

বই থেকে,
     ❝বিশেষ একজন থাকে যে কেবল দৃষ্টিকে আকর্ষণ করে না, হৃদয়কেও আকৃষ্ট করে। তারপর ধীরে ধীরে হৃদয়ে নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে তোলে। হয় হৃদয়জ।❞

📌 প্রচ্ছদ : প্রথমটা প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিনই ভালো লেগেছিলো। প্রচ্ছদ এর সৌন্দর্য যেন গল্পের প্রেক্ষাপটের সাথে খাপেখাপে মিলে গেছে। একজন মেয়ে তার প্রথম অলিখিত সম্পত্তি সবকিছু যেন জড়িয়ে রয়েছে প্রচ্ছদটায়। তবে কোথাও যেন খামতি মনে হ'য়েছে। হয়তো আরেক মূল চরিত্র ঠঁায় পেলে সুন্দর হতো। 

📌নামকরণ : বিশেষ একজন থাকে আমাদের জীবনে। যার পদধূলিতে জীবন এক অন্যরকম সুখ খুঁজে পায়। যাকে দেখলেই হৃদয় আকৃষ্ট করে। আর তার ধীরে ধীরে আমাদের হৃদয়ের সবটুকু জুড়ে জড়িয়ে যায়। তাই তাকে হয়তো বলা হয় হৃদয়জ। তাই উপন্যাসের নামকরণটি যথাযথ সার্থক হয়েছে। 

📌 উৎসর্গ : লেখকের প্রথম উপন্যাস। আর তার প্রথম সৃষ্টি বা সন্তানকে নিজের বাবা-মা র নামে উৎসর্গ করেছে। বিষয়টা আমার অনেক ভালো লেগেছে। 

📌 চরিত্র বিশ্লেষণ : 
♪শাহরিয়ার : অনেক গম্ভীর,রাগী, লাজুক,ভদ্র একটি চরিত্র। নিজের অসহায়ত্বের কাছে একজন ছেলে কতোটা অপরাগ তা এই চরিত্রে উঠে এসেছে। নিজের অনুভূতিকে অসহায়ত্বকে পিছনে ফেলে প্রকাশ করতে পারিনি। 

♪কাজরি: নামটাই অদ্ভুত সুন্দর। নামটা যেমন সুন্দর এর অর্থটাও অনেক সুন্দর। চাপা স্বভারের লাজুক মেয়ে অথচ অসম্ভব ভালোবাসতে জানে নিজের কাছের মানুষদের।ভালোবাসা,অবহেলা,তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য পাওয়ার পরও যেন সূর্যের রাঙা আলো। কাজরি নামটা পড়েই খেয়াল এতো দুটো কথা - ❝কাগজের খেয়া❞ ও❝ মেঘের মতো আলো❞। উপন্যাসটা পড়া শেষে মনে হলো লেখিকার সাথে আমার অনুভূতির দেওয়া নাম দুটোও সার্থক। 

♪আশরাফ : শাহরিয়ারের মামা। নিজের অসহায়ত্বের কাছে হেরেও বোনকে দেওয়া কথা রাখতে ভাগ্নর দায়িত্ব নেন। নিজের সন্তানের অধিক ভালোবাসেন। দারিদ্র্যের সংসারেও ভাগ্নেকে আগলে রেখেছেন, ভালোবেসেছেন,তাকে যোগ্য করে তুলছেন যা প্রশংসনীয়। কিন্তু উপন্যাসে তিনিই নিজের অজান্তেই শাহরিয়ার দুঃখের কারণ হয়ে দাড়ান। যদিও তিনি পরে তা বুঝতে পারেন এবং অনুতপ্ত হন।

♪খন্দকার, রাশেদা: কাজরির চাচা-চাচি। খন্দকার কাজরিকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন কিন্তু স্ত্রী র জন্য তা পালন বা প্রকাশ করতে পারেন না। কাজরিকে ভালোবেসে অনেক কথা দিয়ে থাকলেও স্ত্রীর আক্রোশে তা শেষ পর্যন্ত পালন করতে পারেন না।

♪রুমি,শাম্মী,মঈন: সম্পর্কে কাজরির চাচাত ভাই- বোন। রুমি, শাম্মী দুজন সহোদর বোন হলেও তাদের আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। একজন অসহায় কাজরিকে আপন করে কাছে টেনে নিয়েছে তো আরেকজন ঠিক ততোটাই ঘৃণা মনে কাজরিকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। 

♪মোসাদ্দেক: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র মনে হয়েছে। ওনার জন্যই আজকেই এই শাহরিয়ার। শাহরিয়ার কে নিজের সন্তান তুল্য স্নেহ করতেন। কিন্তু প্রতিটি মানুষের জীবনেই নিজস্ব কিছু দুঃখ, অপ্রাপ্তি আছে যা হয়তো কোনদিন প্রাপ্তির খাতায় নাম লেখায় না। তার চরিত্র টা ঠিক উপন্যাস না পড়লে বোঝা সম্ভব নয়।

♪অন্যান্য চরিত্র: দৃশ্য প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চরিত্রের আগমন ঘটেছে। আর লেখক প্রতিটি চরিত্রকে সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। যা লেখকের লেখার দক্ষতাকে প্রশংসনীয় করে তুলতে বাধ্য। 

📌 প্রিয় চরিত্র : উপন্যাসের প্রিয় চরিত্রের ক্ষেত্রে অনেক ভাবতে হয়।এই উপন্যাসের সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র কাজরি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে, ভালোবাসান মানুষের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করা।

📌 পাঠপ্রতিক্রিয়া: এই উপন্যাসের সবচেয়ে যে জিনিস ফুটে উঠেছে তা হলো -পটভূমি ও জীবনধারা। এখানে এই বিষয়গুলোই উপন্যাসকে সুন্দর একটা ইতি দিয়েছে। পুরো উপন্যাস জুড়ে দ্রারিদ্রতা, অসহায়ত্ব, ভালোবাসা, বিচ্ছেদ, অপেক্ষা, মিলন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি সবকিছুই কিছু স্বয়ংসম্পূর্ণ। কেউ কেউ অসহায়ত্বের কারণে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পেরে প্রতিনিয়ত জ্বলে, কেউবা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজের ভালোবাসা প্রকাশ না করে পালিয়ে যায় এবং সেই ভালোবাসা ফেলে পালিয়ে আসার জন্য সারাজীবন বিরহের জ্বালায় জ্বলে পুড়ে ম'রে।  
কেউ তার ভালোবাসা অপ্রাপ্তি নিয়ে জীবন বয়ে বেড়ায় কেউ হারানো ভালোবাসা ফিরে পেয়ে প্রাপ্তির খাতায় নিজেকে নাম লেখায়। ভালোবাসা এক অদ্ভুত মায়াজাল রয়েছে উপন্যাসটিতে।
শেষের দিকের চমকটা ছিলো অপ্রত্যাশিত। শেষ দুই পাতা পড়ে লেখক পাঠক সমাজকে আবেগী ও কাঁদিয়ে তুলেছেন। উপন্যাসটা পড়ে মায়ায় পড়েছি, কখনো মুচকি হেঁসেছি বা কখনো চোখে বেয়ে নোনা জল পড়েছে। 
চরিত্র গঠন, পটভূমি, জীবনধারা সবকিছু অসাধারণ ভাবে তুলে ধরেছেন লেখক। সবকিছুর ভারসাম্য ছিলো যথাযথ। 

📌নেগেটিভ দিক: হাতে ধরে দুইটা বিষয় খেয়াল করলাম।এক… যেহেতু গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে উপন্যাসটি লেখা সেহেতু দু তিন জায়গায় মনে হলো ইংরেজি শব্দ না এনে বাংলা শব্দ ব্যবহার করলে ভালো লাগতো। যেমন : এক জায়গায় “ হিস্টিরিয়া ” রোগ না দিয়ে মৃগী বা বাংলা অন্য নাম দিলে সুন্দর হতো। এক জায়গায় খন্দকার, বাক্যে“ ফর্মালিটি ” শব্দটা ব্যবহার করছেন। এখানে বাক্যের সাথে ইংরেজি এই শব্দটা যায় না বলে মনে হ'য়েছে। 
দুই… কয়েক জায়গায় হিন্দির বাক্য দেখা গিয়েছে। লেখিকা গল্পের স্বার্থেই হয়তো এনেছেন কিন্তু বাংলা উপন্যাসে হিন্দির ব্যবহার আমার পারসোনালি ভালো লাগেনা। তাই এখনেও ভালো লাগেনি ব্যাপারটা। হিন্দি গান হলে নিজেকে বুঝ দিতে পারতাম কিন্তু হিন্দি বাক্য ঠিক মানিয়ে নিতে পারলাম না।

📌প্রিয় লাইন: ❝ শয়'তান মাস্টার, এইজন্যই তোর কাছে পড়তি যাই না।ফেল করে সারা দুনিয়া ঝাড়ু দিতি হলিও দিবানে।তাও তোর কাছে যাবান না পড়তি।চৌদ্দ গুণ দুই কতো বলো তো? গুণবিদ হইছে ভারি। হু।❞

📌লেখক প্রসঙ্গে : লেখক তানিয়া শেখের প্রথম উপন্যাস অথচ এতো নিপুণ ভাবে লেখেছেন যা আসলেই প্রশংসার যোগ্য। ভাষাগত দিক, বাক্য চরণ সবকিছু ছিলো নিপুণ। পুরো উপন্যাস জুড়ে রয়েছে মায়ামায়া, মিষ্টি একটা গন্ধের লেখনী। সব মিলিয়ে লেখক অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

📌 প্রকাশনী: ❝ নবকথন প্রকাশনী ❞ নতুন প্রকাশনী কিন্তু তাদের কাজ কতোটা শৃঙ্খল ও সুনিপুণ। তা প্রশংসা পাওয়ার আসলেই যোগ্যতা রাখে। প্রচ্ছদ এর কাজ সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলে নিজেদের প্রডাকশন এর দক্ষতা দেখিয়েছেন। তাছাড়া বইয়ের কাগজ, বাইন্ডিং সুন্দর ভাবে এসেছে। টাইপিং মিস্টেক আমার চোখে ধরা পড়েনি।

📌 রেটিং : ৯/১০

রিভিউ লেখনীতে: জেবিন-জারা

হৃদয়জ উপন্যাসের রিভিউ (০২)
রিভিউ লিখেছেঃ Kotha Sen 

আমি যতটুকু বুঝি তাতে আমি মনে করি ভালোবাসা টা ভালোবাসার মানুষটির কাছে লুকিয়ে রাখা উচিত না। কারও প্রতি ভালোবাসা অনুভব করলে সেই মানুষটির সামনে প্রকাশ করা উচিত। অবশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভালোবাসা টা উপলব্ধি করতে সময় লেগে যায় কিন্তু প্রকাশ করা উচিত। মানুষ অনুভবে যেমন বিশ্বাসী তেমনই চোখে দেখা আর কানে শোনাতেও। সব মানুষ এক রকম হয় না। তাই ভালোবাসা প্রকাশ করা উচিত।  

শাহরিয়ার এমন একটি চরিত্র যার প্রতিটা চরণ মেয়েরা স্পর্শ করতে ভালোবাসে। এমন পুরুষের প্রতি তারা অসীম ভালোবাসা তৈরি করে হৃদয়ে। এই ধরনের পুরুষ রূপে আর গুনে মেয়েদের ঘায়েল করে। শাহরিয়ার এর পুরুষ অবয়ব যেন আমারই চোখের সামনে হেটে বেড়াচ্ছে প্রতি নিয়ত। অনেক মেয়েরা গল্পের পুরুষ চরিত্রের প্রেমে পড়ে। সেক্ষেত্রে আমি মুগ্ধ হয়েছি বার বার। গল্পের ব্যাখ্যাতে শাহরিয়ার কে এমন ভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে যাতে সবাই শাহরিয়ার এর প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে। 

"কাজরি" এমন সুন্দর নামও হতে পারে কারও? কাজরির নাম যেমন সুন্দর তেমনই তার চরিত্র টা যেন সুগন্ধি। সবার মাঝে নিজের সুভাস বিলিয়ে যায় মেয়েটা তার গুনে। প্রজাপতি যেমন আঁকেবাঁকে উড়ে বেরায় তেমনই উড়তে ভালোবাসে মেয়েটা। ফুলের বাগান প্রজাপতির ভালোবাসার জায়গা হলে কাজরির ছিল তার কাকার বাড়ি। কাকাই যেন তার আরেক বাবা। এতো অবহেলা, কষ্ট যন্ত্রণা পেয়েও মানুষ গুলোকে ভালোবাসে। ভালোবাসার মর্মতা শাহরিয়ারও বুঝেনি। অহংকার বলতে তার জীবনে কোনো শব্দ নেই। মেয়েটার নিজের বলতে কিছু না থাকা সত্ত্বেও বার বার হিংসা এসে আঘাত করেছে তাকে। 

ছোটবেলায় বাবা মা মারা যাওয়ায় শাহরিয়ার কেউ না থেকেও মামার স্নেহময় হাতটা তার মাথায় ছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রে কাজরির সবাই থেকেও যেন নেই। স্বপ্ন পূরণ করতে শাহরিয়ার তার লক্ষ্যে স্থির ছিল। জীবনে ভালোবাসা আসলেও তাকে পাশে রেখেই লক্ষ্য অর্জন করতে চেয়েছিল। ভবিষ্যতে আদর্শ মানুষ হতে চেয়েছিল। কিন্তু তার লক্ষ্য অর্জন করে ফেললেও সেখানে সে সর্বশান্ত। শাহরিয়ার এর এই খানে আমার খুবই খারাপ লেগেছিল। সে স্বপ্ন গড়তে বাস্তবের জাতাঁকলে পিষ্ট হয়ে ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলে। তার উচিত ছিলো সর্বক্ষেত্রে যাচাই করা। হয়তো তখন সে ওই পরিস্থিতি তে ছিল না। কাজরি ছিল ভালোবাসার পিপাসী। সেক্ষেত্রে সে বার বার হৃদয়ে কষ্ট ছাড়া কিছুই পায়নি। প্রিয় জিনিস গুলো তার থেকে কেঁড়ে নেওয়াই কিছু মানুষের ধর্ম হয়ে ওঠে। 

"তার গতকাল বিয়ে হয়ে গেছে।" 

এই লেখা টুকু পড়ে শাহরিয়ার সাথে আমারও হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল। এই জায়গা থেকে শুরু করে আমি বাকি পর্বগুলোতে আমার চোখে জল সহকারেই পড়েছি। এখানে এসে আমি আর উপন্যাসে বিরতি নিতে পারিনি। একদিকে শাহরিয়ার আর আরেক দিকে মোসাদ্দেক সাবের। এই দুইজনের কষ্টে যেন আমিও কিছু টা অনুভব করেছি। আশরাফ আলীর মতো তখন আমারও মনে ভয় ধরে যায় শাহরিয়ারকে নিয়ে। এই লাইন থেকে আমার ভয় আর উত্তেজনা তিরতির করে বেড়েছে। বাকী পর্ব টা বুকে চাপা একটা কষ্ট নিয়েই শেষ করেছি। শুধু মনে হয়েছে "কী হবে পরবর্তীতে, কী হবে?" এই সময় থেকে যেন আমি উপন্যাসেরই ভেতরেই বাস করেছি। মনে হয়েছে আমার চোখের সামনেই সব ঘটছে। এতো অসামান্য লেখা হয়েছে তা এতো ছোট করে লিখে ব্যাখা করা যাবে না। শাহরিয়ার এর প্রতিটা প্রহর যেন আমারও সময়। 

বিঃদ্রঃ আমি গল্পের রিভিউ কখনো দেইনি আর কারও টা পড়িও না। তাই রিভিউ দেয় কীভাবে তা জানি না। কিন্তু মন থেকে আমার যেই কথা গুলো সাধারণ ভাষায় আসল তাতেই আমি লিখে দিলাম। পাঠক হয়ে যদি এই দায়িত্ব পালন না করি তাহলে প্রিয় লেখিকা তার লেখার অনুপ্রেরণা পাবে না। কিন্তু উপন্যাস টা আমার প্রচন্ড ভালো লেগেছে। আমি কাজরির মত ধৈর্যশীল মানুষ নই। আমার ভিতরে কৌতুহলে ভরপুর। কোনো উপন্যাস পড়া শুরু করলে তার প্রথম কয়েক পর্ব পড়ে শেষ এর পাতার দুই এক লাইন পরে নেই মনের শান্তনার জন্য। এই উপন্যাসের বেলায়ও তাই ছিল। কিন্তু শেষের দিকে টুইস্ট টার জন্য আমাকে লেখিকা আপু কাঁদিয়ে ফেলেছে। লাস্টের পর্ব টার শেষ পাতা জেনেও কেঁদেছি, ভাবা যায়! ভেবেছিলাম শেষ পাতা না পড়লে পেট ফেটে যাবে। কিন্তু শেষ পাতা টা পড়িয়েও চোখ ফাটিয়ে ফেলেছে আমার। খুব সুন্দর উপন্যাস হয়েছে। আশা করছি আরও সুন্দর লিখবে ভবিষ্যতে আর তোমার পাঠকও বৃদ্ধি পাবে। লেখা টা চালিয়ে যেও। আমি ভবিষ্যৎ দেখতে না পারলেও তোমার লেখা প্রথম বই পড়েছি। জীবনে অনেক বড় হবে তুমি দেখে নিও। তখন আরও ভালোবাসা পাবে পাঠকদের থেকে। আর নতুন লেখার জন্য শুভকামনা। 
হৃদয়জ বইটির জন্য অভিনন্দন। তোমার লেখার আর তোমার প্রতি এত্তো ভালোবাসা আপু।❤️

বিঃদ্রঃ২ উপন্যাস টা ছিল ২০০০ সাল এর শুরু থেকে। উপন্যাসের মূল চিত্র ছিল গ্রাম্য পরিবেশে। আমি মনে করি, একজন রাইটার তার উপন্যাসে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা টা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলবে। শুধু পল্লিপরিবেশেই নয়, শহুরে আঞ্চলের ইট পাথরের দেওয়ালেও একটা ভালোবাসা আছে। এই ভালোবাসা গুলো অনুভব করতে হবে। নইলে লেখা অনেকটা সাদামাটা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে এই উপন্যাসে আমি এই দিকটা তেমন একটা দেখিনি। তাই রেটিং এ আমি এই উপন্যাসে ১০ এর মধ্যে ৮ দিব। এতগুলো কথা এই ৮ নম্বর টির জন্যই বললাম।



প্রায় এক বছর আগের কথা, কোনো এক স্নিগ্ধ সকালে স্কুল পড়ুয়া পিচ্চি ইফরার দেখা হয় ছোট্ট এক কুকুরছানার সঙ্গে। যে কুকুরছানাটি বাসায় এনে পোষা শুরু করে সে। ছোটদের কুকুরের প্রতি মায়া নতুন কিছু নয় অবশ্য।

উপরের অংশটি খুব মায়াময় একটি অংশ, তাই না? এবার অন্যদিকে আসি, হিন্দু মিথোলজি অনুসারে, একজন মানুষের দুটো অংশ থাকে। প্রথমটা ‘দেবদূত', অর্থাৎ ভালো ও মায়াময় দিক। আর দ্বিতীয়টি 'অপদেবতা', অর্থাৎ খারাপ ও নৃশংস দিক। আমরা সাধারণত জীবনভর প্রথম দিকটিই বয়ে বেড়াই। কিন্তু দ্বিতীয় দিক?

দ্বিতীয় দিকটি কখন বেরিয়ে আসে? মানুষ কখন দেবদূতের পোশাক খুলে অপদেবতায় পরিণত হয়? তার সাথে খুব খারাপ কিছু হলে? এমনকিছু, যা সওয়া যায় না? অথবা এমন কোনো ক্ষত, যা কাটিয়ে ওঠা যায় না? তাহলে কতটুকু খারাপ হতে পারে মানুষ? কোন পর্যায়ের অপদেবতা হতে পারে?

স্টিফেন কোনো এক কারণে আই.সি.ইউ'তে ভর্তি আছে আপাতত। সেখানেই তার কানে ভেসে আসলো এক নৃশংস ঘটনা, ভোরবেলায় ফ্লাইওভারের নিচে ময়লার স্তুপে এক লোকের লাশ পাওয়া যায়। যে লাশকে আকাশ থেকে ঘিরে আছে চিলের ঝাঁক এবং পাতালে থানা পুলিশের ঝাঁক। লাশের চেহারা এমনভাবে পোড়ানো হয়েছে, ভিক্টিম শনাক্ত করার জো নেই। লাশের শরীরের কিছু অংশও নেই। পুরো শরীর কামড়ে খেয়েছে কুকুর। এই বিভৎস পরিস্থিতি দেখে হাসপাতালে থাকা স্টিফেনের সাথেই যোগাযোগ করতে হলো ডিআইজি আনোয়ার হোসাইনের। কিন্তু, অনেক প্রশ্ন এখনো থেকেই যায়।

স্টিফেন কেন'ই বা আই.সি.ইউ'তে ভর্তি?

লাশের কিছু দেহাংশ না থাকার তর্কশাস্ত্র'ই বা কী? এসব প্রশ্ন কাটিয়ে উঠতে উঠতে খবর আসলো, আলোচিত ইসলামিক বক্তা মহিউদ্দীন আল আজহারী মাহফিল শেষ করে ফেরার পথে হলেন নিখোঁজ! এই খবরে উত্তাল শহর। ক্রুদ্ধ তার সমর্থকগণ।

বিভৎস সেই লাশের রহস্যের মাঝে যেন আরো জড়ালো এক গোলকধাঁধায় পড়লো এস.সি.এফ। কিন্তু... এসব কি এখানেই থেমে যাবে?

এই প্রশ্নের জবাব আছে শুধু একজনের কাছে। একজন ভবঘুরে স্বভাবের মানুষ। যাকে কখনো কেউ দেখেনি। যার নাম জানা নেই কারো। যে মানুষটার আঁখিযুগল ভালোবাসে লাশ দেখতে ভালোবাসে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে, যখন কুকুর খুবলে খায় তারাই খুন করা লাশগুলোকে। তাকেই যদি ধরে নেই অপদেবতা, তাহলে খুনের তৃষ্ণা কি মিটবে এই অপদেবতার?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ