মানুষ কিংবা মানসের মৃত্যু বই (short pdf) লেখক : আহমাদ সাব্বির | Manush Kinba Manoser Mrittu by Ahmed Sabbir

মানুষ কিংবা মানসের মৃত্যু বই (short pdf) লেখক : আহমাদ সাব্বির | Manush Kinba Manoser Mrittu by Ahmed Sabbir

মানুষ কিংবা মানসের মৃত্যু by আহমাদ সাব্বির

মানুষ কিংবা মানসের মৃত্যু
সম্পাদক : মানজুর আশরাফী
পৃষ্ঠা : 112, কভার : হার্ড কভার
ভাষা : বাংলা

'মানুষ কিংবা মানসের মৃত্যু' হচ্ছে লেখক আহমাদ সাব্বির রচিত একটি গল্প সমগ্র যা 'দুররানি প্রকাশনী' থেকে প্রকাশিত হয়েছে। লেখক ইতিমধ্যেই আরো ৪টি বই পাঠকের কাছে তুলে দিয়েছেন।
১. জায়নামাজ ২. আমার ঘুম আমার ইবাদত ৩. কিংবদন্তির কথা বলছি ৪. সলংগা। এবং এটি তার ৫তম বই। আমরা আশাবাদী যে 'মানুষ কিংবা মানসের মৃত্যু' বইটির গল্পগুলো একইভাবে পাঠকের হৃদয় জয় করে নিবে।

(তোমরা যখন খেলাচ্ছলে বালুর পাহাড় বানাও সাগরতীরে, তখন সাগর আরও বালু বয়ে আনে সৈকতে। আর যখন ভেঙে দাও সেই খেলনা পাহাড়, তোমাদের সাথে হেসে ফেলে সমুদ্র। সমুদ্র এই নির্দোষ বিনোদনে সতত সজীব। কিন্তু তাদের কী হবে, যাদের জীবন সাগরের মতো অমলিন নয়, অথবা আইন যাদের কাছে নয় বালুর খেলনা পাহাড়। তোমরা তাদের কীই-বা বলবে, জীবন যাদের কাছে একখণ্ড পাথরের মতো আর আইন যেন এক বাটালি। এই বাটাল দিয়ে জীবন নামক পাথর তারা খোদাই করতে চায় নিজের মতো করে।)

কাহলিল জিবরান/জাহিদুর রহিম।

জনকের কান্না

নাজমুল হায়দার একা বসেছিলেন সার্কিট হাউজের চওড়া বারান্দার একেবারে শেষ কোণে। বারান্দার আলো-আঁধারিতে তাকে বেশ রহস্যময় মনে হচ্ছিল। এমনিতেও তাকে যখন দিনের আলোতে হাসি-ঠাট্টার কোনো মজলিসে আবিষ্কার করে উঠি সেই মউজ মস্তির পরিবেশেও তাকে— আমাদের নাজমুল হায়দার সাহেবকে—বেশ রহস্যময় মনে হয় আমার কাছে। এই সেদিনও—রংপুর থেকে যখন আমরা এক মাইক্রোবাসে করে ফিরছি— সেই শেষ বিকেলে আলম সাহেব আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন, “শামীম ভাই, নাজমুল ভাইরে দেখছেন? তারে দেখলেই আমার শরীর কেমন শিউরে ওঠে!” আমি কপট রাগত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাই। বলি, “এ কেমন কথা আলম সাহেব, নাজমুল ভাইয়ের মত একজন মানুষ—যে কিনা কারও সাতে-পাঁচে থাকে না—তার ব্যাপারে আপনার এ কেমন মন্তব্য!”

আলম সাহেব বলে চলেন, “এইটাই তো সমস্যা! সে সারাদিন কেমন ভ্যাবদা মাইরা বইয়া থাকে। অফিসে কারও সাথে কথাবার্তা তেমন কয় না। এমন হইলে তারে দেইখা কেমন কেমন লাগব না

আমি জানি, নাজমুল হায়দার একটু নির্ঝঞ্ঝাট থাকতে পছন্দ করেন। কিন্তু তিনি কি জানেন না, বর্তমান সময়ে ঝামেলাহীন থাকার চেষ্টাটাই একটি বাড়তি ঝামেলা!আমি নিশ্চুপে নাজমুল সাহেবের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। তার পাশে একটি চেয়ার খালি পড়ে আছে; চাইলেই বসতে পারি। কিন্তু আমি বসি না; দাঁড়িয়েই থাকি৷

বৃটিশ একটি এনজিওতে কর্মরত আমি, নাজমুল হায়দার ও আরও কতিপয়। সাস্থ্যন্নোয়নমূলক একটি প্রজেক্টের তদারকিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত আমরা। বছরভর টেকনাফ-তেঁতুলিয়া করি। প্রথম প্রথম ভালোই লাগছিলো। দেশটাকে দেখছি; প্রতিদিন নতুন শহর, নতুন অঞ্চল, নতুন নতুন গ্রাম, মেঠো পথ, মাঠ প্রান্তর! ভাবতাম—কত্ত কী আছে দেখার এ দেশে! যা দেখতাম তাতেই মুগ্ধ হতাম। বন্ধুরাও ঈর্ষায় পুড়তো। বলতো, “কি দারুন চাকরি জুটিয়ে নিয়েছিস একখান! প্রতিদিন নতুন জায়গায় ট্যুর!” মুগ্ধতার নদী চিরকাল একই গতিতে বহমান থাকে না; এক সময় আমারটাও শুকিয়ে এলো। এখন কেবল কাজের তাগিদেই ছুটি। ভেতরে আর কোন আকর্ষণ—যা প্রথম জীবনে ছিল—তা আর অনুভূত হয় না।

আমার ঠিক বছর দুয়েক পর এ চাকরিতে আসেন নাজমুল হায়দার সাহেব। বয়েস আমার চেয়ে খুব বেশি হবেন না। চুল-গোফ এর মধ্যেই পাকিয়ে ফেলেছেন। চেয়ার টেনে নাজমুল সাহেবের পাশে বসলাম। লক্ষ করলেন না; আনমনে আগের মতোই চেয়ে রইলেন। সত্যিই, আশ্চর্য মানুষ তিনি! কতকাল একসাথে চাকরি করছি, অথচ তার ব্যক্তিজীবন সম্বন্ধে আমরা কিছুই জানি না—কতজন সদস্য নিয়ে তার সংসার; ছেলেমেয়েরা কোথায় কী করে, কেমন তারা? কিছুই না! অথচ এসব নিয়ে এই আমরাই পরস্পরে হরহামেশা আলাপচারিতায় মেতে উঠছি। তিনি সে আলাপচারিতায় অংশী হন বটে; তবে কেবলই শ্রোতার চরিত্রে। কখনো-সখনো কারও বেখাপ্পা মন্তব্যে ফর্সা অবয়বজুড়ে এক চিলতে হাসিই ফুটিয়ে তোলেন শুধু।

স্বল্প-বাক এ মানুষটি আমার বেশ পছন্দের; সেই চাকরিতে ঢুকেছেন যেদিন তার দিন কতক পর থেকেই। বহুবার ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছি। কিন্তু তিনি তার স্বভাবসিদ্ধ হাসি দিয়েই এড়িয়ে যেতেন। বুঝে নিই, একা থাকাতেই তার স্বাচ্ছন্দ্য। আমিও তাই তাকে আর বিশেষ ঘাটি না। স্রেফ কাজের কথাই বিনিময় হতে থাকে তার সাথে আমার ও অন্যদের।

কিন্তু আজ, এই এতদিন বাদে, সার্কিট হাউজের চওড়া বারান্দার শেষ কোণে তাকে একদমই একা বসে থাকতে দেখে হৃদয়ের গহীন ভেতরে কেমন যেন একটা নিঃসঙ্গতা বোধের অনুভূতি সঞ্চারিত হলো; হু হু করে কেঁপে উঠলো যেন অন্তরের কোথাও! ফলে অতঃপর এই আমি বর্তমানে তার পাশের চেয়ারটিতে বসে আছি।

—রাত তো অনেক হলো! ঘুমুতে যাবেন না, নাজমুল ভাই!

অকস্মাৎ এ আহ্বানে চমকে উঠলেন যেন! নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, —বাকীরা শুয়ে পড়েছে?

আমি সম্মতিসূচক মাথা নাড়ি। বলি, — হ্যাঁ, শুয়ে পড়েছে। শুনেছেন? আগামীকালের সিডিউলে কিছু পরিবর্তন এসেছে। আমরা কাল এখানে থেকে যাচ্ছি।

নাজমুল সাহেব আমার কথায় বিশেষ কর্ণপাত করছেন বলে মনে হলো না।

—ভাই, আপনি এতো কী ভাবেন—বলেন তো? সারাদিন কেমন যেন নিশ্চুপ, নিথর হয়ে থাকেন! এভাবে থাকতে কষ্ট হয় না? আমরা তো কথা ছাড়া থাকতেই পারি না!

প্রভুত্তোর করলেন না নাজমুল সাহেব। কেবল সেই পুরোনো হাসিটাই ঝুলিয়ে দিলেন দু'ঠোঁটের কোণে। আমি এ সুযোগে আরও ঘনিষ্ঠ হবার প্রয়াসী হই; বলি,

—ভাই, আমাকে খুলে বলেন তো সমস্যা কী? পাঁচ বছর হতে চললো একসাথে আছি। আপনাকে দেখলেই বুঝি, ভেতরে গভীর কোনো ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন! ছোট ভাই ভেবে আমাকে বলতে পারেন। কী, বাসায় কোনো সমস্যা? আজ আপনাকে আরও বেশি ম্রিয়মাণ লাগছে।

বারান্দাতে আলো ছিলো সামান্যই। দ্বাদশীর চাঁদ নীলাভ আলো ছড়িয়ে দিয়েছে প্রকৃতির বুকে। সে আলোর ঝলকানি খানিক নাজমুল সাহেবের মুখে এসেও পড়ছে। দেখলাম তার চোখের কোণ চিকচিক করছে। চোখের কোণ ভিজিয়ে দিয়ে অশ্রুকণা তার ফর্সা রক্তিম গণ্ডদেশে এসে ভোরের শিশির বিন্দুর মতো ঝলমলিয়ে উঠলো।

—নাজমুল ভাই কি কাঁদছেন?

গড়িয়ে পড়া অশ্রুকণা হাতের তালুতে মুছে নিলেন। বললেন,

—ভাই, মেয়েটার কথা খুব মনে পড়ছে! একটাই মেয়ে ছিল।

—ছিল মানে! কি বিয়ে হয়ে গেছে?

-হুম!

— আগামীকাল ছুটি নেন না কেন? ছুটি নেন! মেয়েকে দেখে আসেন! সন্তানের মায়া বড় কঠিন জিনিসরে ভাই! চোখের দেখা না হওয়া অবধি এ মায়া কাটবে না। বেড়েই চলবে শুধু!

ছোট মানুষ বড়দের সমুখে ভুল কিছু বলে ফেললে বড়রা যেভাবে প্রশ্রয়ের চোখে তাকায়, নাজমুল ভাই আমার দিকে সেভাবে যেন তাকালেন। তার দৃষ্টিপাতই বলে দিচ্ছে, আমি অযাচিত কিছু বলে ফেলেছি। অল্প সময় পর চোখ জোড়া নামিয়ে নিলেন। দৃষ্টি আবারও ছড়িয়ে দিলেন দূরে; সার্কিট হাউজের দেয়াল ঘেঁষে যে বড় সড়কটি চলে গেছে তার দু'পাশ ধরে নদীর বুকে।

আমি আর নাজমুল ভাই, রাতের আলো-আঁধারিতে সার্কিট হাউজের এই বারান্দাতে দুটি মাত্র প্রাণি বসে আছি। দুজনই চুপ। ঈষৎ তেড়ছা হয়ে আমাদের দীর্ঘায়িত ছায়া সমুখের দেয়ালে আঁছড়ে পড়েছে। উভয়ের ছায়ার দিকে তাকিয়ে আছি। এভাবে কেটে গেল কিছুটা সময়। অকস্মাৎ নাজমুল ভাই কথা বলে উঠলেন; অতঃপর তিনি বলেই চলেন,

—ও তখন খুব ছোট, যখন ওর মা মারা যায়। আমার বয়সও তখন খুব বেশি না। বন্ধুরা বলেছিল আবার বিয়ে করতে; মেয়েটার মুখের দিকে চেয়ে আর তা পারলাম না। নতুন মা ওকে কষ্ট দেয় কিনা! নিজে কোলে-পিঠে করে বড় করেছি। সে সময়ের চাকরিটা ছোট ছিল। ওই ছোট সাধ্যের মধ্যেই মেয়েটার সবটুকু শখ-আহ্লাদ পূরণ করতে চেয়েছি। ভালো ছিলাম; বাবা-মেয়ে বেশ সুখেই ছিলাম। ও দেখতে ওর মায়ের চেয়ে সুন্দর হয়েছিল। পড়াশোনাতেও ছিল বেশ!

নাজমুল ভাই থামলেন। তার গলা কেমন ধরে এসেছে। বুঝলাম, কান্না চাপতে তার বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। আলতো করে ডান হাতটা তার কাঁধে রাখলাম। হাতের তালুতে চোখের কোণ মুছে নিলেন। আমি বললাম, “নাজমুল ভাই! তারপর?”

—একদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে আমার টেবিলে ভাঁজ করা একটি কাগজ পাই। খুলে দেখি— আমার মেয়ে—সাদিয়ার চিঠি। প্রথমে ভাবলাম বান্ধবির বাসায় টাসায় গেছে হয়তো। পড়ে দেখি সাদিয়া লিখেছে, আবির নামে কোন ছেলেকে সেদিন সকালে সে বিয়ে করেছে। ছেলে জার্মানে থাকে। ফেসবুকে যোগাযোগ; কেবল সাদিয়াকে বিয়ে করতেই দেশে এসেছে। রাতেই তারা জার্মানি ফিরে যাবে।

নাজমুল ভাইয়ের কথার মাঝেই আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম।

—আশ্চর্য! আপনি তার বাবা। কত কষ্টে বড় করেছেন! একটিবার আপনাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না!

—ওর ভয় ছিলো, আমাকে জানালে হয়তো রাজী হবো না!

—তারপর? খোঁজ নেননি আর!

—নিয়েছিলাম। আসলে ছেলেটা একটা ফ্রট, দালাল ধরণের ছিলো। বিদেশে মেয়ে সাপ্লাই দেয়। আমার মেয়েটা গিয়ে ওর খপ্পরেই পড়লো!

আমাকে অবাক করে দিয়ে ছোট্ট বাচ্চার মতো হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন নাজমুল হায়দার সাহেব। তাকে থামানোর কোনো চেষ্টাই আমি করলাম না। নিথর, নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকি কেবল তার পাশের চেয়ারটায়। আসলে এমন পরিস্থিতিতে লাগসই ভাষা আবিষ্কার করে ওঠা আমার জন্য একটু কষ্টকরই বটে! আমি বরং আমার চোখের আদ্রতা হাতের তালুতে শুষে নিতে মনোযোগী হই।

এই বইটির প্রি অর্ডার চলছে তাই, মানুষ কিংবা মানসের মৃত্যু বই pdf download free চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না। বইটির হার্ডকপি ক্রয় করুন আপনার প্রিয় অনলাইন শপ থেকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ