ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ পিডিএফ ডাউনলোড by সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী রাহিমাহুলাহ
File Type 📂 PDF | File Size 3.4 MB | Page : Unknown
ইসলাম ও জাতীয়তা কি ?
জাতির সংজ্ঞা বর্বরতার সূচীভেদ্য অন্ধকারের মধ্য থেকে সভ্যতার আলোকোজ্জ্বল পথের দিকে মানুষের প্রথম পদক্ষেপেই ‘ বহু'র মধ্যে ঐক্যের ভাবধারা সৃষ্টি হয় এবং একই উদ্দেশ্য ও কল্যাণ ব্যবস্থার জন্য অসংখ্য মানুষের পরস্পর মিলিত হয়ে পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহযোগিতার সাথে জীবন যাপন করা একান্ত আবশ্যক হয়ে পড়ে । সভ্যতার অগ্রগতি ও ক্রমবিকাশের সাথে সাথে এ সামগ্রিক ঐক্যের পরিধি অধিকতর প্রশস্ত ও সম্প্রসারিত হয়ে যায় । উত্তর কালে এমন একটা সময়ও আসে , যখন এক বিরাট সংখ্যক মানুষ তার অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে । বহুসংখ্যক মানুষের এ সমষ্টিকেই রাজনৈতিক পরিভাষায় বলা হয় ' জাতি ' ।
' জাতি ' এবং ' জাতীয়তা ' শব্দ দুটো তাদের পারিভাষিক অর্থের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কৃত হলেও মূলত যে অর্থে তা ব্যবহৃত হয় , তা মূল সভ্যতার মতোই প্রাচীন । মানব সমষ্টির যে রূপকে বর্তমানে ' জাতি ' বা ' জাতীয়তা ' নাম দেয়া হয়েছে আজিকার ফরাসী , ইংল্যাণ্ড , ইটালি প্রভৃতি জাতীয় দেশগুলোর ন্যায় প্রাচীন মিশর , রোম এবং গ্রীসেও তার অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল । জাতীয়তার অপরিহার্য উপকরণ - জাতীয়তা প্রথমত এক নিষ্পাপ ও নিষ্কলংক ভাবধারা থেকে উদ্ভূত হয় , তাতে সন্দেহ নেই । এক সমষ্টির মানুষ নিজেদের মিলিত স্বার্থ ও কল্যাণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে এবং সামাজিক ও সামগ্রিক প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য এক জাতি হয়ে জীবনযাপন করবে—
জাতি গঠনের মূলে এটাই হয় প্রথম উদ্দেশ্য । কিন্তু একটি জাতি গঠিত হওয়ার পর জাতীয় বিদ্বেষ ভাবের প্রচণ্ড প্রভাব তার উপর অনিবার্যরূপেই আবর্তিত হয়ে থাকে । এমনকি , এ জাতীয়তা ক্রমশ যতই কঠিন ও সুদৃঢ় হয়ে উঠে , জাতীয়তার বিদ্বেষ ভাব এবং পার্থক্যবোধও ততই প্রচণ্ড হয়ে উঠে । একটি জাতি যখন নিজের স্বার্থ লাভের এবং নিজেদের কল্যাণ ব্যবস্থা সংরক্ষণের জন্য নিজেদেরকে পরস্পর ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করে নেয় —
অন্য কথায় নিজেদের চতুঃসীমায় জাতীয়তার দুর্ভেদ্য প্রাচীর স্থাপিত করে তখন উক্ত প্রাচীরের আভ্যন্তরীণ ও বহিরস্থ লোকদের পরস্পরের - মধ্যে ' আপন ' ও ' পর ' বলে অবশ্যম্ভাবীরূপে পার্থক্য করবেই । প্রত্যেক ব্যাপারেই নিজেদেরকে অপরের উপর প্রাধান্য ও গুরুত্ব দিবেই । অপরের মুকাবিলায় নিজের প্রতিরক্ষা করবেই । উল্লিখিত ' আপন ' ও ' পরের ' পারস্পরিক স্বার্থে যদি কখনো সংঘাতের সৃষ্টি হয় , তখন এ জাতীয়তা নিজের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করবে—
অন্যের স্বার্থ বলি দিতেও তা বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হবে না । এসব কারণেই সেসবের মধ্যে যুদ্ধ হবে — সন্ধি হবে , কিন্তু এ শান্তি ও সংগ্রাম — উভয় অবস্থায়ই উভয়ের মধ্যে পর্বত সমান পার্থক্যসূচক প্রাচীর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে । পরিভাষায় এ ভাবটিকেই বলা হয় জাতীয়তার অন্ধত্ব । জাতীয়তার এটা অবিচ্ছেদ্য বিশেষত্ব —সর্বাবস্থায় এটা জাতীয়তার সাথে অনিবার্যরূপে যুক্ত হয়ে থাকবেই , তাতে বিন্দুমাত্রও সংশয় নেই । জাতি গঠনের মৌলিক উপাদান - " ঐক্য ও সম্মিলনের বহু কারণের মধ্যে বিশেষ একটি কারণেই জাতীয়তা প্রতিষ্ঠা হয়ে থাকে — সে যে কারণেই হোক না কেন । কিন্তু শর্ত এই যে , তাতে এমন বিরাট সংযোজক শক্তি বর্তমান থাকতে হবে— যা বিভিন্ন মানুষকে একই বাণী , একই চিন্তা ও মতবাদ , একই উদ্দেশ্য ও কর্মের জন্য একত্রিত ও অনুপ্রাণিত করবে এবং একদিকে জাতির বিভিন্ন ও অসংখ্য অংশকে জাতীয়তার দুশ্ছেদ্য বন্ধনে বেঁধে — পরস্পর ওতপ্রোত বিজড়িত করে সকলকে এক সুদৃঢ় ও অটল পর্বতের ন্যায় মযবুত করে দিবে । অপরদিকে ব্যক্তিদের মন ও মস্তিষ্কের উপর এমন প্রভুত্ব করবে যে , সমগ্র জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে তারা যেন সকলেই একত্রিত এবং প্রয়োজন হলে সর্বপ্রকার আত্মদানের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয় ।
ঐক্য ও সংগঠনের অসংখ্য দিক থাকতে পারে , কিন্তু ঐতিহাসিক যুগের সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত যত জাতীয়তাই প্রতিষ্ঠা হয়েছে , তার মধ্যে ইসলামী জাতীয়তা ভিন্ন অন্যান্য সকল জাতীয়তারই ভিত্তি নিম্নলিখিত বিষয়ের কোনো এক প্রকার ঐক্যের উপর স্থাপিত হয়েছে । এবং অন্যান্য আরো বহুবিধ ঐক্য সাহায্যকারী হিসাবে তার সাথে মিলিত হয়েছে : বংশের ঐক্য ঃ এর ভিত্তিতে বংশীয় জাতীয়তা গঠিত হয় । স্বদেশের ঐক্য ঃ এর ভিত্তিতে অঞ্চল ভিত্তিক জাতীয়তা গড়ে উঠে I ভাষার ঐক্য ঃ এটা চিন্তা ও মতের ঐক্য বিধানের এক বলিষ্ঠ উপায় হওয়ার কারণে জাতি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এর বিরাট প্রভাব রয়েছে ।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....