কয়েদখানা লেখক : ইকবাল খন্দকার | Koyedkhana by Iqbal Khondokar

কয়েদখানা by ইকবাল খন্দকার (রিভিউ এবং সর্ট পিডিএফট)

প্রকাশনায় : অনন্যা
প্রচ্ছদ : মামুন হোসাইন
পৃষ্টা সংখ্যা : ১৪৪
মুদ্রিত মূল্য : ২৭৫ টাকা Review : Harun Ar Rashid
কয়েদখানা লেখক : ইকবাল খন্দকার | Koyedkhana by Iqbal Khondokar
Cover image : Koyedkhana
একমাত্র মেয়ে রোদেলাকে নিয়ে বেশ সুখে শান্তিতেই দিনাতিপাত করছিল সাবিরা-আবিদ দম্পত্তি। তাদের এই সুখের সংসার আচমকা ছেয়ে যায় দুর্ভোগের কালোমেঘে। মরণব্যধিতে আক্রান্ত হয় সাবিরা। ডাক্তার সময় বেঁধে দিয়েছে সর্বোচ্চ একমাস। এতে হঠাৎ করেই কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে যায় একটি সুখী সংসারের সবকিছুই। একমাত্র মেয়ে রোদেলাকে স্কুলে পৌঁছে দেয়া, সংসার সামলানো, অফিসের কর্মব্যস্ততা সবকিছুই নিজের কাঁধে তুলে নিতে হয় গৃহকর্তা আবিদকে। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে রাতের পর রাত নির্ঘুম থেকে আবিদও যেন হাঁপিয়ে উঠে। 

তবুও থেমে নেই আবিদ। দ্বিগবিদ্বিক ছুটতে থাকে সে। প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যায় ভালোবাসার মানুষটিকে বাঁচিয়ে তোলার। একটা সময় সিদ্ধান্ত নেয়, জমিজমা সব বিক্রি করে হলেও দেশের বাইরে নিয়ে সাবিরার চিকিৎসা করাবে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এটাও সম্ভব হয়নি। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যায় আবিদ। একটা সময় এসে অর্থেরও বন্দোবস্ত হয়। 

সাবিরা যখন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, ঠিক তখনই নানাবিধ চিন্তা এসে ভিড় জমাতে থাকে তার মনের অলিগলিতে। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে জীবনের হিসেব মিলাতে ব্যস্ত সাবিরার মনের ভেতরটা হঠাৎ করেই একটা দমকা বাতাস এসে সবকিছু নাড়িয়ে দেয়। সে সিদ্ধান্ত নেয়, বহুবছর ধরে লুকিয়ে রাখা একটা কঠিন সত্য প্রকাশ করবে প্রিয়তম স্বামীর কাছে। মৃত্যুর পূর্বক্ষণে হলেও ক্ষমা চেয়ে নিবে জীবনসঙ্গীর নিকট থেকে। সময় বুঝে প্রকাশও করে সে। 

জনপ্রিয় লেখক ইকবাল খন্দকার এর জনপ্রিয় ৩টি বইয়ের রিভিউ

জীবনের দায়মুক্তির প্রত্যাশায় সাবিরা তার মনের ভেতরে দীর্ঘকাল লুকিয়ে রাখা কঠিন সত্যটি আবিদের কাছে প্রকাশ করলেও বাস্তবে ঘটে সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনা। কঠিন এই সত্যটি একটা সময় এসে রূপ নেয় নির্মম কয়েদখানায়। 

এই কয়েদখানা বাস্তব জীবনে নানা অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীকে বন্দি করে রাখা কয়েদখানা নয়। এটি সময়ের নির্মমতায় বন্দি হওয়া চরম নিষ্টুর এক কয়েদখানা। যে কয়েদখানার ইটপাথরবিহীন চার দেয়ালে বন্দি হয়ে জীবন হয়ে উঠে বাস্তব কয়েদখানা থেকেও চরম নিষ্ঠুর, আরও নির্মম। 

'কয়েদখানা' মুলত জীবনঘনিষ্ঠ একটি সামাজিক উপন্যাস। এখানে লেখক দেখানোর চেষ্টা করেছেন জীবনের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা কিছু অসংগতি। সামান্য অসচেতনতা কীভাবে একটা জীবনকে, একটা সংসারকে নানাভাবে নানাদিক থেকে দগ্ধ করতে পারে, লেখক এ বিষয়টি এখানে দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। 

একটা সামাজিক উপন্যাসের দৃশ্যপট সাধারণতঃ সাদামাটা ভঙ্গিতে রচিত হলেও, কয়েদখানায় লেখক দেখিয়েছেন দারুণ মুন্সিয়ানা। বইটির প্রতিটি দৃশ্যপটেই রয়েছে আকর্ষণীয় সব টুইস্ট। বহুদিন পর সামাজিক বা জীবনঘনিষ্ঠ উপন্যাসে আমি থ্রিলারের স্বাদ পেয়েছি। 

কয়েদখানায় লেখক যে বার্তাগুলো সমাজের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছেন, আমি মনে করি এক্ষেত্রে তিনি পুরোপুরিভাবেই সফল হয়েছেন। কয়েদখানার গল্পটি নিঃসন্দেহে পাঠককে বিভিন্ন দিক থেকে সচেতন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। 

বইটি নানাভাবে নানাদিক থেকে আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। যতটুকু আশা নিয়ে শুরু করেছিলাম, আমি শতভাগ সন্তুষ্ট। আমি মনে করি, এ বিষয়টি একজন লেখকের জন্য সবচেয়ে বড় সার্থকতা। 

কয়েদখানার সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো, ১৪৪ পৃষ্টার পুরো বইটিতে একটা ভুল বানানও আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। তবে ইদানিং বইয়ের বাঁধাই, কাগজের মান আর প্রিন্টিং নিয়ে কেন জানি আমি একটু খুঁতখুঁতে স্বভাবের হয়ে গেছি। বই হাতে নিয়ে সবার আগে এ বিষয়গুলো আমার দৃষ্টিতে চলে আসে। এ দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে, কয়েদখানার ছাপার মান, কাগজ আর বাইন্ডিং নিয়ে আমার কিছুটা আপত্তি রয়েছে। উল্লেখিত তিনটি বিষয়ের কোনোটাই আমার মনমতো হয়নি। প্রকাশনী হিসেবে অনন্যা দেশের প্রথম সারির হলেও, বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজার বিশ্লেষণ করলে এদিকটায় প্রকাশনীকে আরও যত্নশীল হওয়া জরুরী বলে আমি মনে করি। 
কয়েদখানার বিভিন্ন উক্তি আমার মন ছুঁয়ে গেছে। এর মধ্যে একটা উক্তি কেন জানি বার বার আমার মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাই আজকের সংক্ষিপ্ত পাঠ প্রতিক্রিয়ায় এ বিষয়টি শেয়ার করার লোভ সামলে নিতে পারিনি। 

প্রিয় উক্তিঃ
"যাদের কাছে মেঘ মানে মন উথালপাথাল করা মুহূর্ত, বৃষ্টি মানে রুদ্ধদ্বার ভালোবাসাবাসি, আর রোদ মানে রিকশার হুডতোলা গা ঘেঁষাঘেঁষি। গৃহবন্দি মানুষের কাছে রোদই কী, বৃষ্টিই কী!"

প্রিয় পাঠক, আপনি যদি কোনো কারণে রিডিং ব্লকে থাকেন, তবে নিঃসন্দেহে হাতে তুলে নিতে পারেন কয়েদখানা। আমার প্রত্যাশা, আপনার রিভিং ব্লক কাটাতে কয়েদখানা টনিকের মতো কাজ করবে। হ্যাপি রিভিং।

"যাদের কাছে মেঘ মানে মন উথালপাথাল করা মুহূর্ত, বৃষ্টি মানে রুদ্ধদ্বার ভালোবাসাবাসি, আর রোদ মানে রিকশার হুডতোলা গা ঘেঁষাঘেঁষি। গৃহবন্দি মানুষের কাছে রোদই কী, বৃষ্টিই কী!"
                                                    
পড়ছি এ প্রজন্মের জনপ্রিয় লেখক ইকবাল খন্দকারের সদ্য প্রকাশিত বই 'কয়েদখানা'। নাম কয়েদখানা হলেও বাস্তবিক অর্থে এটা সেই কয়েদখানা নয়, যেখানে বন্দি করে রাখা হয় বিভিন্ন অপরাধীকে। এটি এমন একটি কয়েদখানা, যেখানে সময়ের নির্মমতার কাছে বন্দি হয়ে যায় একটা জীবন, একটা সংসার, স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার মতো কিছু স্বপ্ন। যে কয়েদখানার ইটপাথরবিহীন চার দেয়ালে বন্দি হয়ে জীবন হয়ে উঠে বাস্তব কয়েদখানা থেকেও চরম নিষ্টুর, আরও নির্মম। বইটি এখনও শেষ করতে পারিনি। পড়া শেষে বিস্তারিত রিভিউতে বলার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ্।

‘শহুরে মধ্যবিত্ত আর গ্রাম্য মধ্যবিত্তের মধ্যে দিন-রাত ব্যবধান। শহুরে মধ্যবিত্তরা ভালোই টাকা-পয়সার মালিক। আর তা চাকরিবাকরির সুবাদে। কেউ কেউ ছোটখাটো ফ্ল্যাটেরও মালিক। অপেক্ষাকৃত কম উন্নত এলাকায় অবস্থিত ফ্ল্যাট। যে ফ্ল্যাটের দাম অর্ধকোটির এদিক-সেদিক। আবার গ্রামে বাপ-দাদার ভিটাও আছে। আছে পৈত্রিক সম্পত্তি। কিন্তু গ্রাম্য মধ্যবিত্তের এতকিছু থাকে না। থাকতে হয় না। বড়সড় একটা বাড়ি থাকে, কিছু ধানিজমি থাকে। যে জমি তাদের সারাবছরের খোরাকদাতা।
কোনো কোনো মধ্যবিত্তের বড় বাড়িও থাকে না। নিজের জমির ধানে সারাবছর চলতে পারে, কার্তিক-চৈত্রমাসে বাজার থেকে চালের বস্তা কিনতে হয় না, তাতেই তারা মধ্যবিত্ত হিসেবে স্বীকৃত। আর যদি কারো ছেলে বা ছেলের বউ স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হয়, তাহলে সে বা তারা হয়ে যায় মধ্যবিত্তের চেয়ে বেশি কিছু। সমাজে তাদের আলাদা ইজ্জত থাকে, বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা থাকে। যে ইজ্জত বা গ্রহণযোগ্যতা শহরের অনেক উচ্চবিত্তেরও থাকে না।’

Titleকয়েদখানা
Authorইকবাল খন্দকার
Publisherঅনন্যা
Qualityহার্ডকভার এবং সর্ট পিডিএফট
Edition1st Published, 2020
Number of Pages144
Countryবাংলাদেশ
Review CreditHarun Ar Rashid (click)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ