মা বাবা : আমার জান্নাত লেখক : আল্লামা ইবনুল জাওযী (রহঃ) | Ma - Baba Amar Jannat by Allama Ibnul Jawzi

মা বাবা : আমার জান্নাত
লেখক : আল্লামা ইবনুল জাওযী (রহঃ)
প্রকাশনী : আযান প্রকাশনী
বিষয় : পরিবার ও সামাজিক জীবন
পৃষ্ঠা : 72, কভার : পেপার ব্যাক
আবু কাহিল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার মা-বাবা জীবিত অবস্থায় এবং মৃত্যুর পরেও তাদের সাথে সদাচরণ করে আল্লাহ তায়ালা নিশ্চিতভাবেই কিয়ামতের দিন তাকে খুশি করবেন।” আমরা জিজ্ঞেস করলাম, “মৃত্যুর পরেও কীভাবে তাদের সাথে সদাচরণ করতে পারে?” নবীজি জবাবে বললেন, “(মৃত্যুর পর) তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং অন্য কারো বাবাকে গালি দিবে না, যার ফিরতি জবাবে সে তার বাবাকে গালি দিয়ে থাকে (উল্লেখ্য, এখানে মাকে গালি দেয়ার ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য)।

~ মা-বাবা: আমার জান্নাত

যার কাছ থেকে কোনো প্রশ্রয়, সুবিধা কিংবা দয়া-করুণা লাভ করা হয়, তার প্রতিই একটা যে দায়িত্ব থেকে যায়, তা যেকোনো বুঝদার লোকই মেনে নিতে বাধ্য। আল্লাহ তায়ালার পর মা-বাবা ছাড়া আর কেউ এমন অত্যধিক দয়া-মায়ায় আমাদেরকে আগলে রাখেন না কখনোই।

সীমাহীন কঠোর যাতনার ভেতর দিয়ে মা তার সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে থাকেন; অতঃপর তারচেয়েও তীব্র ব্যথা-বেদনা সয়ে জন্ম দেন আদরের সন্তানকে। অজস্র নির্ঘুম রাত কাটিয়ে, নিজের শত-সহস্র চাওয়া-পাওয়াকে জলাঞ্জলি দিয়ে সেই সন্তানকে প্রতিপালন করেন সাধ্যের সর্বোচ্চটুকুন উজাড় করে দিয়ে। প্রতিটি সময়ে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজের চেয়ে সন্তানের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটু একটু করে গড়ে তোলেন বুকের মানিককে।

আর বাবা? তিনিই তো আসলে সন্তানের অস্তিত্বের কারণ। আদর-ভালোবাসা আর কঠোর পরিশ্রম ব্যয়ে সন্তানের জন্য সুখ কিনে আনেন রক্তে আর ঘামে। তাই বিবেকবান মাত্রই এমন দয়া-করুণাময় লালনপালনের প্রতিদান যে তার অবশ্য কর্তব্য, তা তিনি নিজেই বুঝতে পারবেন। 

এমন মহৎ দানের স্বীকৃতি না দেয়া যে কত ঘৃণ্য অপরাধ, তা বলাই বাহুল্য; বিশেষত সন্তান যদি এরপরও মা-বাবার প্রাপ্য অধিকার প্রদান এবং সদাচরণে বিমুখ থাকে, তাহলে নিছক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হিসেবেই তা গণ্য হবে।

মা-বাবার প্রতি দায়িত্ববান আর সদাচারী সন্তানের একটা কথা কান খুলে শুনে রাখা দরকার। সেটা হলো, যত রকমের উপায়েই সে সচেষ্ট হোক না কেন, কোনো কিছুতেই সে মা-বাবার এই ঋণ শোধ করতে সক্ষম হবে না।

মা-বাবার প্রতি সদাচরণের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وقضى ربك ألا تعبدوا إلا إياه وبالوالدين إحسانا إما يبلغن عندك الكبر أحدهما أو كلهما فلا تقل لهما أف ولا تنهربما وقل لهما قولا كريما (۳۲)

واخفض لهما جناح الذل من الرحمة وقل رب ارحمهما كما ربيني صغيرا (۴۲)

আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং মা-বাবার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো।

আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বলো, 'হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালনপালন করেছেন।' [সূরাহ আল ইসরা ১৭:২৩-২৪]

আবু বকর আল আনবারি বলেন, 'আলোচ্য আয়াতে এই নির্দেশনা দ্বারা শুধু অভিমত প্রকাশ পায় না বরং অবশ্য পালনীয় আদেশ এবং একটি বাধ্যবাধকতা বর্ণনা করা হয়েছে।'

আয়াতে ব্যবহৃত মূল শব্দ ‘কদা’ দিয়ে ‘কোনো কাজ নিখুঁতভাবে সুসম্পন্ন করা বোঝায়।' এবার আয়াতদুটো ভেঙে ভেঙে অল্পবিস্তর আলোচনা করা যাক।

lilur | BauJlgJU ‘মা-বাবার প্রতি ইহসান দেখাও।

অর্থাৎ, তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করা, তাদের খেদমতে সুন্দর ব্যবস্থাপনা করা, তাদের সম্মান দেখানো, তাদের প্রতি সর্বাবস্থায় কৃতজ্ঞত থাকা। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, (তাদেরকে এমনভাবে সম্মান দেখানো যে) তাদের সামনে নিজের কাপড় না ঝাড়া দেয়া যাতে কাপড়ের ধুলো তাদের ওপর পড়ে।'

if land Jafli ‘তাদেরকে উফ শব্দটিও বলো না।

আমি আমার শিক্ষক ভাষা বিশেষজ্ঞ আবু মানসুরের কাছ থেকে শিখেছি ‘উফ’ হলো উড়ন্ত ধূলিকণা বা ওরকম ক্ষুদ্র কোনো কিছু যা গায়ের ওপর পড়ে। সেই অনুসারে শব্দটি দ্বারা অতি নগণ্য কিছু বোঝাতে ব্যবহার করি। (অর্থাৎ, তাদের কষ্ট দেয়ার জন্য, বিরক্তি দেখানোর জন্য কিংবা অসম্মান প্রদর্শনার্থে এমন 'উফ' এর মতো নগণ্য কথাও তাদেরকে না বলা।)
 ‘তাদেরকে ধমকের সুরে কথা বলো না।'

অর্থাৎ, তাদের সাথে কর্কশ ভাষায়, অভদ্রতার সাথে কথা বলো না অথবা তাদের সাথে উঁচু গলায় কথা বলো না। (কথা বলার ক্ষেত্রে যদি এরকম সতর্ক হবার নির্দেশ দেয়া হয়, তাহলে আচার-ব্যবহারের ক্ষেত্রে কতটা বিনয় দেখানো দরকার তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।)
 ‘সম্মানজনক উপায়ে তাদের সাথে আলাপ করো।'

অর্থাৎ, বিনয়ের সাথে, সামর্থ্যানুযায়ী সবচেয়ে উত্তম উপায়ে তাদের সাথে কথা বলবে। সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব বলেন, 'উদ্ধত আর রাগী মালিকের সাথে দাস যেরকমভাবে কথা বলে সেভাবেই কথা বলার আদেশ প্রদান করা হয়েছে এই আয়াতাংশে।' 
.
"মা-বাবা : আমার জান্নাত" বই থেকে একটুখানি..
লেখক : ইবনুল জাওযি রহ.
প্রচ্ছদ মূল্য : ১১০ টাকা
আযান প্রকাশনী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ