কাজের মাঝে রবের খোঁজে by আফিফা আবেদীন সাওদা
প্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন
বিষয় : ইবাদত, আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৮৮
-------------------------------------
রিভিউ 💕 না ফি সা - আরাফাত আহমেদ
কীভাবে আমাদের দৈনন্দিন কাজের মধ্যেও রবের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, সেই রকম বিভিন্ন পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে বইটিতে।
বলা হয়, মানুষের জীবন হলো কাজের সমষ্টি। কাজ এবং কাজের মাঝেই মানুষের একটা জীবন অতিবাহিত হয়ে যায়। কেমন হবে, যদি সেই কাজগুলোর ভেতরে খুঁজে ফেরা হয় মহান রবের সন্তুষ্টি?
এই বইটিতে বিভিন্ন গল্পের মাধ্যমে আমাদের রোজকার কাজগুলোর মাঝে রবের সন্তুষ্টি অর্জনের পদ্ধতিগুলো বলে দেওয়া হয়েছে। তার কয়েকটা পদ্ধতি তুলে ধরছিঃ
★১৭ বছরের সায়মা দাদির কাছে সুন্দর কুশিকাটার কাজ শিখেছে। ছোট তুলতুলে জুতা, মাথার টুপি, সোয়েটার ইত্যাদি বানায় সে। আল্লাহর ইচ্ছায় সেগুলো বিক্রিও হয়ে যায় খুব দ্রুত। বিক্রির টাকাটা সায়মা বিধবা খাদেমাকে দেয়। তার ছেলের পড়ালেখার খরচ।
★শারমিন বই পড়তে ভালোবাসে। বিভিন্ন ইসলামিক বই পড়া শেষে সেগুলোর সারসংক্ষেপ তৈরি করে কোনো হালাকায় গিয়ে ফটোকপি বিতরণ করে বোনদের মাঝে। অনেকের মাঝে আবার সেই বইগুলো পড়ার আগ্রহও জন্মায়।
★ফোনে বান্ধবীদের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করে না খাদিজা। বরং সুযোগ পেলেই চলে যায় আত্মীয়দের বাসায়। আত্মীয়তার হক রক্ষা করে। সেইসাথে দ্বীনের দাওয়াতের কাজও।
★শপিংয়ে গেলেই প্রয়োজন ছাড়াও জামাকাপড় কিনে ফেলেন শখের বশে। এটা না করে প্রতিমাসে অল্প অল্প টাকা জমিয়ে সেই টাকা বাঁচিয়ে সদকা করে দিন অভাবীদের মাঝে।
★ভার্সিটির বাসে বসে সবাই গল্পের পসরা সাজিয়ে বসেছে যেন। কেবল একটা মেয়েই চুপচাপ। নাহ, চুপচাপ বললে ভুল হবে। তার জিহ্বা ব্যস্ত আছে আল্লাহর স্মরণে।
★সাফিয়া বিকেল বেলা এপার্টমেন্টের সব বাচ্চাদের ডেকে প্রতিদিন সাহাবা (রাঃ)-দের গল্প শোনায়। বাচ্চারা আগ্রহভরে শোনে। গল্পের শিক্ষাটুকু ওদের বুঝিয়ে দেয়, গেঁথে দিতে চায় নিষ্পাপ নরম মনগুলোর মাঝে। আসর শেষে বাচ্চাদের হাতে ধরিয়ে দেয় চকলেট, অবশ্যই মায়েদের অনুমতি নিয়ে।
আমরা দৈনন্দিন কাজের কারণে ভুলেই যায় আমাদের আখিরাতের কথা। "কাজের মাঝে রবের খোঁজে" বইটিতে প্রতিটা লাইনে বুঝানো হয়েছে আমরা কিভাবে আমাদের আখিরাতকে সুন্দর করতে পারি, মৃত্যুর পরের জীবনকে শান্তির এবং সুন্দর করে তুলতে এই বইটি পড়া সবার প্রয়োজন। বইটিতে খুব সুন্দর করে ইবাদত, সদকা, পর্দা, রিয়া/শিরক, গিবত, আখিরাত এবং ফরজ কাজ সুন্নাত কাজ নিয়ে বলা হয়েছে। ছোট্ট এই বইটিতে শিক্ষনীয় অনেক কিছুই আছে।
বই থেকে নেওয়া কিছু হাদিস এবং সূরার আয়াত....
★যে ব্যক্তি একজন সিয়াম পালনকারীকে ইফতার করাবে, সে ওই সিয়ামের পালনকারীর সমান সাওয়াব অর্জন করবে। আর এতে করে সিয়াম পালনকারীর সাওয়াবও কোনো অংশে কমে যাবে না। (জমি তিরমিজি:৮০৭, হাদিসটি সহিহ)
★দ্বীনের কেন্দ্রবিন্দু কী? আল্লাহর উদ্দেশ্যে যেকোনো কাজ আন্তরিক নিয়তই হলো দ্বীনের কেন্দ্রবিন্দু। এটিই নবীদের দেওয়া বার্তার মূল চাবিকাঠি।
আল্লাহ বলেছেন-
তাদের এছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে ( শিরক করা থেকে বিরত থাকবে) (সূরা বাইয়্যিনা, আয়াত-৫)
★আবু সায়িদ আল-খুদরি রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু কর্তৃক বর্ণিত-
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
"আমি কি তোমাদের এমন কিছু কথা বলব, যেটাকে আমি দাজ্জালের আগমনের থেকেও বেশি ভয় করি?
তারা বলল, অবশ্যই, আল্লাহর রাসুল।
জবাবে তিনি বললেন, গোপন শিরক অর্থাৎ রিয়া। ( সুনানু ইবনু মাজাহ: ৩৪০৮; হাদিসটি হাসান, গ্রহনযোগ্য)
★আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা কি জানো, নিঃস্ব ব্যক্তি কে?
সাহাবা রাযিয়াল্লাহু আনহুম বললেন, নিঃস্ব হলো এমন ব্যক্তি যার কাছে কোনো দিরহাম বা সম্পদ নেই।
রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বাধিক নিঃস্ব, যে বিচার দিবসে তার কৃত সালাত, সিয়াম, যাকাত নিয়ে হাজির হবে। অতঃপর, সে যাদের অভিশাপ দিয়েছে, মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, রক্ত ঝরিয়েছে বা মারধর করেছে, তারা একে একে তার কাছে আসতে থাকবে। আর তখন ওই ব্যক্তিকে নিজের নেক আমল থেকে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। সব নেক আমল দেওয়ার পর ও যদি পাওনা পূরণ না হয়, তবে পাওনাদার ব্যক্তির গুনাহ হস্তান্তর হয়ে যাবে এই ব্যক্তির নিকট। আর এরপর তাকে নিক্ষেপ করা হবে জাহান্নামের আগুনে।(সহিহ মুসলিম: ২৫৮১)
★রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- দ্বীনের পথে দাওয়াতকারী ব্যক্তি, দাওয়াত গ্রহণকারী সকল ব্যক্তির কৃত সাওয়াবের সমান সাওয়াব অর্জন করবে। এতে করে দাওয়াত গ্রহণকারীদের প্রাপ্য সাওয়াব কমানো হবে না। ঠিক একইভাবে, পাপকাজের জন্য কাউকে আহ্বানকারী ব্যক্তিও সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়া প্রত্যেক পাপীর সমতুল্য শাস্তির অংশীদার হবে। আর এতে করে তাদের নিজেদের পাপের বোঝাও কোনে অংশে কমে যাবে না। ( সহিহ মুসলিম:১৮৯৩)
★যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী একজনকে সাহায্য করল, সে যেন নিজেই জিহাদে অংশগ্রহণ করার সম্মান পেল।(সহিহ বুখারি: ২৮৪৩; সহিহ মুসলিম: ১৮৯৫)
★উপহার আদান প্রদান করো আর একে অন্যকে ভালোবাসো।(আল-আদাবুল মুফরাদ:৫৯৪, হাদিসটি হাসান গ্রহণযোগ্য)
★হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান করা থেকে দূরে থেকো। নিশ্চয় কোনো কোনো অনুমান তো পাপ আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাকো। ( সূরা হুজুরাত, আয়াত-১২)
★শক্তিশালী সে নয়, যে নিজের শক্তি প্রয়োগ করে মানুষকে কুপোকাত করে;
বরং শক্তিশালী তো সেই ব্যক্তি, যে নিজের রাগকে সংবরণ করে। (সহিহ বুখারি: ৬১১৪; সহিহ মুসলিম:২৬০৯)
★কিয়ামতের দিন কোনো বান্দাই নিজের জায়গা ছেড়ে এক চুলও নড়তে পরবে না যতক্ষণ না তাকে চারটি বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে- সে নিজের জীবনকে কোন কাজে অতিবাহিত করেছে; তার যৌবনকালে সে কোন কাজে কাটিয়েছে; নিজের ধনসম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে এবং কোন কাজে ব্যয় করেছে; নিজের ইলম অনুসারে কী পরিমানে আমল করেছে?( জমি তিরমিজি:২৪১৭, হাদিসটি সহিহ)
★যদি এমন কেউ তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাই যার ঈমান ও সুন্নাহ পালনে তুমি সন্তুষ্ট, তবে তাকে বিয়ে করো।(জমি তিরমিজি:১০৮৪)
এ রকম আরো অসংখ্য গল্প আছে বইটিতে, যেগুলো খুব সহজে করেই আপনি রবের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন।
কাজের মাঝে রবের খোঁজে বই রিভিউ
-------------------------------------
ভার্সিটির বাসটা জ্যামে পড়েছে। চারিদিকে হইচই।সবাই গল্পের পসরা সাজিয়ে বসেছে যেন। কেবল একটা মেয়ে একদম চুপচাপ। নাহ, চুপচাপ বললে ভুল হবে। তার জিহ্বা ব্যস্ত আছে আল্লাহর স্মরণে।যখনই সে সময় পায়, রবের জিকিরে মগ্ন হয়ে পড়ে। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযীম--- কত ছোট দুটি বাক্য, অথচ ওজনে কত ভারী এবং আল্লাহর নিকট কতই-না প্রিয়!
রবের প্রশংসা আর ক্ষমাপ্রার্থনায় কেটে যায় তার অবসর। যেকোন হালকায় সে মনোযোগী শ্রোতা। কথা বললেও উপকারী কথা বলার চেষ্টা থাকে সর্বাত্মক। তার জিহ্বা ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে সিক্ত থাকে সবসময়।
পৃষ্ঠা : ৪০
আরো পড়ুন ⤵️
কাজের মাঝে রবের খোঁজে বইটি কেন পড়বেন
মূলত একজন সম্মানিতা বোন এই বইটি লিখেছেন তাই নারীদের আলোচনা-ই বেশি এসেছে। তবে গল্পের শিক্ষাগুলো ইউনিভার্সাল এবং অনুপ্রেরণামূলক নিঃসন্দেহে।
নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও এই বই থেকে অসংখ্য আইডিয়া পাবেন। কিভাবে হাজার- হাজার ব্যস্ততার ফাঁকে রবের সান্নিধ্য পাওয়া যায় সেই বিষয়টিও খুঁজে পাবেন ইং-শা-আল্লাহ্।
পাঠ্য-অনুভূতি
------------------------
মাত্র অষ্টাশি পৃষ্ঠার ছোট্ট বইটি ২৭ টি গল্পের সমাহার, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গল্প। নিত্যনৈমিত্তিক কিছু অভ্যাসকে খুব সাধারন মোড়কে অসাধারণ রূপ দেওয়া।
গল্পের কলেবর ছোটো হওয়ায় খুব কম সময়েই, আনন্দ সহকারেই শিক্ষাগুলো অন্তরে গেঁথে যায়।
হৃদয় ছোঁয়া গল্প গুলো হৃদয়ের মনি কোঠায় জায়গা করে নেই। এবং রবের প্রতি অগাধ ভালোবাসার জন্ম দেই।
দুনিয়াবি-র তুচ্ছ কারণে জড়িয়ে রবের কথা কতটুকুই বা স্মরণ করি সারাদিনে? ব্যস্ততার অজুহাতে আমরা দুনিয়ার সাফল্য ভোগে নিজেকে নিয়োজিত করি, ভুলে যায় প্রতিটা মুহূর্তের কাজের হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে হাশরের ময়দানে পেশ করতে হবে।
ব্যস্ততার অজুহাত আসলে তেমন কোন অজুহাত নয়। সালফে সালেহীনদের জীবনী দেখলে উপলব্ধি করতে পারি তাঁরা জীবনের শত ব্যস্ততার মধ্যেও আল্লাহর স্মরন থেকে বিচ্যুত হননি।
কাজের ফাঁকেও রবের থেকে যে, সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় তারা-ই তার উত্তম উপমা।এজন্য দরকার একটুখানি মনের ইচ্ছা, কর্মস্পৃহা আর জবাবদিহিতার ভয়।
আমরা যদি নিজেদের ভাবনাগুলো একটু ভিন্ন স্রোতে বইয়ে, আমাদের ইচ্ছেগুলোকে আল্লাহর পথে সঁপে দিতে পারি তাহলে ছোট ছোট অনেক কাজ-ই বড় হয়ে দেখা দেয়, অন্যের জন্য অনুপ্রেরণার কারন হয়ে দাঁড়ায়।
এমন অনেক কাজ আছে যা দেখতে ছোট লাগে কিন্তু মহান রবের কাছে অনেক মহৎ। এই ছোটো ছোটো আমলগুলো একদিন নাজাতের উসিলা হতে পারে আল্লাহর ইচ্ছাতে ইং-শা-আল্লাহ।
সবাইকে বইটি পড়ার দাওয়াত রইলো😊😊
অনেক কিছুই শিখতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....